শরীয়তের কষ্টিপাথরে জসীম উদ্দীন রাহমানী (episode 3-4)

❖ ৩য় পর্ব ❖

তার বেশ কিছু বক্তৃতার মাঝে শুনেছি তিনি বলেন, কিছু কিছু পীর আছে যারা বলে,
میانِ عاشق و معشوق رمزیست
کرامًا کاتبیں را ہم خبر نیست
عاشق و معشوق کے درمیان ایک ایسی رمز بھی پائی جاتی ہے
جس کی خبر کرامًا کاتبین کو بھی نہیں ہوتی۔
উচ্চারন : মিয়ানে আশেকা মাশুক রুমুযিস্ত * কিরামান কাতেবিরা হাম খবর নিস্ত।
অর্থ. আশেক আর মাশুকের মাঝে এমন কিছু সংকেত / ইঙ্গিত / ইশারা পাওয়া যায়,
যার খবর কিরামান কাতেবিনও জানে না। 


রাহমানী সাহেব বলেন, এগুলো শিরক, কারণ এমন কোন অবস্থা নেই, যার বিষয় কিরামান কাতেবিন যানেনা এবং তারা সর্বক্ষন মানুষের সাথে থাকে, কখনো পৃথক হয় না এবং তিনি অনেক সময় কোরআনের আয়াত {مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ} [ق: 18] অর্থাৎ মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। সূরা ক্বাফ : 18। আর বিষেশ করে তিনি আকাবেরে দেওবন্দ এর আলোচনা করতে গিয়ে এ কবিতাটি দিয়ে তাদের সন্মানের প্রতি আঘাত করে।


** দেখুন রাহমানী সাহেবের ভুল। আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াতের মাঝে বলেছেন, يَلْفِظُ অর্থাৎ উচ্চারণ করা‘‘ এর সম্পর্কে ফেরেশতারা জানেন, কিন্তু আমরা যে কবিতা উল্লেখ করেছি তার মাঝে রয়েছে, رمز অর্থাৎ সংকেত / ইংঙ্গিত / ইশারা। আর এগুলোর জন্য উচ্চারন প্রয়োজন হয় না। যেমন চোখের ইশারা ইত্যাদি তাহলে বলুন এই আয়াতের সঙ্গে রাহমনীর দলীল দেয়ার কি সম্পর্ক রয়েছে? তিনি তো এমন আয়াত বা হাদীস দিয়ে প্রমাণ দিতো যাতে ইশারার বিধান সংক্রান্ত বর্ণিত আছে। এই হল তার মানুষকে কাফের বলার মন গড়া দলীল।


 আর রাসূল সা. বলেছেন
6104 - حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ: حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَيُّمَا رَجُلٍ قَالَ لِأَخِيهِ يَا كَافِرُ، فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا»
صحيح البخاري (8/ 26)
6103 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، وَأَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالاَ: حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ المُبَارَكِ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا قَالَ الرَّجُلُ لِأَخِيهِ يَا كَافِرُ، فَقَدْ بَاءَ بِهِ أَحَدُهُمَا»
যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইকে কাফের বলল তা তাদের দুই জনের একজনের দিকে ফিরে আসবে।

- বুখারী হদীস নং 6103,6104।

 তাহলে বলুন অপরাধী যে, আসলে তার দিকে ফিরে যাবে যা একটি প্রশিদ্ধ কথা এবং ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বুখারীর সবচেয়ে বড় ব্যাখ্যাবিদ তিনিও এ ব্যাখ্যা করেছেন। 
এবার যখন দেখা গেল এ কবিতা পড়ুয়া ব্যক্তি কাফের নয় তাহলে, এ বিধানটি রাহমানী সাহেবের দিকে ফিরে যাচ্ছে না?

আর আসলে উল্লেখিত কবিতার মাঝে বুঝানো হয়েছে যে, অনেক সময় বান্দার দিলের ইশারা আল্লাহ তায়ালা খুব তাড়াতাড়ী বুঝে ফেলে তার দোয়া কবুল করে ফেলেন, এখানে উচ্চারন করে চাওয়াও লাগেনা। একটি সহজ বিষয় এটি কে রাহমানী সাহেব কঠিন করে ফেললেন। তার একটি দৃষ্টান্ত দেখুন রাসূল সা. যখন পূর্ব কেবলা ফিরিয়ে চাচ্ছিলেন,

 {قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ[البقرة: 144] 
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখেছি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। সূরা বাকারা : 144। 

এখন দেখুন উল্লেখিত আয়াতের মাঝে রাসূল সা. আকাশের দিকে তাকালেন আল্লাহ তার ইংঙ্গিত বুঝে দোয়া কবুল করলেন। উল্লেখিত কবিতা দ্বারা আসলে এসব অবস্থার কথা বলা হয়েছে। যা রাহমানী সাহেব না বুঝে জ্ঞানের উম্ভাদ ঘোড়া নিয়ে ধাওয়া করছেন খালি মাঠে আর তির নিক্ষেপ করেছেন আসলে তো শক্র নেই!!!!!!!!

তাছাড়াও ফেরেশতা জানেন এমন কোন মহ্ত্ব কি মানুষের উপর অতিক্রম করে? হ্যাঁ করে তার প্রমাণও হাদীসে রয়েছে। কিন্তু সকল বিদ্যা সকলের জানা থাকেনা, তাই বলে কি রাহমানী সাহেব নিজ বুঝার কারণে অন্যকে কাফের বলবে? দেখুন ফেরেশতারাও জানেনা এমন একটি অবস্থার বর্ণনা...

  
.تخريج أحاديث إحياء علوم الدين (1/ 163)
142 - روي عن الحسن عن حذيفة:
سألت النبي - صلى الله عليه وسلم - عن علم الباطن ما هو؟ فقال:
(سألت جبريل عنه فقال عن الله:
هو سر بيني وبين أحبائي وأوليائي وأصفيائي أودعه في قلوبهم، لا يطّلع عليه ملك مقرّب ولا نبي مرسل).
الفوائد المجموعة (ص: 284)
32 - حديث: "إنه سأل سائل النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ، عَنْ عِلْمِ الْبَاطِنُ. مَا هُوَ؟ فَقَالَ: سَأَلْتُ جِبْرِيلَ عَنْهُ. فَقَالَ: هُوَ سِرٌّ بَيْنِي وَبَيْنَ أَحِبَّائِي، وَأَوْلِيَائِي، وَأَصْفِيَائِي أودعه في قلوبهم، لايطلع عليه أحد، لاملك مُقَرَّبٌ وَلا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ.
ذكره في الذيل عن حذيفة مرفوعًا.
كشف الخفاء ط القدسي (2/ 68)
1765 - العلم علمان: علم الأديان، وعلم الأبدان.
قال في الخلاصة موضوع، وكذا ما روي في الذيل مسلسلا عن الحسن عن حذيفة أنه قال سألت النبي صلى الله عليه وسلم عن علم الباطن ما هو؟ فقال سألت جبريل عنه، فقال هو سر بيني وبين أحبابي وأوليائي وأصفيائي أودعه في قلوبهم، لا يطلع عليه ملك مقرب ولا نبي مرسل.
كشف الخفاء ت هنداوي (2/ 80)
1765- العلم علمان: علم الأديان وعلم الأبدان
عن الحسن عن حذيفة أنه قال: "سألت النبي صلى الله عليه وسلم عن علم الباطن ما هو؟ فقال: سألت جبريل عنه فقال: هو سر بيني وبين أحبابي وأوليائي وأصفيائي أودعه في قلوبهم لا يطلع عليه ملك مقرب ولا نبي مرسل".
 

হাদীসটি আমি তিনটি কিতাব থেকে খন্ড ও পৃষ্টা নাম্বার সহ উল্লেখ করেছি। যেগুলো আমার কাছে লিখা ছিল। এছাড়াও আরো অনেক কিতাবে আমি পড়েছি, যা এই মুহুর্তে পৃষ্ঠা নাম্বার স্মরন নেই। হাদীসটির অর্থ হলো হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, একজন প্রশ্নকারী রাসূল সা. কে ইলমে বাতেন তথা গোপন এলম সম্পর্কে প্রশ্ন করে, যে ইয়া রাসূলল্লাহ! এটি কি? রাসূল সা. তার উত্তরে বলেন, আমি ও জিবরাঈল আ. কে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করি তিনি বলেন, আল্লাহ বলেছেন, এটি আমি আর আমার বন্ধু ওলী সুফীদের মাঝে গোপন সম্পর্ক যা আমি তাদের মাঝে আমানত রাখি। ``যার বিষয়ে কোনো নিকটবর্তী ফেরেশতা ও প্রেরিত নবীগণও অনুধাবন করতে পারে না। সন্মানিত পাঠক তাহলে আমরা এ হাদীস থেকে বুঝতে পারলাম ফেরেশতারাও জানেনা এমন মর্হুত্তও আছে। যা হাদীসে স্পষ্ট। 

কিন্তু এ হাদীসটি কে নিয়ে কিছু আপত্তি রয়েছে আর তা হলো হযরত হুযায়ফা রা. সাহাবী তার থেকে বর্ণনা কারী হলেন, হাসান বসরী রহ.। তাকে নিয়ে কিছু মুহাদ্দেস আপত্তি করছেন, যে তিনি হুযায়ফা রা. থেকে হাদীস শুনেছেন কি না? 


আমি তার উত্তরে বলবো ইমাম বুখারী রহ. তার কিতাব রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে লিখিত ``যুযয়ে রাফউল ইয়াদানি‘ এর মাঝে হাসান বসরী রহ. থেকে এক সনদে সমস্ত সাহাবী থেকে হাদীস শুনেছেন বলে সাবস্ত করেছেন, তাতে কারো কোনো আপত্তি নেই । অতএব ইমাম বুখারী ভুল করলে আমি ভুল করেছি আর ইমাম বুখারী সঠিক করলে আমিও সঠিক করেছি। আর ইমাম বুখারী এ বিষয়ে ভুল করেছেন, এ কথাটি কোন ইমাম ভুলেও বলেন নি।


তারপর উল্লেখিত আলোচনা গুলো ছাড়াও রাহমানী সাহেব যে বলেছেন ফেরেশতারা সর্বদা মানুষের সাথে থাকে কখনো পৃথক হয় না। তিনি আরো একটি ভুল করেছেন, দেখুন রাসূল সা. এর কতগুলো হাদীস বিরুধী কথা বলেছেন,


 سنن الترمذي ت بشار (4/ 409)
2800 - حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ نِيْزَكَ البَغْدَادِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا الأَسْوَدُ بْنُ عَامِرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو مُحَيَّاةَ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِيَّاكُمْ وَالتَّعَرِّيَ فَإِنَّ مَعَكُمْ مَنْ لاَ يُفَارِقُكُمْ إِلاَّ عِنْدَ الغَائِطِ وَحِينَ يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى أَهْلِهِ، فَاسْتَحْيُوهُمْ وَأَكْرِمُوهُمْ. 

অর্থাৎ হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. বলেন, তোমরা উলঙ্গ হওয়া থেকে বেচে থাক, কেননা তোমাদের সাথে যারা থাকে (অর্থাৎ কেরামান কাতেবিন) তারা পৃথক হয় না একমাত্র ইস্তেনজার সময় এবং যখন মানুষ নিজ স্ত্রির সাথে সহবাস করে। অতএব তোমরা তাদের থেকে লজ্জাবোধ কর ও তাদেরকে সন্মান কর।
- তিরমীযী : 2800, আবূ দাঊদ 2/397, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাম 2/285, 
এছাড়াও আরো অনেক কিতাবের মাঝে হযরত ইবন আব্বাস রা, এর মত জলীলুল কদর সাহাবীদের থেকে বিভিন্ন সহীহ সনদে হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে। 

অতএব, আমরা বুঝতে পারলাম ফেরেশতারা মানুষ থেকে আলাদা ও পৃথক হয় যা জসীম উদ্দীন রাহমানী নিজ দাবী সাব্যস্ত্ করার জন্য মানুষের চোখ থেকে রাসূল সা. এর হাদীসকে আড়াল করতে চেয়েছেন, আসলে কি সম্ভব? না কখনোও না হতেই পারেনা। নিশ্চই সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত আর মিথ্যা বিতাড়িত হবেই হবে। ইনশাআল্লাহ

শুধু শেষ বিষয়টি আরো বিস্তারিত দেখার প্রয়োজন হলে দেখুন আল ফাতওয়া আল হাদীসীয়া 47, শরহুল উমদা 1/401, আল হাবায়েক ফি আখবারিল মালায়েক 90, লাওয়ামেউল আনওয়ারুল বাহিয়য়া 1/448। ইত্যাদি কিতাবাদী আর আমি অধিক কিতাবাদীর নাম উল্লেক করিনি। তারপরও কারো প্রয়োজন হলে বলবেন। ইনশাআল্লাহ আমার কাছে অসংখ্য কিতাব আছে সাথে সাথে বলে দিবো। আল্লাহ আমাদের কে হক ও বাতিল বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন আমীন।

❖ ৪র্থ পর্ব ❖

‘শরীয়তের কষ্টি পাথরে জসীম উদ্দীন রহমানী’’
প্রশ্ন : রহমানী সাহেব তার অসংখ্য লেকচারের মাঝে বলেন, যে সমস্ত পীরগুলো মুরীদদেরকে ‘‘বায়আত’’ করিয়ে থাকে, তারা এই বেদাত পন্থাটা কোথায় থেকে পেয়েছে???? কেননা ইসলামে বায়আত করানো মাত্র দুই জায়গায় পাওয়া যায়, এক যুদ্ধের জন্য বায়আত দ্বিতীয় খেলাফতের বায়আত। আপনাদের কি মনে হয় রহমানী সাহেবের মুর্খতার দরুন এই মন্তব্যটি আপনি মেনে নিবেন??????
.
.
উত্তর : আমরা প্রথমত বায়আত এর সংজ্ঞা জেনে নি, আর তা হলো, খোদায়ী শরীয়তের কোন অনুসারীর হাতে দ্বীনী কোন হুকুম পালন করার উপর দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। যেহেতু আল্লাহর কোন হুকুম পালনের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা রাসূল (সা.) অথবা নায়েবে রাসূল (সা.) এর মাধ্যমে পূর্ণ হয়।
.
.
আর রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.) থেকে ভিবিন্ন সময় ভিবিন্ন ধরনের বায়আত নিয়েছেন,
1। কখনো জিহাদের উপর
2। কখনো হিজরতের উপর
3। কখনো শরীয়তের মঙ্গলময় কাজের উপর সহীহ মুসলিমে আছে وعلى الخير শব্দও এসেছে। আর তরীকতের শায়খগণের বাইআত যদি শরীয়ত সমর্থিত পদ্ধতি মোতাবেক হয়, তাহলে তাও শরীয়তের মঙ্গলম কাজের অন্তর্ভূক্ত হবে।
4। কখনো কুপ্রবৃত্তির তাড়না
5। অসতকাজ পরিত্যাগ করার উপর
6। কখনোও সুন্নাত আঁকড়ে ধরার উপর
7। কখনোও বিদায়াত থেকে দূরে থাকার উপর
8। কখনো নেক কাজে উদসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টির উপর
9। আবার যখন আনসারী মহিলাদের থেকে বাইয়াত নিয়ে ছিলেন, কোন এক সময় গরীব মুহাজিরদের থেকে কারো কাছে হাত না পাতার উপর বাইয়াত নিয়েছিলেন। যার কারণে তারা এত যে কষ্ট করে এ অঙ্গীকার পুরণ করেছিলেন যে, যদি চলন্ত ঘোড়ার উপর থেকে লাঠি পড়ে যেত তাহলেও উঠিয়ে দেওয়ার জন্য কাউকে বলতেন না বরং নিজে নীচে নেমে উঠাতেন। (ইবনে মাজা হা.2867) ইত্যাদি আরো অনেক ধরনের বায়আতের কথা উল্লেখ রয়েছে।
.
.
. এখন দেখুন সহীহ বুখারীর হাদীস-صحيح البخاري (1/ 12)
18 - حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو إِدْرِيسَ عَائِذُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَكَانَ شَهِدَ بَدْرًا وَهُوَ أَحَدُ النُّقَبَاءِ لَيْلَةَ العَقَبَةِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ، وَحَوْلَهُ عِصَابَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ: «بَايِعُونِي عَلَى أَنْ لاَ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا، وَلاَ تَسْرِقُوا، وَلاَ تَزْنُوا، وَلاَ تَقْتُلُوا أَوْلاَدَكُمْ [ص:13]، وَلاَ تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ، وَلاَ تَعْصُوا فِي مَعْرُوفٍ، فَمَنْ وَفَى مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا ثُمَّ سَتَرَهُ اللَّهُ فَهُوَ إِلَى اللَّهِ، إِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ» فَبَايَعْنَاهُ عَلَى ذَلِكَ
অর্থাত : আয়িযুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও লায়লাতুল আকাবার একজন নকীব উবাদা ইবনুস সামিত (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পাশ্বে একজন সাহাবীর উপস্থিতিতে তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সঙ্গে কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং নেক কাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূরণ করবে, তার বিনিময় আল্লাহর কাছে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তাবে তা হতে তার জন্য কাফফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মাফ করে দেবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি দেবেন। আমরা এর উপর বায়আত গ্রহণ করলাম। বুখারী হা. 18)
.
.,
সন্মানিত পাঠকগন এখন আপনারাই দেখুন উল্লেখিত হাদীসটির মাঝে কি আল্লাহর রাসূল (সা.) জিহাদ বা খেলাফতের উপর বায়আত করিয়েছেন?? না কি অন্য জিনিসের উপর, সে সব জিনিসের উপর বর্তমানে হক্বানী পীরগণ বায়আত নিয়ে থাকেন, নিশ্চয় এখন আপনাদের কাছে রহমানী সাহেবের মুর্খতা আর গোমরাহী দিপ্রহরের ন্যয় এস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
.
.
অন্য এক বর্ণনার মাঝে আছে যখন রাসুল (সা.) সাহাবাদেরকে বললেন তোমরা আমার কাছে বায়আন গ্রহণ কর তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূল আল্লাহ আমারা কি িআপনার নিকটে বায়আত গ্রহন কির নি??? তাহলে এখন আবার কিসের বায়আত তখন রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা আল্লাহর সাথে কাহকে শরীক করবে না এবং পাচওয়াক্ত নামায পড়বে, এবং আমিরের কথা শুনবে ও মানবে, এবং আরো একটি কথা গোপনে বলেছেন, ও বলেছেন তোমারা কারো কাছে হাত পাতবে না............... ইবনু মাজা হা.2867,

এই কথাগুলোর আরবী এবারত হলো এই

 سنن ابن ماجه (2/ 957)
2867 - حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ قَالَ: حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ التَّنُوخِيُّ، عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ الْخَوْلَانِيِّ، عَنْ أَبِي مُسْلِمٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي - الْحَبِيبُ الْأَمِينُ، أَمَّا هُوَ إِلَيَّ، فَحَبِيبٌ، وَأَمَّا هُوَ عِنْدِي، فَأَمِينٌ - عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ تِسْعَةً، فَقَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللَّهِ» فَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا، فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ، فَعَلَامَ نُبَايِعُكَ؟ فَقَالَ: «أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُوا الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ، وَتَسْمَعُوا وَتُطِيعُوا، وَأَسَرَّ كَلِمَةً خُفْيَةً، وَلَا تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا» قَالَ: فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ، يَسْقُطُ سَوْطُهُ، فَلَا يَسْأَلُ أَحَدًا، يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ
.,
.
অন্য অন্য জিনিস গুলোর উপর বায়আত করার হাদীসগুলো বুখারীর ভিবিন্ন এস্থানে উল্লেখি রয়েছে, আমি আপনাদের উদ্দেশ্য হাদীস নাম্বার ও আরবী এবারত উল্লেখ করালাম, সময় স্বল্পতার কারনে অর্থ উল্লেখ করা আবশ্যক মনে করলাম না। কারনে একটি হাদীস দিয়েইতো আপনার বুঝেছেন, যে, ইসলামে অনেক ধরনের আয়আতের কথা উল্লেখ রয়েছে। দেখুন হাদীসগুলো,


 صحيح البخاري (5/ 55)
3892 - حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، أَخْبَرَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَخِي ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو إِدْرِيسَ عَائِذُ اللَّهِ، أَنَّ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ، مِنَ الَّذِينَ شَهِدُوا بَدْرًا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمِنْ أَصْحَابِهِ لَيْلَةَ العَقَبَةِ أَخْبَرَهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: وَحَوْلَهُ عِصَابَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ: «تَعَالَوْا بَايِعُونِي عَلَى أَنْ لاَ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا، وَلاَ تَسْرِقُوا، وَلاَ تَزْنُوا، وَلاَ تَقْتُلُوا أَوْلاَدَكُمْ، وَلاَ تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ، وَلاَ تَعْصُونِي فِي مَعْرُوفٍ، فَمَنْ وَفَى مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ بِهِ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ لَهُ كَفَّارَةٌ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَسَتَرَهُ اللَّهُ فَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ، إِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ، وَإِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ» قَالَ: فَبَايَعْتُهُ عَلَى ذَلِكَ
صحيح البخاري (5/ 81)
3999 - حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو إِدْرِيسَ عَائِذُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ، وَكَانَ شَهِدَ بَدْرًا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «بَايِعُونِي»
صحيح البخاري (8/ 159)
6784 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ الخَوْلاَنِيِّ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَجْلِسٍ، فَقَالَ: «بَايِعُونِي عَلَى أَنْ لاَ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا، وَلاَ تَسْرِقُوا، وَلاَ تَزْنُوا - وَقَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ كُلَّهَا - فَمَنْ وَفَى مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَتُهُ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَسَتَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ، إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ، وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ»
صحيح البخاري (1/ 21)
57 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ: حَدَّثَنِي قَيْسُ بْنُ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: «بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ»
صحيح البخاري (1/ 21)
58 - حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلاَقَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ جَرِيرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ يَوْمَ مَاتَ المُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ، قَامَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَقَالَ: عَلَيْكُمْ بِاتِّقَاءِ اللَّهِ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَالوَقَارِ، وَالسَّكِينَةِ، حَتَّى يَأْتِيَكُمْ أَمِيرٌ، فَإِنَّمَا يَأْتِيكُمُ الآنَ. ثُمَّ قَالَ: اسْتَعْفُوا لِأَمِيرِكُمْ، فَإِنَّهُ كَانَ يُحِبُّ العَفْوَ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ: أُبَايِعُكَ عَلَى الإِسْلاَمِ فَشَرَطَ عَلَيَّ: «وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ» فَبَايَعْتُهُ عَلَى هَذَا، وَرَبِّ هَذَا المَسْجِدِ إِنِّي لَنَاصِحٌ لَكُمْ، ثُمَّ اسْتَغْفَرَ وَنَزَلَ
صحيح البخاري (1/ 111)
524 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ المُثَنَّى، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى، قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ: حَدَّثَنَا قَيْسٌ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: «بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ»
صحيح البخاري (3/ 72)
2157 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ قَيْسٍ، سَمِعْتُ جَرِيرًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: «بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ»
হাদীস নং-3892,2157,524,58,57,6784,3999,

এগুলো সবগুলো সহীহ বুখারীর হাদীস যাতে বায়আত আলালা জিহাদ ও খেলাফত ব্যতিত অন্য প্রকারগুলো উল্লেখ রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে হক আর বাতিল চিনে আমল করার তাওফীক দান করুন আমীন


মুফতী মো. সানা উল্লাহ

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf