মুসলিমদের ঈমান আক্বীদাহর ভয়ংকর ভাবে হরণ করছে কোয়ান্টাম মেথড

দ্বীনের মধ্যে ধর্মের নামে দিন দিন বহু ফিতনাহ ও ভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। একটা শেষ হতে না হতেই আরেকটা শুরু হয়, উলামায়ে উম্মত যুগে যুগে এসব ফিতনাহ অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছেন,  ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও করবেন। সাধারণ মুসলমানদের উচিৎ প্রতি সালাতের পর আলেমদের জন্য দুয়া করা,কেননা তাদের কারনেই সঠিক দ্বীন ও আক্বীদাহ এখনও আমাদের মাঝে অক্ষত আছে আল্লাহ তাদের মাধ্যমে একে জিইয়ে রেখেছেন। তাদের অক্লান্ত মেহনতের দাম আমরা না দিতে পারলেও আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা অবশ্যই দিবেন।

দেশীয় বিভিন্ন ভ্রান্ত ফিরক্বাহর মাঝে অন্যতম একটি কোয়ান্টাম মেথডের ফিতনাহ। 
.

মেডিটেশন ও ধ্যানমগ্নতার নামে কোয়ান্টাম মেথড ব্যতিক্রমধর্মী মেডিটেশনের কথা বলছে। মেডিটেশনের উৎপত্তি হয়েছিল মানসিক ও শারীরিক রোগ মুক্তির লক্ষে অথচ কোয়ান্টাম মেথড রোগ নিরাময়ের গন্ডি থেকে বেরিয়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। রোগ নিরাময়ের বিশ্বাসের স্থানে তারা মুক্ত বিশ্বাস নামে বিভিন্ন ধরণের কুফরী আকীদার প্রচার শুরু করেছে।

কোয়ান্টাম মেথডের প্রধান গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক প্রথমে জ্যোতিষী ছিলেন। তিনিই কোয়ান্টাম মেথডের ব্যতিক্রমধর্মী মেডিটেশনের উদ্ভাবক। তিনি মূলত এ জাতীয় মেডিটেশনের মূল আবিষ্কারক ডা. বেনসন বা ডা. ডীন অরশীন এর বাতলানো ফর্মুলা থেকে সূত্র গ্রহণ করে নিজের গবেষণালব্ধ জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন দর্শন যোগ করে কোয়ান্টাম এর এই বিশেষ মেডিটেশন আবিষ্কার করেন।

তার আবিষ্কৃত এই নতুন ধরণের মেডিটেশনের প্রতি সব ধর্মের মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষত হিন্দু ও বৌদ্ধদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন রীতি-নীতি, ও আকীদা বিশ্বাসের মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। তাই কোয়ান্টাম মেথড পশ্চিমা দেশে প্রচলিত মেডিটেশন নয়। বরং এটি একটি জীবন ব্যবস্থা ও মতবাদ, যেখানে বিজ্ঞান ও সব ধর্মের মিশ্রণে জীবনের সর্বক্ষেত্রে নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, ঠিক যেমনটি করেছিল বাদশা আকবার ভ্রান্ত দ্বীনে ইলাহী আবিষ্কার করে।

শহীদ বোখারীর এই প্রচেষ্টা শুরু হয় প্রায় তিন যুগ আগে ১৯৭৩ সালে তদানীন্তন ‘মাসিক ঢাকা ডাইজেস্ট’ পত্রিকায় অতন্দ্রীয় বিষয়ে লেখালেখির মাধ্যমে। ১৯৭৫ সালে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রায়’ এ বিষয়ে অনেকগুলো লেখা প্রকাশ করা হয়। ১৯৮০ সালে তারা ঢাকার শান্তি নগরে অফিস খোলে। ১৯৮৩ সালে এই মেডিটেশনকে ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যে ছড়ানোর জন্য ‘যোগ্য মেডিটেশন কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়। ১৯৮৬ সালে এই কেন্দ্র ‘যোগ্য ফাউন্ডেশন’ নামে পরিচালিত হয়।

এদিকে মহাজাতক মানুষের মধ্যে পরিচিতির জন্য এই মেডিটেশন সম্পর্কে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ব্যাপকভাবে লিখতে থাকেন। এভাবে লেখালেখির এক পর্যায়ে যখন তিনি গণমানুষের মধ্যে এ ব্যাপারে আগ্রহ লক্ষ করলেন তখন মেডিটেশন কোর্স চালু করা হয়। ১৯৯৩ এর ৭ জানুয়ারী মেডিটেশন এর সর্বপ্রথম কোর্স অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে কোয়ান্টাম মেথড নামে এরা মেডিটেশন কোর্স চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তারা ৩০০ এর অধিক কোর্স সমাপ্ত করেছে। মানুষ তার কাছে যায় রোগ নিরাময়ের আশায়, কিন্তু তিনি নিরাময়ের নামে তাদের বাদশাহ আকবরের দ্বীনে ইলাহীর মতো সর্বধর্মের সমন্নয়ে গঠিত নতুন এক মতবাদ শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন, আর অবুঝ মুসলমানদের ঈমান হরণ করছেন।

(তথ্যসূত্র, মাসিক আল-আবরার ফেব্রুয়ারী ২০১২)

.
কোয়ান্টামের মতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইসলাম মোটকথা সব ধর্মের মৌলিক শিক্ষাই এক। কাজেই যেকোনো ধর্ম পালনই যথেষ্ট। কোয়ান্টামের মতে সকল ধর্মই গ্রহণযোগ্য।

(কোয়ান্টাম উচ্ছ্বাস পৃ.৯)
.

কোয়ান্টামের উদ্ভাবিত জীবনদৃষ্টির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘কোয়ান্টাম হচ্ছে সেই সায়েন্স অব লিভিং যা বলে দেয় জীবনটাকে কীভাবে সুন্দর করা যায়। ভুল থেকে কীভাবে দূরে থাকা যায়। পাপ কত কম করা যায়। ভাল বা কল্যাণ কত বেশি করা যায়। কোয়ান্টামের শিক্ষা এ ক্ষেত্রে নবী-রাসূলদের যে শিক্ষা, ওলী-বুযুর্গদের যে শিক্ষা, মুনি-ঋষিদের যে শিক্ষা, তা থেকে আলাদা কিছু নয়। হাজার বছর ধরে তারা যে শিক্ষা দিয়ে এসেছেন, কোয়ান্টাম সে কথাগুলোই বলছে। শুধু ভাষাটা আধুনিক।

(হাজারো প্রশ্নের জবাব, মহাজাতক ১/৩০১)

আমার সাথে সম্পর্ক রাখে এমন একজন আমাকে তাদের ব্যাপারে কিছু তথ্য দিলেন,তিনি ওদের সেন্টারের ও ফাউন্ডেশনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন, ওদের ওখানে জয়েন করে ওদের দেওয়া সবক অনুযায়ী কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি ফিরে এসেছেন তাদের কিছু ভ্রান্ত আক্বীদাহ দেখে ফিরে আসেন (আলহামদুলিল্লাহ)। 

তার তথ্যানুযায়ীঃ

১.  সক্রিয় সদস্যরা গুরুজিকে হাজির নাজির জ্ঞান করা।

২. গুরুজির দাবি দাড়ি না রাখা গুনাহের কাজ না এবং মোচ রাখা সমস্যা না যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। উনি নিজে দাড়ি শেভ করেন, মোচ রাখেন এবং ইন্ডাইরেক্টলি এর উপর আমল করার দাওয়াত দেন।

৩. ফাউন্ডেশন কর্তৃক মাটির ব্যাংক বিলি করা হয় এবং মানুষকে দান করতে বলেন।

এখানে যাকাত দিতে উৎসাহ দেন কুরআন-হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে। ব্যয় করা হয় লামার বাচ্চাদের উপর এই বলে যে, এ তারা এতিম। কিন্তু  সেখানে তাদের শিক্ষার পাশাপাশি নাচ, গানও শেখানো হয়। বলা হয়, নাচ গান মানুষের উপকারে ব্যবহার করতে পারলে তা জায়েজ। এই যাকাতের টাকা দিয়েই ভিন্নধর্মীদের জন্য উপাসনালয় বানানো হচ্ছে। (লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ) 

‌৪. প্রো-মাস্টার নামের এক্টা প্রোগ্রামে উনি (গুরুজি)  মুসলিম,অমুসলিম সবাইকে বায়াত দেন নিজেকে আধ্যাত্মিক গুরু দাবি করে।

৫. উনি জোত্যিষ শাস্ত্র কে হালাল দাবি করেন!

৬.অষ্টধাতু দিয়ে তৈরি ব্রেস্লেট পড়তে উৎসাহ দেন,যেটি নাকি মানুষকে সুস্থ রাখে।

৭. সবগুলো প্রোগ্রামেই পর্দার ভয়াবহ লংঘন হয়। ছেলেমেয়ে আলাদা বসাকেই শ্লীলতার পূর্ণতা ভাবা হয়।

৮. হিলিং নামে এক্টা প্রোগ্রাম হয়,যেখানে মেডিটেশন করে অন্য মানুষের সুস্থতা, অসুস্থতার খবর পাওয়া যায় বলে দাবি করা হয়। এবং রেগুলার হিলিং এর মাধ্যমে মেডিটেশন করেই অপর মানুষকে সুস্থ করার দাবি করা হয়।

৯. হিলিং করার জন্য মেডিটেশনে মনের একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। উনাদের ভাষায় এটা কমান্ড সেন্টার। কমান্ড সেন্টারে একজন গুরু বসে থাকেন,যার সাথে কথা বলা যায়, পরামর্শ করা যায়। 

এমনকি রসুলল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)  কেও এভাবে মনে আনা যায় দাবি করে থাকে। এবং রসুলল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) 'র  সাথে কথাও বলা যায় বলে দাবী করে!!

এবং উনি দাবি করেন জীবিত মানুষকেই গুরু বানানো উচিত।

১০. কমান্ড সেন্টারে গিয়ে অপর মানুষের অতীত জানা যায় সেটা বলা হয়!

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf