মহিলাদের ইতিকাফ সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় মাসআলা

💢 মহিলাদের ইতিকাফের বিধানঃ

রমযানের শেষ দশকের ইতিকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার মসজিদে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি ইতিকাফ করে তাহলে পুরো মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর নারীদের জন্য ইতিকাফ করা মুস্তাহাব।

💢 মহিলাদের ইতিকাফের স্থানঃ

মহিলাদের নামাযের স্থান তাদের ঘরের অন্দরমহল; মসজিদ নয়।
তারা ঘরে নামায পড়েও পুরুষদের মসজিদে নামায আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হন বলে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
এ অর্থে মহিলাদের ঘর মসজিদের সদৃশ বলে পরিগণিত। তাই মহিলারা ঘরে তাদের নামায আদায়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন। যদি আগে থেকেই ঘরে নামাযের জন্য কোনো স্থান নির্ধারিত না থাকে তাহলে ইতিকাফের জন্য একটি স্থান নির্ধারিত করে নিবেন। এরপর সেখানে ইতিকাফ করবেন।
[হেদায়া ১/২৩০; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১]

💢 নারীর ইতিকাফ পুরুষের জন্য যথেষ্ট নয়ঃ

রমযানের শেষ দশকে মসজিদে গিয়ে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদা এর বিধান পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য নয়। সুতরাং মহিলারা চাই ঘরে ইতিকাফ করুক কিংবা মসজিদে পুরুষদের দায়িত্ব আদায় হবে না। এজন্য মহল্লার মসজিদে পুরুষদের মধ্য হতে একজনও যদি ইতিকাফ না করে তাহলে পুরো মহল্লাবাসী সুন্নতে মুআক্কাদা তরক করার কারণে গুনাহগার হবে। 
[বাদায়েউস সানায়ে ২/১১৩; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৩/১৪৫]

💢 স্বামীর অনুমতি গ্রহণঃ

বিবাহিত নারী ইতিকাফ করতে চাইলে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। আর স্বামীদের উচিত, যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ করে দেওয়া। এতে উভয়ই সওয়াব পাবেন। 
[রদ্দুল মুহতার ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১]

মাসআলা: স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেওয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা দিলেও সে বাধা গ্রহণযোগ্য নয় এবং স্ত্রীর জন্য তা মানাও জরুরি নয়। 
[রদ্দুল মুহতার ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১]

💢 স্বামী ও সন্তানের দেখাশোনার প্রয়োজন হলেঃ

যে মহিলার স্বামী বৃদ্ধ বা অসুস্থ কিংবা তার ছোটছোট ছেলে-মেয়ে রয়েছে এবং তাদের সেবা করার কেউ নেই, সে মহিলার জন্য ইতিকাফ করার চেয়ে তাদের সেবাযত্ন করা উত্তম।

💢 ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রী-সম্ভোগঃ

ইতিকাফ অবস্থায় রাতেও স্ত্রী-সহবাস করা যাবে না। করলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। তদ্রূপ স্ত্রীকে চুম্বন, আলিঙ্গন ও উত্তেজনার সাথে স্পর্শ করাও বৈধ নয়। যদি এসবের কারণে বীর্যপাত ঘটে তাহলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে।
[সূরা বাকারা: ১৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৫, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৫০; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১৩]

💢 ঋতুস্রাব অবস্থায় ইতিকাফঃ

মহিলাদের ঋতুস্রাব অবস্থায় ইতিকাফ করা সহীহ নয়। কেননা এ অবস্থায় রোযা রাখা যায় না। আর সুন্নত ইতিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। 
[বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৪; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১]

  মাসআলাঃ মহিলাদের ইতিকাফে বসার আগেই তাদের ঋতুস্রাবের দিন-তারিখ হিসাব করে বসা উচিত। যাতে ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে না যায়। তবে কারও রমযানের শেষ দশকে পিরিয়ড হওয়ার নিয়ম থাকলে তিনি পিরিয়ড শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল ইতিকাফ করতে পারবেন।

💢 ওষুধের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বন্ধ রেখে ইতিকাফ করাঃ

মহিলারা ওষুধ-বড়ি খেয়ে ঋতুস্রাব বন্ধ রেখে রোযা রাখলে এবং ইতিকাফ করলে রোযা ও ইতিকাফ সহীহ হবে। তবে এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বিধায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

💢 ইতিকাফ অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হলেঃ

ইতিকাফ শুরু করার পর ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। পরে শুধু একদিনের ইতিকাফ রোযাসহ কাযা করতে হবে। 
[আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৫০২]

💢 ইতিকাফের স্থান থেকে বের হওয়াঃ

মহিলারা ঘরের যে স্থানটিকে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত করবেন তা তাদের ক্ষেত্রে মসজিদের মতোই গণ্য হবে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া তারা সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে ঘরের অন্যত্র গেলেও ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। 
[ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮২]

 মাসআলাঃ প্রাকৃতিক প্রয়োজন বলতে বুঝায়, প্রস্রাব-পায়খানা।
সুতরাং ইতিকাফ অবস্থায় মহিলারা প্রস্রাব-পায়খানার জন্য ইতিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবেন। অযুর জন্য বাইরে যেতে পারবেন। আর যদি এসবের জন্য ইতিকাফ-কক্ষের ভিতরেই রুচিসম্মত সংযুক্ত বাথরুম থাকে তাহলে এর জন্য বাইরে যেতে পারবেন না।

💢 মহিলাদের ইতিকাফের সুযোগ না হলেঃ

মহিলাদের ইতিকাফের কারণে যদি সন্তান প্রতিপালন, ঘর-সংসারের নিরাপত্তা এবং তার উপর অর্পিত অপরিহার্য কবর্ত্য পালনে ব্যাঘাত না ঘটে তবেই তারা স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে ইতিকাফ করতে পারবেন। অন্যথায় তাদের জন্য ইতিকাফ না করে নিজ দায়িত্ব যাথাযথভাবে পালন, সংসার দেখা-শোনা, স্বামীর সেবা ইত্যাদিতেই অগণিত কল্যাণ নিহীত রয়েছে। তারা কাজের ফাঁকে যথাসাধ্য দুআ-যিকির, তাসবীহ, কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামায, দ্বীনী বইপত্র পাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করবেন।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাঁর ইবাদত বন্দেগিতে সময় ব্যয় করার তাওফীক দান করুন।

------------------ 

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf