ছোট ছেলে “হ্যাঁ তুমি আমার বউ” বলে সম্মতি দিলেই কি বিবাহ হয়ে যাবে?


প্রশ্নঃ
দু জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে কোন মেয়ে যদি দুষ্টুমি করে কোন ছোট ছেলেকে বলে “তুমি আমার জামাই” অতঃপর ছেলে যদি গ্রহণ করে নেয় এবং উত্তর দেয় “হ্যাঁ তুমি আমার স্ত্রী” তাহলে কি বিবাহ হয়ে যাবে?

উত্তরঃ
বিবাহ, তালাক, রজআত; এই তিনটি বিষয় খুবই গুরতর এগুলো নিয়ে মজা করা বা ফান করা উচিত নয়। রাসুল সা. বলেন,
ثلاث ‌جدهن ‌جد، وهزلهن جد: النكاح، والطلاق، والرجعة
“তিনটি বিষয় সিরিয়াস হিসেবে হোক বা দুষ্টমির ছলে হোক বাস্তবায়ন হয়ে যায়। বিবাহ, তালাক এবং রজআত।”
(ইবনু মাযাহ, হা. ২০৩৯)
সুতরাং এগুলো নিয়ে মজা করা উচিত নয়।

★এবার আসি মূল কথায়। দু জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে যদি কোন মেয়ে বা ছেলে মজা করে ছোট কোন ছেলে বা মেয়েকে বলে “তুমি আমার স্বামী বা তুমি আমার স্ত্রী” অতঃপর সেই ছোট ছেলে বা মেয়ে প্রতি উত্তরে বলে “হ্যাঁ তুমি আমার স্ত্রী বা তুমি আমার স্বামী” তাহলে বিবাহ হয়ে যাবে কি না?

বিবাহ হওয়ার জন্য শুধুমাত্র দু জন সাক্ষীর উপস্থিতি এবং স্বামী স্ত্রী হিসেবে একে অপরকে গ্রহণ করাই যথেষ্ঠ নয়। বরং আরো শর্ত রয়েছে।

উল্লিখিত প্রশ্নের ধাঁচে বোঝা যাচ্ছে প্রশ্নটি করা হয়েছে নাবালক ছেলে বা মেয়েকে কেন্দ্র করে। সুতরাং আমরা এখানে নাবালকের বিবাহ নিয়েই আলোচনা করবো।

★বিবাহের ক্ষেত্রে নাবালক দুই ধরনের হতে পারে।
১. নাবালক এবং ভালো মন্দ বুঝে না।
২. নাবালক তবে ভালো মন্দ বুঝে।

#প্রথম প্রকার নাবালকের বিধান
ভালো মন্দ বুঝে না এমন নাবালকের নিজ পদক্ষেপের মাধ্যমে (অর্থাৎ নিজে নিজে বিবাহে সম্মতি প্রকাশের মাধ্যমে) বিবাহ সহিহ হবে না। অর্থাৎ বিয়েই হবে না। বরং এমন নাবালকের বিবাহ একমাত্র অভিভাবক দিতে পারবে। সে নিজে স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে মেনে নিলে বিবাহ হয়ে যাবে না।

فلا ينعقد ‌نكاح ‌المجنون ‌والصبي الذي لا يعقل؛ لأن العقل من شرائط أهلية التصرف
“পাগল এবং ভালো মন্দ বুঝে না এমন নাবালকের বিবাহ সহিহ নয়। কেননা জ্ঞান থাকা যেকোন কার্য সম্পাদনার যোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত।”
(বাদাইয়ুস সানাই, ২/২৩২)

#দ্বিতীয় প্রকার নাবালকের বিধান
নাবালক যদি ভালো মন্দ বোঝার মতো বয়সে উপনিত হয় তাহলে তার নিজস্ব পদক্ষেপের মাধ্যমে কৃত বিবাহ অভিভাবকের অনুমতির উপর নির্ভরশীল থাকবে। অভিভাবক যদি বিবাহ বহাল রাখে তাহলে বহাল থাকবে। আর যদি তারা ভেঙ্গে দেয় তাহলে তা বাতিল হয়ে যাবে।

وأما بيان شرائط الجواز والنفاذ فأنواع منها: أن يكون العاقد بالغا فإن ‌نكاح ‌الصبي ‌العاقل وإن كان منعقدا على أصل أصحابنا فهو غير نافذ، بل نفاذه يتوقف على إجازة وليه
“বিবাহ জায়েয হওয়া এবং বাস্তবায়ন হওয়ার জন্য অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। তার মধ্য হতে একটি হলো বিবাহকারী প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। কেননা বুঝবান নাবালকের বিবাহ আমাদের মূলনীতির আলোকে প্রাথমিকভাবে সংঘটিত হলেও তা পরিপূর্ণ বাস্তবায়িত নয়। বরং তার বাস্তবায়ন নির্ভর করে অভিভাবকের অনুমতির উপর।”
(বাদাইয়ুস সানাই, ২/২৩৩)

★নাবালকের বিবাহ অভিভাবকের অনুমতির উপর নির্ভরশীল থাকার জন্যও তিনটি শর্ত।
(এক) ভালো মন্দ বোঝার মতো যোগ্যতা থাকা। যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
(দুই) একে অপরকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার সময় দু জন সাক্ষী উপস্থিত থাকা ।
(দুই) একে অপরকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার মজলিস এক হওয়া।

সুতরাং এই তিন শর্তের কোন একটি যদি পাওয়া না যায় তাহলে বিয়েই হবে না।

★আজকাল অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে অথচ সে বিষয়ে সে কথা বলার মতো পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করে নাই। সে তার স্বল্প জ্ঞানের মাধ্যমে কথা বলে এবং মানুষের মাঝে অস্থিরতা তৈরি করে। এগুলো কখনোই কাম্য নয়। কেউ যদি দ্বীনের কোন বিষয়ে পূর্ণ অবগতি অর্জন করা ব্যতীত সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে তাহলে তার জন্য খুব ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফজত করুন।
আল্লাহু আলাম।

------------------ 





মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf