ঘুণে ধরা সহিহ আকিদা; ভিত্তি যখন যুক্তি!

'সহীহ আক্বীদায়' ঘুন পোঁকা প্রবেশ করলে সেটা 'তথাকথিত সহীহ আক্বীদা'য় পরিনত হয়। তখন দলিল বিহীন বিকৃত আক্বিদা আর ঠুনকো যুক্তিকেই সহীহ আক্বিদা হিসেবে চালানো হয়। একটি উদাহারণ দেই।
আমি এক গায়রে মুকাল্লিদ ভাইকে প্রশ্ন করলাম -  "কবর থেকে হাত বের হওয়ার ঘটনার ব্যাপারে আপনাদের আপত্তি কোথায় ??? আক্বিদায় নাকি সনদে ??????"
তিনি জবাবে বললেন - "আক্বীদায় , সনদে। কারণ যদি হাত বের হত তাহলে আবু বকর উমর উসমান আলি যে কোন সাহাবীদের (রা:) আজমাইনদের বেলায় অবশ্যই ঘটত। সুতরাং তাদের বেলায় রাসুল সা হাত বের করেন নি আর কারো বেলায় হবে তা মিথ্যা। আমরা অনুমান করে একটা বিষয় দিয়ে আরেকটা যুগ করতে চাই না। বিশেষ করে আক্বীদার ক্ষেত্রে।"
ওয়াও, সেরাম আক্বিদার বিস্ফরণ!!!! মূলত কারামাত বা মুজেজার ব্যাপারে ইসলামি আক্বিদা কি এটাই আমাদের এ ভায়েরা জানেন না।
কারামত একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতা ও ইচ্ছায় সংঘঠিত হয়। এতে বান্দার ক্ষমতা ও ইচ্ছার কোন প্রভাব নেই। আল্লাহ কখন কার মাধ্যমে কোন কারামতের প্রকাশ ঘটাবেন তিনিই ভালো জানেন। এক্ষেত্রে বান্দা শুধুমাত্র উপলক্ষ। আল্লাহ তায়ালা চাইলে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ব্যাক্তিকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মর্যাদার ব্যাক্তি দিয়েও কারামত প্রকাশ করাতে পারেন। এটা আল্লাহর ইচ্ছা। শরিয়তে এর ভুরি ভুরি উদাহারণ রয়েছে। যেমন -
হজরত মারইয়াম আ. আল্লাহর ওলি ছিলেন। কিন্তু হযরত যাকারিয়া আ. আল্লাহর নবী ছিলেন। মারইয়াম আ. অপেক্ষা অধিক মর্যাদার ব্যাক্তিত্ব ছিলেন হজরত যাকারিয়া আ.। কিন্তু মৌসুম ছাড়া ফল কার কাছে এসেছিলো? মরিয়ম আঃ এর কাছে। যদিও মর্যাদার দিক দিয়ে যাকারিয়া আঃ এর অবস্থান উপরে ছিলো।
এটা গেলো কোরআন থেকে উদাহারণ।
হাজার হাজার মাইল দূরে সারিয়ার খবর উমর রাযিঃ কে জানিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু হুদাইবিয়া থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে মক্কার খবর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামকে জানানো হয় নি। না জানার কারণে গুজব শুনে রসুল স. উসমান রা. এর হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বাইয়াত শুরু করে দিয়েছিলেন।
এটা গেলো হাদীস থেকে উদাহারণ।
এরকম আরো অনেক উদাহারণ রয়েছে।
হজরত আয়েশা রা. নবিজি স. এর স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তার কোন সন্তান হয়নি। এমনকি একটা কন্যা সন্তানও হয়নি। অথচ হজরত মারইয়াম আ. আল্লাহর ওলি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে স্বামী ছাড়া পুত্র সন্তান দিয়েছেন। হজরত ইয়াকুব আ. প্রতিদিন নিজের মুখে হাত লাগিয়েছেন। চোখ ভালো হয়নি। অথচ হজরত ইউসুফ আ. এর শুধু জামার স্পর্শে চোখ সুস্থ হয়েছে। যেই বাতাস হজরত সলাইমান আ.এর সিংহাসন উড়িয়ে নিয়ে যেত, তাকে হিজরতের সময় আদেশ দেয়া হয়নি যে, রসুল স. কে এক মুহূর্তে মদিনায় পৌঁছে দাও। হজরত সুলাইমান আ. নবি হওয়া সত্ত্বেও বিলকিসের সিংহাসন এনেছিলো তাঁর এক সাহাবি।
এগুলো সব আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি চাইলে হাজার মাইল দূরের বাইতুল মুকাদ্দাস চোখের সামনে দেখতে পান। জান্নাত ও জাহান্নাম দেখতে পারেন। এর বিপরীতে হুদায়বিয়া সন্ধির সময় উসমান গণি রা. এর শাহাদাতের মিথ্যা সংবাদ আসে। সংবাদটি যাচাইয়ের কোন মাধ্যম ছিলো না। একারণে রসুল স. উসমান রা. এর হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বাইয়াত শুরু করে দিয়েছিলেন। হুদায়বিয়া মক্কা থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত। আল্লাহর ইচ্ছায় শত মাইল দূরের জিনিস দেখলে পেলেও আল্লাহর ইচ্ছা না হওয়ার কারণে কয়েক মাইল দূরের বিষয় জানতে পারেননি। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা না হওযার কারণে সামান্য দূরে কূপের মধ্যে থাকা হজরত ইউসুফ আ. সম্পর্কে জানতে পারেননি। অথচ আল্লাহর ইচ্ছা হওয়ার কারণে মিশরে অবস্থিত হজরত ইউসুফ আ.এর জামার ঘ্রাণ কিনআনে পেয়েছেন। 
যারা বলেন এ ঘটনা সাহাবীদের দ্বারা ঘটেনি তাই এগুলো ঘটবে না বা ঘটাটা বিশ্বাস করা আক্বিদার খেলাফ তাদের জন্য উপরের উদাহারণ গুলোই যতেষ্ঠ মনে হচ্ছে। আশা করি তারা তাদের ঘুনে ধরা আক্বিদাকে সহীহ করে নিবেন।

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf