এটা সহীহ হাদীসে / বুখারী-মুসলিমে আছে?

"সহীহ হাদীসে আছে কি?" বহুল প্রচলিত একটি প্রশ্ন। অনেকে আবার বুখারী মুসলিমের শর্ত করেন। তো, যে লোকটা হাদীসের সঙ্গাটা স্পষ্ট করে বলতে পারবে না। সহীস হাদীস কী জিনিস, হাদীস সহীহ হবার জন্য কয়টা শর্ত, ইমাম বুখারীর কাছে সহীহ কোনটা, ইমাম মুসলীম কাছেই বা কোনটা, অন্য ইমামরা কারটা প্রাধান্য দিয়েছেন ; এসব তো দূর কি বাত-- তিনিও আপনাকে এই প্রশ্নটি করতে পারেন। দলীল সম্পর্কে জানতে চাওয়া অনুচিত, তা বলছি না। তবে, প্রশ্নের ধরণে একটু সমস্যা আছে। যারা এই প্রশ্ন শিখিয়েছেন, তাদের সাথেই মূলত কথাটা বলা দরকার। তাই শায়খ ও তার অনুসারী, সকলের প্রতি কিছু কথা।
.
প্রথমত অনুসারীদের প্রশ্নটা নিয়ে কথা বলি। জনাব, আপনি বুখারী বা মুসলিমের শর্ত কেন করছেন? আপনি জানেন কি? বুখারী ও মুসলিম সহীহ-হাদীসের সংক্ষিপ্ত কিতাব। তাঁরা নিজেরাই কিতাবের নামের সাথে 'মুখতাসার' বা সংক্ষিপ্ত শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এই দুই কিতাবের বাইরেও অনেক সহীহ হাদীসের কিতাব ও অসংখ্য সহীস হাদীস আছে। আপনার জানা দরকার জনাব। আপনার আরো জানা দরকার, আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য হাদীস চারপ্রকার। (১)সহীস লি-যাতিহী, (২)সহীহ লি-গাইরিহী, (৩)হাসান লি যা-তিহী, (৪)হাসান লি-গাইরিহী। এই চারপ্রকারের উপর নির্দ্বিধায় আমল করা যাবে। কখনো এদের মাঝে বিরোধ হলে কি হবে, সেকথা থাকলো। আপনি তিনটি প্রকার ছেড়ে দিয়ে শুধু প্রথম প্রকারের শর্ত কেন করছেন? হ্যাঁ, আপনার কোন দোষ নেই। কারণ, মুখে অস্বীকার করলেও, আপনি আপনার শায়খদের একনিষ্ঠ অনুসারী। এবং অন্যকে মুকাল্লীদ বা অন্ধানুসারী বলতে অতিউৎসাহী। ইটস নট গুড ব্রাদার।
.
আপনি যদি আমার কথাগুলো মন দিয়ে পড়ে থাকেন, তবে দুইটা কথা অবশ্যই বুঝতে পারবেন-- এক. বুখারী বা মুসলিমের বাইরেও অসংখ্য সহীহ হাদীস আছে। দুই. আমলের জন্য শুধু সহীহ না, বরং চতুর্থ প্রকার বা হাসান লি-গাইরিহী পর্যন্ত বিনাদ্বিধায় গ্রহণযোগ্য।
.
এবার কথা হচ্ছে, শুধু এই চার প্রকার নয়, উলামায়ে সালাফের অনেকেই জইফ হাদীস শর্ত সাপেক্ষ আমলের উপযোগী হবার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। এ নিয়ে অনেক কিতাব রচিত আছে। তো, আপনি যদি মনে করেন, আমি আমার আমলের ব্যাপারে সতর্ক থাকবো। সবসময় বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত আমল করবো। ভাল কথা। করতে থাকুন। কেউ যদি সালাফে সালেহিনের অনুসরণ করে, জঈফ হাদীসের উপর আমল করতে চায়, সেটা নিয়ে কেন আপনি আক্রোমণাত্মক হবেন? মুসলমানের আচরণ তো এমনটা না। এখানেও দোষ জনসাধারণের না। কারণ, তার শায়খই জঈফ আর জালের মাঝে পার্থক্য জানেন না। কিংবা জানলেও সেটা বলেন না। বরং একত্র করে তার অনুসারীদের ক্ষেপিয়ে তোলেন। অথচ তিনি বলতে পারতেন, "অমুক হাদীসের সনদ জঈফ, অনেক আলেম জঈফের উপর আমলের কথা বললেও অনেকে নিষেধ করেছেন, তো যারা করার করুক, আমরা না করার পক্ষে।" ব্যাস, কথা শেষ। কিন্তু তারা এটা করবেন না। বরং জঈফকে জাল বানিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানোর ইন্তেজাম করবেন। আল্লাহর হাওলায় সব।
.
শায়খরা হাদীসের উপর আমলের ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। মাশা আল্লাহ। খুবই ভাল কথা। কিন্তু এইযে বুখারী মুসলিম আর সহীহ হাদীসের শর্ত করার তালিম দিচ্ছেন, এটা কতটা যোক্তীক-- একটু ভেবে দেখার অনুরোধ। আপনি সহীস আর বুখারী মুসলিমের বুলি শিখিয়ে কতশত হাদীস অস্বীকার করা শেখাচ্ছেন-- একটু ভেবে দেখবার অনুরোধ। আপনি জানেন, সালাফে সালেহিনের কেউ কেউ শর্ত সাপেক্ষ জঈফ হাদীসের উপর আমলের মত দিয়েছেন, তবু যে জাল আর জঈফ এক করে বিদ্বেষের আগুন জ্বেলে দিচ্ছেন, কেন?-- একটু ভেবে দেখবার অনুরোধ। শেষ একটি অনুরোধ করি -- কথায় কথায় বুখারী, মুসলিম আর সহীহ হাদীস নয়, বরং গ্রহণযোগ্য দলীল তালাশ করতে শেখান। কেননা, অনেক আমলই হাদীস নয়, বরং কোরআন, ইজমা বা ক্বিয়াস থেকে প্রমাণিত। অথচ আপনার অনুসারীরা কোরআন থেকে দলীল দেবার পরও বুখারী/মুসলিম/সহীস হাদীস খুঁজে বেড়ায়! 😃

- Alamin Firdaus

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf