আমাদের সংশোধনযোগ্য একটি মানসিকতা

খেতে খেতে কথা হচ্ছিল ইবনে লাহিয়াকে নিয়ে। তিনি অনেক বড় মাপের মুহাদ্দিস ছিলেন। তবে হাদিসবিশারদদের দৃষ্টিতে ছিলেন যঈফ। দুর্বল রাবি। সেজন্যই আমরা তার নাম বলার সময় খুব গুরুত্বহীনতার সাথে উল্লেখ করছিলাম।

হঠাৎ আমার মাথায় একটা খেয়ালের উদয় হল। ইনি কিন্তু মিথ্যা বলার কারণে যইফ নন। বরং ঘরে আগুন লাগার কারণে তাঁর বইপত্র পুড়ে গিয়েছিল। সেজন্য তিনি হাদিস বর্ণনা করার সময় উলটপালট করে ফেলতেন। তাই তাকে মুহাদ্দিসরা যইফ বলেছেন। কিন্তু যেহেতু যইফ শব্দটাকে আমরা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি তাই কোন বর্ণনাকারীকে যইফ বলা হলে তার নাম উচ্চারণের সময় তেমন শ্রদ্ধা-ভক্তি আমাদের ভেতর কাজ করে না। যেরকম মিথ্যা বা স্মৃতিশক্তিতে দুর্বল রাবির নাম উচ্চারণে আমাদের তেমন শ্রদ্ধা জাগ্রত হয় না।

অথচ যাহাবি রাহ. তাকে 'আল ইমাম' আল-আল্লামা' উপাধী দিয়ে পরিচয় প্রদান শুরু করেছেন সিয়ারু আলামিন নুবালাতে। আবু হুরাইরা রা. এর ছাত্রদের থেকে ইলম শিখেছেন। প্রায় সত্তরজন তাবেয়ির দেখা পেয়েছেন। তিনি নিজেও তাবেয়ী ছিলেন। ইবনে উমার ও উক্ববা রা.কে দেখেছেন। মিশরের বিখ্যাত ইমাম লাইস ইবনে সাদ রাহ. এর সমকক্ষ মনে করা হতো তাকে।

সুতরাং যইফ হলেই কেউ অশ্রদ্ধেয় হয়ে যান না। বরং দেখতে হবে কেন তাকে যইফ বলা হচ্ছে। তারপর সে অনুপাতে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ইবনে লাহিয়া এর মতো আরো অনেক রাবি আছে। মুহাদ্দিসরা নানান কারণে তাদের যইফ সাব্যস্ত করেছেন। তারপরও তারা সম্মানের পাত্র। আপনার আমার চেয়ে তো অবশ্যই বেশি। সুতরাং অন্যদের মতো তাদের নামও শ্রদ্ধার সাথে নেওয়া কর্তব্য।
রাহিমাহুল্লাহু তাআলা।

পরে মনে হল, কুরাইশ সর্দার আবু সুফিয়ান এর ক্ষেত্রেও আমরা এমনটি করে থাকি। তার নাম নেবার সময় আমাদের মনে কোন শ্রদ্ধাবোধই কাজ করে না। এর একটা কারণও অবশ্য আছে। সেটা হল, তাঁর মুসলিম হবার আগের ঘটনাবলির আলোচনাই বারবার আমাদের সামনে আসে। উহুদ-খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সেনাপ্রধান। বদরসহ মক্কা বিজয়ের পূর্বের প্রায় সব যুদ্ধে তিনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এগুলোই ঘুরেফিরে আমাদের সামনে আসে। তাই তার সাহাবি হবার গৌরব আমাদের দৃষ্টির আড়ালে রয়ে যায়। অথচ মুসলিম হবার পর তিনি নবিজির সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তায়েফের জিহাদে একটা চোখ হারান। ইয়ারমুকের জিহাদে হারান অন্যটা। রাদিয়াল্লাহু আনহু।

আমার মনে পড়ে না কাউকে কখনো বলতে শুনেছি 'আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু'। যেভাবে আমরা অন্যান্য সাহাবিদের ক্ষেত্রে বলে থাকি। অথচ সাহাবি হওয়ার গৌরব অর্জন করার কারণে তিনি ওয়ায়েয আলকারনি, সাইদ ইবনুল মুসাইয়িব, আবু হানিফা, মালেক, শাফেয়ি, আহমাদ, হাসান বসরি, আবদুল কাদের জিলানি প্রমুখের চেয়েও বেশি মর্যাদার অধিকারী। রাহিমাহুমুল্লাহ।

আমার মনে হয়, আমাদের এই মানসিকতা সংশোধনযোগ্য

----------- 
লিখেছেনঃ Abdullah Al Masud

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf