হারাম সম্পদ ও তার কুফল

আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا ۖ إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন ও সৎকাজ করুনন। নিশ্চয় আমি আপনাদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। (সূরা মু'মিমুন-৫১)

এই আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা নেক আমল এর আদেশ করছেন। হালাল রিজকও একটি আমল। তবুও সেটাকে আলাদা করে, এবং নেক আমল এর পূর্বে উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কুরআনের বাক্য বিন্যাসের তাৎপর্য আছে। নেক আমলের পূর্বেই হালাল খাদ্যের কথা বলা হয়েছে এর গুরুত্ব বোঝাতে। কারণ আমল এর কবুলিয়াত ও রুহানিয়াত হাসেল হওয়ার জন্যে রুটিরুজি হালাল হওয়া জরুরী। শরীরে যদি হারাম খাবার প্রবেশ করে, তাহলে দিল মরে যায়। নেক আমলের স্বাদ পাওয়া যায় না।

হারাম মালের একটা অন্যতম কুফল হচ্ছে, হেদায়েত অন্তরে প্রবেশ করে না। আমালে সালেহা বিস্বাদ লাগে। সদুপদেশ তিক্ত লাগে। আল্লাহ তায়ালা এক আয়াতে এদিকে ইংগিত করেছেন।

كَلَّاۖ بَلْۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ

কখনও না, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।
(আল-মুতাফ্‌ফিফীন ৮৩:১৪)

হারাম অর্থের এই কুফল সন্তানের মাঝেও প্রভাব সৃষ্টি করে। কারণ সে খাবার পিতার ভক্ষণ করলে, পিতার শরীরে শুক্রাণু তৈরি হয়। মা খেলে, মায়ের গর্ভে সন্তানের আহার সেই হারাম মাল থেকেই তৈরি হয়। তাই সন্তান বখে যাওয়ার পিছনে অনেক কারণ এর একটি হারাম উপার্জন।

হারাম সম্পদ ভক্ষণ এর ফলে পাপকাজ এর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বোম্বের এক মুবাল্লিগ ভাই, তার এলাকার এক গল্প শোনালেন। এক ট্যাক্সিচালক বাড়ি ফিরে দেখে তার গাড়িতে টাকাভর্তি ব্যাগ। যাত্রী ভুলে সেটা ফেলে গেছে। ট্যাক্সিওয়ালা ছিলেন মুসলিম। স্ত্রী সে রাতেই স্বামীকে বললেন মালিককে খুঁজে বের করে তার কাছে টাকা পৌঁছে দেয়ার জন্যে। যথারীতি ট্যাক্সিওয়ালা বহু পরিশ্রম করে মালিকের কাছে অর্থ ফেরত দিল। হিন্দু মালিক সাধারণ এক ড্রাইভারের এই সততা দেখে খুব বিস্মিত হলেন। রাতে তাকে বাসায় রাখলেন। আপ্যায়ন করলেন। পরদিন বিদায় দিলেন।

এদিকে ট্যাক্সিওয়ালা মনে মনে আশা করছিল, এত খাটনি করে টাকার ব্যাগ ফেরত দিলাম। হয়ত কিছু এনাম মিলবে। কিন্তু বিদায়বেলায় হতাশ হতে হলো। হিন্দু মহাশয় একটা উপহার পর্যন্তও দিল না। বেরিয়ে যাওয়ার সময় পাশের রুমে একটা হার দেখতে পেল ট্যাক্সিচালক। সুযোগ বুঝে হারটি চুরি করে নিয়ে চলে গেল।

এদিকে বাড়ির গিন্নি হার খুজে না পেয়ে পুলিশকে জানালো। পুলিশ ট্যাক্সিচালককে সন্দেহ করলেও বাড়ির মালিক তা মানতে নারাজ। যে কিনা লাখ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিল, সে মাত্র কয়েক হাজার টাকার হার চুরি করবে?

পুলিশ ট্যাক্সিচালককে গ্রেপ্তার করলে, একপর্যায়ে সে স্বীকার করল চুরির কথা। কাঠগড়ায় আসামীর বক্তব্য শুনলেন বিচারক। বিচারক কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না, কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এই মহৎ ব্যক্তি কীভাবে নিকৃষ্ট কাজটি করল। সেদিনের মত বিচারকার্য মুলতবি করলেন। পরদিন এজলাস শুরু হলো। বিচারক আসামীকে কোন শাস্তি না দিয়েই খালাস করে দিলেন। বিচারক মুসলিম ছিলেন। সে বিচারক বললেন 'আসামীর কোন দোষ নেই। এই ব্যক্তি সত্যিকার অর্থেই ভালো মানুষ। তাই এত টাকার ব্যাগ সে রাতেই ফিরিয়ে দিয়েছে। দোষ মূলত তার, যার গহনা চুরি হয়েছে। কারণ তারা রাতে যে খাবার দিয়ে ট্যাক্সিওয়ালাকে আপ্যায়ন করেছিল তা হারাম পন্থায় উপার্জিত। । হারাম খাবার খাওয়ার পরই ট্যাক্সিচালকের মধ্যে চুরির প্রবণতা তৈরি হয়।'

‌এই ঘটনার বাস্তবতা জানা নেই। তবে এর শিক্ষণীয় দিকটি আমরা গ্রহণ করতে পারি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানির খাবার, চকলেট পানীয় ইত্যাদিতে হারাম উপাদান মেশানো থাকে। যথাসম্ভব এসমস্ত কোম্পানির খাবার কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া এ কারণেও এসমস্ত কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত যে, তাদের শেয়ার হোল্ডার ও লাভের এক বিরাট অংশ ইহুদীদের হাতে পৌঁছে। আমাদের দেয়া অর্থ আমাদের বিরুদ্ধে, ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতিসাধনে ব্যবহার করা হয়। প্রথম আলো গ্রুপের 'ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেড' ট্রান্সকম এর সকল পণ্য, আর এফএল, প্রাণ কোম্পানির পণ্য কেনা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা উচিত।

.
আমার এক উস্তাদ বলতেন, এই সমস্ত ইসলাম বিরোধী কোম্পানির খাদ্যকে হয়ত তুমি নাজায়েজ বলতে পারবে না। কিন্তু নিশ্চিত থাকো, এদের খাবার খেলে অন্তর মরে যায়। কলব থেকে নূর চলে যাবে। সুতরাং, বিদেশি অমুসলিম কোম্পানির খাদ্য দেখে নিজেকে সংযত করো। লোভ সংবরণ করো। তাছাড়া এমনিতেও হাদিসে সন্দেহজনক বস্তু থেকে বেচে থাকতে বলা হয়েছে।'

শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার আল হায়তামী রহ, (ইন্তেকাল-৯৭৪ হি.) লিখেন, "ব্যবসায়ী, লেনদেনকারী, বাজারপতি, উৎপাদক থেকে নিয়ে উপার্জক সবাই যে ধোকা, বাটপারি আর ছলচাতুরীর মাধ্যমে আয় উপার্জন করছে। এই কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর জালেম শাসক ও শোষক শ্রেণিকে চাপিয়ে দেন। তারা তাদের সম্পদ কেড়ে নেয়, জুলুম করে। এমনকি কাফেরদেরকেও মুসলিমদের উপর ক্ষমতাশীল করে দেন এই হারাম, অবৈধ লেনদেনের ছড়াছড়ির কারণে। অতঃপর কুফফাররা মুসলিমদের বন্দী করে, সেবাদাসে পরিণত করে, মুসলিমদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আর যিল্লতির জিন্দেগি আস্বাদন করায়!.... এই যুগের কাফেরদের অত্যাচার জুলুম আর মুসলিমদের পরাজয় গ্লানি এর কারণ হচ্ছে মুসলিম ব্যবসায়ী আর লেনদেনকারীদের ধোকা, অবৈধ পথে উপার্জন আর হারাম সম্পদ ভক্ষণ... " (সংক্ষেপিত)
(আয যাওয়াজের আন ইক্বতেরাফিল কাবায়ের- ১/৪০০)

আয়িম্মাহ ও সালাফের আরও মারাত্মক বক্তব্য রয়েছে হারাম লেনদেন, হারাম উপার্জন এর ক্ষতি ও ভয়াবহতা নিয়ে। পরে কখনো আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আর কেনইবা এই দুর্দশা হবে না? যখন আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন নিজেই ঘোষণা করেন 'অতঃপর যদি তোমরা সুদগ্রহণ পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। '! আল্লাহ আমাদের বোঝার ও মানার তাওফিক দিন। আমীন!

------------
লিখেছেনঃ শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
Ami ai likhata copy koreci

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf