কুরআন মাজীদে সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহুম

কুরআন আল-হাকীম নাযিল হয়েছে আল্লাহ্‌র রাসূল হযরত মুহাম্মদ(ﷺ)এর প্রতি। আর এতে আম(সাধারণ), খাস(বিশেষ) ও মুতাশাবিহাত আয়াত ইত্যাদি রয়েছে। তবে কুরআনের আয়াত নাযিলের আসবাব/কারণ হিসাবে রাসুল(ﷺ)এর জীবনের সমসাময়িক ঘটনা, কাফের-মুশরিক অথবা নেককারঃ সবই রাসূল(ﷺ)কে জানাতে তাঁর পরিপার্শ্বের উদ্দেশ্যে নাযিলকৃত। এবং যেসব আয়াতে সরাসরি-পরোক্ষভাবে আদেশ-নির্দেশ প্রয়োগ/উদ্দেশ্য করা হয়েছে তাও সাহাবাদের প্রতিই। যদিও কুরআনের আয়াত থেকে নিঃসৃত হুকুম-আহকাম কিয়ামত পর্যন্ত উম্মাহর জন্য ধার্য।

কুরআনুল কারীমের আয়াতসমূহে সাহাবাদের ফযীলাত -
¤ “এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রাসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। আপনি যে কেবলার উপর ছিলেন, তাকে আমি এজন্যই কেবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রাসূলের অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। নিশ্চিতই এটা কঠোরতর বিষয়, কিন্তু তাদের জন্যে নয়, যাদেরকে আল্লাহ পথপ্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুনাময়।“ [সূরা বাকারাহঃ ১৪৩]
এই আয়াত যাদের উপরে নাযিল হয়েছিল, সেই সাহাবায়ে কিরাম এর উপরেই আল্লাহ্‌ পরীক্ষা করেছেন যে কে আল্লাহ্‌র হুকুমে বাইতুল মুকাদ্দাসকে কিবলা মানা ও তা থেকে আবার কা’বার দিকে পরিবর্তনের হুকুম মানে, রাসূল(ﷺ)এর আনুগ্যত করে।

¤ “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী।“ [সূরা আ’লে ইমরানঃ ১১০]
এই আয়াতে সমগ্র মুসলিম উম্মতের কথায় উদ্দেশ্য সর্বপ্রথম সাহাবাগণ, যাদের মাধ্যমে এই উম্মত এর শুরু।রাসুল(ﷺ)এর পবিত্র বাণিতেও উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তিন যুগের সর্বাগ্রে তাঁর সান্নিধ্য অর্জনকারী সাহাবাদের কথা বলা হয়েছে।

¤ “আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন; পক্ষান্তরে যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন, তারপর আপনি কোনো সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর ওপর) নির্ভরকারীদের ভালোবাসেন।”[সূরা আ’লে ইমরান: ১৫৯]
সাহাবীদের প্রতি রাসূল(ﷺ)এর কোমলতা,ভালবাসা আল্লাহ্‌প্রদত্ত ও আল্লাহ্‌ এর নিশ্চয়তাদাতা। আল্লাহ্‌ রাসূল(ﷺ)কে নিদেশ দিয়েছেন যেন সাহাবীদের প্রতি ক্ষমাশীল হন এবং তাঁদের মানবীয় ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন, অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ্‌ চেয়েছেন যেন তাঁদের জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়।

¤ “পক্ষান্তরে তারা যদি তোমাকে প্রতারণা করতে চায়, তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনিই তোমাকে শক্তি যুগিয়েছেন স্বীয় সাহায্যে ও মুসলমানদের মাধ্যমে।
আর প্রীতি সঞ্চার করেছেন তাদের অন্তরে। যদি তুমি সেসব কিছু ব্যয় করে ফেলতে, যা কিছু যমীনের বুকে রয়েছে, তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি পরাক্রমশালী, সুকৌশলী।” [সূরা আনফালঃ ৬২-৬৩]
আল্লাহ্‌ তায়ালা রাসূলুল্লাহ(ﷺ)কে যেসব বিশেষ নিয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হল পরম অনুগত সাহাবায়ে কিরামের মাধ্যমে তাঁর শক্তি বৃদ্ধি করা। যারা তাঁর জন্য জান-মাল,সন্তান-পরিবারের মায়া ত্যাগ করতে পারে। আল্লাহ্‌ সাহাবাদের মধ্যকার পূর্বেকার বিবাদ-বিদ্বেষ মিটিয়ে দিয়েছেন,একত্রিত ও শক্তিশালী করেছেন- যেই ভালবাসা আর কারো পক্ষে সারা দুনিয়ার ধন ভাণ্ডারের বিনিময়েও করা সম্ভব ছিলনা। যেমনটী মদীনার চিরবৈরি খাজরায ও আওস গোত্রের মধ্যে, তাঁরা পরবর্তীতে বিবাদ ভুলে একত্র হয়ে রাসূল(ﷺ) এর সাহায্যকারী- আনসার হবার মর্যাদাবান ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

¤ “আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী।” [সূরা আনফালঃ ৭৪]
সাহাবাগণ রাসূল(ﷺ)এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলাম কবুল করেছেন,মক্কা থেকে আবিসিনিয়ায়,মদীনায় হিজরত করেছেন এবং মদীনায় হিজরতের পরে সেখানকার সাহাবারা মক্কা থেকে আসা হিজরতকারীদের আশ্রয় দিয়েছেন, সাহায্য করতে গিয়ে নিজেদের ধনসম্পদ,স্ত্রী(তালাক) ও জায়গাজমি ছেড়ে দিয়ে সাহায্য করেছেন।এবং জিহাদের হুকুম নাযিল হবার পরে তাঁরা আনসার-মুহাজির সকলেই জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাই আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তাঁদের জন্য ক্ষমা ও সম্মান,রিযিক এর ঘোষণা দিয়েছেন।

¤ “যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে আর তারাই সফলকাম।” [সূরা তাওবাঃ ২০]
“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।” [সূরা তাওবাঃ ১০০]
“আল্লাহ দয়াশীল নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা কঠিন মহূর্তে নবীর সঙ্গে ছিল, যখন তাদের এক দলের অন্তর ফিরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর তিনি দয়াপরবশ হন তাদের প্রতি। নিঃসন্দেহে তিনি তাদের প্রতি দয়াশীল ও করুনাময়।” [সূরা তাওবাঃ ১১৭]
সূরা তাওবার এই আয়াতসমূহেও আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ’লামীন হিজরতকারী সাহাবা(মুজাহির) ও তাঁদের সাহায্যকারী(আনসার) সাহাবাদের মর্যাদা আমাদের জানিয়েছেন।তাঁদের ঈমান,দেশত্যাগ ও জান-মালের বিনিময়ে জিহাদকে আল্লাহ্‌ কবুল করেছেন; পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকল আনসার-মুহাজিরদের প্রতি আল্লাহ্‌ তায়ালা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং এর পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। তাঁরাই তাবূকের যুদ্ধে বের হয়েছেন রাসূল(ﷺ)এর ডাকে, জানমাল নিয়ে এবং কঠিনতম অবস্থায় নবী(ﷺ)এর সঙ্গ দিয়েছে যেকারণে আল্লাহ্‌ তাঁদের উপরে দয়াশীল হবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

¤ “যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহর জন্যে গৃহত্যাগ করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়াতে উত্তম আবাস দেব এবং পরকালের পুরস্কার তো সর্বাধিক; হায়! যদি তারা জানত।” [সূরা নাহলঃ ৪১]
“যারা দুঃখ-কষ্ট ভোগের পর দেশত্যাগী হয়েছে অতঃপর জিহাদ করেছে, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা এসব বিষয়ের পরে অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা নাহলঃ ১১০]
প্রথমে উল্লিখিত আয়াতে মক্কায় মুশরিকদের কঠিন নির্যাতন এর মুখে সাহাবাদের ঘরবাড়ি-ব্যবসাবাণিজ্য ছেড়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন সাহাবারা- তাঁদের পুরস্কারের ওয়াদা করা হয়েছে। অপর আয়াতেও ইসলাম এর জন্য সাহাবাদের দুঃখ-কষ্ট স্বীকার,জিহাদ এর পুরস্কার হিসাবে ক্ষমা ও দয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

¤ “যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।
যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রীষ্টানদের) নির্জন গির্জা, এবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।” [সূরা হাজ্জ ৩৯-৪০]
যখন মদীনায় হিজরতের পরেও মক্কার মুশরিকদের অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল,তারা আক্রমণে উদ্যত হল; তখন আল্লাহ্‌ তায়ালা জিহাদের আয়াত নাযিল করলেন ও সাথে রাসূল(ﷺ) ও তাঁর সাহাবাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিলেন।তাঁদের জিহাদ-ক্কিতাল ও কাফের-মুশরিকদের প্রতিহত করার মাধ্যমেই আল্লাহ্‌ সমগ্র মানবজাতির ফিতনা নিরসন, আল্লাহ্‌র ইবাদতের পরিবেশ সৃষ্টির ঘোষণা দেন।

¤ “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন।” [সূরা ফাতহঃ ১৮]
উক্ত আয়াতে আল্লাহ্‌ তাআলা ৬ষ্ঠ হিজরিতে হুদাইবিয়া প্রান্তরে গাছের নিচে বাইয়্যাতকারী প্রায় ১৪০০ সাহাবীর প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দেন, যে বাইয়্যাতে উসমান(রা) এর হয়ে স্বয়ং রাসূল(ﷺ) বাইয়্যাত গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ্‌ যার প্রতি সন্তুষ্ট তাঁদের ব্যাপারে কোন মাখলুক এর উচ্যবাচ্য করার অবকাশ নেই।

“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।” [সূরা ফাতহঃ ২৯]
এই আয়াতে আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূল(ﷺ)এর সাথী- সাহাবীদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে তাঁরা কাফেরদের প্রতি কঠোর, যেমন তাঁরা নিজেদের আত্নীয়—গোত্র নির্বিশেষে সকল কাফেরদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন,জিহাদ করেছেন ইত্যাদি।আর নিজেদের মধ্যে তাঁরা নরম,দয়াশীল, যার দৃষ্টান্ত তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে একের অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার,বিনয়, পরস্পরের জন্য ব্যথিত হওয়া ইত্যাদিতে ফুটে উঠেছে- যা আজও মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শ হয়ে রয়েছে।নির্ভেজাল অন্তর,মাকবুল ইবাদতের ফলে তাঁদের চেহারায় নূর প্রকাশ পেয়েছে। সাহাবারা যখন শাম অঞ্চলে গিয়েছেন তখন তাঁদের দেখে খ্রিস্টানরা তাওরাত-ইঞ্জিলের বর্ণনার সাথে মিল খুঁজে পায়। উক্ত আয়াতে আরো উল্লেখ হয়েছে যে তাঁরা কাফেরদের মনে জ্বালা সৃষ্টি করেন ও মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি দেন। বেশিরভাগ মুফাসসিরের মত এই যে- এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সাহাবাগণ তাঁদের সময়কালে যেরকম কাফেরদের কষ্টের কারণ হয়েছেন, ঈমানদারদের ও দ্বীনের পৃষ্ঠপোষক হয়েছেন; তেমনি সবসময়েই কাফেররা তাঁদের অপছন্দ করবে ও মু’মিনরা তাঁদের ভালবাসবে।

¤ “তোমরা জেনে রাখ তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন, তবে তোমরাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী।” [সূরা হুজুরাতঃ ৭]
এই আয়াতে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ’লামীন সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, নবী মুহাম্মদ(ﷺ) যদি সব ব্যাপারে তাঁদের কথা শুনতেন তাহলে ফলাফল তাঁদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারত। এরপরে মহান আল্লাহ্‌ সাহাবাদের অন্তরের ঈমান ও তাকওয়ার ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন যে, স্বয়ং আল্লাহ্‌ পাক সাহাবাদের অন্তরকে ঈমানের প্রতি মুহাব্বতকারী বানিয়ে দিয়েছেন, যার ফেল আমরা তাঁদের জীবনীতে ঈমান রক্ষা,শিক্ষা ও প্রসারের কঠিন সংগ্রাম দেখতে পাই। একই সাথে আল্লাহ্‌ তাঁদের অন্তরকে কুফর, পাপ কাজ ও আল্লাহ্‌র নাফরমানীর প্রতি ঘৃণাশীল করে দিয়েছেন। তাঁরা পূর্বের কুফরের জীবনে ফিরে যাওয়া অপেক্ষা মৃত্যুকে পছন্দ করতেন এবং কুফরকে দুনিয়ার বুক থেকে মিটিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ্‌র যমিনে ছড়িয়ে জিহাদ-ক্কিতাল করেছেন,জীবন দিয়েছেন। সর্বদা রাসূল(ﷺ) থেকে জানার চেষ্টায় থেকেছেন কোন কাজে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি আর কোন কাজে আল্লাহ্‌র অসন্তুষ্টি।

¤ “তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কিসে বাধা দেয়, যখন আল্লাহই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উত্তরাধিকারী? তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যদা বড় তাদের অপেক্ষা, যার পরে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত”। [সূরা হাদীদঃ ১০]
এই আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা মক্কা বিজয়ের পূর্বের দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর সময়ে যেসব সাহাবাগণ আল্লাহ্‌র রাস্তায় জানমাল ব্যয় করেছেন ও জিহাদ করেছেন তাঁদের উচ্চ মর্যাদার স্বীকৃতি ও তাঁদের জন্য কল্যাণের ওয়াদা করেছেন।

¤ “এই ধন-সম্পদ দেশত্যাগী নিঃস্বদের জন্যে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টিলাভের অন্বেষণে এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলের সাহায্যার্থে নিজেদের বাস্তুভিটা ও ধন-সম্পদ থেকে বহিস্কৃত হয়েছে। তারাই সত্যবাদী।
যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।
যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।” [সূরা হাশরঃ ৮-১০]
এখানে আল্লাহ্‌ যুদ্ধলব্ধ মালের অধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে মুহাজির সাহাবাদের কথা বলেছেন, তাঁর প্রেরিত রাসূল(ﷺ) ও দ্বীনকে বিজয়ী করতে নিজেদের বাড়িঘর,সহায়-সম্বল,সম্পদ সব ছেড়ে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় এসেছিলেন। সর্বজ্ঞানী,অন্তর্যামী আল্লাহ্‌ তায়ালা স্বয়ং আমাদের জানিয়েছেন যে তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি লাভ করা।আল্লাহ্‌ তাঁদেরকে সত্যবাদী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
এরপরে আল্লাহ্‌ মদীনায় বসবাসকারী আনসার সাহাবীদের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। যারা রাসূল(ﷺ)এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন,তাঁর আগমনের প্রতীক্ষারত ছিলেন। মক্কা থেকে হিজরত করে আসা সাহাবাদের জন্য তাঁরা নিজেদের বাড়িঘর,জমি,সম্পদ ছেড়ে দিয়ে সঙ্কুলান করান- নিজেদের অভাবের পরোয়া না করে এবং মুহাজিরদের নিজেদের চেয়ে মূল্য দিয়ে।এরপরে আল্লাহ্‌ যুদ্ধলব্ধ মালের হক্কদার হিসাবে মিসকীনদের কথা বলেছেন যারা পূর্ববর্তীদের প্রতি বিদ্বেষ রাখেনা, বরং তাঁদের জন্য ক্ষমার দুআ করে; এর মর্মার্থ হিসাবে ইমাম মালিক(র)সহ একাধিক ফকীহ বলেছেন যে রাফেযীদের যেন ফাই এর অংশ না দেয়া হয়।কারণ তাঁরা আনসার,মুহাজির নির্বিশেষে সাহাবাদের ব্যাপারে বিদ্বেষ রাখে।



-----------------

~ The Rafidologist: এসো শিয়া চিনি

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf