অর্থনৈতিক সমস্যার সময়ে পর্দাহীন অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্কা ছাত্রীকে পড়ানো কি বৈধ হবে?

প্রশ্ন : 
আসসালামু আলায়কুম
অর্থনৈতিক সমস্যার সময়ে বাধ্য হয়ে প্রাপ্তবয়স্কা মেয়েদের পড়ানোর বিধান সম্পর্কে জানতে চাই।
আমি টিউশনিতে কোন মেয়ে ছাত্রী পড়াই না। অনেকদিন যাবত এই অবৈধ বিষয়টি পরিত্যাগ করেছি।কিন্ত বর্তমানে আমি এমন অবস্থায় উপনীত হয়েছি যে, আমার একটা টিউশনিও নেই। ২-৩ মাস বেকার থাকার পর এখন একটা টিউশন পেয়েছি তাও একজন প্রাপ্তবয়স্কা ছাত্রীকে পড়াতে হবে। এক্ষেত্রে আমার জন্য কি করণীয়? 

উত্তর : 
ওয়ালাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
একই জেণ্ডারের চিকিৎসকের অনুপস্থিতি হেতু চিকিৎসাগত প্রয়োজন বা অন্য কোন শরীয়ত অনুমোদিত ওযর ছাড়া কোন নারীকে তার গাইরে মাহরাম পুরুষ দেখতে পারবেনা। উপার্জনহীনতার সময়েও বেপর্দা অবস্থায় পড়া পড়ানো ওযরের অন্তর্ভুক্ত না। কারন সাধারণভাবে সুস্থ কোন মানুষের জন্য উপার্জনের পদ্ধতি পর্দাহীন পরিবেশে পড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে পারেনা। সুস্থ মানুষের জন্য এ ছাড়া ভিন্ন পদ্ধতিতেও উপার্জন করা সম্ভব।
আল্লাহ্ তায়ালা উপার্জনের জন্য আমাদেরকে মেধার পাশাপাশি শারিরিক শক্তিও দিয়েছেন। তাই মেধাকেন্দ্রিক শ্রমের (পড়ানো ও অন্যান্য) মাধ্যমে যদি বৈধ উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে হালাল পদ্ধতিতে কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে রিযিক অনুসন্ধান করতে হবে। এই জায়গাটাতে আমাদের সবচেয়ে বড় বাঁধা হচ্ছে সামাজিক ট্যাবু। এটা করা যাবে আর ওটা করা যাবেনা টাইপের মানসিকতা। 
অথচ রাসূলুল্লাহ সাঃ যখন আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা তখনও তিনি এক ইহুদীর বাগানে পানি সেঁচের কাজ করে দিয়ে উপার্জন করেছেন। সেদিন তার ঘরে কোন খাবার ছিলোনা। এটা শুধু রাসূলের ক্ষেত্রেই না। আলী রাঃ সহ অনেক বিখ্যাত ও ক্ষমতাবান সাহাবীর ক্ষেত্রেও ঘটেছে। তারা হালাল পথের উপার্জনকে কখনো ছোট করে দেখেননি। যার সামর্থ্য ছিলো ব্যাবসা করেছেন আর যার অর্থনৈতিক সামর্থ্য ছিলোনা তারা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে সামান্য কিছু ইনকাম করেই দিন কাটিয়ে দিয়েছেন। সেভিংস আর প্রাচুর্যপূর্ণ বিলাসী জীবন নিয়ে তারা কখনোই ভাবেননি। জীবন ধারন উপযোগী সামান্য উপকরণেই তারা সন্তষ্ট ছিলেন। এই অল্পে তুষ্টিই ছিলো তাদের নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের রহস্য। 
তাই আমাদেরও উচিত সর্বোতভাবে হালালকে আঁকড়ে ধরা। নিজের সর্বোচ্চ মেহনত হলেও সামান্য উপার্জনে সন্তষ্ট থাকা। তথাকথিত স্ট্যাটাস আর ট্যাবুর  খপ্পরে পড়ে গুনাহের পথে পা না বাড়ানো।
তবে যদি সর্বোচ্চ ও নিখুঁত পর্দা রক্ষা করে পর্দার আড়াল থেকেই মেয়েকে পড়ানো যায় তাহলে তা না জায়েজ হবেনা। আমার মনেহয় যে কোন রুচিশীল পরিবার এভাবে পর্দা রক্ষা করে ক্লাসের প্রস্তাবে অসম্মত হবেনা। বরং এটাকে তাদের মেয়ের জন্য সেইফ মনে করবে। 
দ্বীন পালন করতে গিয়ে যখনই রিযিকের কষ্ট হবে তখন কোরআনের এই আয়াতটা স্মরণ করবেন, "যে তাক্বওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য পথ করে দেন। এমন জায়গা থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করেন যা সে কল্পনাও করেনি।" সূরা তালাক, আয়াত-২-৩
আর এই প্রতিকূল সময়ে সবচেয়ে বেশি ইস্তিগফার (আল্লাহর কাছে সব ধরনের গুনাহ থেকে ক্ষমাপ্রার্থণা) করবেন। কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে, "হে নবী, আপনি তাদেরকে ক্ষমা চাইতে বলুন, নিশ্চয় প্রভু অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (আর ক্ষমাপ্রার্থীকে সাহায্যের জন্য) তিনি প্রেরণ করেন প্রবল বৃষ্টি (যা ফসলের জন্য পর্যাপ্ত ও উপকারী) এবং তাদেরকে সহায়তা করেন সম্পদ ও সন্তানের আধিক্য দ্বারা। তাদের জন্য তৈরী করেন উদ্যান ও প্রবাহিত করেন নদীনালা।" 
সূরা নূহ, আয়াত-১০‌-১১-১২
অতএব, প্রিয় ভাই নিজেকে সর্বোতভাবে রবের সামনে উৎসর্গিত করলেই বিপদ থেকে মুক্তি ও আসমানী সাহায্য পাওয়া সম্ভব। বিপদের সময় নাফরমানীর পথে পা বাড়ানোর দ্বারা বিপদ কমেনা বরং সত্যিকারের চিরস্থায়ী বিপদের ভাগীদার হতে হয়। জীবন থেকে তখন আল্লাহর বরকত ও রহমত উঠে যায়। যা সব রকম বিপর্যয় আর অশান্তির সূচনা ঘটায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর পূর্ণ আনুগত্যের তাওফীক দিন।


------------------ 
উত্তর প্রদানে - মুফতি Affan Bin Sharfuddin
সহকারী পরিচালক ও মুফতী, জামিয়া উসমান রাঃ, খিলখেত, ঢাকা।
ভাইস চেয়ারম্যান, জাবালে রহমত ফাউণ্ডেশন, বাংলাদেশ।

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf