পূর্বের ৩ খলিফা ও সাহাবাদের ব্যাপারে শিয়া, খারেজীদের প্রশ্নের জবাবে আলি (রা)

খুলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম ৩ খলিফার প্রতি আলী(রা)এর সম্মান ও আনুগত্যকে পরবর্তী সময়ে শিয়া দাবিকারী সাবাঈ দল ও শিয়া থেকে বের হওয়া খারেজীদের কাছে বিরক্তিকর,অসম্ভব ও অন্যায় মনে হত। কিন্তু হযরত আলী(রা) প্রকাশ্যে পূর্বের খলিফাদের প্রতি তাঁর সম্মতি ও শ্রদ্ধার জানান দিতেন; যেমনটি এসেছে ইতিহাসের কিতাবের গ্রহণযোগ্য রিওয়ায়াতেঃ-

হাসান বসরী(র) থেকে বর্ণনা এসেছে যে, আলী(রা) যখন বসরায় গিয়ে তালহা(রা) ও তাঁর সহযোগীদের ব্যাপারে খবর নিচ্ছিলেন, তখন খারেজীদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে কাওয়া ও কায়স বিন আব্বাদ দাঁড়িয়ে গেল এবং আলী(রা)এর এই আসার ব্যাপারে প্রশ্ন রেখে বলল- ‘আপনি কেন এসেছেন,হে আমিরুল মুমিনীন? এটা কি রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’র নির্দেশ? নাকি রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর দেয়া ওয়াদা যা আপনাকে পূরণ করতে বলে গিয়েছেন? নাকি উম্মাহর বিখণ্ডতা ও বর্তমান অবস্থা দেখে এটা শুধু আপনি নিজের ইচ্ছায় করছেন?’
আলী(রা) জবাব দিয়ে বললেন- “সত্য হল, আল্লাহ্‌র শপথ, নবী(ﷺ)কে হত্যা করা হয়নি এবং অথবা তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাননি। তিনি এমন সময় পর্যন্ত অসুস্থ ছিলেন যখন মুয়াজ্জিন সালাতের জন্য আহ্বান করত এবং নবী(ﷺ) আবু বকরকে সালাতে ইমামতি করতে নির্দেশ করতেন। তাঁর(ﷺ) একজন স্ত্রী চেয়েছিলেন অন্য কেউ সালাতে ইমামতি করুক। কিন্তু নবী(ﷺ) এই প্রস্তাবকে শুধু ফিরিয়েই দেননি বরং রাগান্বিত হয়ে বলেছিলেন- “তোমরা ইউসুফ(আ)এর সাথীদের মত! আবু বকরকে সামনে দাও, যেন সেই সালাতে ইমামতি করে”

যখন নবী(ﷺ)এর ওফাত হল, আমরা নিজেদের ব্যাপারসমূহের দিকে দৃষ্টি দিলাম,চাইলাম আমাদের মধ্য থেকে এমন একজনকে নেতা হিসাবে নির্বাচিত করতে যাকে দিয়ে আমাদের পরিচালিত করার ব্যাপারে আল্লাহ্‌র নবী(ﷺ) রাজিখুশি ছিলেন। সালাত ইসলামের মৌলিক উসুল; এবং দীনের শক্তিশালী খুটি [যেহেতু এই নামাযের ইমামতির জন্য রাসূল(ﷺ)তাকে নির্বাচন করেছেন সেহেতু] আমরা এই খেলাফতের ইমামতির জন্য আবু বকরকে বাইয়্যাত দিলাম, কারণ তিনিই এর জন্য সর্বাধিক যোগ্য ছিলেন। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য হয়নি, অথবা আমরা কেউ এ নিয়ে আপত্তি তুলিনি বা আমরা এই খিলাফত থেকে নিজেদের দায়মুক্ত করিনি। আমরা তাঁর(আবু বকর) প্রতি অনুগত ছিলাম। আমি তাঁর যথাযথ সম্মান দিতাম এবং তাঁর হক্ক আদায় করতাম। তাঁর(আবু বকর) বাহিনীতে সৈন্য হিসাবে যুদ্ধ করেছি যেকোন পদে। আমি তাঁর যুদ্ধের ডাকের জন্য সদাপ্রস্তুত থেকেছি। এমনকি তাঁর উপস্থিতিতে আমি আমার চাবুক দ্বারা হুদুদ কায়েম করেছি।

যখন তিনি মারা গেলেন, উমর উম্মতের পরিচালনার ব্যাপারে তাঁর পূর্বসূরি (আবু বকর রা.)’র পদক্ষেপ অনুসরণ করলেন। অতপর আমরা উমরের বাইয়্যাত করলাম,কারণ তিনিই খলিফা হবার সর্বাধিক যোগ্য ছিলেন। আমাদের কোন দ্বিতীয় ব্যক্তি এর বিরোধিতা করেনি অথবা আপত্তি তুলেনি বা উমরের খিলাফত থেকে দায়মুক্তি ঘোষণা করেনি। আমরা তাঁর অনুগত ছিলাম এবং সম্মান করেছি। আমি তাঁর যথার্থ হক্ক এবং আনুগত্যের ব্যাপারে সজাগ থেকেছি। তাঁর বাহিনীতে যেকোন পদমর্যাদায় যুদ্ধ করেছি। আমি সর্বদা প্রস্তুত থাকতাম যখনি তিনি যুদ্ধের জন্য ডাক দিতেন।এমনকি তাঁর(উমর রা.) উপস্থিতিতে আমি আমার চাবুক দ্বারা হুদুদ কায়েম করেছি।

উমর যখন মারা গেলেন, আমি নিজের নৈকট্য(নবী ﷺ এর পরিবারের সাথে),আমার সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ এবং আমার মর্যাদা স্মরণ করলাম। সাথে এও মনে হল যে, আমাকে দিয়ে হয়ত সেই নামপরিচয়ের মানরক্ষা/ইনসাফ হবে না। কিন্তু উমর রা. ভয় পাচ্ছিলেন যে, তাঁর পরবর্তী খলিফা হয়ে যদি কেউ ভুল করে তিনি কবরবাসী হয়েও এর ভুক্তভোগী হবেন। তাই সেই ভুলের দায়ভার থেকে উমর নিজেকে এবং তাঁর পুত্রকে বের করে ফেললেন; যদি তাঁর সেদিকে আগ্রহ থাকত তাহলে তিনি তাঁর ছেলেকেই প্রাধান্য দিতেন(খিলাফতের ভার দিয়ে যেতেন)। উমর রাঃ এসবের থেকে দায়মুক্ত থেকে কুরাইশের ছয়জনকে খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন, আমি তাঁদের মধ্যে একজন।

যখন তাঁদের সবাইকে নিয়ে একত্র হলাম, আবারো আমার অগ্রে ইসলাম গ্রহণ,মর্যাদার কথা ভাবলাম, কিন্তু এও মনে হল যে আমার মাধ্যমে ইনসাফ হবে না। এমতাবস্থায় আমি এবং আব্দুর রহমান ইবন আউফ(রা) শপথ করলাম যে আমরা মনোনীত খলিফার কথা শুনব এবং অনুগত থাকব। এরপরেই যখন দেখলাম আব্দুর রহমান ইবন আউফ তাঁর বাইয়্যাত উসমান(রা)কে দিচ্ছেন; আমি কিছুক্ষণ চিন্তায় থাকার পরে উপলব্ধি করলাম যে, আমার নিজের খলিফা হবার ইচ্ছার চেয়ে নির্বাচিত খলিফার আনুগত্যের শপথ রক্ষা বেশি জরুরি। আমরা উসমান(রা)কে খলিফা হিসাবে বাইয়্যাত দিলাম। আমি তাঁর যথাযথ সম্মান দিতাম এবং তাঁর হক্ক আদায় করতাম। তাঁর(আবু বকর) বাহিনীতে সৈন্য হিসাবে যুদ্ধ করেছি যেকোন পদে। আমি তাঁর যুদ্ধের ডাকের জন্য সদাপ্রস্তুত থেকেছি। এমনকি তাঁর উপস্থিতিতে আমি আমার চাবুক দ্বারা হুদুদ কায়েম করেছি।
অতপর তিনি(উসমান রা.) আঘাতপ্রাপ্ত হলে আমি আমার নিজের ব্যাপারে লক্ষ্য করলাম। রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এরপরে সালাত আদায়কারী সেই দুই খলিফা যখন অতীত হয়েছেন, এবং এই খলিফা(উসমান) আঘাতপ্রাপ্ত ও শহীদ হলেন। তখন দেখলাম মক্কা,মদিনা,কুফা ও বসরার জনগণ আমাকে খিলাফতের বাইয়্যাত করল। ”

[সিয়ার আ’লামিন নুবালা ২৪০-২৪২/১; তারিখে দামেশক ৪৪২/৪২; তারিখুল খুলাফা’-সূয়ূতী ১৫৭/১] 



------------------ 
~ The Rafidologist

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf