আবুল হাসান আশআরী রহ. এর ব্যাপারে অপপ্রচার ও কমনসেন্সের কিছু কথা…

ইমাম আবুল হাসান আশআরী রাহ. এর ব্যাপারে একটা কথা চাওর আছে যে, তিনি শেষ জীবনে নাকি সালাফি হয়েছিলেন। সুতরাং আশাআরী রাহ. নিজেই শেষ পর্যন্ত 'আশআরী' ছিলেন না। এই দাবীটা নিয়ে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলি। তাহলে পুরো বিষয় সম্পর্কে একটা সামগ্রিক ধারণা পাবেন। 

ইমাম আশআরী স্পষ্টভাষায় কোথাও বলেননি যে, আমি এতদিন যা বলেছি সব ভুল ছিল। এখন আমি বুঝতে পেরে রুজু করলাম। বরং বিষয়টা উনার একটা কিতাব 'আল-ইবানা' এর মধ্যে সিফাতের ক্ষেত্রে উনার অনুসৃত পন্থা থেকে পরবর্তীতে কেউ কেউ ধারনা করে নিয়েছেন। 

এখন এখানে সবচে বড় যে প্রশ্নটা আসে তা হলো, ইমাম আশআরী যদি আগের মত থেকে ফিরে আসেন এবং সেটাকে ভুল মনে করেন তাহলে সেটা কেন তিনি স্পষ্টভাষায় বলে গেলেন না? এটা তো দায়-দায়িত্বের বিষয়। উনি নিজেও জানতেন আকীদার ক্ষেত্রে সমযুগের অন্যরা তাকে ইমাম ও অনুসরণীয় মনে করে। তিনি এতদিন যে ভুল করে এসেছেন এবং তাকে অনুসরণ করে অন্যরাও সেই ভুলে পতিত হয়েছিলেন তাদেরকে সেই ভুল থেকে মুক্ত করা উনার দায়িত্ব ছিল না? তাহলে কেন উনি স্পষ্টভাষায় বলে গেলেন না বিষয়টা? মুতাযিলীদের আকিদা থেকে ফিরে আসার পর যেভাবে তিনি এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন এবং এর ভুলগুলো খুলেখুলে তুলে ধরেছিলে, সেরকম কেন করলেন না? তার মাধ্যমে যারা পূর্বে গোমরাহ (?) হয়েছিল এবং আহলুস সুন্নাহর বাইরে চলে গেছিল তাদেরকে এর থেকে বাঁচানো জরুরি ছিল উনার উপর। মূলত আমাদের সেসব ভাইদের এমন বক্তব্য আসলে উনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বৈ ভালো কিছু করে না। অথচ আলেমদের শান হলো, তাদের কোন মতাদর্শ বা বক্তব্য যদি পরে ভুল বুঝেন, সেটাকে প্রকাশ্যেই বলে যান। যাতে অন্যরা সংশোধন হয়ে যেতে পারে এবং তিনি নিজেও দায়মুক্ত হন। এমন বহু দৃষ্টান্ত আছে। 

তারপর কথা হলো, উস্তাদ ইমাম আশআরী শেষ জীবনে এসে সালাফি হলেন আর এটা উনার ছাত্ররা কেউ-ই জানল না? তারা কেন কেউ এটা বলে যান নাই। সবাই না হোক অন্তত দুই/তিনজন হলেও তো বলার কথা। উনার ছাত্রদের সবাই ব্যাপারটা জেনেও এড়িয়ে গেছেন এমন কুধারণা করা অসম্ভব। তো উনার ছাত্ররা তার সাথে দীর্ঘদিন অবস্থান করেও এটা কেউ জানলো না, বুঝলো না যে তাদের উস্তাদ সালাফি হয়ে গেছেন এবং আগের মতকে ভুল মনে করেন। তারা উস্তাদের থেকে পূর্বে শেখা মতই প্রচার করে গেলেন সারাজীবন। এভাবে তাদের থেকে তাদের ছাত্ররা শিখল, তারপর তাদের থেকে আবার তাদের ছাত্ররা শিখল, বর্ণনা করল। এবং যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসল। তারা বিষয়টা জানতে পারল না। কিন্তু উনার মৃত্যুর বহু বছর পরে অন্যরা সেটা আবিষ্কার করলো যে, ইমাম আশআরী শেষ জীবনে সালাফি হয়ে গেছিলেন। পুরো বিষয়টা নিজের সুস্থ বিবেক দিয়ে চিন্তা করে দেখেন যে এটাকে সমর্থন করে কিনা? 

আমি এখানে বিভিন্ন দলীল-প্রমাণ ও ফুলান-ফুলানের বক্তব্যের দিকে যাচ্ছি না। ইতিহাসে এসব নিয়ে নানামুখী কথা আছে। আমি যাস্ট কমনসেন্সে যে জিনিসটা আসে সেটা উপস্থাপন করলাম। পয়েন্টগুলো একটু চিন্তা করবেন ঠান্ডা মাথায়। এগুলোর কোন উত্তর কারো কাছে থাকলে সেটা জানাতে পারেন কমেন্টে মুযাকারা হিসেবে। হয়ত আমিও এর দ্বারা উপকৃত হবো। কারণ আমি উনার ছাত্র বা ছাত্রের ছাত্রদের থেকে এমন বক্তব্য খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও তারীখে দিমাশকের রচয়িতা ইবনু আসাকির রাহ. তার 'তাবয়ীনু কাযিবিল মুফতারি' বা 'অপবাদদানকারীর মিথ্যার অপনোদন' নামক গ্রন্থে এমন দাবীগুলোকে জোরালোভাবে রদ করেছেন। বইটার নাম থেকেই বিষয়বস্তু কিছুটা অনুমান করতে পারছেন নিশ্চয়ই। (আমি এটার হার্ডকপি কেনার জন্য বিভিন্ন মাকতাবা খু্ঁজেও পাইনি। পরে প্রাচীন একটা পিডিএফ থেকে কিছু অংশ পড়েছিলাম।)  

তাছাড়া যারা ধরণা করে ইমাম আশআরী শেষ জীবনে সালাফী হয়ে গেছিলেন তারা মূলত ইমাম আশআরীর লেখা আল-ইবানা কিতাবের উপর ভিত্তি করে এটা বলে। কিতাবটার মধ্যে 'দাছ' এর আপত্তি আছে। দাছ মানে পরবর্তীতে কেউ এতে নানান বিষয় অনুপ্রবেশ করিয়েছে। আগে যেহেতু ছাপাখানা  ছিল না, হাতে লিখে কপি করতে হতো তাই এমন ঘটনা অনেক ঘটত। দাছ নিয়ে বহু ঘটনা আছে ইতিহাসে। 

কিন্তু আমরা ধরে নিলাম যে, এতে অনুপ্রবেশ হয়নি কিছু। কিতাবটা ঠিকই আছে। এতেও অসুবিধা থাকে না। কারণ এটা মেনে নিয়েই বলা যায়, ইমাম আশআরী শেষ জীবনে তাবিল থেকে তাফয়িদকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেহেতু এটি অধিক নিরাপত। আর এই দুইটাই মাযহাবের গ্রহণীয় মত। সুতরাং এটা 'মিন মাযহাব ইলা মাযহাব' বা একই বিষয়ের দুইটা মতের একটা থেকে অন্যটাতে আসা হয়েছে। উনি শেষ জীবনে এসে সালাফী হয়েছেন ব্যাপারটা এমন না। এই বিষয়টা হামযা বাকরি সাহেব সুন্দরকরে গুছিয়ে বলেছেন। উনার আলোচনার লিংকটা কমেন্টে দিবো। ছোট ক্লিপ, দেখে নিতে পারেন। (ড. হামযা বাকরির আলোচনাটার লিংক-

সবশেষে কমেন্টে আলোচনা-পর্যালোচনামূলক মন্তব্য করতে পারেন। এতে সকল চিন্তাধারার লোকজন খোরাক পাবে। কিন্তু অহেতুক আউল-ফাউল কমেন্ট করলে যথাযথ ব্যবস্থা নিব। শুকরান।

-----------------

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf