মু'তাযিলা ফিরকার উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ভ্রান্ত ফিরক্বাহ মু'তাযিলাদের উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
এই ফিরক্বাহর প্রবর্তক ওয়াসেল ইবনু আ'তা।
ওয়াসেল খারেজী ও মুরজিয়া দের আক্বীদার ব্যাপারে তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. থেকে ফতোয়া আনতে যাওয়ার পর তাঁর উত্তরের অপেক্ষায় না করেই নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে খারেজী ও মুরজিয়া দের মাঝামাঝি আক্বীদা গ্রহন করে।
অর্থাৎ কবীরাহ গুনাহ কারী কাফেরও না আবার মুমিনও না!! তার এই ধরনের আক্বীদাহ পোষণ করায় ইমাম হাসান বসরী রহ  তাকে তার মজলিস থেকে বেরও করে দিয়েছিলেন যেমনটি ইমাম বাগদাদী উল্লেখ করেন।
ইমাম শাহরাস্তানী রহ. এ ব্যাপারে  বলেন,
'এক ব্যক্তি হাসান বসরির মজলিসে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করলঃ হে দ্বীনের ইমাম! আমাদের এই যামানায় একটা দলের উদ্ভব হয়েছে যারা কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত মুসলমানদের কাফের আখ্যায়িত করে। তাদের নিকট কবীরাহ গুনাহ হচ্ছে এমন কুফর যা মিল্লাতে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আর তারা হচ্ছে, ওয়াইদিয়া খারেজি (ওয়াইদিয়া হচ্ছে, যারা আল্লাহর ওয়াইদ তথা সতর্ক ও ধমক সংক্রান্ত নসের উপর আমল করে আর তার প্রয়োগ করে)।
আরেকটি দলের উদ্ভব হয়েছে, যারা কবীরাহ গুনাহ কারীদের ইরজা করে (অর্থাৎ অবকাশ দেয়)। তাদের নিকট কবীরাহ গুনাহ ঈমানের কোনই ক্ষতি করেনা! বরং তাদের মাযহাব মুতাবেক আমল ঈমান কোন রুকনই না। তাই তারা ভাবে, গুনাহ ঈমানের কোন ক্ষতিই করতে পারেনা। যেমনটি কুফরে থাকা অবস্থায় নেককার কাজের কোনই লাভ নেই। এরা উম্মতের মুরজিয়া ফিরক্বাহ।
সুতরাং আপনি এক্ষেত্রে এসব আকীদাহ পোষণকারীদের ব্যাপারে কি ফয়সালা দিবেন?
হাসান বসরী রহ. এব্যাপারে একটু ভাবতে লাগলেন। তো তিনি কোন জবাব দেওয়ার আগেই (মজলিসে উপস্থিত) ওয়াসেল ইবনু আ'তা তাকে এই জবাব দিল যে, আমি কবীরাহ গুনাহকারীদের মুতলাক ভাবে মুমিন মনে করিনা। বরং এ ধরনের ব্যক্তি দুই স্তরের মাঝখানের স্তর। অর্থাৎ এরা মুমিনও না আবার কাফেরও না!
এরপর ওয়াসেল ওঠে গিয়ে মসজিদের খুঁটি ও স্তম্ভ সমূহেরর মাঝে একটি খুঁটির এককোণে সরে গেল এবং হজরত হাসান বসরীর শিষ্যদের তার দেওয়া এই জবাবের (এই মতবাদের পক্ষে) আলোচনা করতে লাগল।
এই অবস্থা দেখে হাসান বসরী রহ. বললেন,
ওয়াসেল আমাদের মত (আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মত) থেকে ই'তিযাল করেছে (অর্থাৎ দূরে সরে গিয়েছে)। এরপর থেকে তাকে ও তার শিষ্যদের মু'তাযিলা নামে আখ্যায়িত করা হয়।'
ودخل رجل على الحسن البصري، فقال: يا إمام الدين: لقد ظهرت في زماننا جماعة يكفرون أصحاب الكبائر، والكبيرة عندهم كفر يخرج به عن الملة، وهم وعيدية الخوارج، وجماعة يرجئون أصحاب الكبائر، والكبيرة عندهم لا تضر مع الإيمان؛ بل العمل على مذهبهم ليس ركنا من الإيمان، فلا يضر مع مع الإيمان معصية، كما لا ينفع مع الكفر طاعة، وهم مرجئة الأمة، فكيف تحكم لنا في ذلك اعتقادا؟ ففكر الحسن في ذلك, وقبل أن يجيب قال واصل بن عطاء: أنا لا أقول أن صاحب الكبيرة مؤمن مطلق، ولا كافر مطلقا؛ بل هو في منزلة بين المنزلتين، لا مؤمن ولا كافر، ثم قام واعتزل إلى أسطوانة من أسطوانات المسجد يقرر ما أجاب به على جماعة من أصحاب الحسن. فقال الحسن: اعتزلنا واصل، فسمي هو وأصحابه المعتزلة
[আল মিলালু ওয়ান নিহাল, শাহরাস্তানী ১/৫২]
ইমাম আব্দুল ক্বাহের আল বাগদাদী রহ.   এ ব্যাপারে বলেন,
'নিশ্চয়ই ওয়াসেল ইবনু আ'তা এও ধারণা পোষণ করে যে, এই উম্মতের ফাসেকরা (কবীরাহ গুনাহকারীরা) না মুমিন না কাফের! সে কবীরাহ গুনাহকে ঈমান ও কুফরের মাঝখানের স্তরের মনে করে।
তার এই বক্তব্য হাসান বসরী রহ. শুনলে তিনি তাকে তাঁর মজলিস থেকে বের করে দেন এবং এরপর তার সাথে মিলিত হল (তার মতবাদ গ্রহণ করল) তারই বন্ধু উমর ইবনু উবাইদ। 
একারণে লোকেরা এই দুইজনের ব্যাপারে বলতে লাগলঃ এরা দু'জনেই উম্মতের (আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের) মত থেকে ই'তিযাল করেছে তথা সরে গিয়েছে। এরপর সেদিন থেকেই তাদের উভয়ের অনুসারীদের মু'তাযিলা আখ্যায়িত করা হয়।'
إن واصل بن عطاء زعم أن الفاسق من هذه الأمة لا مؤمن ولا كافر، وجعل الفسق في منزلتي الكفر والإيمان، وأن الحسن البصري لما سمع ذلك منه طرده من مجلسه، وانضم إليه صديقه عمرو بن عبيد ، فقال الناس فيهما: إنهما قد اعتزلا قول الأمة، وسمي أتباعهما من يومئذ معتزلة
[আল ফারকু বাইনাল ফিরাক্ব, আব্দুল ক্বাহের বাগদাদী পৃ.২০]
এছাড়াও এদের ব্যাপারে আরো জানতে দেখুনঃ আল মাওয়ায়েজু ওয়াল ই'তেবার বি যিকরিল খুত্বাত্বি ওয়াল আসার, মাকরেযী ৪/১৬৫; ওয়াফায়াতুল আ'য়ান, ইবনু খাল্লিকান ৪/৮৫; দিরাসাত ফিল ফারক্বি ওয়াল আক্বায়িদিল ইসলামিয়া পৃ.৮৫।

------------------ 
লিখেছেনঃ Abdullah Al Mamun

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf