বায়েজিদ বোস্তামী হানাফী বলেই কি এত বিদ্রুপ ???

বায়েজিদ বোস্তামী নামে তিনি প্রসিদ্ধ.তার মূল নাম তইফুর, আর উপনাম আবু ইয়াজিদ, উপাধি আল বিস্তমী, পিতার নাম ঈসা।
যুগ শ্রেষ্ঠ রিজাল শাস্ত্রবিশারদরা তাকে যামানার ওলি, দুনিয়া বিমুখ পরহেজগার বান্দা হিসেবেই চিনেন।
নিম্নে তার সম্পর্কে  কিছু  রিজাল শাস্ত্রবিদ ও ঐতিহাসিক যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামদের মত উল্লেখ করছি.

✔ইমাম যাহাবী বলেন -
ﺃﺑﻮ ﻳﺰﻳﺪ ﺍﻟﺒﺴﻄﺎﻣﻲ ﺳﻠﻄﺎﻥ ﺍﻟﻌﺎﺭﻓﻴﻦ ﺃﺑﻮ ﻳﺰﻳﺪ ﻃﻴﻔﻮﺭ ﺑﻦ ﻋﻴﺴﻰ ﺑﻦ ﺷﺮﻭﺳﺎﻥ ﺍﻟﺒﺴﻄﺎﻣﻲ ﺍﺣﺪ ﺍﻟﺰﻫﺎﺩ

আল্লামা আবু ইয়াজিদ বুস্তামী রাহ. হলেন সুলতানুল আরেফীন ও আল্লাহ ওয়ালা দুনিয়া বিমুখ।
- সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৩/৮৬

হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানি বলেন -
ﻃﻴﻔﻮﺭ ﺑﻦ ﻋﻴﺴﻰ ﺃﺑﻮ ﻳﺰﻳﺪ ﺍﻟﺒﺴﻄﺎﻣﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺷﻴﺦ ﺍﻟﺼﻮﻓﻴﺔ ﻟﻪ ﻧﺒﺄ ﻋﺠﻴﺐ ﻭﺣﺎﻝ ﻏﺮﻳﺐ ﻭﻫﻮ ﻣﻦ ﻛﺒﺎﺭ ﻣﺸﺎﺋﺦ ﺍﻟﺮﺳﺎﻟﺔ
(969) আবু ইয়াজিদ বুস্তামী রাহ. সুফীদের শায়েখ। তার অনেক আশ্চর্য ঘটনা ও বিবরন আছে। তিনি বড় শায়েখদের একজন।
- লিসানুল মীজান ৩/২১৪

হাফেজ ইবনে কাসির র. বলেন-
ﺃﺑﻮ ﻳﺰﻳﺪ ﺍﻟﺒﺴﻄﺎﻣﻲ :
ﺍﺳﻤﻪ ﻃﻴﻔﻮﺭ ﺑﻦ ﻋﻴﺴﻰ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﺃﺣﺪ ﻣﺸﺎﻳﺦ ﺍﻟﺼﻮﻓﻴﺔ
আবু ইয়াজিদ বুস্তামী সুফী শায়েখদের একজন।
-আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১১/৫৩

✔আবু ইয়াজিদ র. হানাফী ছিলেন :
ইমাম আলাউদ্দীন হাসকাফি র. এর ভাষ্যমতে তিনি হানাফী ছিলেন.
(মুকাদ্দিমাতুদ দুররিল মুখতার)

✔তার উপর উত্থাপিত কিছু অভিযোগ ও আমাদের মুল্যায়ন :
আবু ইয়াজিদ র. একজন আল্লাহর ওলি ছিলেন। আর এটা শতসিদ্ধ কথা যে,আল্লাহর খাছ বান্দাদের সমন্ধে বানোয়াট কথা রটনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই মহামারি থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাগণ রা. ও বাদ পড়েন নাই। তদ্রূপ আবু ইয়াজিদ র. এর সমন্ধে কিছু বানোয়াট ঘটনা ও কিচ্ছা রটেছে। 

সহীহ্ বুখারীর শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারক ইবনে হাজার র. বলেন-
وقد نقلوا عن أبي يزيد أشياء الشك في صحتها
তার সমন্ধে এমন কিছু উদ্ভট কথা বর্ণিত হয়েছে যার শুদ্ধতার ব্যপারে সন্দেহ রয়েছে.
-লিসানুল মিযান প্রাগুক্ত

ইবনে তাইমিয়া র. বলেন :
وكذلك بعض الغلاة في المشايخ فيهم من قد يعتقد الحلول والاتحاد في بعض المشايخ ويحكون كلمات مجملة أو فاسدة عن أبي يزيد البسطامي وغيره مضمونها الحلول
পীর মাশায়েখদের মধ্য হতে  গোঁড়ামী প্রিয় লোকেরা কিছু বুযুর্গ সমন্ধে  হুলুল ইত্তেহাদ (সর্বেশ্বর বাদী) আকীদার বিশ্বাস করেন. আর তারা আবু ইয়াজিদ সহ প্রমুখ আল্লাহর ওলিদের সমন্ধে হুলুল ইত্তেহাদ বিষয়ক  অস্পষ্ট ও ভ্রান্ত বানোয়াট কথা বর্ননা করে থাকে.
- আর রদ আলাশ শাযালী, ১৭৭

✔একটি বাস্তবতা :
অনেক সময় মানুষ বেশী  খুশিতে আত্নহারা হয়ে অবচেতনমনে উল্টো কথা বলে ফেলে.এটা চরম বাস্তবতা
যেমনটি সহীহ্ মুসলিমের হাদীসে এসেছে নবী স. তাওবাহ করলে আল্লাহ কেমন খুশি হন এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, এক উট হারা ব্যক্তি উটের সন্ধান পেয়ে খুশিতে  নিজের অবচেতনমনে আল্লাহর শুকরিয়া প্রকাশ এভাবে করে যে,
  اللهم أنت عبدي وأنا ربك
হে আল্লাহ আপনি আমার গোলাম আর আমি আপনার প্রভু
ঠিক তদ্রুপ আল্লাহর খাস বান্দাহগণ আল্লাহর মারেফাতের অফুরন্ত নেয়ামত  দেখে মাঝে মধ্যে অবচেতন হয়ে উল্টো ও অস্পষ্ট কথা বলে ফেলেন. যদি আমরা শাইখ আবু ইয়াজিদ এর ক্ষেত্রে এসব অস্পষ্ট কথার উদ্ধৃতি মেনেও নেই তাহলে উপরোক্ত বাস্তবতা বহির্ভূত নয়।
 
ইবনে তাইমিয়া বলেন :
والذين يذكرون عن أبى يزيد وغيره كلمات من الاتحاد الخاص ونفي الفرق....
 فمثل هذا الحال التي يزول فيها تمييزه بين الرب والعبد وبين المأمور والمحظور ليست علما ولا حقا ، بل غايته أنه نَقَصَ عقلُه الذي يفرق به بين هذا وهذا ، وغايته أن يعذر لا أن يكون قوله تحقيقا اهـ
আর লোকেরা শাইখ আবু ইয়াজিদ  সহ প্রমুখ বুযুর্গদের ব্যপারে খাস হুলুল ইত্তেহাদ (সর্বেশ্বর বাদী ) আকীদার কথা বর্ণনা করে থাকে.......
 এর উপমা হল, এই স্তরে পৌছলে মানুষ অবচেতন হয়ে যায় সে প্রভু ও গোলামের পার্থক্য করতে পারে না, তার জায়েজ আর না জায়েজের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না.(যেমনটি সহিহ মুসলিমের বর্ননায় অতিবাহিত হয়েছে)
আর এগুলো সজ্ঞান প্রসুত ও বাস্তবিক বিষয় নয়।
এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হল আবু ইয়াজিদ র. অবচেতন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন.
তাই তার থেকে বাস্তবিকভাবে অপ্রমানিত হওয়ায় এসব বিষয় তার ক্ষেত্রে ওযর ধর্তব্য হবে।
-মাজমুউল ফাতাওয়া ৮/৩১৩

তবে স্পষ্ট ভাবে একটি কথা জানিয়ে দিতে চাই যে,আবু ইয়াজিদ র. মানুষ ছিলেন, মানুষ হিসেবেব তার ভুলত্রুটি হওয়াই স্বাভাবিক। কোন কোন বিষয়ে তার ভুল হতে পারে, যেমনটি আমাদের হয়ে থাকে তাই বলে তাকে বিদ্রুপ করা কোন মুসলিমের কাম্য নয়।
আফসোসের বিষয় হল, আমাদের কিছু অবুঝ ভাই তাকে কটাক্ষ করেন। আমার মনে হয় তিনি হানাফী বলেই তাকে নিয়ে এত তোলপাড় করা হয়। আর নয়তো সেসব ভাইদের বড় বড় শাইখদের তো ভুল হয়, কিন্তু কেন তাদেরকে নিয়ে বিদ্রুপ করা হয় না? কেন শাইখ আবু ইয়াজিদ কে তীরের লক্ষ বস্তু বানানো হয়...?

ইদানীং সেসব ভাইদের গুরুরা আবু ইয়াজিদ র সমন্ধে একটি উক্তি প্রচার করে মঞ্চ কাপান :
بحثت الله اربعين سنة فما وجدته فإذا هو انا الله
আমি চল্লিশ বছর আল্লাহকে খুজেছি কিন্তু পাইনাই। পরে দেখলাম যে, আল্লাহ তো আমি নিজেই। নাউজুবিল্লাহ
 
তারা রেফারেন্স হিসেবে ভ্রান্ত বেরলভী আর তাদের শাইখের কিতাবের রেফারেন্স দেয়.
আজব লাগে তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে তারা সর্বদাই সনদ গবেষণার বুলি আওড়ায় শাইখ আবু ইয়াজিদের এই বুলি প্রচার করার সময়, একবারও কি  এই উক্তির  সানাদ নিয়ে ভেবে দেখেছেন তারা....?
সানাদ কি সহীহ্ না যায়ীফ...?
নাকি এই উক্তির কোন সানাদই নেই....?
কেন এসব লুকোচুরি! !!
.
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ شُهَدَاء بِالْقِسْطِ وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
.
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি বিদ্বেষ  যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
- সুরা মায়েদা, আয়াত ০৮
.
লেখকঃ মুফতি শাহেদ আমিন

মন্তব্যসমূহ

Albas khan বলেছেন…
আগে স্পষ্ট করে বলুন তিনি হানাফী নাকি সূফী?
নামহীন বলেছেন…
দেখুন, সারা জীবন পডাশুনা করলাম, বড় বড় ডিগ্রি নিলাম, বিদ্যালয় সমূহের ্
মহান আল্লাহর একজন গুনাহগার বান্দা তথা রাসুল (স:)-এর নগন্য উম্মাত - বলেছেন…
"পুঁথিগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।"
দেখুন, সারা জীবন পড়াশুনা করেছি, বড় বড় ডিগ্রি নিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের লাইব্রেরিগুলোর বইয়ের মধ্যে দিবারাত্রি পড়ে ছিলাম, গুগুলসহ প্রচুর ওয়েবসাইট চষে বেড়িয়েছি, পবিত্র কুরআন শরীফ ও অন্য গ্রন্থগুলোও পড়ছি,প্রচুর সেমিনার, ওয়াজ মাহফিল, ওরশ শরীফ, শ্যামা মাহফিল, ভজন কিরতনে গিয়েছি, অনেক আলেম-ওলামা পীর-মাসায়েক, সাধু-সন্নাসীর কাছাকাছি গিয়েছি,
এখন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দেখি কিছুই জানিনা, কিছুই বুঝিনা, কিছুই শিখি নাই।বরং প্রকৃতি প্রদত্ত শিক্ষাই আসল শিক্ষা।
হজরত বায়জিদ বোস্তামি (র:) অন্যতম সম্মানিত একজন তাবেতাবেয়ি। উনার রেফারেন্স দিয়ে বড়পীর সাইয়েদিনা গাওসুল আজম মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী(র:) মানব কল্যাণে উপদেশমুলক কিতাবাদি লিখেছিলেন।

আমাদের প্রিয় নবী, বিশ্ব নবী মুহাম্মদ(স:) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল ও তাঁর বান্দা। ভয়াবহ হাসরের ময়দানে এমনকি নবী-রাসুলগনও রাসুল(স:)-এর সুফারিশ ব্যাতীত পুলসিরাত পার হতে পারবেননা।এ হতেই বোঝা যায় তিনি কত বড় মাকামের অধিকারী। সকল নবী রাসুলগনই তাঁর উম্মত হতে উদগৃব ছিলেন।
আর সুলতানুল আরেফিন হজরত বায়জিদ বোস্তামি (র:) ছিলেন নবীজীর সাহাবীগনের পরবর্তী প্রজন্মের উম্মতগণের মধ্যে অন্যতম।
উনিও মহান আল্লাহর একজন সন্মানিত বান্দা এবং রাসুল(স:)এর অতি নিকট জন। তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহপাক তাঁকে এমনই মাকাম দান করেছেন যে--- "তাঁকে সরাসরিভাবে দেখতে ফেলে আল্লাহকে দেখা হয়ে যায়।" সুবাহান আল্লাহ।
একমাত্র আল্লাহ যাঁকে মনোনিত করেন তিনিই তাঁর দেখা পান।

এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর বিশাল আলমে কোন বিষয়ে আমরা কোন কচু জানি? সঠিক উত্তর হল আমরা মূসা(আ:) চোখ দিয়ে খিজির (আঃ) সমালোচনা কিংবা বিচার করা চরম মূর্খতা ও পাপ খরিদ করা ছাড়া আর কিছুইনা।কারন খিজির(আ:) সরাসরি আল্লাহর হুকুম ব্যাতীত একটা পলকও ফেলেননা।
প্রভুহে, হে মহান আল্লাহ নিজগুনে নিজ বান্দাগনকে হেফাজত করুন, সত্য সঠিক পথে সু প্রতিষ্ঠিত করুন।

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf