উসূলুত তাকফীর : নাক্বেদুল ইমান ২

নাক্বেদুল ঈমান বা ঈমান ভঙ্গের কারণ - (২)
(দাড়ি,টুপি,পর্দা, আযান ও জিহাদ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ ও কটুক্তি করলে কি ঈমান থাকবে?)

ইসলামের কোন মৌলিক ও অকাট্য বিধানকে অথবা ইসলামের কোন শি'আর  নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যতা করা এবং হাসি-তামাশার পাত্র বানানোর যেকোনো কাজ কুফুরী।

যেমনঃ
দাড়ি, পুরুষদের টাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করা,ইসলামের সুমহান ও অকাট্য বিধান জিহাদকে বিভিন্ন শব্দে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, নামাজ-রোজা,হজ্জ, যাকাত,কালিমা,মেয়েদের পর্দা,আযান সহ বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে হাসি মজা ও ঠাট্টা ও কটুক্তি করা স্পষ্ট কুফুরি। এতে ঈমান চলে যাবে। এবং বিবাহিত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিবাহ ভেঙ্গে যাবে!

মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন- 

وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ ۚ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ   لاَ تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ

"আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক-ঠাট্টা করেছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? তোমাদের কোন ওজর চলবে না, তোমরা ঈমান আনার পর কাফের হয়ে গেছ।''

[সুরা আত তওবাঃ ৬৫-৬৬]

নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত,জিহাদ ,দাড়ি,
টাখনুর উপরে পুরুষদের কাপড় পরিধান করা,মেয়েদের পর্দা,আযান ইত্যাদি নিয়ে যারা মজা-ঠাট্টা ও কটুক্তি করে তাদের ২ টি অবস্থা-

১।শরীয়তের এসব বিধানকে লক্ষ্য করে হাসি-মজা করলে কুফুরী হবে যাতে সে কাফের হয়ে যাবে।কোন মহিলা বা স্বামী এমন কথা বা কর্মকান্ডে কাফের হয়ে যায় ফলে তাদের বিবাহ অটোমেটিকলি বিচ্ছেদ হয়ে যাবে, তাওবাহ না করে এবং পুনরায় মুসলিম না হয়ে উভয়ে মেলা মেশা করলে সেটি হবে যিনা এবং এর মাধ্যমে যেই সন্তান হবে  সে সন্তান ওলাদুয যিনা বা হারাম যাদা হবে।
(নাউযুবিল্লাহ)

২। শরীয়তের এই বিধানকে সে স্বীকার করে কিন্তু শরীয়তের বিধানকে পালনকারী এই ব্যক্তিকে সে এগুলো বলে হাসি-তামাশা করে তাহলে সেটাও কুফুরী কিন্তু সে কাফের হবেনা, কেননা তার উদ্দেশ্য শরীয়তের বিধানকে কটাক্ষ করা ছিলনা বরং ব্যাক্তিকে কটাক্ষ ও ঠাট্টা করা উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু সে এই কুফুরী করে কবীরা গুনাহ করল,কেননা কোন মুমিনকে উপহাস করা কবীরা গুনাহ।

আল্লাহ তা'লা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

হে মুমিনগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ ঈমান আনয়নের পর তাদের মন্দ নামে ডাকা ফিসক্ব (কবীরাহ গুনাহ)। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। 

[সূরা হুজুরাতঃ১১]

এ কারণে সে এক্ষেত্রে কাফের বলে বিবেচিত হবেনা। কেননা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের স্বতঃসিদ্ধ আক্বীদাহ হচ্ছে কবীরাহ গুনাহের কারণে কেউ কাফের হয়না।
.

শরীয়তের অকাট্য বিধানের ব্যাপারে যারা হাসি ঠাট্টা,  মশকারা ও কটুক্তি করে তাদের কুফরের উপর ৪ মাযহাবের ইজমা রয়েছে। 

ইমাম ইবনু নুজাইম আল হানাফী রহঃ বলেন-

 من تكلم بكلمة الكفر هازلا، أو لاعبا، كفر عند الكل، ولا اعتبار باعتقاده، كما صرح به قاضي خان في فتاواه. ومن تكلم بها مخطئا، أو مكرها، لا يكفر عند الكل، ومن تكلم بها عالما عامدا، كفر عند الكل.

কেউ কোন কুফরি কথা ঠাট্টা করে, দুষ্টুমি কিংবা খেল তামাশা করে করেছে সে সকলের ঐক্যমতে কুফুরী করেছে।  এক্ষেত্রে তার ঈমান ও আক্বীদা ধর্তব্য হবেনা। যেমনটি কাযী খান রহঃ তার ফাতাওয়ায় স্পষ্ট করেছেন।

তবে কেউ যদি ভুলঃবশত কিংবা অন্তরে ঘৃণা রেখেই (বাধ্য হয়ে) বলে থাকে তাকে সকলের ঐক্যমতে তাকফীর করা হবেনা।

তবে আবার কেউ জেনে-বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে বললে সকলের ঐক্যমতে তাকে কাফের সাব্যস্ত করা হবে।

[আল বাহরুর রায়েক্ব ৫/২১০]

 ইমাম ইবনুল হুমাম আল হানাফী রহঃ বলেন-

 "مناط التكفير هو: التكذيب أو الاستخفاف بالدين"

'তাকফীরের মূল উপাদানই হচ্ছে দ্বীনি কোন বিষয় মিথ্যা প্রতিপন্ন করা অথবা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।'

[আল মাসাঈরাহঃ৩১৮]

ইমাম ইবনুল আরাবী আল মালেকী রহঃ  এই প্রকৃতি ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কুফর ও রিদ্দাহ (ধর্মচ্যুত)  হওয়ার হুকুম লাগিয়েছেন এবং যতক্ষণ না তা খালেস তাওবা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ মাফ করবেন না বলেছেন। এবং এ ব্যাপারে তিনি ইজমার দাবী করেছেন।

لا يخلو أن يكون ما قالوه من ذلك جداً أو هزلاً، وهو كيفما كان كفر، فإن الهزل بالكفر كفر لا خلاف فيه بين الأمة، فإن التحقيق أخو العلم والحق، والهزل أخو الباطل والجهل، فإذا حصل الاستهزاء بالله أو بالرسول صلى الله عليه وسلم أو بالدين من شخص عاقل غير مكره فإنه يكفر بذلك ويعتبر ذلك ردة عن الإسلام، فعليه أن يتوب إلى الله تعالى توبة نصوحاً، فإن الله تعالى إذا علم منه صدق التوبة والرجوع إليه قبل توبته وتاب عليه
[আল জামে লি আহকামিল কুরআন,  কুরত্ববী ৮/১৯৭]

আল্লামা যারকাশী তার আল মানসূর ফিল ক্বওয়ায়েদ কিতাবে উল্লেখ করেন-

 من تكلم بكلمة الكفر هازلا ولم يقصد الكفر، كفر.

'যে ব্যক্তি বিদ্রুপ করে কুফরি কথা বলে কিন্তু কুফরির নিয়ত করেনা সে কাফির।'

ইমাম নববী আশ শাফেয়ী (রহিমাহুল্লাহ)  বলেন-

الردة هي قطع الإسلام بنية، أو قول كفر، أو فعل، سواء قاله استهزاء، أو عنادا، أو اعتقادا

রিদ্দাহ তথা ইসলামচ্যুত হওয়া হচ্ছে- সেচ্ছায় ইসলাম ত্যাগ করা, কুফুরী কথা বলা বা কুফুরী কাজ করা যদিও মজা করে কিংবা বিদ্বেষ করে অথবা অন্তর থেকে সায় দিয়েই বলে থাকুক না কেন।

[মুগনী আল মুহতাজ ৪/১৩৩-১৩৪]
 
ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ) আরও ব্যাখ্যা করে 'কুফর' ঘোষণা করেন-

هي قطع الإسلام، ويحصل ذلك تارةً بالقول الذي هو كفرٌ، وتارةً بالفعل، والأفعال الموجبة للكفر هي التي تصدر عن تعمُّد واستهزاءٍ بالدِّين صريح, كالسُّجود للصَّنم, أو للشمس، وإلقاء المصحف في القاذورات.

[রাওদ্বাতুত তালেবীন,কিতাবুর রিদ্দা ১০/৬৪]

ইমাম ইবনু রজব আল হাম্বলী রহঃ'এর মতে মুসলিম ও ঈমানদার ব্যক্তি  ইসলামের কোন একটু রুকন কে অস্বীকার করলে ও ঈমানহীন হয়ে যাবে।
فقد يترك دينه، ويفارق الجماعة، وهو مقر بالشهادتين، ويدعي الإسلام؛ كما إذا جحد شيئاً من أركان الإسلام، أو سب الله ورسوله، أو كفر ببعض الملائكة، أو النبيين، أو الكتب المذكورة في القرآن مع العلم بذلك

[আল জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম ১/৩৪৪]

ইমাম ইবনু কুদামাহ আল হাম্বলী (রহঃ) বলেন-

ومن سبَّ الله تعالى كفر، سواءً كان مازحاً أو جادًّا وكذلك من استهزأ بالله تعالى، أو بآياته أو برسله، أو كتبه.

'যে ব্যক্তি আল্লাহ কে গালি দেয়, হোক মজা করে কিংবা সেচ্ছায় অনুরূপভাবে কেউ আল্লাহ কিংবা তার আয়াত ও রাসূলগন অথবা তার কিতাব সমূহ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে সে কুফরি করল।'

[আল মুগনী,কিতাবুল মুরতাদ ১২/২৯৮-২৯৯]

ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল হাম্বলী (রহঃ)  একে কুফর বলেছে-

إن الاستهزاء بالله وآياته ورسوله كفر ، يكفر به صاحبه بعد إيمانه

'মহান আল্লাহ তার আয়াত ও তার রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা মশকারা করা (সুস্পষ্ট)  কুফর। এধরনের ব্যক্তিকে ঈমান আনয়নের পরেও কাফির ঘোষণা করা হবে।'

[মাজমূউল ফাতাওয়া ৭/২৮৩,১৫/৪৮]

ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম আল হাম্বলী  (রহঃ) এ বিষয়টি কে আরো ব্যাখ্যা করে উদাহরণ দিয়ে এভাবে বুঝিয়েছেন-

قد تقدم أن الذي قال لما وجد راحلته:" اللهم أنت عبدي وأنا ربك أخطأ من شدة الفرح لم يكفر بذلك وإن أتى بصريح الكفر؛ لكونه لم يُردْه. والمكره على كلمة الكفر أتى بصريح كلمته ولم يكفر لعدم إرادته، بخلاف المستهزئ والهازل فإنه يلزمه الطلاق والكفر، وإن كان هازلا؛ لأنه قاصد للتكلم باللفظ، وهزله لا يكون عذرا له بخلاف المكره والمخطئ والناسي فإنه معذور مأمور بما يقوله، أو مأذون له فيه، والهازل غير مأذون له في الهزل بكلمة الكفر والعقود، فهو متكلم باللفظ مريد له ولم يصرفه عن معناه إكراه ولا خطأ ولا نسيان ولا جهل، والهزل لم يجعله الله ورسوله عذرا صارفا، بل صاحبه أحق بالعقوبة، ألا ترى أن الله تعالى عذر المكره في تكلمه بكلمة الكفر إذا كان قلبه مطمئنا بالإيمان، ولم يعذر الهازل بل قال: ولئن سألتهم ليقولن إنما كنا نخوض ونلعب قل أبالله وآياته ورسوله كنتم تستهزئون لا تعتذروا قد كفرتم بعد إيمانكم. وكذلك رفع المؤاخذة عن المخطئ والناسي.

[ই'লামুল মুয়াক্কিঈন ৩/৩৬]

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf