নারীদের নামাজে কি পার্থক্য আছে? না পুরুষের মতই? (৬ষ্ঠ পর্ব - কৈফিয়ত) | এবং সিরিজের সব লেখার লিংক

নাসীহা গ্রুপে যুক্ত আছি কয়েক মাস হলো। মেম্বারদের নানা প্রশ্ন আসে, কখনো গ্রুপে কখনো বা ইনবক্সে। এই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে, মেয়েদের নামাজ নিয়ে। সবার প্রশ্নেই ছিল উদ্বিগ্নতা, সন্দেহ ও সংশয়ের ছাপ। এতকাল যেভাবে নামাজ পড়লাম, এগুলো কিছুই কবুল হয় নাই? নামাজ ভুল ছিল? কেও কেও পেরেশান, আবার কেও কেও দ্বিধান্বিত। "মা দাদীদের থেকে নামাজ শিখেছি। তারা যেভাবে শিখিয়েছেন, এখন দেখছি সে নামাজ ভুল। আবার ইউটিউবে দেখলাম নারীদের নামাজে পার্থক্যও নাকি আছে। আসলে কোনটা সঠিক? কনফিউজড"...
প্রশ্নগুলো বানিয়ে বলছি না। এই জাতীয় প্রশ্ন প্রচুর এসেছে। অনেকে মুখ ফুটে প্রশ্ন না করলেও, এই সমস্যার সম্মুখীন তো হয়েছেন। বরাবরের মতই বিতর্ক এড়িয়ে যেতে চেয়েছি। কয়েকজনকে বলেছি, যেভাবে নামাজ আদায় করে এসেছেন। ওভাবেই পড়ুন। কিন্তু এই কথাতে চিড়ে ভিজে নি। বলেছেন, এটা নিয়ে কিছু লেখুন। কিন্তু লেখি নি, এভাবে অনেকদিন কেটে গেল। ক্রমাগত চাপ বাড়ছিল, অন্যান্য এডমিনগণ প্রশ্নের অবস্থা দেখে বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন, কিছু একটা যেন লেখি।
প্রান্তিকতা বর্তমান সময়ের বড় সমস্যা। উম্মাহর এই ক্রান্তিলগ্নে এই মুস্তাহাব নিয়ে বিতর্ক করা সময় ও মেধার অপচয় বলে মনে হয়। উম্মাহর হাজার বছরের স্বীকৃত নীতি হচ্ছে, কোন অঞ্চলে কোন আমল যদি প্রচলিত থাকে আর তার মোওয়াফেক দলীল পাওয়া যায়। তো ব্যস, সে আমলকেই জারী রাখা। সেটাকে পরিবর্তন করতে গেলে ফেতনা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। মাসায়েল গ্রুপের বয়স ৩-৪ মাস হবে। এই অল্প সময়ে মেসেজ ও গ্রুপের প্রশ্ন মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত প্রশ্ন এসেছে শুধু মহিলাদের নামাজ নিয়ে। কী পরিমাণ অস্থিরতা আর পেরেশানি বিরাজ করছে, প্রশ্নের তাগাদা দেখলেই বোঝা যায়। অথচ পার্থক্যগুলো কিন্তু মুস্তাহাব পর্যায়ের। অর্থাৎ এভাবে নামাজ আদায় করা উত্তম। এই মুস্তাহাব সংশোধন নিয়ে আদিখ্যেতা আর প্রান্তিকতা কাম্য ছিল না।
.
নামাজের মহিলাদের পার্থক্য নিয়ে লিখতে গিয়ে গ্রুপে প্রায় দু সপ্তাহ সময় দিতে পারি নি। তদুপরি আল্লাহর শোকর, সংক্ষেপে হলেও মোট ৫ পর্বে লেখা সমাপ্ত হয়েছে। পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের নামাজ, কিছুটা ভিন্ন। আর এটা ইসলামের স্বর্ণযুগ থেকেই চলে আসছে। রাসূল সা. থেকে সাহাবী, সাহাবীদের থেকে তাবেয়ী, তাবেয়ীদের থেকে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম। এই প্রতিটি আমলের প্রতিষ্ঠিত দলীলও আছে। উম্মাহর কোনকালে কোন আলেমই বলে নেই যে, মহিলারা শতভাগ পুরুষের মত নামাজ আদায় করবে। মহিলাদের নামাজে যে ভিন্নতা নেই, এই যে দাবী। এটার বয়স খুব বেশিদিন হয় নি। আর এই দাবী, দলিলের আলোকে সঠিক বলে মনে হয় না।

সর্বোপরি কথা হচ্ছে, এই লেখার মাকসাদ এই না যে, সবাইকে জোর করে এই মতে আমল করতে বাধ্য করা। বরং যারা পার্থক্য মেনে নামাজ আদায় করছেন তারা যেন আশ্বস্ত থাকেন যে তারা ভুল করছেন না। বরং দলীলসম্মত সুন্নাহ মোতাবেকই নামাজ আদায় করছেন। আর যারা মনে করেন, নামাজে পার্থক্য নেই। তারা অন্তত ঐ বোনদেরকে পেরেশান না করি, যারা পার্থক্য মেনে নামাজ আদায় করছেন। তাদেরকে এই কথা বলেও দাওয়াত না দেই যে "আপনার নামাজ সহীহ না। এই নামাজে দলীল নেই, দুহাত বিছিয়ে সেজদা করা হারাম ইত্যাদি"! এই উপলব্ধি যদি উভয় পক্ষের অনুসারীদের চলে আসে, তাহলে উম্মাহর বিভেদ ও অস্থিরতা, কনফিউশন ও পেরেশানি দূর হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ!

এই সিরিজের লেখাগুলোর লিংক -

১- প্রথম পর্বে, কীভাবে নামাজ পেলাম? ও হাদিস সংক্রান্ত কিছু মৌলিক আলোচনা।
২- দ্বিতীয়পর্বে, নামাজের পার্থক্যগুলোর বিশ্লেষণ, ও যেসব পার্থক্যের ব্যাপারে উভয়ধারার আলেমগণ একমত, তার বিবরণ। https://goo.gl/eCUiP4 | ব্লগে পড়ুন >
৩- তৃতীয়পর্বে, মহিলাদের নামাজে ভিন্নতা আছে, এই মর্মে দলীলগুলোর বিশ্লেষণ। https://goo.gl/CNimef | ব্লগে পড়ুন >
৪- চতুর্থপর্বে, মহিলাদের নামাজে ভিন্নতা নেই। নারী পুরুষের নামাজ একই। এই সংক্রান্ত দলীলগুলোর বিশ্লেষণ
৫- পঞ্চমপর্বে, পূর্বসূরি ইমাম, ৪ মাজহাবের ইমাম, সালাফে সালিহীন, মুহাদ্দিস ও আহলে হাদিস ঘরানার আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। যারা নারীদের নামাজ যে পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন, তার প্রবক্তা ছিলেন।

--------------
লিখেছেনঃ মুহতারাম শায়খ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (সোর্সঃ)

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf