দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কতবার দুধ পান করা আবশ্যক?

প্রশ্নঃ
কোনো একটা ফতোয়া বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে ভিন্ন হলে সেক্ষেত্রে তারা কি নিজের ফতোয়ার ব্যাখ্যা বা যুক্তি খন্ডন করে গেছে?
আমি আসলে দুধ সন্তান হওয়ার ক্ষেত্রে ১ বার আর ৫ বার খাওয়ার ব্যপারটা নিয়ে চিন্তিত।
একইসাথে হানাফি(রাঃ) আর মালেক(রাঃ) দুইজনই ভুল হবে এমনটাও ভাবা যাচ্ছে না, আবার আয়েশা(রাঃ) এর কথাও ফেলে দেই কিভাবে তা ভাবছি, সে বলেছে ৫ বার খাওয়ার আয়াতটা হযরত মুহাম্মদ (peace be upon him) এর ইন্তেকাল এর পরেও কুরআন এর আয়াত হিসেবে তিলাওয়াত হত।

(নিবেদক আনিকা অনন্যা।)

উত্তরঃ
হ্যাঁ অবশ্যই।  
যে মাসআলাগুলো মতানৈক্যপূর্ণ সেগুলো প্রত্যেক মাজহাবই নিজেদের অবস্থান দলিলের আলোকে প্রমাণ করেছেন এবং অন্যদের দলিলের যথাযথ উত্তর প্রদান করেছেন। 
দুধ পান করার মাসআলায় হানাফীদের মাজহাব অত্যন্ত শক্তিশালী এবং অধিকাংশ সাহাবী-তাবেয়ীদের মাজহাব এটাই। 
উমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ, আলী রাঃ, ইবনে মাসউদ রাঃ, ইবনে আব্বাস রাঃ, জাবির রাঃ, কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ রহঃ, সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহঃ, তাউস রহঃ,  সায়ীদ ইবনে মুসায়্যিব রহঃ, উরওয়া ইবনে যুবায়ের রহঃ, আতা ইবনে আবি-রাবাহ রহঃ, ইবনে শিহাব রহঃ,  মাকহুল রহঃ, ইমাম মালেক রহঃ, এক বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল রহঃ এবং আবু হানীফা রহঃ এর মাজহাব হলো, 
"দুই বছরের মধ্যে কোন শিশু যদি অন্য কোন মহিলার দুধ পান করে, চাই কম পান করুক বা বেশি পান করুক; দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হয়ে যাবে।" 
(আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ৫/৮৭)
অনুরূপভাবে হাসান বসরী রহঃ, কাতাদা রহঃ, হাম্মাদ রহঃ, আওজায়ী রহঃ, সুফিয়ান সাওরী রহঃ, লাইস ইবনে সা'দ রহঃ ও একই অভিমত পোষণ করেন। 
লাইস রহঃ মনে করেন, এ ব্যাপারে মুসলিমদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(আল-মুগনী লিবনি কুদামা, ৭/৫৩৬)
ইবনু মুনজির রহঃ এটাকে ইবনে উমর রাঃ এর মাজহাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 
ইমাম নববী রহঃ এটাকে অধিকাংশ উলামার মাজহাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 
(শরহু মুসলিম লিন ননবী, ১০/২৯)

★জমহুর এবং হানাফীদের দলিলঃ

(১ নং দলিল)
আমাদের সবচেয়ে বড় দলিল হলো কুরআনের আয়াত, 
আল্লাহ বলেন,  
وأمهاتكم اللاتي أرضعنكم 
"যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে তারা তোমাদের মাহরাম" 
(সুরা নিসা,২৩)
এখানে আল্লাহ তায়ালা দুগ্ধ দানকারীনীদেরকে মাহরাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। 
আল্লাহ তায়ালা কোন সংখ্যা বলে দেন নি যে, এতবার পান করাতে হবে। 
অল্প পান করলেও পান করা হয় আর বেশি পান করলেও পান করা হয়। 
যেমনিভাবে এক ফোটা পানি পান করলেও রোজা ভেঙে যায়, এখানে কেউ একথা বলে না যে, এক ফোটা পানির কারণে রোজা ভাঙবে না; ঠিক তেমনিভাবে এক ফোটা দুধ পান করালেও দুধ-সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে।। 
তাছাড়া ফিকহের মূলনীতি হলো, 
আয়াতের উদ্দেশ্য এবং তার বিধান যখন স্পষ্ট থাকে, তখন তাকে নির্দিষ্ট বিষয়ের সাথে নির্ধারণ করা কেবল তখন বৈধ, যখন অন্য কোন আয়াত বা মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হবে যে, এই আয়াত শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রে নির্ধারিত।  
আর উক্ত আয়াতের বিপরীতে যেহেতু অন্য কোন আয়াত বা মুতাওয়াতির হাদিস নেই; যা প্রমাণ করে যে, উল্লিখিত আয়াতের উদ্দেশ্য নির্ধারিত, অর্থাৎ দুগ্ধ পান করানো দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এতো বার পান করানো এমন কোন আয়াত বা মুতাওয়াতির হাদিস নেই। 
(বিস্তারিত বোঝার জন্য দ্রঃ "আহকামুল কুরআন" লিল জাসসাস, ২/১৫০)
★প্রশ্ন হতে পারে যে, অনেক হাদিসে তো সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে?  
উত্তর হলো, সেগুলো হাদিসে মুতাওয়াতির নয়, সেই হাদিসগুলোকে উসূলুল হাদীসেত পরিভাষায় "খবরে ওয়াহিদ" বলে। 
আর কুরআনের হুকুমকে খবরে ওয়াহিদ দ্বারা নির্দিষ্ট করা যায় না। এটা একটা ইসলামী ফিকহের মৌলিক উসূল।

(২ নং দলিল)
روى أبو حنيفة عن الحكم عن القاسم عن شريح عن علي، رضي الله عنه، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: يحرم من الرضاع ما يحرم من النسب قليله وكثيره. 
"আলী রাঃ থেকে বর্ণিত,  রাসুল সাঃ বলেন, বংশগত কারণে যারা মাহরাম হয়, দুগ্ধ পান করার কারণেও তারা মাহরাম হয়,  চাই দুগ্ধ কম পান করা হোক বা বেশি পান করা হোক।" 
(শরহু মুসনাদি আবি হানিফা লি মুল্লা আলী আল-কারী, ১/২৬২-২৬৩, জামিউ মাসানীদিল ইমাম, ২/৯২, উকুদুল জাওয়াহিরিল মুনীফা লিয-যাবীদী, ১/১৫৯)
এই হাদীসের সকল রাবী সিকাহ, দ্রঃ "তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম, ৭/৫৮"

(৩ নং দলিল)
عن عقبة بن الحارث رضي الله عنه قال : تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً فَجَاءَتْنَا امْرَأَةٌ سَوْدَاءُ ، فَقَالَتْ أَرْضَعْتُكُمَا ، فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقُلْتُ : تَزَوَّجْتُ فُلَانَةَ بِنْتَ فُلَانٍ ، فَجَاءَتْنَا امْرَأَةٌ سَوْدَاءُ ، فَقَالَتْ لِي : إِنِّي قَدْ أَرْضَعْتُكُمَا ، وَهِيَ كَاذِبَةٌ ، فَأَعْرَضَ عَنِّي فَأَتَيْتُهُ مِنْ قِبَلِ وَجْهِهِ قُلْتُ : إِنَّهَا كَاذِبَةٌ ، قَالَ : ( كَيْفَ بِهَا وَقَدْ زَعَمَتْ أَنَّهَا قَدْ أَرْضَعَتْكُمَا دَعْهَا عَنْك ) .
"উকবা ইবনে হারিস রাঃ বলেন, আমি এক মেয়েকে বিবাহ করার পর একজন মহিলা এসে বলতে লাগলো, আমি তোমাদের দুজনকেই দুধ পান করিয়েছি।  অতঃপর আমি রাসুল সাঃ এর কাছে গিয়ে বললাম যে, আমি অমুকের মেয়ে অমুককে বিবাহ করেছি, কিন্তু এক মহিলা এসে বলছে সে না কি আমাদের দু জনকে দুধ পান করিয়েছি, সে মিথ্যা বলছে। একথ শুনে রাসুল সাঃ আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি তার সম্মুখে গিয়ে আবার বললাম, মহিলা মিথাবাদী।  তখন রাসুল সাঃ বললেন,  তুমি কীভাবে তার সাথে সংসার করছো অথচ এই মহিলার ধারণা সে তোমাদের উভয়কে দুধ পান করিয়েছে?! তুমি তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করো।" (বুখারী, ৫১০৫)
এই ঘটনার মধ্যে রাসুল সাঃ একবারও জিজ্ঞেস করেন নি যে, কতবার দুধ পান করিয়েছিলো। 
বরং তিনি সংখ্যা জানা ছাড়াই হারাম সাব্যস্ত করে দিয়েছেন। 

(৪ নং দলিল)
يحرم من الرضاع ما يحرم من النسب
" বংশগত কারণে যারা মাহরাম হয়, দুগ্ধ পান করার কারণেও তারা মাহরাম হয়।"
(বুখারী, ২৬৪৫)
এবং এই ধরনের মুতলাক হাদীস যত আছে সবগুলোই হানাফীদের দলিল। যেখানে রাসুল সাঃ কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেন নি। 

(৫ নং দলিল)
أن عليا وابن مسعود رضي الله عنهما قالا: يحرم من الرضاع قليله وكثيره. 
"আলী রাঃ এবং ইবনে মাসউদ রাঃ বলতেন, দুধ পান করার মাধ্যমে মাহরাম হয়, চাই কম পান করুক বা বেশি পান করুক।" 
(নাসায়ী, ২/৬৭)
অনুরূপভাবে ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণনা করেন, 
"দুই বছরের মধ্যে একবার বা দু বার দুধ পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে।" 
(মুআত্তা মুহাম্মাদ, ২৭৬ পৃঃ)
আল্লামা জফর আহমদ উসমানী রহঃ বলেন, এর সনদ সহীহ, (দ্রঃ ইলাউস সুনান, ১১/৮০)

(৬ নং দলিল)
"ইবনে উমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, একবার বা দু বার দুধ পান করলে কি হারাম হবে? তিনি বললেন, দুধ পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে। তখন এক ব্যক্তি বললো, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাঃ বলেন একবার বা দু বার দুধ পান করলে হারাম হবে না। তিনি তার প্রতিউত্তরে বললেন, আল্লাহর ফায়ালা তার ফায়সালা থেকে উত্তম।" 
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ১৩৯১৯)

অনুরূপভাবে আতা রহঃ এর সূত্রে ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত,  
"ইবনে উমর রাঃ কে বলা হলো যে, আয়শা রাঃ এর সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাঃ বলেন, সাতবার দুধ পান না করলে হারাম সাব্যস্ত হয় না।  ইবনে উমর রাঃ তার প্রতি উত্তরে বলেন, আল্লাহ তায়ালা আয়শা রাঃ এর থেকে উত্তম,  আল্লাহ বলেন, তোমাদের দুধবোন তোমাদের মাহরাম, -সুরা নিসা,২৩- আল্লাহ একথা বলেননি যে, একবার বা দু বার।" 
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১৩৯১১)
অনুরূপভাবে বিভিন্ন সনদে এই বর্ণনা রয়েছে।  
(দ্রঃ সুনানু দারা কুতনি, ৪/১৭৯-১৮৩, সুনানুল বাইহাকী, ৭/৪৫৮)
এগুলো ছিলো জমহুর সাহাবী-তাবেয়ী এবং হানাফী মাজহাবের দলিল। 

★এখন বাকি থাকলো আয়শা রাঃ এর ঐ হাদিস, যা থেকে বোঝা যায় কমপক্ষে পাচ বার দুধ পান না করলে হারাম সাব্যস্ত হবে না । 
আমরা আয়শা রাঃ এর হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসের উত্তরে বলি, 

(প্রতি উত্তর-১)
আমাদের প্রথম কথা হলো, যেসকল হাদীসে দুধ পান করার ক্ষেত্রে সেসব হাদীস সহীহ হলেও হাদিসগুলোর হুকুম মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে।  যেসমস্ত সংখ্যা হাদিসে পাওয়া যায় সেগুলো ইসলামের প্রাথমিক সময়ের। ধাপে ধাপে সেগুলো আর বাকি থাকেনি। সর্বশেষ এই বিধান অবশিষ্ট ছিলো যে, কম হোক আর বেশি হোক দুধ পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে।  যেমনটি সুরা নিসার ২৩ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।  

★ইমাম নববী রহঃ প্রশ্ন তুলেছেন যে, দুধ পান করার সংখ্যার হুকুম যে রহিত হয়ে গেছে, সেটা একটা দলিল বিহীন দাবি।  কিন্তু আমরা বলি, এটা কোন দলিল বিহীন দাবি নয়। বরং এরপক্ষে অনেক দলিল রয়েছে।  
নিম্নে তারমধ্য হতে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।

(এক) 
উপরে আলী রাঃ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, কম হোক আর বেশি হোক দুধ পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে। তাছাড়া আয়শা রাঃ এর হাদীস থেকেও বোঝা যায় যে, প্রথমে দশ পান করার বিধান ছিলো। এরপর হুকুম হয়েছে পাঁচ বার অয়ান করতে হবে। 
কিন্তু মুসলিম শরীফ সহ অন্যান্য হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, সেই হুকুম পাচ বারে সীমাবদ্ধ থাকে নি। বরং তিনবার পান করার হুকুমে এসে পৌছেছে। 
হাদিসটি হলো, 
عن عائشة رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا تحرم المصة والمصتان. 
"আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেন, একবার বা দু বার পান করলে হারাম সাব্যস্ত হবে না। "
(মুসলিম,  ১৪৫০, আবু দাউদ, ২০৬৩, তিরমিজি, ১১৫০)
এই কারণে দাউদ যাহেরী রহঃ সহ অনেকের মাজহাব হলো, তিনবার দুধ পান করলে হারাম সাব্যস্ত হবে। 
সুতরাং এই হাদীস থেকে বোঝা গেলো যে, পাচ বার পান করার সাথে হুকুমটি সীমাবদ্ধ নয়, বরং সেখান থেকে আরো কমে গিয়েছে। তাই আলী রাঃ এর হাদীস হলো এই বিষয়ের সর্বশেষ হুকুম। অর্থাৎ কম হোক আর বেশি হোক দুধ পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে।

(দুই)
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, দশবার বা পাচবার পান করার বিধান ইসলামের সূচনালগ্নে ছিলো। পরবর্তীতে সেগুলো রহিত হয়ে যায় এবং সর্বশেষ হুকুম হলো, কম হোক আর বেশি হোক দুধ পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে।
সনদ সহ বর্ণনাটি নিম্নে দেয়া হলো, 
حدث أبو الحسن الكرخي قال حدثنا الحضرمي قال حدثنا عبدالله بن سعيد قال حدثنا أبو خالد عن حجاج عن حبيب بن أبي ثابت عن طاوس عن ابن عباس أنه سئل عن الرضاع فقال إن الناس يقولون لا تحرم الرضعة ولا الرضعتان قال قد كان ذاك فأما اليوم فالرضعة الواحدة تحرم .
আবু বকর জাসসাস রহঃ এই বর্ণনাটি "আহকামুল কুরআন" এ উল্লেখ করেছেন।
(দ্রষ্টব্যঃ আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, ২/১৫১)

(তিন) 
عبد الرزاق عن معمر قال: أخبرني ابن طاووس عن أبيه قال: كان لأزواج النبي صلى الله عليه وسلم رضعات معلومات، قال: ثم ترك ذلك بعد، فكان قليله وكثيره يحرم.
"তাউস রহঃ বলেন, রাসুল সাঃ এর স্ত্রীদের জন্য দুধ পান করানোর নির্দিষ্ট বিষয় ছিলো। এরপর সেই হুকুম রহিত হয়ে যায়। সর্বশেষ বিধান হলো কম হোক আর বেশি হোক দুধ পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে।"
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,  ১৩৯১৪)
عبد الرزاق عن ابن جريج قال: أخبرني عبد الكريم عن طاووس قال: قلت له: إنهم يزعمون أنه لا يحرم من الرضاع دون سبع رضعات، ثم صار ذلك إلى خمس، فقال طاووس: قد كان ذلك، فحدث بعد ذلك أمر، جاء التحريم، المرة الواحدة تحرم.
"আব্দুল কারীম রহঃ তাউস রহঃ কে জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা মনে করে সাতবার দুধ পান না করলে হারাম সাব্যস্ত হবে না,  অতঃপর এই বিধান পাচবার পান করার উপর এসে সীমাবদ্ধ হয়েছে? 
তাউস রহঃ বলেন,  এই বিধান প্রাথমিকঅবস্থায় ছিলো, পরবর্তীতে নতুন বিধান এসেছে,  সর্বশেষ বিধান হলো একবার পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে।"
( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,  ১৩৯১৬)

(চার)
পাঁচবার দুধ পান করার নির্ধারণও যে রহিত হয়ে গেছে সেটা আয়শা রাঃ এর ঐ হাদিস থেকেও বোঝা যায়, যে হাদিস নিয়ে এতো আলোচনা। 
হাদিসটি হলো, 
عن عائشة رضي الله عنها قالت: (كَانَ فِيمَا أُنْزِلَ مِنْ الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ يُحَرِّمْنَ ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُنَّ فِيمَا يُقْرَأُ مِنْ الْقُرْآنِ)
"আয়শা রাঃ বলেন, কুরআনে দুধ পান করার মাধ্যমে হারাম সাব্যস্ত হওয়ার যে বিধান অবতীর্ণ হয়েছিলো তা ছিলো দশবার দুধ পান করার উপর। এরপর দশবার পান করার বিধান রহিত হয়ে যায় এবং পাচবার দুধ পান করাকে হারাম সাব্যস্তকারী নির্ধারণ করা হয়....................।"
(মুসলিম, ১৪৫২)
একটু চিন্তা করে দেখুন! যদি পাচ বার দুধ পান করার হুকুম রহিত না হতো তাহলে সেটা কুরআনে লিপিবদ্ধ থাকতো যে, পাচবার দুধ পান করা লাগবে। কিন্তু এমনটা কুরআনে নেই এবং সেটা নামাজে তেলাওয়াতে করাও বৈধ হতো। 
কিন্তু সকল উম্মত এব্যাপারে একমত যে, এটা কুরআনের অংশ নয়, এটাকে তেলাওয়াত করা বৈধ নয় এবং এটাকে কুরআনের অংশ বলে দাবি করারও কোন সুযোগ নেই। 
সুতরাং আয়শা রাঃ এর এই আলোচিত হাদিস থেকেই বোঝা যায় যে, প্রথমে দশবার পান করার ব্যাপারে কুরআনের হুকুম ছিলো, অতঃপর পাচ বার পান করার বিধান এসেছে, সর্বশেষ "দুধ পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে" হুকুম এসেছে।  যেমনটি সুরা নিসার ২৩ নং আয়াতে কোন সংখ্যা নির্ধারণ ছাড়াই হারামের হুকুম এসেছে।  
★এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, হাদিসের শেষে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, পাচবার দুধ পান করার হুকুম রহিত হয় নি, বরং এই হুকুমের উপরই রাসুল সাঃ এর ওয়াফাত হয়েছে।  যেমনটি আয়শা রাঃ এর হাদিসের শেষে উল্লেখ আছে, 
ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُنَّ فِيمَا يُقْرَأُ مِنْ الْقُرْآنِ
"অতঃপর পাচ বার দুধ পান করার মাধ্যমে দশ বার দুধ পান করার হুকুম রহিত হয়ে গেছে, এরপর রাসুল সাঃ এর ইন্তেকাল হয়ে গেছে,  অথচ পাচবার পান করার বিষয়টি কুরআন হিসেবে তেলাওয়াত করা হতো।" 
(মুসলিম, ১৪৫২)

★এর উত্তরে আমরা বলি যে, 
 فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُنَّ فِيمَا يُقْرَأُ مِنْ الْقُرْآنِ
"এরপর রাসুল সাঃ এর ইন্তেকাল হয়ে গেছে,  অথচ পাচ বার পান করার বিষয়টি কুরআন হিসেবে তেলাওয়াত করা হতো।" (মুসলিম, ১৪৫২)
হাদিসের এই অংশটুকু সঠিক নয়।
#কারণ হলো, 
(ক) এই হাদিসটি আয়শা রাঃ থেকে সালিম রহঃ ও বর্ণনা করেছেন,  তিনি বর্ণনা করেন, 
أن عائشة قالت: لقد كان في كتاب الله عز وجل عشر رضعات، ثم رد ذلك إلى خمس، ولكن من كتاب الله ما قبض مع النبي صلى الله عليه وسلم.
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১৩৯২৮)
এই বর্ণনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, রাসুল সাঃ এর মৃত্যুর পূর্বই এই আয়াতের তেলাওয়াত রহিত হয়ে গিয়েছিলো।
(খ)এই হাদিসটি আমরাহ (রহিমাহাল্লাহ) থেকে তিনজন বর্ণনা কারী বর্ণনা করেন। 
এই তিনজনের মধ্যে শুধুমাত্র আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রহঃ 
 فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُنَّ فِيمَا يُقْرَأُ مِنْ الْقُرْآنِ
"এরপর রাসুল সাঃ এর ইন্তেকাল হয়ে গেছে,  অথচ পাচ বার পান করার বিষয়টি কুরআন হিসেবে তেলাওয়াত করা হতো।" (মুসলিম, ১৪৫২)
এই অংশ বর্ণনা করেন। 
বাকি দুজন বর্ণনা কারী তথা কাসিম রহঃ এবং ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রহঃ হাদীসের শেষের ঐ অংশ বর্ণনা করেন নি। 
কাসিম রহঃ এর বর্ণনা ইমাম ত্বহাবী রহঃ মুশকিলুল আসারে বর্ণনা করেন।
(দ্রঃ মুশকিলুল আসার, ৩/৭)
আর ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রহঃ এর বর্ণনা ইমাম মুসলিম রহঃ নিজেই উল্লেখ করেন, 
قالت عمرة: فقالت عائشة: نزل في القرآن عشر رضعات معلومات ثم نزل أيضا خمس معلومات 
"আমরাহ (রহিমাহাল্লাহ) বলেন, আয়শা রাঃ বলেন, কুরআনে দশবার দুধ পান করার হুকুম এসেছে,  এরপর পাচ বারের কথাও এসেছে।"
(মুসলিম, ১৪৫৩)

★এইজন্য ইমাম ত্বহাবী রহঃ বলেন, 
" আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রহঃ ব্যতীত অন্য কেউ এই অংশ বর্ণনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। আমরা মনে করি এই অংশে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রহঃ এর "ওয়াহাম" হয়েছে। কেননা যদি ঐ অংশকে সঠিক ধরা হয় তাহলে সেটা কুরআনের অন্যান্য আয়াতের মতো হওয়ার কথা এবং তার তেলাওয়াত বৈধ থাকার কথা। আল্লাহর পানা যে, এই অংশটি কুরআনের অংশ হবে অথচ কুরআনে তা লিপিবদ্ধ নেই।"
( দ্রঃ মুশকিলুল আসার, ৩/৬)
এই বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রহঃ এর যে "ওয়াহাম" হয়েছে সেটা আবু বকর ইবনুল আরাবী রহঃ ও উল্লেখ করেছেন।
(দ্রঃ আরিজাতুল আহওয়াজি, ৫/৯২)
আর কাসিম রহঃ এবং ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রহঃ এর বর্ণনা আবু বকর রহঃ এর বর্ণনার উপর প্রাধান্য পাবে। কেননা ফিকহ ফাকাহাত সবদিক থেকে কাসিম রহঃ এবং ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রহঃ তার চেয়ে অগ্রগণ্য।  
( দ্রঃ মুশকিলুল আসার, ৩/৮)
কিছু শাফেয়ীদের বাড়াবাড়ির কারণে নাস্তিক এবং রাফেজীরা কুরআনের ব্যাপারে এই অপবাদ দেয়ার সুযোগ পায় যে, কুরআনের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গেছে, যা প্রচলিত কুরআনে লিপিবদ্ধ নেই। অথচ তারা আয়শা রাঃ এর এই হাদিসের যেই অংশকে পুজি করে কুরআনের উপর কলম ছুড়ে সেই অংশ যে সঠিক না তা আমরা দেখিয়েছি, যদিও তা সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হোক না কেন।  
★এরপরেও যদি ধরে নেই যে, 
 فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُنَّ فِيمَا يُقْرَأُ مِنْ الْقُرْآنِ
এই অংশ সঠিক, তাহলে আমরা বলবো যে, হাদিসের এই অংশের উদ্দেশ্য হলো, পাচ বার দুধ পান করার বিধানটি রহিত হওয়ার হুকুম ছিলো রাসুল সাঃ এর ইন্তেকালের নিকটবর্তী সময়ে। তাই অনেক সাহাবী এই রহিত হওয়ার ঘটনা জানতেন না। তাই তারা আগের হিসেবে পাচ বার দুধ পান করার আয়াতটি কুরআন হিসেবে তেলাওয়াত করতে রইলেন।
যেমনটি "ফাতহুল কাদীর," ৩/৩ এবং "শরহু মুসলিম লিন নববী" ১০/২৯ এ উল্লেখ রয়েছে। 
অন্যথায় কীভাবে এটা কল্পনা করা যায় যে, কুরআনের একটি অংশ আবু বকর রাঃ লিপিবদ্ধ করেন নি অথচ সে অংশ তার কন্যা আয়শা রাঃ এর কাছে সংরক্ষিত ছিলো?

★মোটকথা শাফেয়ীরাও বলে যে, এই পাচ বার দুধ পান করার আয়াত রহিত হয়ে গেছে। কিন্তু তারা এই ব্যাখ্যা করে যে, "আয়াত রহিত হয়ে গেছে বলতে আয়াতের তেলাওয়াত রহিত হয়ে গেছে। কিন্তু তার বিধান এখনও বাকি আছে। যেমনটি রজমের বিধানের ক্ষেত্রে হয়েছে যে, আয়াতের তেলাওয়াত রহিত হয়ে গেছে কিন্তু তার বিধান এখনও বাকি আছে।" 
কিন্তু উলূমুল কুরআনের সাথে যার সামান্য সম্পৃক্ততা আছে সে ই এই বিষয়ে অবগত থাকার কথা যে, "কুরআনের কোন আয়াতের তেলাওয়াত রহিত হয়ে গেলে এর সাথে তার বিধানও রহিত হয়ে যায়।"
হ্যাঁ বিধান অবশিষ্ট থাকা কেবল তখনই সাব্যস্ত হবে যখন সেটা মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হবে। যেমনটি রজমের বিধান মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত রয়েছে।
কিন্তু পাচবার দুধ পান করার আয়াতের বিধান যে অবশিষ্ট আছে সেটা মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হওয়া তো দূরের কথা শক্তিশালী "খবরে ওয়াহিদ" দ্বারাও সাব্যস্ত নয়।  
বরং এর বিপরীতে অনেক বর্ণনা রয়েছে যা একথা প্রমাণ করে যে, পাচবার দুধ পান করার হুকুম রহিত হয়ে গিয়েছে। (আমরা সেগুলোর কিছু উপরে উল্লেখ করেছি) 
সুতরাং এটাকে রজমের আয়াতের সাথে তুলনা করা কোন ভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। 

★এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, যদি পাচবার দুধ পান করার হুকুম রহিত হয়ে যেতো তাহলে আয়শা রাঃ অল্প দুধ পান করার দ্বারা হারাম সাব্যস্ত করতেন, অথচ তিনি তা করেন নি কেন?
এর উত্তর ইমাম আবু বকর জাসসাস রহঃ খুব দারুনভাবে দিয়েছেন।
তিনি বলেন,  
"আয়শা রাঃ বড় ব্যক্তিকে দুধ করানোর মাধ্যমে মাহরাম সাব্যস্ত করার প্রবক্তা ছিলেন। কিন্তু আমরা এবং শাফেয়ীরা এব্যাপারে একমত যে, বড় (দুই বছর অতিক্রম হওয়ার পরে) ব্যক্তি দুধ পান করলে দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে না। সুতরাং আয়শা রাঃ এর হাদিস দ্বারা দলিল দেয়ার কোন সুযোগ বাকি থাকলো না।"
(আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, ২/১৬২)

★জাসসাস রহঃ এর দাবি যে বাস্তব সম্মত এবং সঠিক তার প্রমাণ হলো, 
(ক) সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফে বর্ণিত আছে,  
لقد نزلت آية الرجم و رضاعة الكبير عشرا
"রজমের আয়াত এবং বড়কে দশবার দুধ পান করানোর আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিলো। "
(ইবনে মাজাহ, ১৯৪৪)
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে ঐ সংখ্যা বড়কে দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। 
(খ) মুয়াত্তা মালেক কিতাবে ইমাম মালিক রহঃ বর্ণনা করেন,  
عن نافع، أن سالم بن عبد الله بن عمر أخبره: أن عائشة أم المؤمنين، أرسلت به وهو يرضع، إلى أختها أم كلثوم بنت أبي بكر الصديق. فقالت: أرضعيه عشر رضعات حتى يدخل على. قال سالم: فأرضعتني أم كلثوم ثلاث رضعات ثم مرضت فلم ترضعني غير ثلاث رضعات. فلم أكن أدخل على عائشة من أجل أن أم كلثم لم تتم لي عشر رضعات.
সারসংক্ষেপ হলো,
"আয়শা রাঃ সালিম রহঃ কে স্বীয় বোন উম্মে কুলসুম রাঃ এর নিকট দশবার দুধ পান করার জন্য পাঠালেন, যাতে সালেম রহঃ আয়শা রাঃ এর নিকট দুধ-সম্পর্কীয় মাহরাম হিসেবে প্রবেশ করতে পারেন, কিন্তু তিনবার দুধ পান করানোর পর উম্মে কুলসুম রাঃ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সালেম রহঃ বলেন, আয়শা রাঃ আমাকে তার কাছে প্রবেশ করতে দিতেন না, কারণ আমি দশবার দুধ পান করার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারিনি।" 
(মুয়াত্তা মালিক, ২/৬০৩)
একই সনদে ভিন্ন শব্দে আব্দুর রাজ্জাক রহঃ এই হাদিস বর্ণনা করেন। 
(দ্রঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১৩৯২৮)
অনুরূপভাবে ইমাম বাইহাকী রহঃ ও বর্ণনা করেন।
(দ্রঃ সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী, ৭/৪৫৪ হাদিস নং ১৫৬২১)
"মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক" গ্রন্থে মা'মার রহঃ থেকে একটি বর্ণনা রয়েছে, যা এই বিষয়ে একদম স্পষ্ট বিবরণ। 
عبد الرزاق عن معمر أن أزواج النبي صلى الله عليه وسلم إذا أرضعن الكبير دخل عليهن، فكان ذلك لأزواج النبي صلى الله عليه وسلم خاصة، ولسائر الناس لا يكون إلا ما كان في الصغر.
"মা'মার রহঃ থেকে বর্ণিত, রাসুল সাঃ এর স্ত্রীগণ যখন কোন বড় ব্যক্তিকে দুধ পান করিয়ে দিতেন, তখন সে রাসুল সাঃ এর স্ত্রীদের সামনে যেতে পারতেন। বড়কে দুধ পান করানোর এই বিষয়টি রাসুল সাঃ এর স্ত্রীদের সাথে নির্দিষ্ট ছিলো। অন্যসব মানুষের জন্য শুধুমাত্র ছোট অবস্থাতে দুধ পান করলে দুধ-সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে।" 
( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১৩৯১৫ )

(পাঁঁচ) 
যেসমস্ত বর্ণনাকারী আয়শা রাঃ এর মাজহাব বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে "সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ" এবং "উরওয়া ইবনে যুবায়ের" রহঃ অন্যতম।  কিন্তু তারা আয়শা রাঃ থেকে দুধ পান করার নির্দিষ্ট সংখ্যা বর্ণনা করা সত্বেও নিজেরা সেই মাজহাব গ্রহণ করেননি। বরং তারাও এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, কম হোক আর বেশি হোক দুধ পান করলেই হারাম সাব্যস্ত হবে। 
সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহঃ এর মাজহাব "আল-মুদাওয়নাতুল কুবরা" (৫/৮৭) কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। 
উরওয়া ইবনে যুবায়ের রহঃ এর মাজহাব ইমাম মালেক রহঃ বর্ণনা করেন,
عن إبراهيم بن عقبة انه سأل سعيد بن المسيب عن الرضاعة فقال كل ما كان في الحولين وإن كانت قطرة واحدة فهو محرم وما كان بعد الحولين فإنما هو طعام يأكله قال إبراهيم ثم سألت عروة فقال مثل ما قال سعيد 
"ইব্রাহিম ইবনে উকবা রহঃ সায়ীদ ইবনে মুয়াসায়্যিব রহঃ কে দুধ পান করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন, দুই বছরের মধ্যে এক ফোটা দুধও পান করে তাহলে হারাম সাব্যস্ত হবে। কিন্তু দুই বছর পর সেটা খাদ্য হয়ে যায় যা সে ভক্ষণ করে। (অর্থাৎ তখন পান কারলে দুধ-সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে না)  ইব্রাহিম রহঃ বলেন,  এরপর আমি এ বিষয়ে " উরওয়া ইবনে যুবায়ের" রহঃ কে জিজ্ঞেস করি। তিনিও সেই উত্তরই প্রদান করেছেন যা সায়ীদ ইবনে মুসায়্যিব রহঃ দিয়েছেন।" 
(আল-জাওহারুন নাকিয়্য, ৭/৪৫৫)
এইজন্য ইমাম ত্বহাবী রহঃ বলেন, 
 فلم يخالف عروة ما رواه في ذلك الا لثبوت نسخه عنده 
" উরওয়া ইবনে যুবায়ের" রহঃ এর নিকট যদি দুধ পান করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সংখ্যার বিষয়টি রহিত সাব্যস্ত না হতো, তাহলে তিনি তা বর্ণনা করা সত্বেও এর বিপরীত মত ব্যক্ত করতেন না।"
(আল-জাওহারুন নাকিয়্য, ৭/৪৫৫)

★সারমর্মঃ 
এই বিস্তারিত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, জমহুরের মাজহাব যেটা হানাফীদেরও মাজহাব; (অর্থাৎ দুই বছরের মধ্যে কোন শিশু যদি অন্য কোন মহিলার দুধ পান করে, চাই কম পান করুক বা বেশি পান করুক; দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হয়ে যাবে।) দলিল প্রমাণের আলোকে যথেষ্ট শক্তিশালী।  
যেসমস্ত হাদীস থেকে বোঝা যায় নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিমাণ দুধ পান না করলে হারাম সাব্যস্ত হবে না, সেই বর্ণনাগুলো হয়তো ইসলামের প্রাথমিক সময়ের বিধান যা পরবর্তীতে রহিত হয়ে গেছে, অথবা সেই বর্ণনাগুলো বড় ব্যক্তিকে দুধ পান করানো সম্পর্কিত। আর বড় ব্যক্তি (এখানে বড় ব্যক্তি বলতে কারো বয়স দুই বছর অতিক্রম হওয়া) দুধ পান করলে যে হারাম সাব্যস্ত হবে না এব্যাপারে শাফেয়ীরাও একমত। আর মা'মার রহঃ এর বর্ণনা থেকে তো স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বড়কে দুধ পান করানোর বিধানটি শুধুমাত্র রাসুল সাঃ এর স্ত্রীদের সাথে নির্দিষ্ট ছিলো। ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১৩৯১৫ ) 
সুতরাং হানাফী মাজহাবের অগ্রগণ্যতা এবং বিপরীত মত পোষণ কারীদের দলিলের দুর্বলতা এখন স্পষ্ট। 
আল্লাহু আ'লামু বিস-সাওয়াব।

------------------ 
লিখেছেনঃ মুহতারাম মাসুম বিল্লাহ হাফি. 

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf