ইবনে আবীল ইয হানাফী ও তার ‘শারহুল আকীদাতিত তাহাবিয়্যা’-এর প্রকৃত অবস্থা ও মূল্যায়ন
ইবনে আবীল ইয হানাফী ও তার ‘শারহুল আকীদাতিত তাহাবিয়্যা’-এর প্রকৃত অবস্থা ও মূল্যায়ন
আহলে ইলমের কাছে একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, ইবনে আবীল ইযের উক্ত শরাহটি সহজবোধ্য ও আকীদার সাথে হাদীস-আসার উল্লেখ করা এবং কিছু বিষয়ে ভালো আলোচনা থাকার পাশাপাশি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর বিপরীত অনেক আকীদা ও কথা রয়েছে।
আমার জানামতে ছোটখাটো বিষয়গুলো বাদ দিলেও মৌলিকভাবে ১৫টির চেয়ে বেশি ভ্রান্ত আকীদা, অপব্যাখ্যা ও ভুল তথ্য রয়েছে। শাইখ সাঈদ ফুদার الشرح الكبير ও মুফতী রেজাউল হক সাহেবের العصيدة السماوية দেখলে সহজে পেয়ে যাবেন।
আর উক্ত ব্যাখ্যা গ্রন্থে ভ্রান্তির মূল কারণ হচ্ছে, তিনি শাইখ ইবনে তাইমিয়া রহ, ও ইবনুল কায়্যিমের কিতাব সমূহ থেকে তাদের নাম নেওয়া ছাড়া অসংখ্য কথা ও বক্তব্য ব্যাখ্যা হিসেবে এনেছেন। এটা নিছক দাবি নয়, বরং সালাফি আলেম ড. আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ তিনি এ বিষয়ে স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন। যার নাম হচ্ছে, مصادر ابن أبي العز في شرح العقيدة الطحاوية এতে তিনি এমন ১৮৭ টি জায়গা চিহ্নিত করেছেন।
মোল্লা আলী কারী রাহ. (মৃ. ১০১৪ হি.) বলেন,
والحاصل أن الشارح يقول بعلو المكان مع نفي التشبيه، وتبع فيه طائفة من أهل البدعة.
সারকথা, (আকীদাতুত তাহাবীর) ব্যাখ্যাকার তাশবীহ নাকচ করার সাথে আল্লাহ তাআলা স্থানগতভাবে উপরের দিকে রয়েছেন বলে বিশ্বাস করে। আর এক্ষেত্রে সে একদল বিদআতীর অনুসরণ করেছে।
কিছু দূর এগিয়ে বলেন,
ومن الغريب أنه استدلّ على مذهبه الباطل برفع الأيدي في الدعاء إلى السماء، وهو مردود.
আশ্চর্যের বিষয় হল, সে তার ভ্রান্ত মতবাদ (তথা আল্লাহ স্থানগতভাবে উপরে রয়েছেন) প্রমাণ করতে গিয়ে দুআর সময় হাত উপরের দিকে উঠানোর দলিল দিয়েছে। অথচ তা অগ্রহণযোগ্য। শারহুল ফিকহিল আকবার পৃ. ১৯৮, ১৯৯।
আল্লামা মুরতাযা যাবীদী রাহ. (মৃ. ১২০৫ হি.) ইবনে আবীল ইয সম্পর্কে লিখেছেন,
ولما تأملته حق التأمل: وجدته كلامًا مخالفًا لأصول مذهب إمامه! وهو في الحقيقة كالرد على أئمة السنة، كأنه تكلم بلسان المخالفين، وجازف وتجاوز عن الحدود، حتى شبه قول أهل السنة بقول النصارى! فليتنبه لذلك.
আমি তার বক্তব্য নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখেছি যে, তার বক্তব্য তার ইমামের মাযহাবের উসূলের বিরোধী। বরং প্রকৃতপক্ষে তার বক্তব্য যেন আহলুস সুন্নাহর ইমামগণের খণ্ডনে লিখিত এবং সে প্রতিপক্ষ হিসেবে কথা বলেছে। সে বিকৃতির শিকার হয়েছে এবং সীমা অতিক্রম করেছে। এমনকি সে আহলুস সুন্নাহর বক্তব্যকে খ্রিষ্টানদের বক্তব্যের সাথে তুলনা করেছে। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক থাকা চাই। ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন ২/২৩২।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ‘ইমবাউল গুমর’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
...إلى أن انتهت القضية للسلطان، فكتب مرسوما طويلا، منه: بلغنا أن علي بن أيبك مدح النبي صلى الله عليه وسلم بقصيدة، وأن علي بن العز اعترض عليه وأنكر أمورا، منها: التوسل بالنبي صلى الله عليه وسلم، والقدح في عصمته، وغير ذلك، وأن العلماء بالديار المصرية خصوصا أهل مذهبه من الحنفية أنكروا ذلك.
সারাংশ, ইবনে আবীল ইয ওসীলা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মিশরের আলেমগণ বিশেষভাবে তার হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরাম তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। ইমবাউল গুমর বি আবনায়িল উমর ২/৯৫-৯৬।
আশা করি ইবনে আবীল ইযের ব্যাখ্যা গ্রন্থটি সালাফীদের কাছে ফেভারিট হওয়া কিংবা তাদের মাদ্রাসায় সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং আমাদের কাছে তা অগ্রহণযোগ্য হওয়ার কারণ পরিষ্কার হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইবনে আবীল ইযের التنبيه على مشكلات الهداية ও الاتباع পড়লে মনে হয়, তিনি ঐ সকল মাসআলায় হানাফী, যেখানে ইবনে তাইমিয়া ও ইবনুল কায়্যিম হানাফীদের খেলাফ করেননি। কাজেই তিনি আকীদা ও আমলের প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের অনুসারী।
ইমাম সাখাবী রাহ. ‘আদ-দাওউল লামি’ গ্রন্থে লিখেছেন, হাফেজ কাসেম ইবনে কুতলুবুগা তার অভিযোগগুলোর জবাব দিয়েছেন أجوبة عَن اعتراضات ابن العِزّ على الهداية নামক কিতাবে।
‘আল-বাহরুর রায়েক’এ রয়েছে,
وَقَدْ أَطَالَ فِي فَتْحِ الْقَدِيرِ فِي بَيَانِهِ إطَالَةً حَسَنَةً وَتَعَرَّضَ لِلرَّدِّ على ابن الْعِزِّ، وَلَسْنَا بِصَدَدِ ذَلِكَ.
লিখেছেনঃ শ্রদ্ধেয় মুফতি Sayed Ahmad
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন