কুরআনে টাই? নাকি কুরআনের নাম নিয়ে মিথ্যাচার?

কুরআনে টাই? নাকি কুরআনের নাম নিয়ে মিথ্যাচার? টাইয়ের বিষয়ে সঠিক অবস্থান ও আরবের উলামায়ে কেরামগণের মতামতঃ
.
—সামীউর রহমান শামীম
.
আফসোস! বড়ই আফসোস! যতই দিন যাচ্ছে আমরা বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হচ্ছি। অথচ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ-এর বৈশিষ্ট্য হলো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। লা-মাযহাবী, গাইরে মুকাল্লিদ শায়খ মুফতী কাজী মুহাম্মাদ ইবরাহীম সাহেব। দীর্ঘদিন যাবত তাঁকে আমি চিনি। বর্তমানে যারা কাজী ইবরাহীম সাহেবের অতি অন্ধভক্ত, তাদের অনেকের অনেক আগে একসময় আমি তাঁর ভক্ত ছিলাম। প্রায় ৬ বছর যাবত তাঁকে আমি চিনি। ৬ বছরের বেশি হবে কম নয়। অনেক কিছু তাঁর থেকে জেনেছি, শিখেছি।
.
সম্প্রতি তিনি টাই (Tie) নিয়ে যে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন, তা সত্যিই দুঃখজনক। সম্প্রতিকালে দেখা যাচ্ছে, তিনি অনেক অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। পূর্বে কিন্তু তিনি এমন বক্তব্য দিতেন না। তখন তিনি বেশ সংযত হয়েই কথা বলতেন। ইদানিং কেন এমন করছেন, জানি না।
.
তাঁর বক্তব্য, বিশ্লেষণ ও সেটির জবাব দেয়ার আগে টাই সম্পর্কে আমার অবস্থান পরিষ্কার করে দেইঃ
.
টাই (Tie) সম্পর্কে আমার বক্তব্য হলো, শাইখুল ইসলাম হযরত মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী (হাফি.) সাহেবের যে বক্তব্য, হুবহু সেই বক্তব্য।
.
‘‘টাই’’ মুসলমানদের পোশাক নয়। এ বিষয়ে সকল উলামায়ে কেরামগণ একমত। শুধু মতপার্তক্য এতটুকু যে, টাই ইহূদের শূল কিংবা খ্রীস্টানদের ক্রুশের অনুরূপ কিনা বা ইহূদী-খ্রীস্টানদের উক্ত চিহ্নগুলো থেকে টাই এসেছে কিনা এ বিষয়ে। শুধু এতটুকু মতপার্থক্য।
.
শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী (হাফি.) ইতিহাস এবং বিভিন্ন কিতাবাদী গবেষণা করে টাই যে খ্রিস্টানদের ক্রসের প্রতীক এমন কোনো তথ্য পান নি।
.
কিন্তু টাই যে কাফেরদের পোশাক এ বিষয়ে সমস্ত উলামায়ে কেরামগণ একমত। সুতরাং টাই পরিধান করা মাকরূহ। যেমনটি ফাতাওয়ায়ে মাহমূদিয়াতে এমনই বর্ণিত হয়েছে। —[ ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১২/৪০৮]
.
মোদ্দা কথা হলো— টাই খ্রিস্টানদের ক্রস কিংবা ইহূদীদের শূলের চিহ্ন এ তথ্যটি প্রমাণসিদ্ধ নয়। প্রমাণিত নয়। তবে টাই যে মুসলমানদের পোশাক নয়, এটা নিশ্চিত। তাই টাই ব্যবহার পরিত্যাগ করে চলতে হবে।
.
কাজী ইবরাহীম সাহেবের বক্তব্যের জবাবঃ
.
সূরাতুল আম্বিয়া এর ১০৪ নম্বর আয়াতের অংশ,
.
ﻳﻮﻡ ﻧﻄﻮﻱ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻛﻄﻲ ﺍﻟﺴﺠﻞ ﻟﻠﻜﺘﺐ
.
অর্থাৎ ‘‘সে দিন আমি আকাশকে গুটিয়ে/ভাঁজ করে নেবো যেমনভাবে বই বা লিখিত দফতর গুটিয়ে নেওয়া হয়।’’
.
এই আয়াতের ﻃَﻲُّ শব্দটিকে তিনি টাই হিসেবে বলেছেন বা ধরেছেন। ﻃَﻲُّ শব্দটির মাসদার (মূল ধাতু) হলো, ﻃﻮَﻯ যার অর্থ ভাঁজ।
.
এটা যেকোনো কিছুকেই ভাঁজ করা হতে পারে। কাপড় ভাঁজ করা হতে পারে। কাপড় গুটিয়ে নেওয়াও হতে পারে। বই-খাতা গুটি নেওয়াও হতে পারে। ﺍﻟﺤِﻘْﺪُ ﻳُﻄْﻮَﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﻠﺐ অর্থাৎ শত্রুতা, বিদ্বেষ কিংবা ঘৃণা হৃদয়ে বা হৃদয় হতে গুটিয়ে নেওয়াও হতে পারে।
.
তো এখানে তিনি ‘‘টাই’’ (Tie) পোশাকটি কোথায় পেলেন? এর দ্বারা কীভাবে প্রমাণ হয় যে, টাই ইসলামী পোশাক কিংবা মুসলমানদের পোশাক??
.
টাই নামক পোশাকটিকে আরবীতে ﺭﺑﻄﺔ ﻋﻨﻖ উচ্চারণ— রাবতাহ উনক।
.
এই শব্দটিতে ﺭﺑﻄﺔ এর অর্থ পাঁজা,আটি, গোছা ইত্যাদি। আর ﻋﻨﻖ মানে ঘার বা গর্দান।
.
টাই পরিধানের ব্যাপারে সঊদী আরবের কিছু শায়খদের অভিমতঃ
.
সঊদী আরবের কিবারে আলেম, স্থায়ী ফাতাওয়া বোর্ডের সদস্য শায়খ সালেহ আল ফাওযান (হাফি.) বলেন,
.
ﻫﺬﻩ ﺗُﻀﺎﻫﻲ ﺗﻌﻠﻴﻖ ﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ ﺍﻟﺼُّﻠﺐ ﻋﻠﻰ ﺃﻋﻨﺎﻗﻬﻢ . ﻓﻲ ﻣﺸﺎﺑﻬﺔ
ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ ﻳُﻌﻠّﻘﻮﻥ ﺍﻟﺼﻠﻴﺐ ﻋﻠﻰ ﺃﻋﻨﺎﻗﻬﻢ ﻓﻘﻠّﺪﻫﻢ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻭ ﺟﻌﻞ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻜﺮﺍﻓﺘﻪ . ﻫﺬﺍ ﺗﺸﺒﻪ
ﻭﻟﻴﺴﺖ ﻫﺬﻩ ﻣﻦ ﻣﻼﺑﺲ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ، ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻲ ﺳﺎﺭﻳﺔ ﺇﻟﻰ . ﺇﻟﻴﻨﺎ ﻣﻦ ﻣﺠﺘﻤﻊ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻭﻫﻢ ﺍﻷﺻﻞ
ﺍﻷﺻﻞ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﻧﻬﺎ ﺗﻌﻠﻴﻖ ﺍﻟﺼﻠﻴﺐ ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯ ﺃﻥ ﻳﻠﺒﺲ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻜﺮﺍﻓﺘﻪ
ﻭﺇﺫﺍ ﻛﺎﻡ ﺻﺎﺣﺐ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻳُﺠﺒﺮﻩ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻓﺎﻷﻋﻤﺎﻝ ﻛﺜﻴﺮﺓ ﻭﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ . ﻳﻨﺘﻘﻞ ﺇﻟﻰ ﺩﺍﺋﺮﺓ ﺃﺧﺮﻯ ﺃﻭ ﺇﻟﻰ ﻋﻤﻞ ﺁﺧﺮ
.
অর্থাৎ ‘‘এটা খ্রিস্টানদের ক্রুশের সহিত সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা খ্রিস্টানরা তাদের ক্রুশ গর্দানে ঝুলায়। তাদের তাকলিদ (অনুসরণ, অনুকরণ) করে কিছু মুসলমান টাই ঝুলায়। এটা খ্রিস্টানদের অনুসরণ। এটা মুসলমানদের পোশাক নয়। এটা খ্রিস্টানদের ক্রুশ হতে এসেছে, সুতরাং কোনো মুসলমানের টাই পরিধান করা জায়েয নয়।’'
.
শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ (হাফি.) বলেন,
.
ﻭﺃﻣّﺎ ﺑﺎﻟﻨﺴﺒﺔ ﻟﺮﺑﻄﺔ ﺍﻟﻌﻨﻖ ﻓﺈﻥ ﺍﺳﺘﻄﺎﻉ ﺃﻥ ﻳﺴﺘﻐﻨﻲ ﻋﻨﻬﺎ ﻓﻬﻮ ﺃﻓﻀﻞ ، ﻭﺇﺫﺍ ﺍﺣﺘﺎﺝ ﺇﻟﻰ ﻟﺒﺴﻬﺎ ﻓﻼ ﺣﺮﺝ ﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﻟﻴﻨﺘﺒﻪ ﺃﻻ ﺗﻜﻮﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﺤﺮﻳﺮ ﺍﻟﻄﺒﻴﻌﻲ ﺃﻭ ﻓﻴﻬﺎ ﺗﺼﺎﻟﻴﺐ ﺃﻭ ﺻﻮﺭ ﺫﻭﺍﺕ ﺍﻷﺭ
.
টাই পরিধান না করাই শ্রেয় ও উত্তম। তবে যদি টাই পরতে বাধ্য হয় কিংবা খুবই জরুরী হয়ে থাকে তাহলে টাই পরিধান করলে ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা নেই।
.
বিশ্বের সকল আলেম একমত যে, টাই কাফিরদের পোশাক। না পরাই উত্তম। শুধু মতপার্থক্য এখানে যে, টাই ইহূদী-খ্রিস্টানদের ধর্মীয় পোশাক কিনা? এটা ক্রুশ বা শূলের চিহ্ন কিনা? এ বিষয়ে একদল আলেম বলেন, এটা খ্রিস্টানদের পোশাক হলেও, ক্রুশ বা শূললের চিহ্ন নয়। আরেকদল আলেম বলেন, এটা খ্রিস্টানদের পোশাকের পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় পোশাক এবং ক্রুশের চিহ্ন।
.
এখানে মুফতী কাজী মুহাম্মাদ ইবরাহীম সাহেব কীভাবে টাই-কে মুসলমানদের পোশাক বলেন? টাইয়ের বৈধতা প্রমাণ করতে কীভাবে মিথ্যাচার করলেন? তার মতো ব্যক্তির নিকট এমনটি আশা করি নাই।

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf