জ্যোতিষবিদ্যা, ভাগ্য গণনা ও রাশিফল বিষয়ে ইসলাম কী বলে?
অনেক মানুষ ভবিষ্যতের ভালো-মন্দ জানার জন্য ভাগ্য গণনা করতে জ্যোতিষবিদ ও গণকের কাছে গমন করে। অথচ অদৃশ্য বস্তু ও ভবিষ্যৎ বিষয় জানা একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যই নির্ধারিত,
আল্লাহ বলেন :
ﻗُﻞْ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ
অর্থ : আপনি বলুন, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও জমিনের কেউ অদৃশ্যের সংবাদ জানেন না। (সূরা নমল : ৬৫)
অন্য কেউ এ বিষয়ে জানার দাবি করা মূলত আল্লাহর সংরক্ষিত অধিকারকে খর্ব করার শামিল, যা শিরকের অংশবিশেষ। আমাদের দেশে জ্যোতিষবিদ্যা, রাশি নির্ণয়, ভাগ্য গণনা, পাখীর মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা, হাত দেখানো কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে সেকল কাজকর্মের ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হয়, তা ভবিষ্যৎ জানারই অপচেষ্টা মাত্র। বড় বড় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ভাগ্য গণনা ও রাশি নির্ণয়ের জন্য প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। পত্রিকায় ঘটা করে রাশি নির্ধারণপূর্বক ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। কোথাও ভাগ্য নির্ধারণের জন্য যন্ত্রও বসানো হয়েছে। শহরের রাস্তাঘাটে পাখি দিয়েও ভাগ্য নির্ধারণের মিথ্যা অপচেষ্টা চলে। এসবই ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইসলামী আকিদার পরিপন্থী। কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বিরোধী। গায়েব বা অদৃশ্যের সংবাদ একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন এ বিষয়ে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে। এ উদ্দেশে কোনো জ্যোতিষ বা গণকের কাছে গমন করার ভয়াবহ পরিণাম বিধৃত হয়েছে হাদিসে।
যেমন :
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - : ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻰ ﻋَﺮَّﺍﻓًﺎ ﺃَﻭْ ﻛَﺎﻫِﻨًﺎ ﻓَﺼَﺪَّﻗَﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻓَﻘَﺪْ ﻛَﻔَﺮَ ﺑِﻤَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ
অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো গণক বা জ্যোতিষের কাছে গমন করে এবং তার কথা বিশ্বাস করে; তাহলে সে মুহাম্মদের ওপর অবতীর্ণ দীনকে অস্বীকার করলো। (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদিস নং- ১৬৯৩৮)
ﻋَﻦْ ﺑَﻌْﺾِ ﺃَﺯْﻭَﺍﺝِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗَﺎﻝَ: ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻰ ﻋَﺮَّﺍﻓًﺎ ﻓَﺴَﺄَﻟَﻪُ ﻋَﻦْ ﺷَﻰْﺀٍ ﻟَﻢْ ﺗُﻘْﺒَﻞْ ﻟَﻪُ ﺻَﻼَﺓٌ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً
অর্থ : রাসুলের কোনো একজন স্ত্রী থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে এসে কিছু জিজ্ঞেস করল, তাহলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৫৯৫৭)
সুতরাং সকল ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ হতেই আসে। সকল অদৃশ্যের সংবাদ একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। না কোনো নবী, না কোনো রাসুল, না কোনো অলী, না কোনো পীর-মাশায়েখ এসব জানেন। হ্যাঁ, অহীর মাধ্যমে নবী-রাসুলদেরকে আল্লাহ তাআলা যতটুকু অদৃশ্যের সংবাদ জানিয়েছেন ততটুকু সত্য। সত্তাগতভাবে তাঁরা অদৃশ্যের সংবাদ জানতেন না।
হা, কেউ কোনো আলামত দেখে অথবা পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে কিংবা চিন্তাভাবনা করে ভবিষ্যতের কিছু কথা বলতে পারে। এসব বিশ্বাস করা কুফুরি না। কারণ, এগুলো হতেও পারে; নাও হতে পারে। যেমন, আবহাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদি।
ভাগ্য গণনাকারী ও জ্যোতিষদের অনেক কথা সত্যে পরিণত হলেও তা বিশ্বাস করা যাবে না। ঘটনাচক্রে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হওয়া অসম্ভব কিছু না। অথবা দুষ্ট জিনদের সহায়তায় তারা এমনটি করে থাকে। আর ওই জিনগুলো ফেরেশতাদের কাছ থেকে উড়োউড়ো জানতে পারে।
একটি হাদিসে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে :
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻜُﻬَّﺎﻥَ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳُﺤَﺪِّﺛُﻮﻧَﻨَﺎ ﺑِﺎﻟﺸَّﻰْﺀِ ﻓَﻨَﺠِﺪُﻩُ ﺣَﻘًّﺎ ﻗَﺎﻝَ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟْﻜَﻠِﻤَﺔُ ﺍﻟْﺤَﻖُّ ﻳَﺨْﻄَﻔُﻬَﺎ ﺍﻟْﺠِﻨِّﻰُّ ﻓَﻴَﻘْﺬِﻓُﻬَﺎ ﻓِﻰ ﺃُﺫُﻥِ ﻭَﻟِﻴِّﻪِ ﻭَﻳَﺰِﻳﺪُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣِﺎﺋَﺔَ ﻛَﺬْﺑَﺔٍ
অর্থ : হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, আমি রাসুলকে জিজ্ঞেস করলাম, জ্যোতিষদের অনেক কথা সত্যে পরিণত হয়ে থাকে; এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? রাসুল সা. বললেন, এসব সত্য কথাগুলো জিনজাতি ফেরেশতাদের থেকে নিয়ে এসে তাদের বন্ধুদের কাছে দেয়; আর তারা নিজেদের পক্ষ হতে শত শত মিথ্যা সংমিশ্রিত করে সাধারণ মানুষকে দেয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৫৯৫২)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন