পুরুষদের প্যান্ট ভাজ করে নামাজ পড়া বিষয়ক বিভ্রান্তি নিরসন
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
(সম্প্রতি ফেসবুকের "নামাজে কাপ্লড় গুটাতে নিষেধাজ্ঞা" বিষয়ক একটি হাদিসের ভুল অর্থ প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন শ্রদ্ধেয় মুফতি আফফান বিন শরফুদ্দিন হাফি.)
কাপড় গুটানো সংক্রান্ত হাদিস পর্যালোচনা ও ভুল প্রয়োগের অবসান
ব্যাখ্যা-১
স্বাভাবিক অবস্থায় কাপড় গুটাতে কোন সমস্যা নেই। এই হাদিসে কাপড় গুটাতে নিষেধ করার অর্থ হচ্ছে নামায চলাকালীন অবস্থায় কাপড় না গুটানো। তাছাড়া এটা হাতের কাপড় গুটানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে বিপুল পরিমাণ ওলামায়ে কেরামের মতামত রয়েছে।
আপনার দেয়া ফ্লায়ারটিতে আল হাদিস অ্যাপের রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়েছে।
সেখানে এই হাদিসের অনুবাদকরাও নামাযের মধ্যে গুটানোর বিষয়টি ব্র্যাকেটে লিখে দিয়েছেন।
ইব্নে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে সাতটি অঙ্গের সাহায্যে সাজদাহ্ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং চুল ও কাপড়গুলোকে গুটানো থেকে বারণ করা হয়। (সলাত রত অবস্থায়)। (ই.ফা. ৯৭৯, ই.সে. ৯৯০)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৯৮৪
ব্যাখ্যা-২
কাপড় গুটিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অনুত্তম ও মাকরুহ বোঝায়। হারাম না।
কারন কোন কিছু সরাসরি হারাম হওয়ার জন্য ওই সংক্রান্ত দলীলটি قطعي الثبوت قطعي الدلالة অর্থাৎ দলীলটি মুতাওয়াতির পর্যায়ের অকাট্য হওয়ার পাশাপাশি এর অর্থও অকাট্য হতে হবে। ভিন্ন কোন ব্যাখ্যার অবকাশ থাকতে পারবেনা।
দুঃখজনকভাবে এই হাদিসে এই দুটি ক্রাইটেরিয়ার কোনটিই পাওয়া যাচ্ছেনা। এটি মুতাওয়াতির বা মশহুর না। বরং আখবারে আহাদের অন্তর্ভুক্ত। আর ভিন্ন ব্যাখ্যার ব্যাপারটা একটু আগেই উপরে উল্লেখ করেছি। তাই বিষয়টাকে সরাসরি হারাম সাব্যস্ত করা বা নামায ভঙ্গের কারন সাব্যস্ত করা সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও অগ্রহনযোগ্য একটা ব্যাপার। আমাদের জানামতে কোন মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মুজতাহিদরাই এটাকে নামায ভঙ্গের কারন সাব্যস্ত করেননি। বরং রাসূলের এই কথাটা নিছক অনুৎসাহিত করণের দিকে ইঙ্গিত করে।
কারন রাসূলুল্লাহ সাঃ পুরুষের সতরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন তা হচ্ছে নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। আর সতর ছাড়া শরীরের অন্য কোন অংশ উন্মুক্ত হলে যে নামায ভাঙবেনা তা মুসলমানদের সর্বস্বিকৃত একটা বিষয়।
যদি বলা হয় যে, সবসময় না হোক শুধু নামাযের ক্ষেত্রে তো শরীরের অন্যান্য অঙ্গ সতরের মতো অবশ্যই ঢেকে রাখা আবশ্যক হতে পারে ?
সেক্ষেত্রে উত্তর হলো যদি এমনটাই হতো তাহলে রাসূল সাঃ পুরুষদেরকেও মহিলাদের মতো সমস্ত অঙ্গ ঢাকার ব্যাপারে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতেন। অথচ তিনি এ ব্যাপারে তা করেননি। সাহাবাদের সবার এমন কাপড়ও ছিলোনা যে তারা এত ঢেকে থাকবেন।
এসব অঙ্গ সতরের মতো ঢেকে রাখা আবশ্যক প্রমান করার মতো উপযুক্ত ও শক্তিশালী দলীল দলীল জগতের কারো কাছে নেই। তাই হাতা/কাপড় গুটানোর দ্বারা নামায ভাঙা অসম্ভব।
আর যদি বলা হয় কাপড় গুটানোর কাজটা নিজেই নামায ভঙ্গের কারন। শরীর উন্মুক্ত হওয়া না হওয়া ফ্যাক্ট না। তাহলে এটা জেনে রাখা উচিত যে, এই উম্মতের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হলো কোন কাজ তখনই নামায ভঙ্গের কারন হয় যখন তা আমলে কাছীর হয়। এক দুইবার কাপড় গুটানো কোন মাযহাবের মুজতাহিদের কাছেই আমলে কাছির না। তবে প্রয়োজন ছাড়া এমন করাটা অনুত্তম/মাকরুহে তানযীহী অবশ্যই। যেহেতু এর বিপরীতে খবরে ওয়াহিদ হাদিস আছে।
সারাংশঃ পায়জামা বা প্যান্ট টাখনুর নিচে চলে যাচ্ছে, এজন্য নামাজের পূর্বে বা অন্য সময়ে প্যান্ট ভাঁজ করে রাখাতে কোনো সমস্যা নেই। আর এটাকে ফুকাহায়ে কিরাম কখনোই নামাজ নষ্ট হওয়া বা গুনাহের কারন বলেননি।বরং পুরুষদের কাপড় যেন টাখনুর নিচে ঝুলে না থাকে, এব্যাপারে সতর্ক থাকা কাম্য।
আল্লাহ আমাদেরকে নতুন - পুরাতন সকল ভ্রান্তি থেকে হিফাজত করুন, আমিন!
___________
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন