যেকোনো গল্প লেখাই কি গুনাহ?
প্রশ্নঃ
একটা মজার প্রশ্ন চোখে পড়লো। গল্পের ছলে বা কৌতুক করে যদি মিথ্যা না বলা যায় তাহলে কি মিথ্যা গল্প সাজিয়ে গল্প উপন্যাস কবিতা লেখা যাবে?!
(যেমন- আমরা অনেক সময় বলি, অমুক গ্রামে একজন অমুক ছিলো...। কাল্পনিক রূপ আরকি।)
উত্তরঃ
ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়ে আমার ভাবনাটা সংক্ষেপে বলছি-
১. মিথ্যা খারাপ হবার কারণ হলো, এটি শ্রোতার সামনে অসত্যকে সত্যভাবে তুলে ধরে, যেটার দ্বারা মানুষ প্রতারিত বা ধোঁকাগ্রস্ত হয়। গল্পে সেটা থাকে না। গল্পের ক্ষেত্রে কাহিনী যে সত্য না, সেটা শ্রোতাদের জানা থাকে। ফলে মিথ্যার নিন্দনীয় হবার মূল কারণ এতে বিদ্যমান নেই।
২. যেসব গল্পে কোন শিক্ষণীয় মেসেজ থাকে, সেটা অনেকটা দৃষ্টান্তের মতো। দৃষ্টান্ত দেবার জন্য কাল্পনিক চরিত্রকে উপস্থাপন করা সকলের মতেই জায়েয। ফুকাহাদের কিতাবে মাসআলা বর্ণনা করতে গিয়ে এমন বহু প্লট উপস্থাপন করা হয়, যেটা শুধুই মেসেজটা ক্লিয়ার করার জন্য করা হয়। এটা যে বাস্তব কিছু না, শুধুই বুঝানোর জন্য শ্রোতাদের/পাঠকের তা জানা থাকে। ফলে ১ম পয়েন্টে বলা মূল নিন্দনীয় বিষয় এতে অনুপস্থিত।
৩. আমরা নিত্য দিনের কথায় অনেক বাগধারা ব্যবহার করি। ধরেন, একজনকে বললাম, চুরি তো চুরি আমার সীনা জুরি করস ব্যাটা? আমরা কিন্তু আসলে এখানে বলিনি সে চোর বা চুরি করেছে। বরং অন্য কোন অন্যায় করে নমনীয় না হওয়াকে বুঝাই। এগুলোকে যেমন আক্ষরিক অর্থে সত্য বলে ধরি না বরং এতে নিহিত মূল মেসেজটুকু উদ্দিষ্ট থাকে বুঝে নেই, ভালো গল্প উপন্যাসের ক্ষেত্রেও সেম ব্যাপার থাকে। যেখানে অন্য কোন শরীয়ত লঙ্ঘনের ব্যাপার থাকে না। যেমন ফ্রি মিক্সিং ইত্যাদি।
৪. আলেমদের বইপত্রে প্রচুর গল্প পাওয়া যায়। সেগুলো বাস্তব না। যেমন ধরেন, আগুনকে গিয়ে একজন জিজ্ঞেস করলো, তোমার চেয়ে শক্তিশালী কে? সে বললো পানি... কিন্তু শিক্ষণীয় হবার কারণে উল্লেখ করা হয়। এটা পাঠকও বুঝে যে, শুধুই শিক্ষণীয় মেসেজ দেওয়া উদ্দেশ্য। গল্পটা সত্য না।
সুতরাং গল্প হলেই সেটা মিথ্যার অজুহাতে নাজায়েয হবে ব্যাপারটা এতটা সরল মনে হয না। হ্যা, অন্য কোন নাজায়েয উপাদান মিশ্রিত হলে সেটা ভিন্ন কথা।
------------------
উত্তরদাতা - মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসউদ (একটা পোস্টের কমেন্টবক্স থেকে)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন