প্রসঙ্গঃ তাক্বলীদ এবং দলিল

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মানব জীবনের যাবতীয় দিকের দিকনির্দেশনা অতি সুন্দরভাবে এখানে বর্ণিত আছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সব ক্ষেত্রের সমস্যার সমাধান খোদায়ি বিধান অনুযায়ী কী হবে, তা এখানে রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, সব মানুষ এসব সমস্যার সমাধান জানে না। কারন সব বিষয় কোরআন বা হাদীসে স্পষ্টভাবে বর্ননা করা হয়নি। যেমন রাসুল সাঃ বলেছেন এই হাদীসটিতে...
عن أبي عبد الله النعـمان بن بشير رضي الله عـنهما قـال : سمعـت رسـول الله صلي الله عـليه وسلم يقول : إن الحلال بين وإن الحـرام بين وبينهما أمور مشتبهات لا يعـلمهن كثير من الناس ‏
আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্নিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, 'হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। তবে এ দুইয়ের মধ্যে কিছু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে, অধিকাংশ মানুষ জানে না, তা কি হালালের অন্তর্ভুক্ত হবে নাকি হারামের অন্তর্ভুক্ত হবে।' (জামে তিরমিজি : ১২০৫)। এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, সামান্য কিছু মানুষ শরিয়াসংক্রান্ত নানা মাসয়ালার সমাধান দেয়ার ক্ষেত্রে পারদর্শী হবে। তখন বাকি মানুষের দায়িত্ব কী হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فاسألو اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون -‏
'তোমরা যদি না জানো তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করো।' (সূরা নাহল : ৪৩, সুরা আম্বিয়া : ৭)

আর এটাই হচ্ছে শরয়ী তাক্বলীদ, যার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেন। এখন তাক্বলীদের সংজ্ঞায় বলা হয়ঃ "কোনো অভিজ্ঞ আলেমের কথা দলিল প্রমান চাওয়া ব্যাতিত এই ধারনার ওপর মেনে নেয়া যে তিনি দলিল প্রমানের আলোকেই বলেছেন"

এখন কথা হচ্ছেঃ "দলিল দাবী করা ব্যাতিত" কেন? কারন হচ্ছে এটাই সাহাবায়ে কেরাম রাঃ ও তাবেয়ী রহঃ দের অনুসৃত সুন্নাত। আপনি মুসান্নিফে আব্দুর রাজ্জাক খুললে দেখতে পাবেন, সেখানে সাহাবা ও তাবেয়ীদের থেকে প্রায় ১৭০০০ (সতের হাজার) মাসায়েল বর্ননা করা হয়েছে কিন্তু একটি মাসআলার ক্ষেত্রেও কেউ কারো নিকট দলিল প্রমান চেয়ে বসেননি।
আর আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্নিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই তোমাদের পুর্ববর্তিদের সুন্নাত অনুসরন করবে। (বুখারীঃ ৭৩২০ ইবনে মাজাহঃ ৩৯৯৪) এজন্য আমাদের কর্তব্য হচ্ছে সাহাবা রাঃ এবং তাবেয়ী রহঃ তথা সালফে সালেহীনদের অনুসরন ও অনুকরন করা।

অথচ, এখনকার দিনে এই লা-মাযহাব ফিরকা এমন একটি "প্রথা" চালু করেছে, যে ব্যাক্তি জীবনে কোনো হাদীসের মতন কিতাব চোখেও দেখেনি সেও বলে "হুজুর! দলিল সহ মাসআলাটার জবাব দিয়েন!"

প্রমান একদমই চাওয়া যাবেনা এমটা নয় বরং সেটা হতে হবে যুক্তিযুক্ত মুহুর্তে, যেমনঃ ইহুদী-খৃষ্টানদের সাথে বিতর্কের সময় দলিল চাওয়ার কথা আল্লাহ তাআলা কোরআনে শিক্ষা দিয়েছেনঃ
وَقَالُواْ لَن يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَن كَانَ هُوداً أَوْ نَصَارَى تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ قُلْ هَاتُواْ بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
ওরা বলে, ইহুদী অথবা খ্রীস্টান ব্যতীত কেউ জান্নাতে যাবে না। এটা ওদের মনের বাসনা। আপনি বলে দিন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে প্রমাণ উপস্থিত কর। (সুরা বাকারাঃ ১১১)

যাই হোক, এটা স্পষ্ট যে কথায় কথায় প্রতি মাসআলায় দলিল চাওয়ার রীতি না নবীজি সাঃ এর যুগে ছিল, না সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল, না রাসুল সাঃ চাইতে বলেছেন না আল্লাহ তাআলা কোথাও বলেছেন যে, "প্রতিটি বিষয় জানার পর জ্ঞানীদের নিকট দলিল চাও"।

আচ্ছা ভাই! বিদ'আতের সংজ্ঞাটা যেন কি? :-D

একটু হিসেব করে দেখেনতো এই কথায় কথায় দলিল চাওয়াটা বিদ'আতের ক্যাটাগরিতে পড়ে কি না...... :-P

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf