গাদিরে খুম এর ঘটনা ও মাওলা'র হাদিস এর বিশ্লেষণ
বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পথে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে সফরসঙ্গী সাহাবীদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন গাদিরে খুম নামক স্থানে যাত্রাবিরতি দিয়ে। আলী(রা)এর ব্যাপারে আনিত কিছু অভিযোগের খণ্ডন করেন এবং “আমি যার মাওলা, আলী তার মাওলা”-উক্তিটি করেন, যা মাওলার হাদিস হিসাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
৩৪ হিজরির শেষে, ইহুদি আবদুল্লাহ ইবনে সাবা’র জন্ম দেয়া ইমামী তত্বের জন্ম ও প্রসারের পরে তা থেকে শিয়া ধর্মের ভিত্তি জোর দিতে, মুসলিমদের হাদিস কিতাব থেকে মাওলা-শব্দের হাদিস বিকৃত করে প্রচার করা হয় এবং গাদিরে খুম এর ঘটনা থেকে কল্পনাপ্রসূত অপব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে।
☸ পটভূমিঃ-
অনুমাননির্ভর শিয়া ধর্মতত্বে উড়িয়ে এনে জুড়ে বসাবার হাস্যকর প্রয়াস চলে, অথচ কোন বিষয় সম্পূর্ণ ঘটনা এবং প্রসঙ্গ,প্রেক্ষাপট বাদ দিয়ে পরিষ্কার হওয়া সম্ভব নয়।
‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ কিতাবের ৫ম খণ্ড, ১৯০-১৯৪ পৃষ্ঠার মাঝে বায়হাকী(র), বুখারী(র) হতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে যা জানা যায় তার সারসংক্ষেপ-
রাসূলুল্লাহ(ﷺ) ইয়েমেনবাসীর প্রতি ইসলামের দাওয়াত দিতে খালিদ ইবন ওয়ালিদ(রা)কে পাঠিয়েছিলেন, পরে আলী(রা)কে পাঠিয়ে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন।সেখান থেকে যাকাত ও যুদ্ধবন্দী নিয়ে ফেরার পথে আলী(রা) এক কিশোরী বন্দীকে নিজের জন্য গ্রহণ করেন এবং গোসল করে বের হন।
বুরাইদা(রা) ও আরো কিছু সাহাবী তা তীব্রভাবে অপছন্দ করেন এবং তাঁরা সবাই যখন বিদায় হজ্জে গিয়ে মিলিত হন, তখন ফেরার পথে রাসূলুল্লাহ(ﷺ)এর কাছে নালিশ করেন। এছারা আলী(রা) তাঁর বাহিনীর লোকদেরকে যাকাতের উটে আরোহণের কারণে বকাঝকা করেন।
অভিযান শেষ করে ফেরত যাবার আগেভাগে সৈন্যদে নতুন জোড়বস্ত্র গায়ে দেয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত দলনেতাকে তিরস্কার করেন এবং গা থেকে খুলে রাখেন- এসব কারণেও অনেকে মনক্ষুণ্ণ হন।
যখন হজ্জে থেকে ফেরার পথে গাদিরে খুম নামক স্থানে বিশ্রামকালে, রাসূল(ﷺ)এর কাছে বুরাইদা(রা) ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তখন রাসূল(ﷺ) বলেন যে- গণিমতের ১/৫ অংশে আলী(রা)এর হক্ক রয়েছে আহলে বাইত হিসাবে। তাই কেউ যেন তাঁর প্রতি বিদ্বেষ-ক্ষোভ না রাখে, শত্রুতা না করে এবং হক্ক প্রদান করে। মাওলা বা বন্ধু হিসাবে তাঁর ওফাতের পরেও আলী(রা)এর সাথে সুসম্পর্ক রাখে।
হাদিসের কিতাবে গ্রহণযোগ্য রিওয়ায়াত থেকে ঘটনা-
♖ বারাআ(রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) আমাদেরকে খালিদ ইবন ওয়ালিদ(রা) এর সঙ্গে ইয়ামানে পাঠালেন। বারাআ(রা) বলেন, তিনি খালিদ(রা) এর স্থলে আলী(রা) কে পাঠিয়ে বলে দিলেন যে, খালিদ(রা)এর সাথীদেরকে বলবে, তাদের মধ্যে যে তোমার সঙ্গে (ইয়ামানের দিকে) যেতে ইচ্ছা করে সে যেন তোমার সাথে চলে যায়, আর যে (মদিনায়) ফিরে যেতে চায় সে যেন ফিরে যায়। (রাবী বলেন) তখন আমি আলী(রা) এর অনুগামীদের মধ্যে থাকলাম। ফলে আমি গানীমাত হিসেবে অনেক পরিমাণ উকিয়া লাভ করলাম।
[বুখারী ৪৩৪৯, মাগাযী অধ্যায়]
♖ বুরাইদাহ(রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী(ﷺ) আলী(রা)কে খুমুস (গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ) নিয়ে আসার জন্য খালিদ(রা) এর কাছে পাঠালেন। (রাবী বুরাইদাহ বলেন,) আমি আলী(রা) এর প্রতি অসন্তুষ্ট, আর তিনি গোসলও করেছেন। (রাবী বলেন) তাই আমি খালিদ(রা)- কে বললাম, আপনি কি তার দিকে দেখছেন না?
এরপর আমরা নবী(ﷺ)এর কাছে ফিরে আসলে আমি তাঁর কাছে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, হে বুরাইদা! তুমি কি আলীর প্রতি অসন্তুষ্ট? আমি বললাম জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেক না। কারণ খুমুসে তার প্রাপ্য এর চেয়েও অধিক আছে। [বুখারী ৪৩৫০]
✦ সুনানে তিরমীযির ৩৭১২ রিওয়ায়াতে বলা আছে চার জন সাহাবী অভিযোগ করেছেন। উক্ত বর্ণনায় ব্যতিক্রম হিসাবে বাড়তি কথা- { وهو ولي كلّ مؤمن بعدي} ‘আমার পরে মু’মিনদের মাওলা’ কথা আছে। হাদিসটিকে তিরমী্যি(র) হাসান গরীব বলেছেন এবং জাফর বিন সুলায়মান ছাড়া কেউ এরকম বর্ণনা করেনি। জাফর বিন সুলায়মান রাবী হিসাবে সত্যবাদী(সাদুক) ছিলেন, তবে তিনি শিয়াগ্রস্থতার কারণে বাড়তি কথা বলে থাকতে পারেন।
মুহাক্কিকদের মতে, তিনি শিয়াগ্রস্ততার ফলে শিয়াদের বিদআতি আকিদা গ্রহণ করেননি, সীমার মধ্যে ছিলেন। যাই হোক, এতেও খিলাফত বা নেতৃত্বের কিছু সাব্যস্ত হয় না, বরং নবী(ﷺ)এর পরেও যেন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই রাখা হয় এতে জোর দেয়া হয়।
ইমাম আহমদ(র) থেকে গ্রহণযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হাদিসে-
♜ বুরাইদা(রা) আলী(রা)এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন। ইয়েমেনের অভিযানে কিছু যুদ্ধবন্দী হল, তখন আলী(রা)তা থেকে খুমস(এক-পঞ্চমাংশ) উসুল করার পর, তিনি খুমস এর মাঝে একজন কিশোরী বন্দীনিকে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ভাগে নবী-পরিবারের অংশ হিসাবে ভোগ করেন। বুরাইদা(রা) এবং তাঁদের দলনেতা এতে অসন্তুষ্ট হয়ে রাসূল(ﷺ)এর কাছে চিঠিতে লিখিত অভিযোগ করেন।
চিঠি পাঠের এক পর্যায়ে নবী করীম(ﷺ) বুরাইদা(রা)এর হাতে ও চিঠি থামিয়ে ধরে বললেন- {أتبغض عليا }
তুমি কি আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কর?’
রাবী বলেন- জী, হ্যাঁ। তিনি(ﷺ) বললেন-
فلا تبغضه وإن كنت تحبه فازدد له حبا فوالذي نفس محمد بيده لنصيب آل علي في الخمس أفضل من
‘না, তাঁর প্রতি বিদ্বেষ রেখো না। তাকে ভালবেসে থাকলে সেই ভালবাসা আরো বাড়িয়ে দাও! কারণ, যার অধিকারে মুহাম্মদ(ﷺ)এর জীবন তাঁর শপথ! গণিমতের পঞ্চমাংশে আলীর প্রাপ্য অংশ অবশ্যই একটি কিশোরী দাসীর চাইতে বেশি’।
সাহাবী বুরাইদা বলেন- এই উক্তির পরে সব মানুষের মাঝে আলী(রা)এর বেশি প্রিয় আমার কাছে আর কেউ ছিল না।
[মুসনাদ আহমদ ২২৪৫৮]
☫ গণিমত থেকে আলি(রা) সেই দাসীকে নিজের জন্য নিয়ে নিলে অসন্তোষ সৃষ্টি হবার ঘটনা শিয়া ধর্মগ্রন্থেও একিভাবে বর্ণিত আছে। প্রাচীন শিয়া ধর্মগুরু শায়খ মুফিদ এর কিতাবে উল্লেখ আছে- ‘খালিদের চিঠি নিয়ে বুরাইদা নিয়ে গেলে রাসূল(ﷺ)এর কাছে, যাতে লেখা ছিল যে আলী গণিমত থেকে নিজের জন্য দাসী নিয়ে অন্যায় করেছেন। বুরাইদা অভিযোগ করেন যে, এভাবে গণিমত থেকে ইচ্ছামত নিতে থাকলে তা শেষ হয়ে যাবে..’
[আল ইরশাদ, পৃষ্ঠা ১৬০-১৬১, খণ্ড ১]
উপরের বিস্তৃত বিবরণ থেকে যেকোন সুস্থ মানুষই বুঝতে পারবে যে, গণিমতে আলী(রা)-এর অধিকার থাকা এবং হিংসা-বিদ্বেষ না রাখাই এখানে মূল ঘটনা। এতে খেলাফত,বাইয়্যাত ইত্যাদি আবিষ্কার করা চরসনির্ভর কল্পনা ছাড়া কিছুই না।
➱ ☗ গাদিরে খুম এর অবস্থানঃ-
শিয়া ধর্ম অনুসারে, গাদিরে খুম এর ভাষণ,ঘটনা এবং কল্পিত “ইমামত দান” এর ব্যাপারে দ্বীনের সর্বোচ্চ জরুরি বিষয়। অথচ বিদায় হজ্জে রাসূল(ﷺ) লক্ষাধিক সাহাবীর সামনে দ্বীন সম্পূর্ণ করার ঘোষণা এবং অসিয়াতের ভাষণেও এই বিষয় আনলেন না, ফিরতি যাত্রাপথে মক্কা থেকে ১৮০ কি.মি। দূরে বিশ্রামের স্থানে শুধুমাত্র গণিমতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলী(রা)এর ব্যাপারে বললেন।
এই স্থান হজ্জের ক্ষেত্রে কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থানও নয়, হজ্জের জন্য নির্ধারিত মিকাত, মঞ্জিল কিছুই না। একটি সাধারণ বিশ্রাম নেবার স্থান যা মদিনা থেকেও ১৯০ কি.মি. দূরে।
সেখানে সাহাবী এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশকে বঞ্ছিত রেখে শুধু সফরকারীদের কাছে কি দ্বীনের প্রধান শর্ত(শিয়া দাবিমতে) ঘোষণা করা সামঞ্জস্যপূর্ণ দাবির মধ্যে পরে?!!
রাসূল(ﷺ) তাঁর জীবনের শেষ হজ্জে, মুসলিম জাতির সামনে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করার ঘোষণা দেন, আল্লাহ্র পক্ষ হতে প্রেরিত আয়াত দ্বারা। সূরা মায়েদার ৩য় আয়াতটি আরাফার দিনে নাযিল হয়। ইসলামের মুহাদ্দিস,মুফাসসির, ঐতিহাসিকদের মতে তা প্রতিষ্ঠিত, যদিও কারো সামান্য ব্যতিক্রম মত থাকে(শুক্রবার নিয়ে)। হাদিসে দেখি-
☀ ত্বরিক ইবন শিহাব(রা) থেকে বর্ণিতঃ একদল ইয়াহূদী বলল, যদি এ আয়াত আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হত, তাহলে আমরা উক্ত অবতরণের দিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। তখন ‘উমার(রা) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ আয়াত? তারা বলল, এই আয়াতঃ فَقَالُوا الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمْ الإِسْلَامَ دِيْنًا ‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন (জীবন-বিধান)-কে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামাত পরিপূর্ণ করলাম’’- (সূরা মায়িদাঃ আয়াত ৩)।
তখন উমর(রা) বললেন, কোন্ স্থানে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমি জানি। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ(ﷺ) দন্ডায়মান অবস্থায় ছিলেন।
[বুখারী ৪৪০৭, মাগাযী অধ্যায়; মুসলিম ৭৪১৫, তাফসির অধ্যায়; নাসাঈ ৩০০২, হজ্জ অধ্যায়; বুখারী ৭৬২৮, কুরআন ও সুন্নাহ অধ্যায়]
☸ ‘মাওলা’ শব্দের হাদিসঃ-
গাদির খুমে আলী(রা) এর আচরণ ও বন্টন সম্পর্কে ভুল ধারণার অপনোদন করার পরে এবং সাহাবীদেরকে আলী(রা) এর বিষয়ে সন্দেহ/বিরূপ মনোভাব ত্যাগ করার উপদেশ দেয়ার পরে, রাসূল(ﷺ) উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে যা বলেন-
আবু সারীহা/যায়দ ইবন আরক্বাম(রা) থেকে বর্ণিতঃ নবী(ﷺ) বলেছেনঃ আমি যার বন্ধু(মাওলা), আলীও তার মাওলা।
[তিরমীযি ৩৭১৩; ইবন মাজাহ ১২১; আহমদ ২২৯৪৫; মুসনাদ আল বাযযার ৪৩৫২]
অন্য কিছু বর্ধিত রিওয়ায়াতে এই অংশ পাওয়া যায়- ‘হে আল্লাহ্ যে তার(আলী রা.) সাথে বন্ধুত্ব করে আপনি তার সাথে বন্ধুত্ব করুন এবং যে তার সাথে শত্রুতা করে আপনি তার সাথে শত্রুতা করুন’।
এই অংশের মানগত যাচাইবাছাইয়ে না গিয়ে সাধারণ দৃষ্টিতে তাকালেই স্পষ্ট হয় যে- মাওলা হিসাবে উল্লেখ করা খেলাফত বা নেতৃত্ব ইত্যাদি উদ্দেশ্য নয় বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা এবং বিদ্বেষ না করার প্রতি। যা, উপরে উল্লিখিত ইয়েমেনের ঘটনার সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে সম্পর্কিত। শত্রুতার কথা আসে বন্ধুত্বের বিপরীতে, খিলাফত বা নেতৃত্বের বিপরীতে নয়!
✔ মাওলা- শব্দের বিভিন্ন রকম অর্থ হয়, বন্ধু,সমর্থক, পৃষ্ঠপোষক, সাথী, অভিভাবক ইত্যাদি। কিন্তু সাবাঈ শিয়া ধর্মের অনুসারীরা শুধু নেতা অর্থ করতেই একচেটিয়া আগ্রহী এবং তাদের দাবি এখানে আমির/খলিফা হিসাবেই মাওলা বলা হয়েছে। তা মেনে নিলেও প্রশ্ন থেকে যায় যে, সরাসরি না বলে অস্পষ্ট কথা কেন?!
✔ পবিত্র কুরআনে এই ধাতুমূলের শব্দসমূহের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, রক্ষক/অভিভাবক/সঙ্গী হিসাবে ‘মাওলা’ শব্দ এসেছে আল্লাহ্র ক্ষেত্রে। অথবা আল্লাহ্,জিব্রাইল(আ) ও মু’মিনরা মাওলা এমন বলা হয়েছে সূরা তাহরিমঃআয়াত ৪-এ।
মু’মিনদের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও সাহায্যকারী হিসাবে উল্লেখ হয়েছে,ওয়ালী/আউলিয়া ইত্যাদি শব্দে। যেমন সূরা তাওবাঃ আয়াত ৭১ এ বলা হয়েছে- মূ’মিনরা পরস্পরের আউলিয়া, সূরা আনফালঃ আয়াত ৭২-এ বলা হয়েছে, মুহাজির ও আনসারগণ পরস্পরের আউলিয়া।
সূরা হাদিদঃ আয়াত ১৫ তে, কাফেরদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে –‘ তোমাদের সবার আবাস্থল জাহান্নাম। সেটাই তোমাদের সঙ্গী(মাওলা)।’
সূরা মুহাম্মদঃ আয়াত ১১ তে বলা হয়েছে- ‘..আল্লাহ মুমিনদের হিতৈষী বন্ধু(মাওলা) এবং কাফেরদের কোন হিতৈষী বন্ধু(মাওলা) নাই’
হাদিসে মাওলা ডাকের প্রয়োগ দেখা যায়, যখন সাহাবীদের মাঝে। কখনো দ্বীনি ভাই হিসাবে-
✒ “..যদি তাদের পিতা সম্পর্কে জানা না যেত, তাহলে তাকে মাওলা বা দ্বীনি ভাই হিসাবে ডাকা হত” [বুখারী ৫০৮৮, বিয়েশাদী অধ্যায়]
কখনো আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে, তিনি মূ’মিনদের বন্ধু এবং অভিভাবক, -
✒ “তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝে উঠতে পারিনি যে, তিনি মাওলা দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করেছেন। অবশেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে পিতা! আপনার মাওলা কে? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ।” [বুখারী ৩১২৯, খুমস অধ্যায়]
আবার দাসদাসীদের ক্ষেত্রেও মাওলা ব্যবহার হত, তার মালিকের নাম শেষে যুক্ত করে, যেমন, আসলাম মাওলা উমর(র), সালিম মাওলা হুযাইফা(রা) ইত্যাদি।
✒ হাদিসে দেখি- “যে ব্যক্তি তার মুনিবের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে মাওলা বানাবে তার উপর আল্লাহর লা’নাত, ফেরেশ্তা ও সমগ্র মানব জাতির লা’নাত বর্ষিত হবে” [মুসলিম ৩৬৫০, দাসমুক্তি অধ্যায়]
মাওলা শব্দ কি শুধু মাত্র আলী(রা)এর জন্যই খাস, যেমনটা কাফের-মুশরিকরা দাবি করে থাকে? তেমনটি নয়। আমরা দেখি-
➽ আবু আইয়্যুব আনসারী(রা) ও আবু হুরায়রা(রা) হতে বর্ণিত- আনসার ও অন্যান্য মর্যাদাবান গোত্রের মাওলা হবার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন-
“আনসার, মুযায়না, জুহায়না, আসলাম, গিফার ও আশজা গোত্রগুলো আমার মাওলা {আপনজন}। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ব্যতীত অন্য কেউ তাদের মাওলা নয়।”
{তিরমীযি,মুসলিম এর সনদে বনূ আবদুল্লাহ/বনূ আব্দু’দারও উল্লেখ}
[সহি বুখারী ৩২৬২; সহি মুসলিম ৬২১০; সুনানে তিরমীযি ৩২৪০]
➽ যায়দ বিন হারিসা(রা)কে উমরাতুল কাযার সময় রাসূল(সা) বলেছেন - "তুমি আমাদের মাওলা ও ভাই" [বুখারী ৩৯২৭]
☛ চিন্তাশীল হিদায়াত-প্রত্যাশী ও ঈমানদারদের জন্যঃ-
আলী(রা)কে খলিফা বা আমির করার জন্য সরাসরি শব্দের বদলে পরোক্ষ শব্দ কেন ব্যবহার করা, কিসের ভয়ে? শিয়া কাফেররা কি এবারও বলবে যে- “খারাপ সাহাবী”দের ভয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছেন রাসূল(ﷺ)?! {নাঊযুবিল্লাহ}
আল্লাহ্ তো রাসূলুল্লাহ(ﷺ)কে নির্দেশ দিয়েছেন পরিষ্কারভাবে উম্মতকে দ্বীনের বানী ও হুকুম জানাবার জন্য। মাওলা- শব্দ দিয়ে লুকাছাপা করে খিলাফত দানের তো দরকার নেই। কুরআনে নেতৃত্ব প্রসঙ্গে সরাসরি ইমাম-শব্দই এসেছে-
সূরা তাওবাঃ আয়াত ১২ তে, নির্দেশ-فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ ‘তবে কুফর প্রধানদের(ইমামরা) সাথে যুদ্ধ কর।’
সূরা ক্কাসাসঃ আয়াত ৪১ এ, আল্লাহ্ বলেন- وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ‘আমি তাদেরকে নেতা(ইমামের বহুবচন) করেছিলাম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করত’।
আলী(রা)এর ইমামত দ্বীনের জন্য জরুরি একটি বিষয়(শিয়া ধর্মমতে) , সেটা কি হঠাত করে আসা গণিমত বন্টনের অভিযোগের উপরে নির্ভরশীল ? শিয়া কাফেররা সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতকে এই ঘটনার সাথে জুড়তে চেষ্টা করে অপ্রাসঙ্গিকভাবে; কিন্তু প্রথমত, আয়াতের আগে পড়লেই দেখা যায় যে আয়াতের কথা আহলে কিতাব(ইহুদি ও খ্রিস্টান)দের প্রতি, দ্বিতীয়ত- তা বরং আরো নবী(ﷺ)এর উপরে অপবাদ হয়, কারণ তিনি তো স্পষ্টভাবে খিলাফত,আমির করার কথা বলেনও নাই; আর সেই কথিত ইমামত যে ফরজ তা বলা তো দূরের কথা!
আল্লাহ্ সাবাঈ কাফেরদের চক্রান্ত ও ধাপ্পাবাজির ফেত্না থেকে মুসলিমদের হেফাজত করুন।
কৃতজ্ঞতা: The Rafidologist
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন