কাফিরদের দেশে বসবাস করার বিধান কি?
কুফফারদের দেশে বসবাসের ও হিজরত করার বিধান কি?
ফুকাহায়ে কেরাম কাফেরদের দেশে বসবাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। প্রখ্যাত ফকীহ ইমাম মাওয়ারেদি রহ.-এর মতে ইসলামের দৃষ্টিতে কোন অঞ্চলে বসবাসের চারটি ভিত্তি হতে পারে।
.
ক) নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা।
খ) আলাদা সংস্কৃতিতে থাকতে পারার সক্ষমতা।
গ) দাওয়াতি কার্যক্রম।
ঘ) দ্বীন রক্ষার প্রয়োজনে যুদ্ধ করার সক্ষমতা।
.
এই চার শর্তের ভিত্তিতে ইমাম মাওয়ারেদী রাহঃ সম্ভাব্য পাঁচটি চিত্রের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আগ্রহীরা বিস্তারিত জানতে ইমাম মাওয়ারেদী রাহঃ আল হাবিউল কাবীর কিতাবটি দেখতে পারেন। ( খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২২ ) এছাড়াও ই'লাউস সুনানের হাশিয়া সহকারে ১২/ ১৪৯-১৬৮ এবং আল মাওসূয়াতুল ফিক্বহিয়্যাহ কুয়েতিয়্যাহ ২০/২০৬-২১৯ দেখা যেতে পারে।
.
অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার হুকুম স্থান, কাল ও অবস্থাভেদে ভিন্ন ভিন্ন হবে। নিম্নে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে-
(এক) কোনো মুসলমান যদি অমুসলিম দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণে বাধ্য হয়। যেমন স্বদেশে বিনা কারণে তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয়, জেলে যেতে হয় বা মাল-সম্পদ ক্রোক করা হয়। এবং উক্ত সুরতে অমুসলিম দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ ছাড়া অন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয়স্থলও না থাকে; তাহলে তার জন্য অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা জায়েজ। তবে শর্ত হচ্ছে, মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, ব্যক্তিগত জীবনে সে দ্বীনের যাবতীয় বিধিবিধান মেনে চলবে এবং ওই সকল দেশে যে সকল বেহায়পনা ও নির্লজ্জ কাজ ছড়িয়ে পড়েছে তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে।
.
এই বিধানের শরয়ী দলীল হচ্ছেঃ
আল্লাহ তা'আলা বলেন-
إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلائِكَةُ ظَالِمِي أَنْفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنْتُمْ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا فَأُولَئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَسَاءَتْ مَصِيراً
যারা নিজেদের উপর নিজেরা জুলুম করে, (মৃত্যুর) ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ কালে বলেন- তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলেঃ এ ভূখন্ডে আমরা অসহায় ও দুস্থ ছিলাম। ফেরেশতারা বলেন- আল্লাহর পৃথিবী কি সুপ্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা দেশত্যাগ করে সেখানে চলে যেতে? অতএব, এদের বাসস্থান হল জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত মন্দ স্থান।
[সূরা নিসাঃ৯৭]
এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাদি.) এর হিজরত। সাহাবায়ে কেরাম মক্কাবাসীর পক্ষ হতে কঠোর নির্যাতন ভোগ করার পর আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। দেশটির বর্তমান নাম হচ্ছে ‘ইথিওপিয়া’। ওই সময় যারা দেশটি শাসন করতো তারা ছিলো কাফের। সাহাবায়ে কেরাম (রাদি.) সেখানে হিজরতের পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বসবাস করেন। এমনকি রাসূল (সা.) মদীনায় হিজরতের পর পরিবেশ যখন মুসলমানদের অনুকূলে আসে তখনও অনেক সাহাবী সেখানে অবস্থান করছিলেন।
.
সাহাবী হজরত আবু মুসা আশয়ারী (রাদি.) সপ্তম হিজরিতে সেখান থেকে ফিরে আসেন। প্রত্যেকের উপর তার আত্মারও হক আছে। আত্মার একটি হক হচ্ছে, তাকে যাবতীয় জুলুম-নির্যাতন থেকে হেফাজত করা। অতএব কোনো মানুষ যদি অমুসলিম দেশে হিজরত করা ব্যতিরেকে নিজের নিরাপত্তা না পায় তাহলে শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে হিজরত করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে ওই শর্তে, যা পূর্বে উল্লেখ করেছি।
.
(দুই) জীবন যাপনের অতিব প্রয়োজনীয় জীবিকা যদি মুসলিম রাষ্ট্রে থেকে নির্বাহ করা না যায় এবং তা অমুসলিম কোনো রাষ্ট্র ছাড়া সম্ভব না হয় তাহলে অতিব প্রয়োজনীয় জীবিকা নির্বাহের জন্য অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ বৈধ হবে। এখানেও পূর্বের শর্ত প্রযোজ্য। অর্থাৎ মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, ব্যক্তিগত জীবনে সে দীনের যাবতীয় বিধিবিধান মেনে চলবে এবং ওই সকল দেশে যে সকল বেহায়পনা ও নির্লজ্জ কাজ ছড়িয়ে পড়েছে তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে।
এই বিধানের দলীল হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা জীবিকা নির্বাহকে ফরজ করেছেন। শরীয়ত এখানে কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়নি যে, ওমুক স্থানে জীবিকার জন্য কাজ করা বৈধ আর ওমুক স্থানে বৈধ নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِن رِّزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
‘তিনি ওই সত্তা যিনি যমীনকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা এর উপর বিচরণ কর এবং আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক ভক্ষণ কর। (আর মেন রেখো) তার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন।
[সূরা মুলকঃ ১৫]
.
(তিন) দীনের দাওয়াত ও প্রচার-প্রসারের জন্য ওই সকল দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা কোনো মুসলমানের ওই দেশগুলোতে নাগরিকত্ব গ্রহণের উদ্দেশ্য যদি থাকে অমুসলিমদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌছানো তাহলে অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার দ্বারা সে সওয়াব পাবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে- নিজের ও আপন পরিবারের দ্বীনদারিতার ব্যাপারে শতভাগ সুনিশ্চিত হওয়া।
দলীল হচ্ছে সাহাবায়ে কেরাম (রাদি.) এর আমল। রাসূল ﷺ এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন। এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন। এ জন্য চীনের মতো দূর দেশেও সাহাবায়ে কেরাম (রাদি.) এর কবর রয়েছে। এটাকে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদার মানদন্ড ধরা হয়। এবং সেসব দেশে গিয়েও সাহাবাদের ঈমান ও আমলে সামান্য পরিমাণেও ভাটা পরেনি।
.
(চার) আয়েশি জীবন যাপনের অর্থ যোগানোর জন্য অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ কোনো ব্যক্তি তার সমপর্যায়ের ব্যক্তিদের মানে নিজের জীবনকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জীবিকা যদি স্বদেশে থেকে নির্বাহ করতে পারে তাহলে আয়েশি জীবন যাপনের অতিরিক্ত অর্থ যোগানোর জন্য অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা বৈধ হবে না। কারণ, এতে গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই, সেখানকার ছড়িয়ে পড়া নির্লজ্জ ও বেহায়াপনার সামনে নিজেকে পেশ করে দীনি ও চারিত্রিক ধ্বসের ঝুঁকি নেয়া হয়।
.
অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, যারা শুধু আয়েশি জীবন যাপনের জন্য ওই সকল দেশের নাগরিকত্ব নেয় তাদের থেকে দীনি দায়িত্ববোধ দিন দিন উধাও হয়ে যায়। অমুসলিমদের বিভিন্ন প্ররোচনার সামনে মোমের মতো গলে যায়। এ কারণে, অতিব প্রয়োজন ছাড়া কাফেরদের সঙ্গে ওঠা-বসা করা থেকে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে।
কেননা হাদীসে এসেছে, নবী ﷺ বলেছেন-
مَنْ جَامَعَ الْمُشْرِكَ وَسَكَنَ مَعَهُ فَإِنَّهُ مِثْلُهُ
“যে ব্যক্তি কোনো মুশরিকের সাহচর্যে থাকে এবং তার সাথে বসবাস করে, সে মূলত তারই মতো।”
[আবূ দাউদ, হাঃ২৭৮৭-সনদ হাসান]
.
নবী ﷺ আরও বলেছেন-
أَنَا بَرِيءٌ مِنْ كُلِّ مُسْلِمٍ يُقِيمُ بَيْنَ أَظْهُرِ الْمُشْرِكِينَ. قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ؟ قَالَ: لَا تَرَاءَى نَارَاهُمَا
“আমি ওই সকল মুসলিম থেকে দায়মুক্ত, যারা মুশরিকদের মধ্যে বসবাস করে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহ’র রাসূল, এরূপ কেন?’ তিনি বললেন, ‘যাতে করে তাদের দুজনের আগুনকে এক দৃষ্টিতে দেখা না যায়’।”
[আবূ দাউদ, হাঃ২৬৪৫; তিরমিযী, হাঃ১৬০৪- সনদ সহিহ,কেউ কেউ একে মুরসাল সনদও বলেছেন।]
ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন-
وَهَذَا مَحْمُول عَلَى مَنْ لَمْ يَأْمَن عَلَى دِينه
'কাফেরদের রাষ্ট্রে যাদের দ্বীনদারিতার নিশ্চয়তা নেই এই হাদিসটি তাদের জন্য প্রজোয্য হতে পারে।'
[ফাতহুল বারী ৬/৪৬, ২৮২৫ নং হাদীসের ব্যাখ্যা]
(পাঁচ) মর্যাদার বিষয় মনে করে অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্বকে সম্মান বা গর্বের বিষয় মনে করা, ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকত্বের তুলনায় অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্বকে শ্রেষ্ঠ মনে করা বা ব্যক্তিগত জীবনে তাদের মতো হওয়া ইত্যাদি কারণে যদি কেউ অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে তাহলে তা হারাম।
নবী ﷺ বলেছেন-
الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ
“মানুষ যাকে ভালোবাসে, সে (পরকালে) তার সাথেই থাকবে।”
[সহীহ বুখারী, হাঃ৬১৬৯; সহীহ মুসলিম, হাঃ২৬৪০]
এ বিষয় এত স্পষ্ট যে, তা দলীল দিয়ে বুঝানোর দরকার নেই। (কিন্তু আফসোসের কথা হচ্ছে, আজ আমরা এই কারণেই বেশির ভাগ মানুষ ওই সকল দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করি-আল্লাহ আমাদের দ্বীনি অনুভূতি দান করুন। -আমীন)
সুতরাং কাফেরদের দেশে বসবাসকারীকে অবশ্যই স্বীয় দ্বীনের ব্যাপারে আশঙ্কামুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ তার এমন ‘ইলম, ঈমান ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে, যা তাকে দ্বীনের ওপর অটল থাকার মতো এবং বক্রতা ও বিপথগামিতা থেকে বেঁচে থাকার মতো আত্মবিশ্বাসের জোগান দেয়। আর কাফিরদের প্রতি তার অন্তরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ থাকতে হবে।
কেননা তাদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করা এবং তাদেরকে ভালোবাসা ঈমানের পরিপন্থি।
মহান আল্লাহ বলেছেন-
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ
“তুমি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোনো জাতিকে পাবে না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বিরোধীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে; যদিও তারা তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, কিংবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়।”
[সূরাহ মুজাদালাহ: ২২]
মহান আল্লাহ আরও বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ. فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَنْ تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ ۚ فَعَسَى اللَّهُ أَنْ يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِنْ عِنْدِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي أَنْفُسِهِمْ نَادِمِينَ “
হে মু’মিনগণ, ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে অবশ্যই তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না। সুতরাং তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের মধ্যে (বন্ধুত্বের জন্য) ছুটছে। তারা বলে, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, কোনো বিপদ আমাদেরকে আক্রান্ত করবে।’ অতঃপর হতে পারে আল্লাহ দান করবেন বিজয় কিংবা তাঁর পক্ষ থেকে এমন কিছু, যার ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে লজ্জিত হবে।” [সূরাহ মায়িদাহ: ৫১-৫২]
.
আল্লাহ’র শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ। কেননা তাদেরকে ভালোবাসলে তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করা এবং তাদের অনুসরণ করা, কিংবা কমপক্ষে তাদের কর্মের বিরোধিতা না করা—জরুরি হয়ে যায়। একারণেই নবী ﷺ বলেছেন-
الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ
“মানুষ যাকে ভালোবাসে, সে (পরকালে) তার সাথেই থাকবে।”
[সহীহ বুখারী, হাঃ৬১৬৯; সহীহ মুসলিম, হাঃ২৬৪০]
হজরত জারীর রাদি. বলেন- আমি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে মানুষকে বাইয়াত নেওয়া অবস্থায় এসেছি, (এটা দেখে) আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসূল ﷺ আপনার হাত বাড়িয়ে দিন যেন আমিও বাইয়াত হতে পারি। এবং আমাকে কিছু (কল্যাণকর) শর্ত দিন আর আপনি তো (আমাদের কল্যাণের ব্যাপারে আমাদের চেয়েও) বেশি জানেন।
তখন নবী ﷺ বললেন-
'আমি তোমাকে এই শর্ত্র বাইয়াত করছি যেন, তুমি একমাত্র আল্লাহরই ইবাদাত করো, সালাত ক্বায়েম কর, যাকাত দাও, মুসলমানদের কল্যাণকামী হও, এবং (কাফের) মুশরিকদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করো।'
وعَنْ أَبِي نُخَيْلَةَ الْبَجَلِيِّ قَالَ : قَالَ جَرِيرٌ : أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُبَايِعُ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، ابْسُطْ يَدَكَ حَتَّى أُبَايِعَكَ ، وَاشْتَرِطْ عَلَيَّ ، فَأَنْتَ أَعْلَمُ ، قَالَ : ( أُبَايِعُكَ عَلَى أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ ، وَتُنَاصِحَ الْمُسْلِمِينَ ، وَتُفَارِقَ الْمُشْرِكِينَ )
[সুনানে নাসাঈঃ৪১৭৭]
অনেক ফুক্বাহাগন দারুল হারব তথা যুদ্ধকবলিত মুসলিম সমাজ যেখানে মুসলিমরা কাফেরদের সাথে শক্তি সামর্থ্য ও আদর্শের লড়াইয়ে পেড়ে উঠতে অক্ষম সেখান থেকে দারুল ইসলাম তথা মুসলমান ও ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতির নিরাপত্তা এবং আইন প্রয়োগের উপযুক্ত ক্ষেত্রে হিজরত করা বাধ্যতামূলক আখ্যায়িত করেছেন।
ইমাম যাকারিয়া আনসারী আশ শাফেয়ী রহঃ বলেন-
تَجِبُ الْهِجْرَةُ مِنْ دَارِ الْكُفْرِ إلَى دَارِ الإِسْلامِ عَلَى مُسْتَطِيعٍ لَهَا إنْ عَجَزَ عَنْ إظْهَارِ دِينِهِ .
দারুল কুফরে নিজের দ্বীন পালনে অক্ষম হলে সেখান থেকে দারুল ইসলামে সাধ্যানুযায়ী হিজরত করা ওয়াজিব।
[আসনাল মাত্বালিব ৪/২০৭]
আবূ বকর ইবনুল আরাবী আল মালেকী রহঃ বলেন-
الْهِجْرَةُ هِيَ الْخُرُوجُ مِنْ دَارِ الْحَرْبِ إلَى دَارِ الإِسْلامِ , وَكَانَتْ فَرْضًا فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَاسْتَمَرَّتْ بَعْدَهُ لِمَنْ خَافَ عَلَى نَفْسِهِ .
'হিজরত হচ্ছে দারুল হারব থেকে দারুল ইসলামে স্থানান্তরিত হওয়া। এটি আল্লাহর নবী ﷺ এর সময়কালে ফরজ ছিল এবং এই বিধান পরবর্তীতে যারাই নিজেদের ও নিজেদের দ্বীনের উপর তেমন আশংকা করবে তাদের উপরেও এই বিধান বলবৎ রয়েছে।
[ফাতহুল বারী ৬/১৩২; নাইলুল আওত্বার ৮/৩৩]
ইমাম ইবনু কাসীর রহঃ সূরা নিসার ৯৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় যিহাক থেকে বর্ণিত তাফসীর-
هذه الآية الكريمة عامة في كل من أقام بين ظهراني المشركين وهو قادر على الهجرة وليس متمكناً من إقامة الدين، فهو ظالم لنفسه مرتكب حراماً بالإجماع وبنص الآية.
'এই আয়াত ঐ ব্যক্তিদের উপর প্রজোয্য হবে যারা (কাফের) মুশরিকদের কর্তৃত্বে থাকাবস্থায় ইক্বামতে দ্বীন তথা ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অক্ষম কিন্তু (এর বিকল্পে অন্যত্র) হিজরত করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও হিজরত করেনা। তারাই নিজেদের উপর নিজেরা জুলুমে লিপ্ত এবং এই আয়াতের দলিলে ইজমা হয়েছে যে, ঐ ব্যক্তি হারাম গুনাহে লিপ্ত।'
[তাফসীরে ইবনু কাসীর ৪/২২৮- ইমাম ইবনু জারীর ত্ববারী ও ইবনু আবী হাতেমও এটি সহীহ সনদে উল্লেখ করেন]
এই জন্যে যারা অপারগতা বশতঃ সেখানে স্থায়ী আছে তাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।
--------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন