উসূলুত তাকফীর : তাকফীরের প্রতিবন্ধকতা

উসূলুত তাকফীর ও মাওয়ানিউত তাকফীর তথা তাকফীরের মূলনীতি ও তাকফীরের প্রতিবন্ধকতা:
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সকল ইমামদের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত হচ্ছে-
কবীরাহ গুনাহের কারণে কোন মুসলিমকে আমরা কাফের বলিনা।
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ'র ভাষায়-
ولا نكفرأحداً من أهل القبلة بذنب ، ما لم يستحله.
'আমরা (আমাদের) কিবলাপন্থি কোন ব্যক্তিকে গুনাহের কারণে কাফের বলিনা, যতক্ষণ না সে ঐ(অকাট্য) গুনাহকে (গুনাহ না মনে করে) হালাল পোষণ করে থাকে।'
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন-
يجب الاحتراز من تكفير المسلمين بالذنوب والخطايا فإنه أول بدعة ظهرت في الإسلام فكفر أهلها المسلمين واستحلوا دماءهم وأموالهم.
'গুনাহ ও নাফরমানির ভিত্তিতে মুসলিমদের তাকফির করা থেকে সাবধান থাকা জরুরি। কারণ, এটিই ইসলামের ইতিহাসে দেখা দেয়া সর্বপ্রথম বিদআত। ফলশ্রুতিতে তারা (খারেজীরা) মুসলিমদের তাকফির করেছে এবং জান-মাল বৈধ গণ্য করেছে।'
[মাজমূউল ফাতাওয়া ১৩/৩১]
রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত -
أيما رجل قال لأخيه: يا كافر فقد باء بها أحدهما
'কোন ব্যক্তি যখন তার (মুসলমান) ভাইকে 'হে কাফের' বলে সম্বোধন করে তখন দুইজনের যেকোন একজনের উপর এটি বর্তিত হয়!'(অর্থাৎ ঐ লোক কাফের হলে তো সে কাফের কিন্তু কাফের না হলে যিনি কাফের বলেছেন তার উপর তা আবর্তিত হয়!)
[সহীহ বুখারীঃ৬১০৪; সহীহ মুসলিমঃ ৬০]
অন্য হাদীসে আছে-
لا يرمي رجل رجلا بالفسوق ولا يرميه بالكفر إلا ارتدت عليه إن لم يكن صاحبه كذلك
'(অযথা) কেউ কাউকে যেন ফাসেক্ব বা কাফের হওয়ার দিকে সম্পৃক্ত না করে, নতুবা যাকে তা বলা হচ্ছে সে যদি সেরুপ না হয় তাহলে বক্তার উপরেই তা বর্তাবে!'
[সহীহ বুখারীঃ ৬০৪৫]
ইমাম ইবনু নুজাইম ও আল্লামা ইবনু আবেদীন আশ শামী রহ. হানাফী ফুকাহা ও ইমামদের থেকে নকল করে বলেন-
"في الفتاوى الصغرى: الكفر شيء عظيم، فلا أجعل المؤمن كافرًا متى وجدت رواية أنه لا يكفر. وفي الخلاصة وغيرها إذا كان في المسألة وجوه توجب التكفير، ووجه واحد يمنعه، فعلى المفتي أن يميل إلى الوجه الذي يمنع التكفير تحسيناً للظن بالمسلم، زاد في البزازية: إلا إذا صرح بإرادة موجب الكفر فلا ينفعه التأويل، وفي التتارخانية: لا يُكفّر بالمحتمل، لأن الكفر نهاية في العقوبة، فيستدعي نهاية في الجناية، ومع الاحتمال لا نهاية"
'ফাতাওয়া আস সগীরে বলা আছে- কুফর অনেক বড় (দায়বদ্ধ) বিষয়। তাই আমি ঐ মুমিনকে কাফের বলব না যখন তার ব্যাপারে এই বর্ণনা পাব যে, তিনি কুফুরী করেননি।
খুলাসাতুল ফাতাওয়ায় ও অন্যান্য কিতাবে লিখা আছে- যদি কোন মাসআলায় তাকফীর করার অনেক কারণ বিদ্যমান থাকে আবার একটি কারণ এমন বিদ্যমান থাকে যাতে তাকে তাকফীর করা থেকে বাচানো যায় তাহলে মুফতির জন্য উচিৎ হচ্ছে তাকফীর থেকে বাচানো যায় সেই কারণটির দিকে ঝুকে পড়া মুসলিম হিসেবে ভাল ধারণা করার ক্ষেত্রে।
ফতোয়ায়ে বাযযাযিয়ায় এ কথাকে আরো একটু বাড়িয়ে বলা হয়েছে- তবে যদি উক্ত ব্যক্তির জেনে বুঝে ও সেচ্ছায় কুফুরীতে লিপ্ত হওয়া সুস্পষ্ট হয় তাহলে কোন ভাল ধারণাই তার (তাকফীর করার ক্ষেত্রে) উপকারে আসবে না।
ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়ায় আছে- সন্দেহের কারণে তাকফীর করা হবেনা। কেননা কুফর সর্বোচ্চ শাস্তির উপযোগী। সুতরাং এই গুনাহের দণ্ডাদেশ হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তির ফয়সালা করা জরুরী হয়ে যায়। কিন্তু সন্দেহের বশবর্তী হওয়ার কারণে সর্বোচ্চ শাস্তির রায় দেওয়া যায়না।
[বাহরুর রায়েক্ব ৫/২১০; হাশিয়া ইবনু আবেদীন ৬/৩৩৬]
কুফরি কথাবার্তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার পর ইমাম ইবনে নুজাইম রহ. বলেন-
والذي تحرر أنه لا يفتى بتكفير مسلم أمكن حمل كلامه على محمل حسن أو كان في كفره اختلاف ولو رواية ضعيفة فعلى هذا فأكثر ألفاظ التكفير المذكورة لا يفتى بالتكفير بها ولقد ألزمت نفسي أن لا أفتي بشيء منها
'সর্বশেষ ফায়সালা হলো, যতক্ষণ কোনো মুসলিমের কথাকে ভালোর ওপর প্রয়োগ করা যায় কিংবা তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকে –তা কোনো দুর্বল বর্ণনাই হোক না কেন– ততক্ষণ তাকে কাফের ফতোয়া দেওয়া হবে না। এ হিসেবে উপরোক্ত কুফরি শব্দ বা কথাবার্তার অধিকাংশই এমন হবে যে, ওগুলোর কারণে তাকফিরের ফতোয়া দেয়া যাবে না। আর আমি তো নিজের ওপর আবশ্যকই করে নিয়েছি যে, এগুলোর কোনোটার কারণে (কাউকে) কাফের ফতোয়া দেব না।'
[আল বাহরুর রায়িক : ৫/২১০]
ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহ. বলেন-
"القرآن والسنّةُ ينهيَان عن تفسيقِ المسلم وتكفيرِه ببيان لا إشكالَ فيه... فالواجبُ في النّظر أن لا يكفَّر إلاّ من اتّفق الجميعُ على تكفيرِه، أو قامَ على تكفيره دليلٌ لا مدفعَ له من كتابٍ أو سنّة".
'এতে কোন ইশকাল (সন্দেহ বা অভিযোগ) নেই যে, কুরআন ও সুন্নাহ সুস্পষ্টভাবে একজন মুসলমানকে পাপাচারী ও কাফের বলতে নিষেধ করেছেন।.... সুতরাং জরুরী হচ্ছে কোন মুসলমানকে কাফের বলা যাবেনা। তবে যদি উলামায়ে কেরামদের সকলেই তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে একমত হন অথবা তার কুফুরীর এমন দলিল রয়েছে যার দ্বারা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে তাকে বাচানোও যায়না, সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা।
[আত তামহীদ ১৭/২২]
ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন-
"ليس لأحد أن يكفر أحداً من المسلمين وإن أخطأ وغلط حتى تقام عليه الحجة وتبين له المحجة. ومن ثبت إيمانه بيقين لم يزل ذلك عنه بالشك، بل لا يزول إلا بعد إقامة الحجة وإزالة الشبهة".
'কোন মুসলমানকে তাকফীর (কাফের সাব্যস্ত) করা যাবেনা, যদিও তিনি ভুল করে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তার বিরুদ্ধে (কুফুরী) সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত ও দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট না হয়। আর যে ব্যক্তির ঈমান সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়েছে সেই ব্যক্তিকে কেবল কোন সন্দেহের ভিত্তিতে ঈমান থেকে বিচ্যুত করা যাবেনা। বরং যতক্ষণ পর্যন্ত না তার কুফরীর ব্যাপার সাব্যস্ত হবে এবং সকল সন্দেহ দূর হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার ঈমান বিচ্যুত হবেনা (অর্থাৎ তাকফীরের ফতোয়া হবেনা)।'
[মাজমূউল ফাতাওয়া ১২/১০৫]
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. আরও বলেন-
قد ينقل عن أحدهم أنه كفّر من قال بعض الأقوال، ويكون مقصوده أن هذا القول كفر ليحذر، ولا يلزم إذا كان القول كفرا أن يكفر كل من قاله مع الجهل والتأويل، فإن ثبوت الكفر في حق الشخص المعين كثبوت الوعيد في الآخرة في حقه، ذلك له شروط وموانع.
'কখনো কোনো ইমাম থেকে বর্ণিত হয়ে থাকে যে, তিনি কোনো কথার কারণে কাউকে তাকফির করেছেন। আসলে তার উদ্দেশ্য ছিল এ কথা বুঝানো যে, উক্ত কথাটি কুফর, যেন এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কুফরি কথা বললেই যে কেউ কাফের হয়ে যাবে, ব্যাপারটি এমন নয়। হতে পারে সে এ ব্যাপারে অজ্ঞ কিংবা তাবিলের (ব্যাখ্যার) আশ্রয় নিয়ে কথাটা বলেছে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি কাফের সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারটি আখেরাতে তার ওপর শাস্তি সাব্যস্ত হওয়ার মতোই। উভয়টির ক্ষেত্রেই কিছু শর্ত ও প্রতিবন্ধক রয়েছে।'
[মিনহাজুস সুন্নাহ ৫/২৪০]
তিনি রহ. আরও বলেন-
التكفير له شروط وموانع قد تنتفي في حق المعين وأن تكفير المطلق لا يستلزم تكفير المعين إلا إذا وجدت الشروط وانتفت الموانع.
'তাকফীরের কিছু শর্ত ও কিছু প্রতিবন্ধক রয়েছে, নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির মাঝে সেগুলো নাও পাওয়া যেতে পারে। তাকফিরে মুতলাক (মূলনীতির আলোকে তাকফীর করার) দ্বারা তাকফিরে মুআইয়ান (নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তির তাকফির করা) সাব্যস্ত হয় না। তাকফিরে মুআইয়ান (নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তির তাকফির) তখনই করা যাবে যখন সকল শর্ত পাওয়া যাবে এবং কোনও প্রতিবন্ধক থাকবে না।'
[মাজমূউল ফাতাওয়া ১২/৪৮৭-৪৮৮]
ইমাম যাহাবী রহ. বলেন-
رأيت للأشعري كلمة أعجبتني وهي ثابتة رواها البيهقي، سمعت أبا حازم العبدوي، سمعت زاهر بن أحمد السرخسي يقول: لما قرب حضور أجل أبي الحسن الأشعري في داري ببغداد، دعاني فأتيته، فقال: اشهد علي أني لا أكفر أحدا من أهل القبلة، لأن الكل يشيرون إلى معبود واحد، وإنما هذا كله اختلاف العبارات.
قلت: وبنحو هذا أدين، وكذا كان شيخنا ابن تيمية في أواخر أيامه يقول: أنا لا أكفر أحدا من الأمة، ويقول: قال النبي – صلى الله عليه وسلم -: (لا يحافظ على الوضوء إلا مؤمن) فمن لازم الصلوات بوضوء فهو مسلم.
'আবুল হাসান আশআরী রহ. এর একটি বক্তব্য দেখতে পেলাম। আমার কাছে এটি খুবই পছন্দ হয়েছে।আর বক্তব্যটি ইমাম বাইহাক্বীর সূত্রে প্রমাণিত ...… যাহির বিন আহমাদ আস সারাখসি বলেন, যখন আবুল হাসান আশআরি রহ. এর মৃত্যু-কাল ঘনিয়ে আসে তখন তিনি বাগদাদে আমার বাড়িতে ছিলেন। তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি তার কাছে যাই। তখন তিনি (আমাকে লক্ষ্য করে) বললেন, আমার ব্যাপারে সাক্ষী থাক, আমি আহলে কিবলার কাউকে তাকফির করি না। কারণ, সকলে এক মাবুদেরই ইবাদত করে। আর এসব মতভেদ তো শুধু শব্দের ভিন্নতা।
(যাহাবী রহ. বলেন) আমি বলি, আমারও একই আকিদা। আমাদের শায়খ ইবনে তাইমিয়া রহ.ও শেষ জীবনে এমনই বলতেন যে, ‘উম্মাহর কাউকে আমি তাকফির করবো না’। তিনি বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, ‘ওজুর প্রতি যত্নশীল তো কেবল মুমিনই হতে পারে’। অতএব, যে ব্যক্তি ওজুর সাথে নিয়মিত নামায পড়বে সে মুসলিম।'
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১৫/৮৮]
ইমাম ইবনু হাজার আল হাইতামী রহ. শাফেয়ী ফক্বীহদের থেকে নকল করেন-
"ينبغي للمفتي أن يحتاط في التكفير ما أمكنه، لعظم خطره وغلبة عدم قصده، سيّما من العوام، وما زال أئمتنا على ذلك قديمًا وحديثًا".
'মুফতির জন্য উচিৎ তাকফীর করার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা। কেননা এতে তার অনেক ঝুকি রয়েছে এবং অনেকে ক্ষেত্রেই তা অনিচ্ছাকৃত হয়ে থাকে বিশেষ করে আওয়াম তথা সাধারণ মানুষদের থেকে এধরণের কর্মকাণ্ড তাদের অনিচ্ছায় হয়ে থাকে (তাই ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে)। এভাবেই সতর্কতা অবলম্বন করে আসছেন আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমামগন।'
[তুহফাতুল মুহতাজ ফী শারহিল মিনহাজ ৪/৮৪; ফাতহুল মুঈন ৪/১৩৮]
আল্লামা শাওকানী রহ. বলেন-
"اعلم أن الحُكم على الرجل المسلم بخروجه من دين الإسلام ودخوله في الكفر لا ينبغي لمسلم يؤمن بالله واليوم الآخر أن يُقدم عليه إلا ببرهان أوضح من شمس النهار".
'মনে রাখবে কোন মুসলিমের উপর দীন ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার কিংবা কুফুরীর মাঝে প্রবেশ করার হুকুম লাগানো (ফতোয়া দেওয়া) ঐ মুসলমানের জন্য শোভা পাবেনা যিনি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস স্থাপন করেন। তবে যদি উপযুক্ত ও দিবালোকের চেয়েও সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তবে ভিন্ন কথা।
[আস সাইলুল জাররার পৃ.৯৭৮]
ইমাম গাযালী রহ. বলেন-
"التكفير حكم شرعي يرجع إلى إباحة المال وسفك الدماء والحكم بالخلود في النار، فمأخذه كمأخذ سائر الأحكام الشرعية، فتارة يدرك بيقين، وتارة يدرك بظن غالب، وتارة يتردد فيه، ومهما حصل تردد فالتوقف عن التكفير أولى، والمبادرة إلى التكفير إنما تغلب على طباع من يغلب عليهم الجهل".
'তাকফীর করা শরীয়তের এমন হুকুম যাকে কেন্দ্র করে (কাফের ব্যক্তির) মাল (বাজেয়াপ্ত) ও রক্ত বৈধ হয় (মুসলিম শাসকের জন্য) এবং (ঐ ব্যক্তির) চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবার বিধান চলে আসে। শরীয়তের অন্যান্য বিধান যেসব নিয়ম নীতির আলোকে বের করতে হয় এটিও সেভাবেই করতে হবে।
এমন হয়ে থাকে যে, তাকফীর করার সময় অনেক ক্ষেত্রে (মুফতির) ইয়াক্বিন থাকে, কখনও কখনও আবার প্রবল ধারণা প্রসূত হয়ে কাফের মনে হয়, কখনও কখনও কাফের হওয়ার ক্ষেত্রে (স্রেফ) সন্দেহ থাকে।
তাকফীর করা থেকে যখনই এমন সন্দেহের তৈরি হয়, তখন উত্তম হচ্ছে এই কাজ থেকে বিরত থাকা। আর কোন কিছু বিশদ বিবেচনা না করে তাড়াহুড়ো তাকফীর করার প্রবণতাটা মূলত মূর্খতাসূলভ স্বভাব যাদের মধ্যে প্রাধান্য পায় তারাই করে থাকে!
[ফয়সালুত তাফরিক্বাহ (মাজমূউ রাসায়িলিল গাযালী) পৃ.২৪৮]
ইমাম গাযালী রহ. আরও বলেন-
والذي ينبغي … الاحتراز من التكفير ما وجد إليه سبيلاً. فإن استباحة الدماء والأموال من المصلين إلى القبلة المصرحين بقول لا إله إلا الله محمد رسول الله خطأ، والخطأ في ترك ألف كافر في الحياة أهون من الخطأ في سفك محجمة من دم مسلم.
'যতক্ষণ তাকফির না করে পারা যায়, উচিৎ হলো তাকফির থেকে বেঁচে থাকা। কেননা, যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ- এর সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়, আমাদের কিবলার দিকে ফিরে নামাযও পড়ে তাদের জান মাল বৈধ মনে করা ভুল। আর কোনো মুসলিমের দু’ফোটা রক্ত ঝরানোর চেয়ে ভুলক্রমে (হত্যাপোযোগী) হাজারও কাফেরকে জীবিত ছেড়ে দেয়াও নগন্য ব্যাপার।'
[আল ইকতিসাদ ফিল ই’তিকাদ : ১৩৫]
সুতরাং কাউকে কাফের সাব্যস্ত করার আগে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে খতিয়ে দেখতে হবে-
১) কেবল ধারণা ও সন্দেহের উপর ভিত্তি করে তাকফীর করা যাবেনা।
২) কোন গোষ্ঠীকে তার দলের অনুসারীর ব্যক্তিগত কুফুরীর কারণে দলে অন্যান্যদের বা নেতাদের কাফের বলা যাবেনা। যতক্ষণ না তাদের ব্যাপারে
কুফুরী সাব্যস্ত না হয়।
৩) সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন ও গ্রহনযোগ্য প্রমান এবং তাহকীকসহ পূর্ণ সংবাদ ব্যতিত তাকফীর করা হবেনা।
৪) শত্রুতা, রাগ ও ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে কাফের বলা বা কাফের ফতোয়া দেওয়া যাবেনা।
৫) তাকফীর করার পূর্বে ব্যক্তির বক্তব্য বা কর্মের যদি শরীয়তসম্মত ও গ্রহনযোগ্য তাবীল বা ব্যাখ্যা দাড় করানোর সুযোগ থাকে যাতে তাকে কাফের বলা যায়না তাহলে সেটি গ্রহন করতে হবে।
৬) কারো থেকে কেবল অত্যাধিক কবীরাহ গুনাহ ও জুলুম সাব্যস্ত হওয়ার কারণে তাকফীর করা যাবেনা।
৭) তাকফীরের ক্ষেত্রে উল্লেখিত কুফরের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর আলেমদের ইজমা থাকতে হবে।
৮) যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তাকফীর করা হবে তা অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমা দ্বারা অকাট্য ভাবে প্রমানিত হতে হবে।
৯) যেসব ফিক্বহী বিষয়ে ইমামদের থেকে একই মাসালায় ভিন্নমত পাওয়া যায় তাকে কেন্দ্র করে তাকফীর করা যাবেনা।
১০) কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা অংশবিশেষ অবস্থাকে কেন্দ্র করে তাকফীর করা যাবেনা।
১১) কোন দ্বীনদার ব্যক্তি বাধ্য হয়ে, অসতর্কতাবশত, অজ্ঞতাবশত বা ভুলবশত কুফুরী করলে তাকে সেই মুহুর্তেই কাফের ফতোয়া দেওয়া যাবেনা। তবে তাকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি সেচ্ছায় তওবা না করলে বা তার মতের উপর অটল থাকলে ভিন্ন কথা!
১২) যাকে তাকফীর করা হবে সে বালেগ হতে হবে, তার হুশ ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন থাকতে হবে।।
[সূরা আনআমঃ১৬৪; সূরা নাহলঃ ১০৬ ; সহীহ বুখারীঃ ৪২৫৯; সহীহ মুসলিমঃ ৯৬ ; কিতাবুল উম্ম, শাফেঈ ১/২৯৭; মাজমূউল ফাতাওয়া ১২/৫০১, ৩৫/১৬৫; আশ শিফা, কাযী ইয়ায ২/২৩৫; আর রদ্দু আলাল বাকরী ১/৩৮১; আল ইস্তেগাসা (তালখীস), ইবনু তাইমিয়া ২/৪৯২; আল ফিসালু ফিল মিলালি ওয়াল আহওয়ায়ি ওয়ান নিহালি, ইবনু হাযাম ৩/২৯৪; আর রদ্দুল ওয়াফির, ইবনুন নাসীরুদ্দীন আদ দিমাশক্বী পৃ. ২০; ফাতহুল বারি ১০/৫১৫; ফতহুল মুগীস ১/৩৩৪; আল মুগনী১/১২৩; আল ইলমুশ শামিখ পৃ. ৪১৩; শারহুল আক্বীদা আত ত্বহাবীয়া পৃ.৩৫৭-৩৫৮]

------------------ 
লিখেছেনঃ Abdullah Al Mamun

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf