বিশ রাকাতের মারফু হাদীসের রাবী আবু শায়বা ইবরাহীম ইবনে উসমান সম্পর্কে পর্যালোচনা
(প্রথমে হাদীসটি পড়ে নিন:
"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) রমজান মাসে বিশ রাকাআত তারাবীহ ও বিতির আদায় করতেন।"
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-৫/২২৫, সুনানে বায়হাকী-৪/৬০)
।
সনদ বিশ্লেষণ: হাদীসটি ছেকাহ রাবীদের অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ। আবার হাদীসটি শাজ ও মুআল্লালও নয়, ফলে হাদীসটি গ্রহণযোগ্য হওয়াতে কোন আপত্তির লেশমাত্র নেই। কারণ হাদীসটির সনদে (সাহাবী বাদে)৪জন রাবী রয়েছে।
"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) রমজান মাসে বিশ রাকাআত তারাবীহ ও বিতির আদায় করতেন।"
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-৫/২২৫, সুনানে বায়হাকী-৪/৬০)
।
সনদ বিশ্লেষণ: হাদীসটি ছেকাহ রাবীদের অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ। আবার হাদীসটি শাজ ও মুআল্লালও নয়, ফলে হাদীসটি গ্রহণযোগ্য হওয়াতে কোন আপত্তির লেশমাত্র নেই। কারণ হাদীসটির সনদে (সাহাবী বাদে)৪জন রাবী রয়েছে।
১. ইয়াজিদ ইবনে হারুন। তিনি ছেকাহ। (তাকরীবুত তাহযীব ২/৩৩৩, তাহযীবুত তাহযীব ১১/৩৬৬)
২. আবু শায়বা ইব্রাহীম ইবনে ওসমান। তিনি আদেল ও হাফিজুল হাদীস। (তাহযীবুত তাহযীব ১/১৪৫, তাজাল্লিয়াতে সফদর ৩/
১৭৩, আর রফউ ওয়াত তাকমীল ৩০৬ ও ৩৮৩, মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালাহ ৮৬)
৩. হাকাম ইবনে উতায়বাহ। তিনি ছিকাহ। (তাহযীবুল কামাল ৩/৫০, তাকরীবুত তাহযীব ১/২৩২)
৪. মিকসাম রহঃ। তিনি বুখারী শরীফের রাবী,ছদুক এবং ছিকাহ। (তাহযীবুল কামাল ১০/৮৬,তাকরীবুত তাহযীব ২/২১১,মীযানুল ই'তিদাল ৬/৫০৮)
...................
২. আবু শায়বা ইব্রাহীম ইবনে ওসমান। তিনি আদেল ও হাফিজুল হাদীস। (তাহযীবুত তাহযীব ১/১৪৫, তাজাল্লিয়াতে সফদর ৩/
১৭৩, আর রফউ ওয়াত তাকমীল ৩০৬ ও ৩৮৩, মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালাহ ৮৬)
৩. হাকাম ইবনে উতায়বাহ। তিনি ছিকাহ। (তাহযীবুল কামাল ৩/৫০, তাকরীবুত তাহযীব ১/২৩২)
৪. মিকসাম রহঃ। তিনি বুখারী শরীফের রাবী,ছদুক এবং ছিকাহ। (তাহযীবুল কামাল ১০/৮৬,তাকরীবুত তাহযীব ২/২১১,মীযানুল ই'তিদাল ৬/৫০৮)
...................
[১-মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে হাফেজুল হাদীস আবু শায়বা ইবরাহীম ইবনে উসমান]
.
বর্ণিত হাদীসের সনদে দ্বিতীয় রাবী হলেন আবু শায়বা ইবরাহীম ইবনে উসমান আলআবসী।উক্ত রাবীকে কেন্দ্র করে লা-মাযহাবীরা বর্ণিত হাদীসকে জঈফ বা অপ্রমাণযোগ্য এমনকি অনেকে মাওযু বলতেও কুন্ঠাবোধ করেনা।তাই আমাদের জরুরী ভিত্তিতে হাদীস শাস্ত্রে আবু শায়বার অবস্থান নির্ণয় করা অতীব জরুরী।জগদ্বিখ্যাত হাফেজুল হাদীস ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ রিজাল শাস্ত্রে তাঁর অনবদ্য সংকলন 'তাহযীবুত তাহযীব' এর ১ম খন্ডের ১৪৫নং পৃষ্ঠায় বলেছেন,ইমাম বুখারী রহঃ এর উস্তাদ হারুন ইবনে ইয়াজিদ রহঃ -যিনি কাজী আবু শায়বার আদালত ভবনের মহুরী ছিলেন-বলেন:তখনকার যুগে আবু শায়বার মত ন্যায় বিচারক কাজী আর কেউ ছিলেন না।(তাহযীবুল কামাল-৩/৫০;তাকরীবুত তাহযীব-১/২৩২;মু'জামু আছামী আর রুয়াত-১/৫৬)।
আর একথা সর্বজন স্বীকৃত যে,বিচারকের জন্য যতটুকু আদালত শর্ত এর চেয়ে হাদীস বর্ণনাকারীর ক্ষেত্রে আদালতের শর্ত অনেকটা কম।অতএব যে ব্যক্তি আদেল কাজী হবেন নিশ্চয় তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রেও আদেল বলে গণ্য হবেন।
উক্ত আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল যে,হাদীস বর্ণনাকারী ছিকাহ হওয়ার জন্য যে দুই শর্ত প্রয়োজন আবু শায়বার মধ্যে তার একটি পাওয়া গেল।এখন কারো মনে সন্দেহ জাগতে পারে যে,আবু শায়বাকে জঈফ বলা হয়েছে হয়ত তার স্মরণশক্তির দুর্বলতার কারণে।তাই এবার আসা যাক সেই আলোচনায়।হাফিযুল হাদীস ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ তাঁর অমরগ্রন্থ ফাতহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারীর ৪৩৫৯নং হাদীসের আলোচনায় বলেন,
ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﺑْﻦُ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺴِﻲُّ ﺑِﺎﻟْﻤُﻮَﺣَّﺪَﺓِ ﺍﻟْﺤَﺎﻓِﻆ
ইবরাহীম ইবনে উসমান আল আবসী আল হাফেজ(ফাতহুল বারী ৮/৭৬)।তাঁর একথা প্রমাণ করে যে,আবু শায়বা নিশ্চয় হাফিযুল হাদীস ছিলেন।পূর্বের আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল:আবু শায়বা আদেল ছিলেন।এবারের আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল:তিনি হাফেজুল হাদীসও ছিলেন।আর হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য রাবীর মধ্যে দু'টি গুণ দরকার।একটি আদালত অপরটি যবত।আর আবু শায়বার মধ্যে যখন উভয়টি পাওয়া গেল তখন তার হাদীস গ্রহণ করতে আপত্তি কোথায়?(তাজাল্লিয়াতে সফদর-৩/১৭৩)।
তাছাড়াও ইবনে আদী তার আল কামিল গ্রন্থের ১ম খন্ডের ২৪১নং পৃষ্ঠায় বলেন আবু শায়বা ইবরাহীম বিন আবু হাইয়্যা থেকে উত্তম।আর ইবরাহীম বিন আবু হাইয়্যা সম্পর্কে হাদীস শাস্ত্রের উজ্জল নক্ষত্র ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন ইবনে আবু হাইয়্যা হাদীস শাস্ত্রের শায়খ,নির্ভরযোগ্য উচ্চমাপের বর্ণনাকারী।(লিসানুল মিযান-১/৫৩)।
এ আলোচনা থেকে হাদীস শাস্ত্রে আবু শায়বার মাকাম কেমন তা সহজেই অনুমেয়।
.
[২--আবু শায়বার উপর জরাহ এর পর্যালোচনা]
.
বর্ণিত হাদীসের সনদে দ্বিতীয় রাবী হলেন আবু শায়বা ইবরাহীম ইবনে উসমান আলআবসী।উক্ত রাবীকে কেন্দ্র করে লা-মাযহাবীরা বর্ণিত হাদীসকে জঈফ বা অপ্রমাণযোগ্য এমনকি অনেকে মাওযু বলতেও কুন্ঠাবোধ করেনা।তাই আমাদের জরুরী ভিত্তিতে হাদীস শাস্ত্রে আবু শায়বার অবস্থান নির্ণয় করা অতীব জরুরী।জগদ্বিখ্যাত হাফেজুল হাদীস ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ রিজাল শাস্ত্রে তাঁর অনবদ্য সংকলন 'তাহযীবুত তাহযীব' এর ১ম খন্ডের ১৪৫নং পৃষ্ঠায় বলেছেন,ইমাম বুখারী রহঃ এর উস্তাদ হারুন ইবনে ইয়াজিদ রহঃ -যিনি কাজী আবু শায়বার আদালত ভবনের মহুরী ছিলেন-বলেন:তখনকার যুগে আবু শায়বার মত ন্যায় বিচারক কাজী আর কেউ ছিলেন না।(তাহযীবুল কামাল-৩/৫০;তাকরীবুত তাহযীব-১/২৩২;মু'জামু আছামী আর রুয়াত-১/৫৬)।
আর একথা সর্বজন স্বীকৃত যে,বিচারকের জন্য যতটুকু আদালত শর্ত এর চেয়ে হাদীস বর্ণনাকারীর ক্ষেত্রে আদালতের শর্ত অনেকটা কম।অতএব যে ব্যক্তি আদেল কাজী হবেন নিশ্চয় তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রেও আদেল বলে গণ্য হবেন।
উক্ত আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল যে,হাদীস বর্ণনাকারী ছিকাহ হওয়ার জন্য যে দুই শর্ত প্রয়োজন আবু শায়বার মধ্যে তার একটি পাওয়া গেল।এখন কারো মনে সন্দেহ জাগতে পারে যে,আবু শায়বাকে জঈফ বলা হয়েছে হয়ত তার স্মরণশক্তির দুর্বলতার কারণে।তাই এবার আসা যাক সেই আলোচনায়।হাফিযুল হাদীস ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ তাঁর অমরগ্রন্থ ফাতহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারীর ৪৩৫৯নং হাদীসের আলোচনায় বলেন,
ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﺑْﻦُ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺴِﻲُّ ﺑِﺎﻟْﻤُﻮَﺣَّﺪَﺓِ ﺍﻟْﺤَﺎﻓِﻆ
ইবরাহীম ইবনে উসমান আল আবসী আল হাফেজ(ফাতহুল বারী ৮/৭৬)।তাঁর একথা প্রমাণ করে যে,আবু শায়বা নিশ্চয় হাফিযুল হাদীস ছিলেন।পূর্বের আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল:আবু শায়বা আদেল ছিলেন।এবারের আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল:তিনি হাফেজুল হাদীসও ছিলেন।আর হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য রাবীর মধ্যে দু'টি গুণ দরকার।একটি আদালত অপরটি যবত।আর আবু শায়বার মধ্যে যখন উভয়টি পাওয়া গেল তখন তার হাদীস গ্রহণ করতে আপত্তি কোথায়?(তাজাল্লিয়াতে সফদর-৩/১৭৩)।
তাছাড়াও ইবনে আদী তার আল কামিল গ্রন্থের ১ম খন্ডের ২৪১নং পৃষ্ঠায় বলেন আবু শায়বা ইবরাহীম বিন আবু হাইয়্যা থেকে উত্তম।আর ইবরাহীম বিন আবু হাইয়্যা সম্পর্কে হাদীস শাস্ত্রের উজ্জল নক্ষত্র ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন ইবনে আবু হাইয়্যা হাদীস শাস্ত্রের শায়খ,নির্ভরযোগ্য উচ্চমাপের বর্ণনাকারী।(লিসানুল মিযান-১/৫৩)।
এ আলোচনা থেকে হাদীস শাস্ত্রে আবু শায়বার মাকাম কেমন তা সহজেই অনুমেয়।
.
[২--আবু শায়বার উপর জরাহ এর পর্যালোচনা]
অনেকের মনে এ সংশয়ের উদয় হওয়া স্বাভাবিক যে,আবু শায়বা যদি একজন ছিকাহ বা বিশ্বস্তই হবেন তাহলে ইমাম শো'বা থেকে শুরু করে অনেক মুহাদ্দিসগণ তার উপর জরাহমূলক উক্তি করলেন কেন?একথার জবাব বোঝার জন্য একটু বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন।
হাফিযুল হাদীস আবু শায়বা ১৬৯হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।তাঁর উপর জরাহকারীরা হলেন,যথাক্রমে ইমাম শো'বা,ইমাম বোখারী,ইমাম নাসাঈ,ইমাম আবু দাউদ ও আবু আলী প্রমুখ।এদের মধ্যে শুধু ইমাম শো'বাই হলেন আবু শায়বার যুগের মানুষ।যিনি আবু শায়বা থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন।আর বাকী সকলেই আবু শায়বার অনেক পরের মানুষ,যারা আবু শায়বাকে দেখেননি।আবু শায়বার উপর জরাহকারীদের মদ্যে ইমাম শো'বা ব্যতীত আর কেউ আবু শায়বার সমকালীন নয়।অতএব আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি ইমাম শো'বা ব্যতীত সকলেই ইমাম শো'বার কথাকে পুঁজি করে আবু শায়বাকে জরাহ করেছেন।আর ইমাম শো'বার জরাহ করার কারণ হিসেবে ইমাম যাহাবী বলেন:ইমাম শো'বা আবু শায়বাকে মিথ্যুক বলেছেন।কারণ আবু শায়বা হাকামের সূত্রে বর্ণনা করেন যে,ইবনে আবু লায়লা বলেন জঙ্গে ছিফফীনে ৭০জন বদরী সাহাবী অংশগ্রহণ করেন।ইমাম শো'বা বলেন আবু শায়বা ভুল বলেছে।কারণ আমি হাকামের সাথে আলোচনা করে দেখলাম জঙ্গে সিফফীনে খোজায়মা রাঃ ব্যতীত আর কোন বদরী সাহাবী অংশ গ্রহণ করেননি।ইমাম যাহাবী বলেন,আমি বললাম সুবহানাল্লাহ!জঙ্গে সিফফীনে তো আলী ও আম্মার রাঃ এর অংশগ্রহণ করার বিষয়টা একদম স্পষ্ট।যারা উভয়েই বদরী সাহাবী।
ইমাম যাহাবীর এ গবেষণা ইমাম শো'বার উক্তি ভুল প্রমাণ করে দেয়।অতএব ইমাম শো'বার উক্তি যখন ভুল প্রমাণিত হল,তখন ইমাম শোবার উক্তিকে পুঁজি করে যারা আবু শায়বাকে জরাহ করেছেন তাদের জরাহও ভুল প্রমাণিত হবে।
এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে ইমাম শো'বা আবু শায়বার ক্ষেত্রে ﻛﺬﺏশব্দ ব্যবহার করেছেন।যার অর্থ শুধু 'মিথ্যুক'ই নয়।'ভুলে'র অর্থেও এটি ব্যবহৃত হয়।(দেখুন:আবু দাউদ-২/
১৩০(১৪২০);আউনুল মাবুদ-৪/১৭৪)।
এখানে আরো লক্ষ্যণীয় বিষয় যে,ইমাম শোবা আবু শায়বাকে শুধুমাত্র এ ঘটনাটিতেই মিথ্যুক বা ভুলকারী বলেছেন।(তাহযীবুত তাযীব-১/১৪৫(২২৯)।আর এক্ষেত্রে তো প্রমাণই হয়ে গেল যে ভুলটি মূলত আবু শায়বার নয় শোবারই হয়েছে।তাই এই জরাহ গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়তঃআল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী রহঃ ইমাম শো'বাকে মুতাশাদ্দিদীনদের অন্যতম বলেছেন।(আর রফউ ওয়াত তাকমীল-৩০৬)।আর মুতাশাদ্দিদীন মুহাদ্দিসদের জরাহ সম্পর্কে মূলনীতি হল,তাদের জরাহ এর পক্ষে যদি কোন সমর্থন পাওয়া না যায় তখন তাঁর জরাহ গ্রহণযোগ্য হবেনা।(আর রফউ ওয়াত তাকমীল-৩৮৩)।ইমাম শোবার যেহেতু সমকালীন মুহাদ্দিসদের মধ্য থেকে আর কোন সমর্থক নেই তাই তার জরাহ গ্রহণযোগ্য হবেনা।তাছাড়া ইমাম শোবা ব্যতীত সকলেই জরাহ মুবহাম (কারণবিহীন)করেছেন।আর উসূলে জরাহ তা'দীল হল জরহে মুবহাম গ্রহণযোগ্য নয়।(মুকাদ্দিমায়ে ইবনে সালাহ-৮৬)।দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা প্রমাণ হল আবু শায়বা গ্রহণযোগ্য ছিকাহ রাবী।অতএব তার হাদীসও গ্রহণযোগ্য হবে।
.
[৩-আবু শায়বার হাদীস মুতাওয়াতির]
হাফিযুল হাদীস আবু শায়বা ১৬৯হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।তাঁর উপর জরাহকারীরা হলেন,যথাক্রমে ইমাম শো'বা,ইমাম বোখারী,ইমাম নাসাঈ,ইমাম আবু দাউদ ও আবু আলী প্রমুখ।এদের মধ্যে শুধু ইমাম শো'বাই হলেন আবু শায়বার যুগের মানুষ।যিনি আবু শায়বা থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন।আর বাকী সকলেই আবু শায়বার অনেক পরের মানুষ,যারা আবু শায়বাকে দেখেননি।আবু শায়বার উপর জরাহকারীদের মদ্যে ইমাম শো'বা ব্যতীত আর কেউ আবু শায়বার সমকালীন নয়।অতএব আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি ইমাম শো'বা ব্যতীত সকলেই ইমাম শো'বার কথাকে পুঁজি করে আবু শায়বাকে জরাহ করেছেন।আর ইমাম শো'বার জরাহ করার কারণ হিসেবে ইমাম যাহাবী বলেন:ইমাম শো'বা আবু শায়বাকে মিথ্যুক বলেছেন।কারণ আবু শায়বা হাকামের সূত্রে বর্ণনা করেন যে,ইবনে আবু লায়লা বলেন জঙ্গে ছিফফীনে ৭০জন বদরী সাহাবী অংশগ্রহণ করেন।ইমাম শো'বা বলেন আবু শায়বা ভুল বলেছে।কারণ আমি হাকামের সাথে আলোচনা করে দেখলাম জঙ্গে সিফফীনে খোজায়মা রাঃ ব্যতীত আর কোন বদরী সাহাবী অংশ গ্রহণ করেননি।ইমাম যাহাবী বলেন,আমি বললাম সুবহানাল্লাহ!জঙ্গে সিফফীনে তো আলী ও আম্মার রাঃ এর অংশগ্রহণ করার বিষয়টা একদম স্পষ্ট।যারা উভয়েই বদরী সাহাবী।
ইমাম যাহাবীর এ গবেষণা ইমাম শো'বার উক্তি ভুল প্রমাণ করে দেয়।অতএব ইমাম শো'বার উক্তি যখন ভুল প্রমাণিত হল,তখন ইমাম শোবার উক্তিকে পুঁজি করে যারা আবু শায়বাকে জরাহ করেছেন তাদের জরাহও ভুল প্রমাণিত হবে।
এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে ইমাম শো'বা আবু শায়বার ক্ষেত্রে ﻛﺬﺏশব্দ ব্যবহার করেছেন।যার অর্থ শুধু 'মিথ্যুক'ই নয়।'ভুলে'র অর্থেও এটি ব্যবহৃত হয়।(দেখুন:আবু দাউদ-২/
১৩০(১৪২০);আউনুল মাবুদ-৪/১৭৪)।
এখানে আরো লক্ষ্যণীয় বিষয় যে,ইমাম শোবা আবু শায়বাকে শুধুমাত্র এ ঘটনাটিতেই মিথ্যুক বা ভুলকারী বলেছেন।(তাহযীবুত তাযীব-১/১৪৫(২২৯)।আর এক্ষেত্রে তো প্রমাণই হয়ে গেল যে ভুলটি মূলত আবু শায়বার নয় শোবারই হয়েছে।তাই এই জরাহ গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়তঃআল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী রহঃ ইমাম শো'বাকে মুতাশাদ্দিদীনদের অন্যতম বলেছেন।(আর রফউ ওয়াত তাকমীল-৩০৬)।আর মুতাশাদ্দিদীন মুহাদ্দিসদের জরাহ সম্পর্কে মূলনীতি হল,তাদের জরাহ এর পক্ষে যদি কোন সমর্থন পাওয়া না যায় তখন তাঁর জরাহ গ্রহণযোগ্য হবেনা।(আর রফউ ওয়াত তাকমীল-৩৮৩)।ইমাম শোবার যেহেতু সমকালীন মুহাদ্দিসদের মধ্য থেকে আর কোন সমর্থক নেই তাই তার জরাহ গ্রহণযোগ্য হবেনা।তাছাড়া ইমাম শোবা ব্যতীত সকলেই জরাহ মুবহাম (কারণবিহীন)করেছেন।আর উসূলে জরাহ তা'দীল হল জরহে মুবহাম গ্রহণযোগ্য নয়।(মুকাদ্দিমায়ে ইবনে সালাহ-৮৬)।দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা প্রমাণ হল আবু শায়বা গ্রহণযোগ্য ছিকাহ রাবী।অতএব তার হাদীসও গ্রহণযোগ্য হবে।
.
[৩-আবু শায়বার হাদীস মুতাওয়াতির]
পূর্বে আবু শায়বাকে সিকাহ প্রমাণ করা হয়েছে।সুতরাং তার হাদীস সহীহ।তারপরও সূত্র হিসেবে যদি তার বর্ণিত হাদীস যয়ীফ ধরেও নেয়া হয় তারপরও সেই হাদীসটি গ্রহণযোগ্য হওয়াতে কোন আপত্তি নেই।কারণ সকল উসূলবিদগণ একথার উপর একমত পোষণ করেছেন যে,কোন একটি বিষয় সকলেই নির্দ্বিধায় মেনে নিলে তার সনদ যতই দুর্বল হোক না কেন,তা আমলের মর্যাদায় মুতাওয়াতির পর্যন্ত পৌঁছে যায়।যেমন আল্লামা সাখাবী রহঃ বলেন,অর্থাৎ কোন নিতান্ত যয়ীফ হাদীস যদি সকল উম্মত কবুল করে নেয়,সে হাদীস মতে আমল করা সম্পূর্ণ সহীহ।এমনকি সে হাদীসের মর্যাদা মুতাওয়াতিরের স্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়।তার দ্বারা অন্য অকাট্য দলীলে প্রমাণিত হুকুমকে রহিত করা সম্ভব।(ফাতহুল মুগীস-১/৩১২)।
ইমাম সুয়ূতী রহঃ বলেন,অর্থাৎ কোন হাদীস উম্মত কবুল করে নিলে সে হাদীসকে সহীহ বলে হুকুম দেওয়া হবে।যদিও তার সনদ সহীহ না হয়।(তাদরীবুর রাবী-১/৩৩)।
আর বিশ রাকাত তারাবীহ হযরত ওমর রাঃ এর যুগ থেকে প্রকাশ্যভাবে জামাতের সাথে আদায় করার আমল চালু হয়ে আজ পর্যন্ত একই নিয়মে অব্যাহত রয়েছে।অতএব বিশ রাকাত মুতাওয়াতির হওয়াতে কোন আপত্তি নেই।আর হাদীসে মুতাওয়াতিরের মর্যাদা বুখারীর হাদীসের উপরে,সনদের তাহকীকের উপরে।
সকল উসূলবিদগণ একথা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন যে,কোন হাদীসের সনদ সহীহ হওয়ার অর্থ এটা নয় যে,মতনও নিশ্চিত সহীহ।হতে পারে সনদ সহীহ কিন্তু মতন বাস্তবে গায়রে সহীহ।(মুকাদ্দিমায়ে ইবনে সালাহ-১৭)।
সন্দেহ নিরসন:-দীর্ঘ আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল,আবু শায়বার হাদীস সনদের দিক দিয়ে সহীহ।আর তাআমুলে নাসের দিক দিয়ে দেখলে মুতাওয়াতির।তাহলে ইমাম যাহাবী রহঃ আবু শায়বার হাদীসটি মুনকার হাদীসের তালিকায় এক নম্বরে বর্ণনা করলেন কেন?
এর জবাবে বলবো,হাফেজ ইবনুস সালাহ বলেন,হাদীসে মুনকারের দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে।দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে কোন একটি হাদীস শুধুমাত্র একজন রাবী বর্ণনা করা।(মুকাদ্দিমায়ে ইবনে সালাহ-১৭)।যাকে মুহাদ্দিসীনদের পরিভায় তাফাররুদ বলে।বিশ রাকাত তারাবীর হাদীসটি যেহেতু আবু শায়বা একা বর্ণনা করেছেন,তাই মুনকারের দ্বিতীয় অর্থে মুনকার বলা হয়েছে।যয়ীফ রাবী ছিকাহ রাবীর বিপরীত বর্ণনার অর্থে মুনকার বলা হয়নি।
ইমাম সুয়ূতী রহঃ বলেন,অর্থাৎ কোন হাদীস উম্মত কবুল করে নিলে সে হাদীসকে সহীহ বলে হুকুম দেওয়া হবে।যদিও তার সনদ সহীহ না হয়।(তাদরীবুর রাবী-১/৩৩)।
আর বিশ রাকাত তারাবীহ হযরত ওমর রাঃ এর যুগ থেকে প্রকাশ্যভাবে জামাতের সাথে আদায় করার আমল চালু হয়ে আজ পর্যন্ত একই নিয়মে অব্যাহত রয়েছে।অতএব বিশ রাকাত মুতাওয়াতির হওয়াতে কোন আপত্তি নেই।আর হাদীসে মুতাওয়াতিরের মর্যাদা বুখারীর হাদীসের উপরে,সনদের তাহকীকের উপরে।
সকল উসূলবিদগণ একথা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন যে,কোন হাদীসের সনদ সহীহ হওয়ার অর্থ এটা নয় যে,মতনও নিশ্চিত সহীহ।হতে পারে সনদ সহীহ কিন্তু মতন বাস্তবে গায়রে সহীহ।(মুকাদ্দিমায়ে ইবনে সালাহ-১৭)।
সন্দেহ নিরসন:-দীর্ঘ আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল,আবু শায়বার হাদীস সনদের দিক দিয়ে সহীহ।আর তাআমুলে নাসের দিক দিয়ে দেখলে মুতাওয়াতির।তাহলে ইমাম যাহাবী রহঃ আবু শায়বার হাদীসটি মুনকার হাদীসের তালিকায় এক নম্বরে বর্ণনা করলেন কেন?
এর জবাবে বলবো,হাফেজ ইবনুস সালাহ বলেন,হাদীসে মুনকারের দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে।দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে কোন একটি হাদীস শুধুমাত্র একজন রাবী বর্ণনা করা।(মুকাদ্দিমায়ে ইবনে সালাহ-১৭)।যাকে মুহাদ্দিসীনদের পরিভায় তাফাররুদ বলে।বিশ রাকাত তারাবীর হাদীসটি যেহেতু আবু শায়বা একা বর্ণনা করেছেন,তাই মুনকারের দ্বিতীয় অর্থে মুনকার বলা হয়েছে।যয়ীফ রাবী ছিকাহ রাবীর বিপরীত বর্ণনার অর্থে মুনকার বলা হয়নি।
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন