কবর থেকে ফয়েজ গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কিছু কথা
মতিউর রহমান মাদানী সাহেব বলেছেন- “কবর থেকে ফয়েজ আসে” এমন আকিদা রাখা
শিরক । আর এ শির্কি আক্বিদা নাকি দেওবন্দী আলেমগণ রাখেন। তিনি দু এক জনের
নামও উল্লেখ করেছেন। মাদানী সাহেব কোনটাকে শির্ক বলতে চাচ্ছে আর এ ব্যাপারে
তার এলমের অবস্থান সম্পর্কে আলোচনায় আমরা একটু পড়ে যাবো। প্রথমে মাদানী
সাহেব ও তার ভক্তদের কাছে আমার একটি প্রশ্ন।
আচ্ছা এ ধরণের ফয়েজ বা বরকতের কথা যদি আহলে হাদীসের আলেমগণ বলেন তাহলে তাদের কথা কি শির্কি হবে না??? নাকি সব স্থানের মতো এখানেও ডাবোল স্টান্ডার্ড দাড়া করিয়ে আহলে হাদীস আলেমদের পাক্কা মুমিন বানিয়ে ওলামায়ে দেওবন্দদের মুশরিক বানানো হবে?? মাদানী সাহেব সহ তার ভক্তদের মনে করিয়ে দিচ্ছি যে কেয়ামত নামে একটি দিন আছে।
“কবর থেকে ফয়েজ আসে” এমন আকিদায় আহলে হাদীস আলেমগণ
--------------- --------------- --------------- --------------- --------------- -
এখানে দুজন আহলে হাদীস আলেমের নাম উল্লেখ করবো
(১) আহলে হাদীসদের অন্যতম মান্যবর আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান স্বীয় কিতাব “আত তাজুল মুকাল্লিল”এ তার পিতা আবু আহমাদ হাসান বিন আলী আল হুসাইনীর স্মরণে লিখেন,
ولا يزال يري النور على قبره الشريف والناس يتبركون به
“তার কবর শরীফে সর্বদা নুর থাকে । আর লোকজন তার কবর থেকে বরকত লাভ করে।”
-আত তাজুল মুকাল্লিল, পৃষ্ঠা-৫৪৩, মাক্তাবাতুস সালাম,
(২) ফেরকায়ে আহলে হাদীসের আরেকজন মান্যবর আলেম আল্লামা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন,
ولا ازال السلف والخلف يتبركون باثار الصلحاء ومشاهدهم ومقاماتهم و ابارهم وعيونهم ولم يقل احد ان التبرك بمثل هذه الاشياء شرك
সালাফ ও খালাফগন (পূর্বসূরি ও উত্তরসূরিগণ) নেককারদের নিদর্শন, কবর, স্থান, কুপ-ঝর্না সমূহ থেকে বরকত লাভ করে থাকেন । কেও একথা বলেন না যে, এগুলো থেকে বরকত লাভ করা শিরক । তিনি আরও বলেন,
قلت بهذا يدفع الشبهة التي اوردها القاصرون انه كيف يمكن استحصال الفيوض و البركات وبرد القلب والانوار من قلب انوار الصلحاء بزيارة قبورهم
এর দ্বারা ঐ সন্দেহেরও নিরসন হয় যা কিছু স্বল্প জ্ঞানসম্পন্ন লোকজন বলে থাকে যে, “নেককারদের কবর যিয়ারত করে তাদের রুহ সমূহ থেকে ফয়েজ, বরকত ও নুর সমূহ লাভ করা কি করে সম্ভব ?” – হাদিয়াতুল মাহদী, পৃষ্ঠা-৩২,৩৩,৩৪ ,
জনাব মাদানী সাহেব, নবাব সিদ্দীক হাসান খান ও আল্লামা ওয়াহিদুজ্জামান এর এ কথাগুলো কি শির্ক?? তাদেরকে কি মুশরিক বলা যাবে??
মূল আলোচনাঃ
--------------- --
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা ওলামায়ে দেওবন্দকে শরীয়ত নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে হেফাযত করেছেন। কবর থেকে ফয়েজ নেওয়ার ক্ষেত্রে ওলামায়ে দেওবন্দের আক্বিদা একদম পরিচ্ছন্ন । আর তা হল নেককারদের কবর কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখে না তবে তার নেক কাজের জন্য আল্লাহ তায়ালা তার উপর রহম করেন। এর আছর তার কবরের উপরও পড়ে। এর বাহ্যিক প্রকাশ সাহাবীদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
যেমন কানজুল উম্মাহ(৮/ ৪১)
এ সহীহ সনদে সাদ ইবনে মুয়াজ রাযিঃ এর কবরের মাটি থেকে মৃগনাভির সুগন্ধ বের
হওয়ার ঘটনা উল্লেখ আছে। এ ঘটনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম শুনার
পর সুবহানাল্লাহ,সুবহানাল্লাহ বলে ছিলেন এবং তার চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠেছিলো।
মোটকথা ওলামায়ে দেওবন্দের কাছে ফয়েজের উদ্দেশ্য হল কবরের নেককারদের উপর বর্ষিত রহমত যেন তার কাছেও পোঁছে।
নিচের হাদীস ও এ ব্যাপারে ইবনে হাজর আসকালানি রাহঃ এর ব্যাক্ষা দেখলে আপনার কাছেও এটা স্পষ্ট হবে যে মাদানী সাহেব তাকফিরের রোগে আক্রান্ত আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এ রুগীদের ব্যাপারে বড় কঠিন হুশিয়ারী দিয়েছে। এমনকি কাফের হয়ে মৃত্যুবরণের ভয়ও দেখিয়েছেন।
সহীহ বুখারিতে ইমাম বুখারী এক অনুচ্ছেদের শিরোনাম দিয়েছেন بَابُ مَا جَاءَ فِي قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا।
এই অনুচ্ছেদের অধীনে ইমাম বুখারী রাহ. উমর রা.এর ঐ হাদীস উল্লেখ করেছেন, যাতে তিনি ইবনে উমর রা.এর মাধ্যমে আয়েশা রা.এর কাছে রাসুলের কবরের পাশে শায়িত হওয়ার অনুমতি চেয়ে ছিলেন । আয়েশা রা.বলেন, “আমি এই জায়গা আমার (দাফনের) জন্য পছন্দ করে রেখে ছিলাম । কিন্তু আমি তা উমরকে দিয়ে দিলাম।”
সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার হাফেয ইবনে হজর আসকালানী রাহ. এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেন,
وفيه الحرص على مجاورة الصالحين في القبور طمعا في إصابة الرحمة إذا نزلت عليهم وفي دعاء من يزورهم من أهل الخير
‘এই হাদীসের মাঝে এই কথার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কবরে নেককারদের সাথে প্রতিবেশীত্ব(পা শাপাশি
শয়ন)লাভ করার কামনা করা উচিৎ এই নিয়তে ও আশায় যে, নেককারদের উপর বর্ষিত
রহমত যেন তার কাছেও পোঁছে । এবং নেক লোক যখন তার কবর যিয়ারত করে ও তার
জন্য দুআ করে সেও রহমতের অংশ লাভ করে ।
-ফাতহুল বারী ৩/২৫৮
এ ব্যাপারে অনেক এলমি আলোচনা বাকি রয়ে গেল। ভিন্ন কোন পোস্টে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা যাবে ইনশাআল্লাহ। সর্বশেষে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি যে আল্লাহ আমাদের গলদ তাকফিরি মনোভাব থেকে হেফাযত করেন এবং সরীয়তের সীমার মধ্যে থাকার তৌফিক দনে।
- আমিন।
পোস্টটি তৌরি করতে মুফতি হাসান মাহমুদ ভায়ের (ইফতাঃ মারকাযুদ্দাওয়াহ ) একটি লেখার সহযোগিতা নিয়েছি।
- Ahnaf Serniabat
আচ্ছা এ ধরণের ফয়েজ বা বরকতের কথা যদি আহলে হাদীসের আলেমগণ বলেন তাহলে তাদের কথা কি শির্কি হবে না??? নাকি সব স্থানের মতো এখানেও ডাবোল স্টান্ডার্ড দাড়া করিয়ে আহলে হাদীস আলেমদের পাক্কা মুমিন বানিয়ে ওলামায়ে দেওবন্দদের মুশরিক বানানো হবে?? মাদানী সাহেব সহ তার ভক্তদের মনে করিয়ে দিচ্ছি যে কেয়ামত নামে একটি দিন আছে।
“কবর থেকে ফয়েজ আসে” এমন আকিদায় আহলে হাদীস আলেমগণ
---------------
এখানে দুজন আহলে হাদীস আলেমের নাম উল্লেখ করবো
(১) আহলে হাদীসদের অন্যতম মান্যবর আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান স্বীয় কিতাব “আত তাজুল মুকাল্লিল”এ তার পিতা আবু আহমাদ হাসান বিন আলী আল হুসাইনীর স্মরণে লিখেন,
ولا يزال يري النور على قبره الشريف والناس يتبركون به
“তার কবর শরীফে সর্বদা নুর থাকে । আর লোকজন তার কবর থেকে বরকত লাভ করে।”
-আত তাজুল মুকাল্লিল, পৃষ্ঠা-৫৪৩, মাক্তাবাতুস সালাম,
(২) ফেরকায়ে আহলে হাদীসের আরেকজন মান্যবর আলেম আল্লামা ওয়াহিদুজ্জামান
ولا ازال السلف والخلف يتبركون باثار الصلحاء ومشاهدهم ومقاماتهم و ابارهم وعيونهم ولم يقل احد ان التبرك بمثل هذه الاشياء شرك
সালাফ ও খালাফগন (পূর্বসূরি ও উত্তরসূরিগণ) নেককারদের নিদর্শন, কবর, স্থান, কুপ-ঝর্না সমূহ থেকে বরকত লাভ করে থাকেন । কেও একথা বলেন না যে, এগুলো থেকে বরকত লাভ করা শিরক । তিনি আরও বলেন,
قلت بهذا يدفع الشبهة التي اوردها القاصرون انه كيف يمكن استحصال الفيوض و البركات وبرد القلب والانوار من قلب انوار الصلحاء بزيارة قبورهم
এর দ্বারা ঐ সন্দেহেরও নিরসন হয় যা কিছু স্বল্প জ্ঞানসম্পন্ন লোকজন বলে থাকে যে, “নেককারদের কবর যিয়ারত করে তাদের রুহ সমূহ থেকে ফয়েজ, বরকত ও নুর সমূহ লাভ করা কি করে সম্ভব ?” – হাদিয়াতুল মাহদী, পৃষ্ঠা-৩২,৩৩,৩৪
জনাব মাদানী সাহেব, নবাব সিদ্দীক হাসান খান ও আল্লামা ওয়াহিদুজ্জামান
মূল আলোচনাঃ
---------------
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা ওলামায়ে দেওবন্দকে শরীয়ত নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে হেফাযত করেছেন। কবর থেকে ফয়েজ নেওয়ার ক্ষেত্রে ওলামায়ে দেওবন্দের আক্বিদা একদম পরিচ্ছন্ন । আর তা হল নেককারদের কবর কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখে না তবে তার নেক কাজের জন্য আল্লাহ তায়ালা তার উপর রহম করেন। এর আছর তার কবরের উপরও পড়ে। এর বাহ্যিক প্রকাশ সাহাবীদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
যেমন কানজুল উম্মাহ(৮/
মোটকথা ওলামায়ে দেওবন্দের কাছে ফয়েজের উদ্দেশ্য হল কবরের নেককারদের উপর বর্ষিত রহমত যেন তার কাছেও পোঁছে।
নিচের হাদীস ও এ ব্যাপারে ইবনে হাজর আসকালানি রাহঃ এর ব্যাক্ষা দেখলে আপনার কাছেও এটা স্পষ্ট হবে যে মাদানী সাহেব তাকফিরের রোগে আক্রান্ত আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এ রুগীদের ব্যাপারে বড় কঠিন হুশিয়ারী দিয়েছে। এমনকি কাফের হয়ে মৃত্যুবরণের ভয়ও দেখিয়েছেন।
সহীহ বুখারিতে ইমাম বুখারী এক অনুচ্ছেদের শিরোনাম দিয়েছেন بَابُ مَا جَاءَ فِي قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا।
এই অনুচ্ছেদের অধীনে ইমাম বুখারী রাহ. উমর রা.এর ঐ হাদীস উল্লেখ করেছেন, যাতে তিনি ইবনে উমর রা.এর মাধ্যমে আয়েশা রা.এর কাছে রাসুলের কবরের পাশে শায়িত হওয়ার অনুমতি চেয়ে ছিলেন । আয়েশা রা.বলেন, “আমি এই জায়গা আমার (দাফনের) জন্য পছন্দ করে রেখে ছিলাম । কিন্তু আমি তা উমরকে দিয়ে দিলাম।”
সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার হাফেয ইবনে হজর আসকালানী রাহ. এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেন,
وفيه الحرص على مجاورة الصالحين في القبور طمعا في إصابة الرحمة إذا نزلت عليهم وفي دعاء من يزورهم من أهل الخير
‘এই হাদীসের মাঝে এই কথার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কবরে নেককারদের সাথে প্রতিবেশীত্ব(পা
-ফাতহুল বারী ৩/২৫৮
এ ব্যাপারে অনেক এলমি আলোচনা বাকি রয়ে গেল। ভিন্ন কোন পোস্টে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা যাবে ইনশাআল্লাহ। সর্বশেষে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি যে আল্লাহ আমাদের গলদ তাকফিরি মনোভাব থেকে হেফাযত করেন এবং সরীয়তের সীমার মধ্যে থাকার তৌফিক দনে।
- আমিন।
পোস্টটি তৌরি করতে মুফতি হাসান মাহমুদ ভায়ের (ইফতাঃ মারকাযুদ্দাওয়াহ
- Ahnaf Serniabat
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন