শিরক সমাচার (১-২)
পর্ব-১
কয়েকটা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করার ইচ্ছা ছিলো। অনেকের সাথে অঙ্গীকারবদ্ধও ছিলাম। কিছু ব্যস্ততার জন্য তেমন সময় দিতে পারি না। আরও কিছু দিন হয়তো বিচ্ছিন্ন থাকবো।
একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্যের কাছে কিছু চাওয়া। এক্ষেত্রে আমাদের কী বিশ্বাস রাখতে হবে। কতটুকু পর্যন্ত ইসলামের গন্ডির মধ্যে থাকবে। এ বিষয়টা নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন।
আকিদার অস্পষ্টতার কারণে বিষয়টি অনেক সময় ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সঠিক আকিদা না জানার কারণে নিজে যেমন ভুলের মধ্যে থাকে। সেই সাথে অন্যকেও আক্রমণের লক্ষ্য বানায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইমাম ইবনুল জাওযী রহ. তার বিখ্যাত কিতাব আল-ওফা বি-আহওয়ালিল মুস্তফা কিতাবে আবু বকর আল-মিনকারী থেকে একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইমাম ত্ববারানী, ইমাম আবুশ শায়খ ও ইমাম আব বকর মিনকারী মদিনায় অবস্থান করছিলেন। এক সময় তারা মারাত্মক ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। ইমাম আবু বকর মিনকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা ক্ষুধার্ত। আমরা ক্ষুধার্ত। একথা বলে আমি উঠে যাচ্ছিলাম। আবুশ শায়খ আমাকে বললো, বসো। হয়তো রিজিকের ব্যবস্থা হবে না হয় এখানে ইন্তেকাল করবো।
আবু বকর মিনকারী বলেন, আমি ও আবুশ শায়খ সেখানে ঘুমিয়ে পড়লাম। ইমাম ত্ববারানী বসে বসে কিছু দেখছিলেন। ইতোমধ্যে দরজায় আলী রা. বংশের এক আলাভী উপস্থিত হলো। তার সাথে দুজন ছেলে ছিলো। তাদের দু'জনের হাতে অনেক বড় পাত্রে খাবার ছিলো। আমরা উঠে আহার করলাম। আমরা মনে করেছিলাম, খাবার শেষ হলে অবশিষ্ট খাবার সে নিয়ে যাবে। কিন্তু সে পুরো খাবার আমাদেরকে দিয়ে দিলো। খাবার শেষ হলো লোকটি বললো, তোমরা কি রাসূল স. এর কাছে অভিযোগ করেছিলে? আমি রাসূল স. কে স্বপ্নে দেখেছি। তিনি আমাকে তোমাদের জন্য কিছু খাবার আনার আদেশ করেছেন।
ঘটনাটি স্পষ্ট। তবে এর সনদ তাহকিক করার সুযোগ আমার হয়নি। আর এখানে সনদ মূল বিষয় নয়। কেউ এটাতে বিশ্বাস না করলেও কোন কিছু যায় আসে না। কিন্তু ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিতাবে যেহেতু ঘটনাটি এসেছে, মূল ঘটনার মানটি জানা জরুরি হয়ে পড়েছে। এই ঘটনা কি আসলে শিরক?
তিন মুহাদ্দিস রাসূল স. এর কাছে ক্ষুধার অভিযোগ করেছেন। এক কথায় বলতে গেলে, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এটি সুস্পষ্ট বড় শিরক। এধরণের কাজের জন্য তিন জন অথবা যিনি রাসূল স. এর কাছে অভিযোগ করেছেন বা যারা সমর্থন করেছেন, তারা মুশরিক হয়ে গেছেন।
ইবনুল জাওযী রহ. ঘটনাটি উল্লেখ করে শিরক প্রচার করেছেন। তিনি এটি সমর্থন করে থাকলে তিনিও মুশরিক হয়ে গেছেন।
মোট কথা, সাধারণ বিশ্বাস অনুযায়ী তারা বড় শিরক করে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছেন।
এজাতীয় বহু ঘটনা আমার নজরে এসেছে। অনেক বড় বড় মুহাদ্দিসদের থেকেও এসেছে। ঘটনাগুলোতে স্পষ্টভাবে তারা অন্যের কাছে এভাবে সাহায্য চেয়েছেন। মৃতের কাছে অভিযোগ করেছেন। এক্ষেত্রে আমি কী বিশ্বাস করবো?
১. এরা সকলেই মুশরিক? সকলেই তওবা না করে থাকলে মুশরিক হয়ে মারা গেছে?
২. যারা এগুলো লিখেছে, সংরক্ষণ করেছে, বর্ণনা করেছে, সমর্থন করেছে, তারা সকলেই মুশরিক? সকলেই বড় শিরক করে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে?
প্রচলিত শিরকের ধারণা নিয়ে আমার পড়া-শোনার শুরুটা হয়েছে এখান থেকে। বিষয়টা আদৌ শিরক কি না? শিরক এর সাথে এর সম্পর্ক কতটুকু?
বিষয়টি পর্যালোচনা করে আমার কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, প্রচলিত শিরকের ধারণাটাই গলদ। যারা বিষয়টা নিয়ে কথা বলেন, তারা কয়েকটি ভুল করে থাকেন।
১. কিছু ভাসা ভাসা আলোচনাকে মূল মনে করেন।
২. শিরক কেন হয়, শিরক হওয়ার মূলনীতিগুলো আলোচনায় আসে না।
৩. নিজেরা কিছু মূলনীতি বানিয়েছে যেগুলোর তেমন শরয়ী ভিত্তি নেই।
উদাহরণ হিসেবে, এদের একটা মূলনীতি হলো, حي, حاضر.قادر
অর্থাত, জীবিত, উপস্থিত ও সক্ষমের কাছে চাইলে শিরক হবে না। নতুবা শিরক হবে।
তাদের মতে আপনি যদি কোন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চান তাহলে শিরক হবে।
কোন মৃত বা জড় বস্তুর কাছে সাহায্য চান তাহলে শিরক হবে।
কোন অক্ষম বা অসমর্থ ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাইলে শিরক হবে।
দেখতে মূলনীতিটা বেশ ভালো। কিন্তু এই মূলনীতি একেবারেই ভিত্তিহীন।
এগুলোর সাথে শিরকের কোন সম্পর্ক নেই। অথচ এটাকেই শিরক বলা না বলার মূলনীতি বানানো হয়েছে। বিষয়টা দু:খজনক ও হাস্যকর।
মনে করেন, একটা লোক ধানমন্ডি লেকে পড়ে গেছে। সাতার জানে না। এখন সে জীবন বাচানোর জন্য কারও সাহায্য চাচ্ছে। এখন এই ব্যক্তি যদি এমন কারও কাছে সাহায্য চাই, যে নিজে সাতার জানে না, তাহলে সেটা শিরক হয়ে যাবে। কারণ এই ব্যক্তি জীবিত, উপস্থিত কিন্তু সে তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম নয়। শিরকের উপরের মূলনীতি অনুয়ায়ী সাতার না জানার ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাইলে শিরক হয়ে যাবে।
এখন কেউ হয়তো বলতে পারে, সক্ষম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সৃষ্টির কাছে এমন জিনিস চাওয়া যেটা কেবল আল্লাহ তায়ালাই করেন।
স্বাভাবিক কথা হলো, এটাও শিরক হওয়া বা না হওয়ার কোন কারণ নয়। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই করেন এমন অনেক বিষয় আল্লাহ তায়ালা মাখলুককেও ক্ষমতা দিয়ে দিতে পারেন। সুতরাং এটা শিরক হওয়া না হওয়ার মূলনীতি হয় কী করে?
যেমন মৃতকে জীবিত করা এটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই পারেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মু'জেযা হিসেবে হযরত ইসা আ. কে এই ক্ষমতা দিয়েছিলেন। এখন আপনার মূলনীতি অনুযায়ী যতো লোক ইসা আ. কে মৃতকে জীবিত করতে বলেছে, তারা সবাই মুশরিক হয়ে গেছে।
সুতরাং এটাও শিরক হওয়া বা না হওয়ার কোন মূলনীতি হতে পারে না।
জীবিত হওয়া বা না হওয়াকে শিরকের মূলনীতি বানানোটা আরও হাস্যকর। যেমন ধরেন, এখন টেকনোলজির যুগ। আমি যদি আইফোনকে বলি, হেই শ্রি, গুগলে সার্চ করে দাও। তাহলেই আমি মুশরিক হয়ে যাবো। আই ফোন তো একটা জড় পদার্থ। সুতরাং তার কাছে এটা চাইলে শিরক হয়ে যাবে।
আরও সাধারণভাবে চিন্তা করুন। আমি একবার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি যদি একটা কলাগাছকে গিয়ে বলি, আমাকে এক গ্লাস পানি দাও। তাহলে কী শিরক হবে?
তখন সে বললো, এটা তো পাগলামি হবে। শিরক হবে কেন?
কলাগাছকে এক গ্লাছ পানি দিতে বললে, সেটা অর্থহীন হবে। তবে এটা শিরক হবে কি না?
উপরের মূলনীতি অনুযায়ী শিরক হয়ে যাবে। কারণ কলা গাছ সাধারণ অর্থে জীবিত নয়। আর জীবিত নয় এমন কিছুর কাছে চাওয়া শিরক। ব্যস হয়ে গেলো।
বাস্তব কথা হলো, শুধু কলা গাছ নয়, এক টুকরো পাথরের কাছে চাওয়াও শিরক হতে পারে। কিন্তু সেটা উপরের মূলনীতি অনুযায়ী নয়। শিরকের বাস্তবতার আলোকে। যেমন, হিন্দুরা একটা পাথরের মাথায় সিদুর লাগিয়ে সাহায্য চাইলে শিরক হয়ে যায়। এজন্য শিরক হওয়ার মূল কারণটা বোঝা খুব জরুরি।
উপরের মূলনীতি অনুযায়ী, কেউ যদি অনুপস্থিত কারও কাছে কিছু চায়, তাহলে সেটা শিরক হয়ে যায়। যেমন ধরুন, আপনার ভাই সৌদি থাকে। আপনি তার কাছে কিছু চাইলে শিরক হয়ে যাবে।
যে সময়ে বা যারা মূলনীতিটা বানিয়েছেন, হয়তো তাদের জানা ছিলো না যে, ভাইবার স্কাইপের যুগও আসবে। অনুপস্থিত কারও কাছে সাহায্য চাইলেও শিরক হয়ে যাবে না। আর এটা শিরক হওয়া বা না হওয়ার কোন মূলনীতিও হতে পারে না।
আরেকটা সিচুয়েশন চিন্তা করুন। আপনি আপনার দাদুর কাছ থেকে নিয়মিত টাকা পয়সা নেন। কাল দুপুরে আপনি দাদুর রুমে গিয়ে এক শ টাকা চাইলেন। দাদু বিছানায় শুয়ে আছে। দু'তিন বার ডাকার পরও সাড়া দিলেন না। আপনার মনে অজানা সন্দেহটা দেখা দিলো। বাবা মাকে ডাক দিয়ে বুঝলেন যে, আপনার দাদু বেশ আগেই ইন্তেকাল করেছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, আপনি যে আপনার দাদুর ইন্তেকালের পরে তার কাছে একশ টাকা চাইলেন তার কী হবে? এটা কি শিরক হয়ে যাবে? যারা উপরের মূলনীতি দিয়েছেন। তাদের মতে কেউ মারা গেলে তার কিছু চাইলেই শিরক। সাথে সাথে আপনি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন। এখন আপনার কী হবে?
এরা হয়তো বলবে, আপনি তো জানতেন যে, আপনার দাদু মারা গেছে। এজন্য ভুলে শিরক হয়ে গেছে। অসুবিধা নেই।
আচ্ছা ধরে নিলাম, আমি জানলাম দাদু মারা গেছে। এরপর যদি আমি তার কাছে গিয়ে এক শ টাকা চাই তাহলে শিরক হয়ে যাবে?
শিরক কি এতই সস্তা জিনিস..........?
.
.
.
শিরক সমাচার-২
অনেক আগের একটা লেখা দিয়ে শুরু করি। আগে লেখাটির উপর একটু চোখ বুলিয়ে নিন।
১. প্রধানমন্ত্রীর দেহরক্ষী সারাদিন খুব বিনয়ের সাথে হাত বেধে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাড়িয়ে থাকলেও তাকে ইবাদত বলা হয় না। কিন্তু একই ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে দাড়ালে ইবাদত বলা হচ্ছে।
২.হযরত আদম আ.কে ফেরেশতারা সেজদা করলেও সেটা আদম আ. এর ইবাদত হয়নি কিন্তু কোন হিন্দু যদি মূর্তির সামনে সিজদা করে তাহলে সেটা ইবাদত হয়।
৩. রমজানে মুসলমান সকাল থেকে সন্ধা পযর্ন্ত না খেয়ে থাকলে ইবাদত হয়, কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শে না খেয়ে থাকলে ইবাদত হয় না।
৫. কা'বাকে কেন্দ্র করে তওয়াফ করলে ইবাদত হয়, কিন্তু কোন একটা জিনিস খোজার জন্য কা'বাকে তওয়াফ করলে ইবাদত হয় না।
৬. হিন্দু পাথরের সামনে মাথা ঝুকালে পাথর বা মূর্তি পূজক হচ্ছে, কিন্তু মুসলমান পাথরের সামনে দাড়িয়ে নামায পড়লে পাথর পূজারী হয় না।
৭. প্রথম কাতারের মুসল্লী ইমাম সাহেবকে সামনে রেখে সিজদা করছে, দ্বিতীয় কাতারের মুসল্লী প্রথম কাতারের লোকদেরকে সামনে রেখে সিজদা করলেও কেউ মুশরিক হচ্ছে না, কিন্তু একটা মূর্তি বা পাথরের সামনে মাথা ঝুকালেই সে মুশরিক হয়ে যাচ্ছে।
৮. সাফা-মারওয়ার মাঝখানে দৌড়া-দৌড়ি করলে ইবাদত হয়, কিন্তু এর মাঝখানে যদি কাউকে খোজার উদ্দেশ্য দৌড়ানো হয়, তাহলে ইবাদত হয় না।
একই কাজ একই পদ্ধতিতে সংগঠিত হলেও ফলাফল ভিন্ন হচ্ছে। এর মূল কারণ কী?
মূল কারণ হলো, কোন একটা কাজ ইবাদত হওয়ার প্রথম শর্ত হলো অন্তরের নিয়ত। অন্তরের নিয়তের উপর নিভর্র করবে কাজটি ইবাদত না কি অন্য কিছু। রাসূল স. বলেছেন, সমস্ত কাজ নিয়তের উপর নিভর্রশীল।
একই কাজ একই পদ্ধতিতে ঘটছে। কিন্তু ফলাফল নির্ভর করছে নিয়তের উপর। শিরক বোঝার জন্য এই পয়েন্টটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত: শিরক বিষয়টা সম্পূর্ণ অন্তরের বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত। কাজের ক্ষেত্রে চিন্তা করলে তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সব সময় কাজই শিরকের মূল হতে পারছে না। কাজ কখনও কখনও শিরক বুঝতে সাহায্য করে, কিন্তু এটা আদৌ শিরক হওয়া বা না হওয়ার মূল নয়। আমরা একটা লোককে মসজিদে ঢুকতে দেখে তার সম্পর্কে চিন্তা করি, সে ইবাদত করতে যাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার জন্য ইবাদতটা তার নিয়তের উপর নির্ভর করছে। সে যদি জুতা চুরির নিয়তে যায়, তাহলে এখানে কাজ দেখে সিদ্ধান্ত দেয়াটা ভুল হবে।
আপনি যদি একটা মূলনীতি এভাবে বানান যে, যারাই মসজিদে যাবে, তারাই ইবাদত করে, তাহলে এটা সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। একজন লোক হাজারও নিয়তে মসজিদে যেতে পারে। কোনটা কী হবে, সেটা তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। শুধু মাত্র কাজের উপর ভিত্তি করে কখনও কোন মূলনীতি এখানে হতে পারে না।
এবার আসি শিরকের বিষয়ে। শিরক আসলে কী?
সত্ত্বা বা গুণের ক্ষেত্রে কাউকে আল্লাহ তায়ালার সমকক্ষ বিশ্বাস করা।
আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা বা গুণ == অন্য কারও সত্ব্বা বা গুণ।
কারও অন্তরে যখন এই সমতা আসবে তখন এটা শিরক হবে। বিষয়টা আরেকটু বিস্তারিত বলি।
আল্লাহ তায়ালার অনেক গুণবালী ও কাজ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা দেখেন, শোনেন। ক্ষমা করেন, সাহায়্য করেন। আবার একই গুণ ও কাজ সীমাবন্ধ পরিসরে মানুষের মধ্যে আছে। যেমন আমি শুনি। আমি দেখি।
এই কাজগুলো যেহেতু আল্লাহর গুণ বা কাজ, আমি যদি অন্য কারও মাঝে এটা বিশ্বাস করি, তাহলে সেটা কি শিরক হবে?
সহজ কথা হলো, এটা শিরক নয়। একই কাজ আল্লাহ তায়ালা করেন, মানুষও করে। একই গুণ আল্লাহর মাঝেও আছে, মানুষের মাঝেও আছে।
১.আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা আছে। মানুষেরও ক্ষমতা আছে।
২. আল্লাহ তায়ালা দেখেন। মানুষও দেখে।
৩. আল্লাহ তায়ালা শোনেন। মানুষও শোনে।
৪. বিপদে আল্লাহ তায়ালা সাহায্য করেন। মানুষও সাহায্য করে।
এখানে কি আসলে শিরক হচ্ছে? এই বিষয়টা বোঝা খুব জরুরি। আল্লাহর ক্ষমতা তার খাসাইসুর রুবুবিয়্যার একটি। আল্লাহর অনন্য খাস বৈশিষ্ট্য। এটি শুধু আল্লাহরই আছে। অন্য কারও নেই। একইভাবে আল্লাহর দেখা তার অনন্য বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর দেখা বা শোনার সাথে অন্য কারও দেখা বা শোনার তুলনা হতে পারে না।
পার্থক্যগুলো লক্ষ্য করুন,
আল্লাহর ক্ষমতা: এটি আল্লাহর নিজস্ব, স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বাধীন ও অসীম ক্ষমতা।
মানুষের ক্ষমতা: এটি তার নিজস্ব নয়। আল্লাহ প্রদত্ত। স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন নয়। মানুষের ক্ষমতা সসীম।
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, নামের দিক থেকে দু'টি এক হলেও মৌলিক দিক থেকে দু'টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। শাব্দিকভাবে দু'টোকেই ক্ষমতা বলা হলেও মৌলিক দিক থেকে কখনও আল্লহর ক্ষমতা আর মানুষের ক্ষমতা এক নয়।
এখন কেউ যদি মৌলিকভাবেই আল্লাহর ক্ষমতা আর মানুষের ক্ষমতা একই রকম মনে করে, তাহলে সেটা হবে শিরক।
এখানে শাব্দিক সমতা শিরকের মানদন্ড নয়। আল্লাহর ক্ষমতা আছে। এখন মানুষের ক্ষমতা আছে, একথা বললেই শিরক হবে না। বরং মৌলিক দিক থেকে আল্লাহর ক্ষমতা ও মানুষের ক্ষমতা সমান মনে করলে কিংবা আল্লাহর ক্ষমতার সাথে তুলনীয় মনে করলে শিরক হবে।
মূল কথা হলো, খাসাইসুর রুবুবিয়্যা বা আল্লাহর অনন্য গুণ বা কাজ মৌলিক দিক থেকে অন্য কারও মাঝে আছে বা অন্য কারও সাথে তুলনা করলে শিরক হবে।
আলোচনার মূল পয়েন্ট দু'টি:
১. শিরক সম্পূর্ণ অন্তরের বিষয়। কাজ কখনও কখনও অন্তরের বিশ্বাসের বহি:প্রকাশ বা প্রমাণ হতে পারে, তব সব ক্ষেত্রেই এটি প্রয়োজ্য বা মূলনীতি হবে না।
২. সত্ত্বা, গুণ ও কাজের ক্ষেত্রে কাউকে আল্লাহ তায়ালার সমকক্ষ বিশ্বাস করা। এক্ষেত্রে শুধু শাব্দিক মিলের কারণে শিরক হবে না। মৌলিকভাবে আল্লাহর গুণ বা কাজ আর সৃষ্টির গুণ এক মনে করলে বা আল্লাহর গুণের সাথে সৃষ্টির গুণের তুলনা করলে শিরক হয়।
-----------
- শাইখ মুফতি Ijharul Islam Al-kawsary
- শাইখ মুফতি Ijharul Islam Al-kawsary