শিরক সমাচার (৩-৪)

শিরক সমাচার-৩

শুরুতে কয়েকটা পরিভাষার সাথে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন। আমরা আল্লাহ তায়ালাকে রব হিসেবে বিশ্বাস করি। আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা, গুণ ও কাজকে আমরা অনন্য বিশ্বাস করি। অনন্য অর্থ কী? একমাত্র আল্লাহর মাঝেই আছে। অন্য কারও মাঝে নয়। একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। অন্য কারও মাঝে যেটা থাকতে পারে না। যিনি প্রভূ কেবল তার মধ্যেই থাকবে। এধরণের বিষয়কে আমরা খাসাইসুর রুবুবিয়্যা বা রবের অনন্য বৈশিষ্ট্য বলি। 

কয়েকটা উদাহরণ দেয়া যাক। আমরা বিশ্বাস করি, যিনি প্রভূ, তাকে অবশ্যই ক্ষমতা সম্পন্ন হতে হবে। তার ক্ষমতা থাকবে। অক্ষম কেউ প্রভূ হতে পারে না। এখন প্রশ্ন হলো, 
ক্ষমতা কি প্রভূর অনন্য বৈশিষ্ট্য?

স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, সীমিত পর্যায়ে সৃষ্টির মধ্যেও ক্ষমতা আছে। তাহলে ক্ষমতা প্রভূর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো কী করে?

এই বিষয়টা বোঝা খুব জরুরি। ক্ষমতা বা কুদরত অবশ্যই প্রভূর অনন্য বৈশিষ্ট্য। এটা শুধু প্রভূর মাঝেই আছে। অন্য কারও মাঝে নেই। 

প্রভূর ক্ষমতা: স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অসীম। 
সৃষ্টির ক্ষমতা: অন্যের দেয়া, অসম্পূর্ণ ও সসীম। 

এবার চিন্তা করে দেখুন। প্রভূর ক্ষমতা আসলেই অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই ক্ষমতা শুধু আল্লাহরই আছে। আর কারও নেই। 

সহজেই আমরা বলতে পারি, আল্লাহরও ক্ষমতা আছে, মানুষেরও ক্ষমতা আছে। কিন্তু আল্লাহর ক্ষমতা  অনন্য। কোন দিক থেকে মানুষের ক্ষমতার সাথে তুলনীয় হতে পারে না। কোন দিক থেকে যদি আপনি আল্লাহর ক্ষমতার সাথে অন্য কারও ক্ষমতা তুলনা করেন তাহলে আল্লাহর ক্ষমতা আর অনন্য রইলো না।  

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও মাঝে যদি স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অসীম ক্ষমতা বিশ্বাস করেন, তাহলে এটাই হলো শিরক। 

শিরক নয়: সৃষ্টির ক্ষমতা আছে। 
শিরক: সৃষ্টির স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অসীম ক্ষমতা আছে। 

মূল বিষয় হলো, আল্লাহর অনন্য বৈশিষ্ট্য বা কাজ অন্য কারও মাঝে আছে বা অন্য কারও সাথে তুলনীয়, এটা চিন্তা করাই হলো শিরক। শিরক অর্থ অংশীদার করা। আল্লাহর সাথে শিরক করার অর্থ আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করা। কী বিষয়ে অংশীদার করা হচ্ছে?
আল্লাহর অনন্য বৈশিষ্ট্যের মাঝে অংশীদার করা হচ্ছে। একটা গুণ শুধু আল্লাহরই আছে। আপনি যদি সেটা অন্য কারও মাঝে বিশ্বাস করেন, তাহলে এই গুণের ক্ষেত্রে তাকে আল্লাহর অংশীদার করা হলো। শিরক করা বা আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করার অর্থই হলো এটা। 

এবার আসুন ক্ষমতার বিষয়টা আরেকটু পর্যালোচনা করি। আমি যদি কাউকে বলি, একটা ইট বা ছোট পাথর ছুড়ে ফেলো। সে এটা করে দিলো। আমি এতে কোন সমস্যা দেখছি না। 

আবার কাউকে যদি বলি, হিমালয় পর্বতটা সরিয়ে ফেলো। সে কোনভাবে এটা করলো। 
আমাদের কিছু কিছু অবুঝ ভাই বলবেন, এটা শিরক হয়েছে। 

যদি জিজ্ঞেস করি, কেন শিরক হলো? সত্য কথা হলো, এসমস্ত ভাইয়েরা এর কোন উত্তর দিতে পারে না। 

যদি সহজ করে জিজ্ঞেস করি, শিরক করার অর্থ হলো আল্লাহর সাথে অংশীদার করা। এখন হিমালয় পর্বত সরিয়ে আল্লাহর সাথে কীসে অংশিদার করলো সে? 

হিমালয় পর্বত সরানো কি আল্লাহর অনন্য বৈশিষ্ট্য? এটা যদি আল্লাহর অনন্য বৈশিষ্ট্য না হয়, তাহলে এখানে শিরক হবে কেন?

এই অবুঝ ভাইয়েরা আমতা আমতা করে বলেন, ছোট পাথর সরানোর ক্ষমতা তো মানুষের আছে। হিমালয় সরানোর ক্ষমতা তো মানুষের নেই। এজন্য এটা শিরক। 

বিশ্বাস করুন, এটাই এদের বুঝের দৌড়। যদি জিজ্ঞেস করি, ছোট পাথর সরানোর ক্ষমতা মানুষের আছে মানে কি? এটা তার নিজস্ব, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন ক্ষমতা?

উত্তর হলো, না। 
হিমালয় পর্বত যদি কেউ সরায় তাহলে, এটাও কি তার নিজস্ব, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন ক্ষমতা?

উত্তর, না। 

এখন ছোট পাথর সরানোর ক্ষেত্রে আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে, তার নিজস্ব, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন ক্ষমতা আছে, তাহলে এটাও শিরক। যদিও ছোট্র একটা পাথর সরানো খুব স্বাভাবিক বিষয়। 

আবার যদি কারও ক্ষেত্রে এটা বিশ্বাস করেন যে, সে পুরো আমেরিকা মহাদেশ মুহূর্তেই এশিয়া মহাদেশে এনে ফেলতে পারে। কিন্তু এটা তার নিজস্ব, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন ক্ষমতা নয়। বরং আল্লাহর দেয়া। তাহলে এটা শিরক হবে না। 

এবার বাস্তব উদাহরণে আসি। হযরত জিবরাইল আ. কওমে লুতের পুরো এলাকা আকাশে উঠিয়ে নিয়ে উল্টে দিয়েছিলেন। আমাদের এসব ভাইদের চিন্তা অনুযায়ী তো এটা শিরক হওয়ার কথা। কারণ জিবরাইল আ. তো আল্লাহর একটা সৃষ্টি। জিবরাইল আ. এর মাঝে এই ক্ষমতা বিশ্বাস করলে শিরক হবে না, কিন্তু অন্য আরেকটা সৃষ্টির মাঝে বিশ্বাস করলে শিরক হবে কেন? আর এটার সাথে শিরকের কী সম্পর্ক? জমিনের একটা ভুখন্ড আসমানে নিয়ে উল্টিয়ে দেয়া কি আল্লাহর কোন অনন্য বৈশিষ্ট্য? 

তাহলে এক্ষেত্রে আপনার মাথায় শিরকের চিন্তা কেন আসবে?

উদাহরণ হিসেবে এদের কাউকে যদি জিজ্ঞেস করি, আব্দুল কাদের জিলানী রহ. মূহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারতেন। এটা উদাহরণ হিসেবে ধরে নিন। আমি জানি না, এটা তার কারামত ছিলো কি না। 

আমাদের এসব ভাইয়ের সামনে এটা বললেই বলবে, এটা তো শিরক। যদি জিজ্ঞেস করি, কেন শিরক? তখন আর উত্তর দিতে পারে না। 

মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়া কি আল্লাহর কোন অনন্য বৈশিষ্ট্য যা অন্য কারও মাঝে থাকবে না? আর আব্দুল কাদের জিলানী রহ. এর মধ্যে সেটা বিশ্বাসের কারণে আমি শিরক করে ফেলেছি? বিষয়টা কি আসলে এমন?

এটাকে শিরক কেন বললেন? পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে মুহূর্তে আরেক প্রান্তে যাওয়াটাই যদি শিরক হয়, তাহলে এই ক্ষমতা তো ফেরেশতাদের আছে। জিনদের আছে। তো? ফেরেশতা আর জিনরা তাহলে শিরক করছে?

নিজেদের ভুল বুঝের কারণে শিরকের বিষয়টাকে এসমস্ত ভাইয়েরা সস্তা বানিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তারা সারা জীবন তাউহীদ শিরকের নসীহত করলেও তারা গভীরভাবে তাওহিদ ও শিরক বোঝে না। এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা। আর এই সিরিজে আপনারাও ইনশা আল্লাহ কিছুটা উপলব্ধি করবেন...

শিরক সমাচার-৪


আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা,গুণ ও কাজ অতুলনীয় ও অনন্য। এখানে তুলনা, সাদৃশ্য ও সমকক্ষ বলতে কিছু নেই। 

আল্লাহর এই অনন্য সত্ত্বা, গুণ বা কাজের কোন কিছু যখন অন্যের জন্য সাব্যস্ত করা হবে বা তার সাথে সাদৃশ্য দেয়া হবে, তখন সেটি শিরক হবে। খাসাইসুস রুবুবিয়্যা বা একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অন্যের জন্য সাব্যস্ত করাটা হলো শিরক। 

যখন কোন একটা বিষয়কে আমরা শিরক বলবো, তখন এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করা খুব জরুরি,
১. কী বিষয়ে আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করা হয়েছে? আল্লাহর কোন গুণ বা কাজের মধ্যে অংশীদার করা হয়েছে? 

২. যে বিষয়কে শিরক বলা হচ্ছে, সেই গুণ বা কাজ কি শুধু আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট?

কেউ যদি আপনাকে বলে, ভাই, এটা শিরক। 
আপনি সাথে সাথে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আল্লাহর কোন গুণ বা কাজের সাথে অন্যকে অংশীদার করা হয়েছে বলুন। আর সেই গুণ বা কাজটিকে আল্লাহর জন্য খাস বা নির্দিষ্ট কি না?

যেই শিরকের আলোচনা কররুক, তার কাছ থেকে এই দুই প্রশ্নের উত্তর নেয়া ছাড়া শিরকের আলোচনায় অগ্রসর হবেন না। কারও মুখে শিরক বলার দ্বারা কোন বিষয় শিরক হয়ে যাবে না। এজন্য সব সময় সঠিক বুঝকে গুরুত্ব দিতে হবে। যে এটাকে শিরক বলছে, সে আসলেই সঠিক বুঝেছে কি না, সেটা যাচাই করতে হবে। 

যেসব বিষয়কে নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করা হয় এরকম একটা উদাহরণ দেই। 

আপনি আপনার কাছে উপস্থিত কাউকে একটা চেয়ার এনে দিতে বললেন। সে আপনাকে চেয়ারটা এনে দিলো। ঘটনাটি খুব স্বাভাবিক। এখানে অন্য কোন চিন্তা করবে কি না। 

কিন্তু আপনি ঢাকায় আছেন। খুলনায় আপনার বাড়ীতে আপনার পছন্দের একটা চেয়ার আছে। আপনি কাউকে বললেন যে, তুমি এখনই আমাকে চেয়ারটা এনে দাও। 

ধরে নিন, সে সাথে সাথে চেয়ারটা আপনার সামনে এনে দিলো। ঘটনাটি অস্বাভাবিক।

প্রথম ঘটনায় কেউ আপত্তি করবে কি না। কিন্তু দ্বিতীয় ঘটনায় কিছু ভাই আপত্তি করবেন। তারা বলবেন, দ্বিতীয় ঘটনা শিরক। 

যখনই এধরণের লোকেরা দ্বিতীয় ঘটনাকে শিরক বলবে, আপনি তাদেরকে উপরের প্রশ্ন দু'টি করুন।

১. খুলনা থেকে ঢাকায় মুহূর্তের মধ্যে চেয়ার আনাটা শিরক হবে কেন? এটাকে শিরক বলার অর্থ হলো আল্লাহর সাথে অংশীদার করা। এখন এই কাজটা করে আল্লাহর কোন বিষয়ের সাথে অংশীদার করা হয়েছে?

২. মুহূর্তের মধ্যে শত মাইল বা হাজার মাইল দূর থেকে কোন কিছু উপস্থিত করে দেয়া, এটা আল্লাহর অনন্য বৈশিষ্ট্য বা গুণ? এটা কি শুধু আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট্য? এটা কি খাসাইসুস রুবুবিয়া? আল্লাহর জন্য খাস কোন বিষয়?

সত্য কথা হলো, যেসব ভাই শিরক বলেন, তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। 

এবার আসুন আমরা ঘটনা দু'টো বিশ্লেষণ করি।  

১ম ঘটনা: আপনার সামনে উপস্থিত কাউকে কাছের একটি চেয়ার এগিয়ে দিতে বলা

কোন কিছু এনে দেয়া বা উপস্থিত করা একটি ক্ষমতা। আপনার সামনে উপস্থিত কাউকে যখন বললেন, চেয়ারটা এনে দাও। আপনি তার ব্যাপারে চিন্তা করেছেন, চেয়ারটা উপস্থিত করার ক্ষমতা তার আছে। এখন এই ব্যক্তির চেয়ার উপস্থিত করার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনার দু'টি বিশ্বাস থাকতে পারে।

শিরক: চেয়ার উপস্থিত করার এই ক্ষমতা তার নিজস্ব। এ ব্যাপারে সে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন।  

শিরক নয়: লোকটির চেয়ার এগিয়ে দেয়ার ক্ষমতা আছে। তবে এই ক্ষমতা তার নিজস্ব নয়। এটি আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা। এ ব্যাপারে সে স্বয়ংসম্পূর্ণও নয়। সে স্বাধীনও নয়। আল্লাহর হুকুম ও মর্জির উপর তার ক্ষমতা নির্ভরশীল।

আপনার কাছে উপস্থিত একটা লোকের জন্য সামনের চেয়ারটি এগিয়ে দেয়া খুব স্বাভাবিক হলেও আপনি যদি তার এই ক্ষমতাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন মনে করেন, তাহলে এটি শিরক হবে। 

২ য় ঘটনা: মুহূর্তে খুলনা থেকে ঢাকায় চেয়ার এনে দেয়া

শিরক: লোকটির নিজস্ব, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন ক্ষমতা রয়েছে। যার মাধ্যমে সে খুলনা থেকে চেয়ারটি এনেছে। 

শিরক নয়: লোকটির ক্ষমতা নিজস্ব নয়। সে এ ব্যাপারে স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণও নয়। তার এই ক্ষমতা আল্লাহর দেয়া। এটি আল্লাহর হুকুম ও ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। 

কোন ঘটনা স্বাভাবিক হলেও সেখানে শিরক হতে পারে। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাতেও মানুষ শিরক করতে পারে। যেমন ধরেন ওষূধ খেলে ভালো হয়ে যান, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আপনার জীবনে নিত্যদিন ঘটছে। ওষুধ খেয়ে সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে যদি আপনার বিশ্বাস থাকে, ওষুধ তার নিজস্ব, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন ক্ষমতায় আমাকে সুস্থ্য করেছে। তাহলে এটি নিশ্চিত শিরক। যদিও এটি স্বাভাবিক ঘটনা। 

আবার খুবই অস্বাভাবিক ঘটনার ক্ষেত্রে যদি আপনার বিশ্বাস থাকে যে এটি আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা ও তার ইচ্ছায় হয়েছে, তাহলে এটি শিরক হবে না। যেমন ধরুন মুমুর্ষু ক্যান্সারের রোগীকে কোন হুজুর শরয়ী ঝাড়ফুক করাতে সে সুস্থ্য হয়ে গেলো। এটা একটা অস্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এখানে যদি আপনি বিশ্বাস রাখেন, উক্ত হুজুরের নিজস্ব ক্ষমতা নেয়। আল্লাহর মর্জি ও ক্ষমতায় হয়েছে, তাহলে এটি অস্বাভাবিক হলেও শিরক হবে না।

চেয়ার উপস্থিত করার ঘটনায় ফিরে আসি। হযরত সুলাইমান আ. এর এক উম্মত মুহূর্তে হাজার মাইল দূরের সিংহাসন চোখের পলকে উপস্থিত করেছিলেন। ঘটনাটি পবিত্র কুরআনেই আছে। 

এটি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এটা কি শিরক? অবুঝ ভাইদের মূলনীতি অনুযায়ী শিরক হওয়া উচিত। কিন্তু এটি শিরক নয়। সুলাইমান আ. যখন বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কে আছো যে সিংহাসনটি উপস্থিত করবে, তখন তার অন্তরে আদৌ এটা ছিলো না যে, উপস্থিত জিন ও মানুষের নিজস্ব, স্পয়ংসম্পূর্ণ এই ক্ষমতা আছে।

তার উম্মত যখন সিংহাসনটি চোখের পলকে উপস্থিত করে দিলো, তখন তিনি এই চিন্তা করেননি যে, এটা তার নিজস্ব ক্ষমতা। হযরত সুলাইমান আ. বলেছেন,
هذا من فضل ربي 
এটা আমার প্রভূর অনুগ্রহ। সূরা নামল।

ঘটনা স্বাভাবিক হোক আর অস্বাভাবিক, আমরা সবগুলোকেই আল্লাহর অনুগ্রহ মনে করি। আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা ও ইচ্ছায় ঘটেছে সেটি বিশ্বাস করি। স্বাভাবিক ঘটনা নিজের ক্ষমতায় আর অস্বাভাবিক ঘটনা আল্লাহর ক্ষমতায় হয়েছে, এটি আমরা বিশ্বাস করি না। বরং এটিকে আমরা শিরক মনে করি। আমাদের আকিদা হলো,

সঠিক আকিদা: স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক উভয়টিই আল্লাহর দেয়া ক্ষমতায় হয়। 

শিরকী আকিদা-১: স্বাভাবিক ঘটনা বা কাজ নিজের ক্ষমতায় হয়, অস্বাভাবিক ঘটনা আল্লাহর দেয়া ক্ষমতায় হয়। 
শিরকী আকিদা -২. অস্বাভাবিক ঘটনা বা কাজ নিজের ক্ষমতায় হয়। 

আপনি যদি বিশ্বাস করেন, কেউ তার নিজস্ব, স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষমতায় এক গ্লাস পানি দিতে পারে, তাহলেও এটি শিরক হবে। কিন্তু আপনি যদি বিশ্বাস করেন, আল্লাহর দেয়া ক্ষমতায় কেউ মুহূর্তে আটলান্টিক মহা সাগর পানি শূন্য করে দিতে পারে, তাহলে সেটা আদৌ শিরক হবে না।

-------
- শাইখ মুফতি Ijharul Islam Al-kawsary

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf