সাদাকাতুল ফিতর বিষয়ক শরঈ বিধিবিধান

ফিতরার হুকুম (বিধান):
-------------------
ফিতরা দেয়ার সামর্থ্য রাখে এরকম প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের ও পরিবারের ঐ সমস্ত সদস্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ফরয যাদের লালন-পালনের দায়িত্ব শরীয়ত কর্তৃক তার উপরে অর্পিত হয়েছে।মুসলিম দাস ও স্বাধীন, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড়র প্রতি সকলের উপর এটি ওয়াজিব হয়, এবংঈদের ছলাতের আগেই এই ফিতরা প্রদান করা উচিত।
-
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: যাকাত হাদীস নং ১৫০৩;সহীহ মুসলিম নং ২২৭৫;বাদায়েউস সানায়ে: ২/৭০ ] 
-
সদকাতুল ফিতর কখন ওয়াজিব হবে?
সদকাতুল ফিতরের নেসাব যাকাতের নেসাবের সমপরিমাণ, অর্থাৎ ঋণ বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বয়ান্ন ভরি রূপা বা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ বা ব্যবহারের অতিরিক্ত জিনিষ-পত্র অথবা খোরপোশের প্রয়োজনাতিরিক্ত জমি ঈদুল ফিতরের দিন তার নিকট থাকলে তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।মৌলিক নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রত্যেকে নেসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক হওয়া সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত।  তবে এতে যাকাতের ন্যায় বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়।
-
( মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১০/৪৯৪, ফাতহুল কাদির: ২/২৮১, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১৯১, আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৪৩,মাবসুতে সারাখসি: ২/১৮৫)
-
কাদের ফিতরা দেওয়া যাবে?
-
যাদের যাকাত দেওয়া যায় তাদেরকে ফিতরাও দেওয়া যায়। যাদেরকে যাকাত দেওয়া যায় না তাদেরকে ফিতরাও দেওয়া যায় না। নিজের ঊর্ধ্বতন যথা বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও তাদের বরাবর উপরে এবং অধঃস্তন যথা ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি ও তাদের বরাবর নীচে কাউকে ফিতরা দেওয়া যাবে না। স্বামী-স্ত্রী একে-অপরকে দিতে পারবে না। তবে ভাই-বোন, চাচা, মামা, ফুফু, খালা ও তাদের সন্তানদেরকে ফিতরা দিতে পারবে।
যার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়- এমন ব্যক্তি ধনী অথবা পিতা-মাতা, ছেলেকে সদকায়ে ফিতরের নামে টাকা দিলে তা শরিয়তের দৃষ্টিতে হাদিয়া বা নফল দান হিসেবে গণ্য হবে, ফিতরা হিসেবে নয়। সুতরাং তাদের জন্য নেওয়া বৈধ হবে।
-
(বাদায়েউস সানায়ে: ২/৪৯, ফাতহুল কাদির: ২/২০৮;ফাতহুল কাদির: ২/২০৯, রদ্দুল মুহতার: ২/৩৪২;কিফায়াতুল মুফতি: ৪/৩২২)
-
ফিতরা সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক কিছু মাসায়েলঃ 
১।
[মাসয়ালা]: সদকায়ে ফিতর ও জাকাত দ্বারা কারো হক আদায় করা যায় না। বেতন যেহেতু চাকুরিজীবির প্রাপ্য তাই ফিতরা দ্বারা বেতন আদায়ের দায়িত্ব থেকে উদ্ধার পাওয়ার ব্যবস্থা করা বৈধ হয় না। কোনো চাকুরিজীবি ও কর্মচারী জাকাত-ফিতরা খাওয়ার উপযোগী হলে তাকে ফিতরার টাকা দেওয়া যাবে, কিন্তু এ টাকা বেতন হিসেবে ধরা যাবে না। পক্ষান্তরে জাকাত খেতে পারে- এমন না হলে ফিতরার টাকা দেওয়া-নেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েয হবে না।
-
(আদ্দুররুল মুখতার: ২/৩৬৮)
.
২।
[মাসয়ালা]: ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিতরা আদায় করে দেওয়া উত্তম, তবে পরে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
-
(সহীহ বুখারী, অধ্যায়: যাকাত হাদীস নং ১৫০৩;  মুসলিম শরিফ, হাদিস: ১৬৩৬,২২৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৬০৯)
.
৩।
[মাসয়ালা]ঃঈদের দিনের পূর্বে সদকা ফিতির দেওয়াও বৈধ। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় সাহাবীগণ ঈদের দিনের আগেই সদকা ফিতির আদায় করে দিতেন।যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের আগেই সদকা-ফিতির আদায় করবে, তার ফিতরা মকবুল হিসাবে গন্য হবে। আর যে ঈদের নামাযের পরে আদায় করবে, তার ফিতরা সাধারণ সদকা গণ্য হবে।
-
(মিনহাতুল খালেক আলা বাহররি রায়েক- ২/২৫১;জামউল ফাওয়ায়েদ- ১/১৪৫;হেদায়া : ১/১৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯২ )
.
৪।
[মাসয়ালা]:  কোনো শিশু সন্তান ঈদের দিন সুবহে সাদেরকের আগে জন্মগ্রহণ করলে, তার পক্ষ থেকে সদকা ফিতির আদায় করা ওয়াজিব। আর সুবহে সাদেকের পরে জন্ম নিলে তার ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য নয়।
-
(ফাতওয়া আলমগিরী- ১/১৯২;কিফায়তুল মুফতী- ৪/২৯৪ ; বাদায়েউস সানায়ে : ২/২০৬)
.
৫।
[মাসয়ালা]: একজন মানুষের ফিতরা একজন অথবা একাধিক ফকীরকে দিতে পারবে।
-
(হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা মারাকী- ৫৯৬)।
.
৬।
[মাসয়ালা]:  যদি পাগল ছেলের নিজস্ব সম্পদ থাকে এবং সে বাবার তত্ত্বাবধানেই থাকে, তাহলে তার পক্ষ থেকে বাবাকেই সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। এ জন্য পাগলের সম্পত্তি ব্যয় করা যাবে না।
-
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/১৯২)
.
৭।
[মাসয়ালা]: বাবা ছেলের ওপর নির্ভরশীল হলে এবং ছেলের পরিবারে থাকলেও ছেলের ওপর বাবার সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। বরং এ ক্ষেত্রে বাবার মালিকানায় নিসাব পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে বাবার ওপরই সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে, অন্যথায় নয়।
-
(রদ্দুল মুহতার : ২/৩৬৩)
.
৮।
[মাসয়ালা]: বাবা-মা, স্ত্রী ও বালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকে সদকা ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। তারা নিজেরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাদের ওপর সদকা ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু তাদের  পক্ষ থেকে যদি
সন্তান,স্বামী বা পিতা  সদকায়ে ফিতর আদায় করে দেয় তা আদায় হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে তাদের অনুমতি জরুরি নয়। তবে তা আদায়ের আগে তাদেরকে বলে নেয়া ভালো।
-
(ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১/২২৮;মারাকিল ফালাহ : ৩৯৫ )
.
৯।
[মাসয়ালা]: বালেগ ছেলেমেয়ে সম্পদের মালিক হোক বা না হোক কোনো অবস্থায়ই তাদের পক্ষ থেকে বাবা বা মাকে সদকা ফিতর আদায় করতে হবে না। আর প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে নিজেরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে তাদের ওপরও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়। অবশ্য তারা যদি নিসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয় তাহলে তারা নিজ সম্পদ থেকে তা আদায় করবে। তবে এমন ছেলেমেয়ের পক্ষ থেকে তার অভিভাবক তাদের অনুমতি সাপেক্ষে সদকা ফিতর দিয়ে দেয়, তবে তা আদায় হয়ে যাবে।
-
(বাদায়েউস সানায়ে : ২/২০২-২০৩)
.
১০।
[মাসয়ালা]:  নাবালেগ সন্তানদের সম্পদ থাকলে বাবা তাদের সম্পদ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন।
-
(মারাকিল ফালাহ : ৩৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯২)
.
১১।
[মাসয়ালা]: নিতান্ত গরিব ভাইবোনদের সদকাতুল ফিতর দেয়া জায়েজ।
-
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯০)
.
.
------------
লিখেছেনঃ মুহতারাম মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন
সোর্সঃ https://m.facebook.com/groups/332592813803173?view=permalink&id=394887054240415

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

হাদিসে কিরতাস বা কাগজের ঘটনা প্রসঙ্গে শিয়া কাফেরদের অপবাদের জবাব