আহলে হাদীস ও হানাফীদের মাঝে একটি মৌলিক পার্থক্য

প্রশ্ন: কুরআন-হাদীসের উপর আমলের ক্ষেত্রে আহলে হাদীস ও হানাফীদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী?

উত্তর: আহলে হাদিসরাও গবেষণা করে মাসআলা বের করে। হানাফীরাও গবেষণা করে মাসআলা বের করে।

কোন মাসআলা যদি ইমাম আবু হানিফা রহ. কুরআন ও হাদীস থেকে বের করেন, তাহলে হানাফীরা বলে, এটা আবু হানীফা রহ. এর মাজহাব। ইমাম আবু ইউসুফ বের করলে বলে, এটা ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর মাজহাব। সুফিয়ান সাউরী রহ. বের করলে তারা বলে, এটা সুফিয়ান সাউরীর মত।

কিন্তু আহলে হাদিসরা নিজেদের সমস্ত গবেষণাকে কুরআন-হাদীস বলে চালিয়ে দেয়।

গবেষণা করে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ। আর নিজের গবেষণাকে সরাসরি কুরআন-হাদীস বলে চালিয়ে দেয়। মাসআলা বের করে মুজাফফর বিন মুহসিন। এরপর নিজের গবেষণাকে ওহীর মর্যাদা দিয়ে বলে, এটাই কুরআন-হাদীসের মত।

হাদীসের সহীহ-জয়ীফ নির্ধারণ করেন আলবানী সাহেব, অথচ নিজের সহীহ-জয়ীফকে সরাসরি ওহীর মর্যাদা দেয়।

উভয় দলই কুরআন হাদীস ব্যাখ্যা করে। হানাফীরা ব্যাখ্যার সাথে ব্যাখ্যাকারীর নাম বলে দেয়। কিন্তু আহলে হাদিসরা ব্যাখ্যাকারীর নাম বলা তো দূরে থাক, ব্যাখ্যাটাকেই সরাসরি কুরআন-হাদীস বানিয়ে দেয়।

আপনি যদি মুজাফফর বিন মুহসিনের কোন গবেষণা না মানেন, তাহলে সে আপনাকে বলবে, আপনি কুরআন-হাদীস মানছেন না। আপনি যদি আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের ব্যাখ্যা না মানেন, তাহলে সে আপনাকে অপবাদ দিবে, তুমি কুরআন-হাদীস মানছো না।

অথচ এসব শায়খদের গবেষণা ও ব্যাখ্যা কীভাবে কুরআন-হাদীস হল সেটাই আশ্চর্য। গবেষণা এদের। বিরোধিতা করা হচ্ছে, এদের এসব গবেষণার। অথচ অপবাদ দেয়া হচ্ছে, কুরআন-হাদীস মানে না।

এদের এই আচরণ থেকে প্রতীয়মান হয়, এরা হয়তবা নিজেদের গবেষণাকে কুরআন-হাদীস মনে করে। নতুবা এত দু:সাহসের সাথে নিজের গবেষণাকে কুরআন-হাদীস বলে চালিয়ে দেয় কীভাবে?

আলবানী সাহেব তার সিফাতুস সালাহ বইয়ে নিজের বিভিন্ন তাহকীক উল্লেখ করেছেন। যেমন, বুকে হাত বাধা। রুকু থেকে উঠে পুনরায় হাত বাধা ভ্রষ্টতাপূর্ণ বিদয়াত। এছাড়াও অসংখ্য মাসআলা ও হাদীসের উপসংহার এসেছে আলবানী সাহেবের নিজের গবেষণা থেকে।

এগুলোর সাথে অনেক আহলে হাদিসও দ্বিমত রাখে। অথচ অবাক করার বিষয় হলো, আলবানী সাহেব তার বইয়ের ভূমিকায় লিখে দিয়েছেন, আমার এ বইয়ে সহীহ হাদিসসমূহ সংকলন করা হয়েছে, সুতরাং এগুলো কেউ পরিত্যাগ করতে পারবে না। এগুলো পরিত্যাগের ব্যাপারে কোন ওজর-আপত্তিও গ্রহণযোগ‍্য হবে না।
এখানে তিনি যে কাজটি করেছেন,

১. নিজের গবেষণাকে হুবহু কুরআন-হাদীসের মর্যাদা দিয়েছেন।
২. কুরআন-হাদীস পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে কারও যেমন ওজর-আপত্তি গ্রহণীয় নয়, ঠিক তেমনি আলবানী সাহেবের গবেষণা গ্রহণের ক্ষেত্রে কারও ওজর-আপত্তি গ্রহণীয় হবে না।

আপনি যদি আলবানী সাহেবের কোন গবেষণা না মানেন, তাহলে তার বক্তব্য অনুযায়ী আপনার কোন ওজর আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। আলবানী সাহেবের তাহকিকে যেটা সহীহ, আপনাকে সেটা মেনে নিতেই হবে। নতুবা আপনি কেমন যেন কুরআন-হাদিসই মানলেন না।

সুতরাং আহলে হাদীস ও হানাফীদের মধ্যে মৌলিক একটি পার্থক্য হলো, আহলে হাদিসরা নিজেদের গবেষণাকে কুরআন-হাদীস বলে চালিয়ে দেয়। কিন্তু হানাফীগণ নিজেদের গবেষণাকে গবেষণাকারীর দিকেই সম্পৃক্ত করে।

শায়খ ইজহারুল ইসলাম

মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf