নামাজরত মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার মাসায়েল
প্রশ্নঃ
১. আমরা যখন একাকী নামায পড়ি তখন আমাদের সামনে ছুতরা
দেওয়ার গুরুত্ব কতুটুকু?নামাজরত মুসল্লির সামনে দিয়ে
অতিক্রম করার বিধান কি ?
২. ছুতরা কী? এর পরিমাপ কতটুকু?৪. আর ছুতরা যদি না থাকে তাহলে অন্যান্য মুসুল্লিরা কতটুকু দুরুত্ব দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে?
৫. যে ব্যক্তি নামাযীর ঠিক সামনেই বসা থাকে তখন তার উঠে যাওয়ার বৈধতা আছে কি এবং থাকলে তাকে কিরুপে উঠে যেতে হবে?
৬. নামাযের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে নামাযরত ব্যক্তি কি বাঁধা দিবে? দিলে তা কিরুপে?
উত্তরঃ
---
১। আমরা যখন একাকী নামায পড়ি তখন আমাদের সামনে ছুতরা দেওয়ার গুরুত্ব কতুটুকু?নামাজরত মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিধান কি ?
১। আমরা যখন একাকী নামায পড়ি তখন আমাদের সামনে ছুতরা দেওয়ার গুরুত্ব কতুটুকু?নামাজরত মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিধান কি ?
---
ছলাত রত ব্যাক্তির সামনে সুতরা দেওয়া
সুন্নত, যদি সুতরা না থাকে কিংবা না দেয় তাহলে শরীয়ত সিদ্ধ কোন ওজর ব্যাতিত তার সামনে দিয়ে
অতিক্রম করা জায়েয নেই।
রাসূলুল্লাহ
(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) ইরশাদ করেছেন-
« لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَىِ الْمُصَلِّى مَاذَا
عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ
يَدَيْهِ ». قَالَ أَبُو النَّضْرِ لاَ أَدْرِى قَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ
شَهْرًا أَوْ سَنَةً
''নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কীরূপ শাস্তি-ভোগের আশংকা রয়েছে, তবে চল্লিশ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাও ভালো মনে করতো।"
বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবুন নাযর বলেন-আমার জানা নেই, হাদীসে চল্লিশের কী অর্থ, চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ বছর?
[সহীহ বুখারী-৫১০; সহীহ মুসলিম-৫০৭, মুয়াত্তা মালিক-৫২৬; সুনানে আবি দাউদ-৭০১, সুনানে তিরমিজী-৩৩৬, সুনানে দারেমী-১৪১৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা- ৩২৬৪, সুনানে নাসায়ী কুবরা-৮৩২, সহীহ ইবনে হিব্বান-২৩৬৬, সহীহ বুখারী-৪৮৮, সহীহ মুসলিম-১১৬০, মুসনাদে আবী আওয়ানা-১৩৯১, মুসনাদে আহমাদ-১৭৫৪০, মুসনাদুল বাজ্জার-৩৭৮২, মুসনাদুর রাবী-২৪২]
আরেকটি হাদিসে আছে-
আরেকটি হাদিসে আছে-
لو يعلم
أحدكم ما له في أن يمر بين يدي أخيه معترضا في الصلاة . كان لأن يقيم مائة عام خير
له من الخطوة التي خطاها
যে ব্যক্তি কোন
নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করে সে যদি জানতো [এর শাস্তি কতটা ভয়াবহ], তাহলে তার কাছে একশত বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে হতো নামাযীর সামনে দিয়ে এ পদক্ষেপের তুলনায়।
[সুনানে ইবনে মাজাহ-৯৪৬, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল-১৯২৫২]
[সুনানে ইবনে মাজাহ-৯৪৬, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল-১৯২৫২]
---
২। সুতরা কি? আর সুতরার পরিমাপ কতটুকু হলে নামাজীর নামাজরত অবস্থায় সামনে দিয়ে অতিক্রম
করতে পারবে?
----
إِذَا
جَعَلْتَ بَيْنَ يَدَيْكَ مِثْلَ مُؤَخَّرَةِ الرَّحْلِ فَلاَ يَضُرُّكَ مَنْ
مَرَّ بَيْنَ يَدَيْكَ
অনুবাদ-রাসূল সাঃ
ইরশাদ করেছেন-যদি নামাযীর সামনে হাওদার পিছনের লাঠির সমান কিছু রাখে, তাহলে তার সামনে দিয়ে যারা অতিক্রম হয়, তাদের কোন সমস্যা নেই।
[সুনানে আবু দাউদ-৬৮৫, সুনানে ইবনে মাজাহ-৯৪০, সুনানে বায়হাকী-৯৫৪, সুনানে তিরমিযী-৩৩৫, সুনানে নাসায়ী কুবরা-৮২১, সহীহ ইবনে হিব্বান-২৩৭৯, সহীহ ইবনে খুজাইমা-৮৪৩, সহীহ মুসলিম-১১৩৯, মুসনাদে আবী আওয়ানা-১৩৯৭, মুসনাদে আবী
ইয়ালা-৬৩০, মুসনাদে আহমাদ-১৩৮৮, মুসদানুল বাজ্জার-৯৩৯]
*
এ হাদীসে ব্যাখ্যায় আল্লামা নববী রহঃ বলেন যে, সুতরা কমপক্ষে হাওদার পিছনের লাঠির সমান হতে হবে। যা হাতের কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত বা এক হাতের এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ হয়ে থাকে। এ উচ্চতায় কোন জিনিস দাঁড় করিয়ে দিলে তা সুতরার কাজ করবে।
এ হাদীস থেকে একথাও বুঝা যায় যে, সুতরা দিয়ে নামায পড়াই উত্তম যদি সামনে দিয়ে কারো অতিক্রম করার সম্ভাবনা থাকে।
*
এ হাদীসে ব্যাখ্যায় আল্লামা নববী রহঃ বলেন যে, সুতরা কমপক্ষে হাওদার পিছনের লাঠির সমান হতে হবে। যা হাতের কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত বা এক হাতের এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ হয়ে থাকে। এ উচ্চতায় কোন জিনিস দাঁড় করিয়ে দিলে তা সুতরার কাজ করবে।
এ হাদীস থেকে একথাও বুঝা যায় যে, সুতরা দিয়ে নামায পড়াই উত্তম যদি সামনে দিয়ে কারো অতিক্রম করার সম্ভাবনা থাকে।
--
৩। ছুতরা কতটুকু দুরুত্বে দিতে হবে?
৩। ছুতরা কতটুকু দুরুত্বে দিতে হবে?
--
সুতরা নামাযী
ব্যক্তির সিজদার স্থান থেকে অল্প একটু সামনে রাখলেই যথেষ্ট।
--
৪। আর ছুতরা যদি না থাকে তাহলে অন্যান্য মুসুল্লিরা কতটুকু দুরুত্ব দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে?---
৪। আর ছুতরা যদি না থাকে তাহলে অন্যান্য মুসুল্লিরা কতটুকু দুরুত্ব দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে?---
--
মসজিদে মুসল্লির
সামনে উপবিষ্ট ব্যক্তির বিশেষ জরুরত ছাড়া চলে না আসাই বাঞ্ছনীয়। বিশেষত লোকটি সরে গেলে নামাযির সামনে দিয়ে
অন্যদের যাতায়াতের আশঙ্কা থাকলে
নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উত্তম হবে।
ফতোয়ায়ে
মাহমূদিয়াত আছে-
''যদি মসজিদে নামায পড়ে, আর মসজিদে ছোট হয়, তাহলে সামনে দিয়ে অতিক্রম বিলকুল করতে পারবে না। চাই যত দূরত্ব দিয়েই অতিক্রম করুক না কেন। কিন্তু যদি মসজিদে বড় হয়, বা ময়দানে নামায পড়ে, তাহলে নামাযী ব্যক্তি নামাযে দাড়িয়ে সেজদার স্থানের দিকে তাকালে যতদূর পর্যন্ত দেখতে পায়, ততটুকু দূরুত্বের বাহির দিয়ে অতিক্রম করবে। আর এর পরিমাণ হল-তিন কাতার সম পরিমাণ। যেটা প্রায় ৪/৫গজ। আর যদি কোন ষ্টেশনে নামায পড়ে, তাহলে সেজদার স্থান বাদ দিয়ে সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ হবে।''
[ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/১৭৮]
*
''যদি মসজিদে নামায পড়ে, আর মসজিদে ছোট হয়, তাহলে সামনে দিয়ে অতিক্রম বিলকুল করতে পারবে না। চাই যত দূরত্ব দিয়েই অতিক্রম করুক না কেন। কিন্তু যদি মসজিদে বড় হয়, বা ময়দানে নামায পড়ে, তাহলে নামাযী ব্যক্তি নামাযে দাড়িয়ে সেজদার স্থানের দিকে তাকালে যতদূর পর্যন্ত দেখতে পায়, ততটুকু দূরুত্বের বাহির দিয়ে অতিক্রম করবে। আর এর পরিমাণ হল-তিন কাতার সম পরিমাণ। যেটা প্রায় ৪/৫গজ। আর যদি কোন ষ্টেশনে নামায পড়ে, তাহলে সেজদার স্থান বাদ দিয়ে সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ হবে।''
[ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/১৭৮]
*
( ومرور مار في الصحراء أو في مسجد كبير بموضع سجوده )
في الأصح ( أو ) مروره ( بين يديه )__ ( في ) بيت و ( مسجد ) صغير ، الخ ( وإن
أثم المار )
অনুবাদ-ময়দান বা বড় মসজিদে সেজদার স্থান ছাড়া সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে কোন সমস্যা নেই। তবে বাড়ি বা ছোট মসজিদে হলে গোনাহ হবে।
[রদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত-বাবু মা ইউফসিদুস সালাত-২/৩৯৮, মাজমাউল আনহুর-১/১৮৩, আল বাহরুর রায়েক-২/১৫]
---
৫। আর যে ব্যক্তি নামাযীর ঠিক সামনেই বসা থাকে তখন তার উঠে যাওয়ার বৈধতা আছে কি এবং থাকলে তাকে কিরুপে উঠে যেতে হবে?
৫। আর যে ব্যক্তি নামাযীর ঠিক সামনেই বসা থাকে তখন তার উঠে যাওয়ার বৈধতা আছে কি এবং থাকলে তাকে কিরুপে উঠে যেতে হবে?
---
হ্যাঁ, উক্ত ব্যক্তি স্বীয় স্থান থেকে সড়ে যেতে পারবে। যেহেতু এর
দ্বারা নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিষয় পাওয়া
যায় না। সে আস্তে করে স্বীয় স্থান থেকে উঠে চলে যাবে।
[ইমাদাদুল ফাতওয়া-১/৭৯২;ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/১৭৮-১৭৯]
আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে শুয়ে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করতেন। তখন হযরত আয়েশা রা. তাঁর সামনে থেকে এক পাশে উঠে চলে যেতেন।
-সহীহ বুখারী-৫১১; সহীহ মুসলিম-৫১২
[ইমাদাদুল ফাতওয়া-১/৭৯২;ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/১৭৮-১৭৯]
আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে শুয়ে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করতেন। তখন হযরত আয়েশা রা. তাঁর সামনে থেকে এক পাশে উঠে চলে যেতেন।
-সহীহ বুখারী-৫১১; সহীহ মুসলিম-৫১২
---
৬। নামাযের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে নামাযরত ব্যক্তি কিভাবে বাঁধা দিবে?
৬। নামাযের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে নামাযরত ব্যক্তি কিভাবে বাঁধা দিবে?
---
পুরুষরা তাকবীর দিয়ে, বা কেরাত পড়তে থাকলে কেরাত একটু জোরে পড়ে, আর মহিলারা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের উপরিভাগে খানিক আঘাত করে তালির মত আওয়াজ করে নামাযের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে বাঁধা দিবে।
রছূলুল্লাহ(ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) বলেন-
التَّسْبِيحُ لِلرِّجَالِ وَالتَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তাসবীহ হল পুরুষদের জন্য, আর তাসফীক তথা মৃদু তালি হল মহিলাদের জন্য।
التَّسْبِيحُ لِلرِّجَالِ وَالتَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তাসবীহ হল পুরুষদের জন্য, আর তাসফীক তথা মৃদু তালি হল মহিলাদের জন্য।
[সুনানে আবু দাউদ-৯৪০, সুনানে ইবনে মাজাহ-১০৩৪, সহীহ বুখারী-১১৪৫, সহীহ মুসলিম-৯৮২]
আল্লাহু আ'লামু বিস সাওয়াব
------------
উত্তর প্রদানেঃ শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মামুন