সহিহ আকাইদ কণিকা! (অধ্যায়ঃ মৃত্যু ও কবর) কিস্তি-১

[১]

মৃত্যুর পর কথা বলেন যে সাহাবী

-----------------
হযরত যায়েদ বিন খারযাহ (রাঃ) এর মৃত্যু হয়েছিল হযরত উসমান (রাঃ) এর শাসন আমলে।।
তার জানাযা আদায়ের জন্য যখন সবাই প্রস্তুত, উসমান (রাঃ) এর জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলেন, তখন হঠাৎ যায়েদ বিন খারযাহ (রাঃ) কথা-বার্তা বলা শুরু করেন।। তিনি কথা বার্তা বলার সময় সাক্ষ্য দেন মুহাম্মাদ (সঃ) সত্য নবী।। হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমর (রাঃ) উভয়-ই আমানতদার ছিলেন।। এরপর তিনি পুনরায় মৃত হয়ে যান।।

__________
সূত্রঃ ১. দালায়েলুন নবুওয়্যাহ- ২/৪২৩ লেখকঃ ঈমাম বায়হাকী (রহঃ)
২. আল ইসতিয়াব- ২/৪২৩ লেখকঃ হাফেঝত   ইবনে আব্দুল বার আল মালেকী (রহঃ)
৩. আত তারীখ উল কাবীর- ৩/৩৮৩  লেখকঃ ঈমাম বোখারী (রহঃ)
৪. আল ইসাবা- ২/ ১৯০ লেখকঃ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ)
৫. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ৯/৫৫ লেখকঃ আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ)


[২]

হযরত উমর (রাঃ) এর সাথে মৃত ব্যক্তির কথোপকথন

-------------
 এক পরহেযগার যুবক মসজিদে খুব ইবাদাত করতো।। জনৈক মহিলা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, এবং নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করে।। একদিন ঐ যুবক কে নিজের করে পেতে সে তার ঘরে গিয়ে উপস্থিত হয়।।
তখন ঐ যুবকের কোরআন এর একটি আয়াত মনে পড়ে-

إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ [٧:٢٠١]
যাদের মনে আল্লাহর ভয় আছে তাদের কাছে যখন শয়তানের প্ররোচনা আসে তখন-ই তারা সতর্ক হয়ে যায়, এবং তাদের বিবেক জাগ্রত হয় [সূরা আরাফ ২০১]

এই আয়াত এর প্রভাবে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফেরার পর সে এই আয়াত তিলাওয়াত করে এবং এবার সে মরেই যায়। হযরত উমর (রাঃ) তার পিতার কাছে গিয়ে সমবেদনা জানান।

যুবককে রাতে দাফন করা হয়েছিল। উমর (রাঃ) তার কবরের কাছে যান, জানাযা পড়েন আর ঐ যুবককে সম্বোধন করে বলেন-

وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ [٥٥:٤٦]
যে আল্লাহকে ভয় করলো তার জন্য আছে ২টি জান্নাত
[সূরা আর রাহমান ৪৬ ]

ঐ যুবক কবর থেকে উত্তর দিলো-
"হে উমর (রাঃ)!! আল্লাহ আমাকে ২টি জান্নাত-ই দান করেছেন।"

______________
সূত্রঃ তাফসীর ইবনে কাসীর- সূরা আরাফের ২০১ নং আয়াতের তাফসীর


বড় সাইজ দেখতে পিকচারে ক্লিক করুন

[৩]

কবর থেকে কোরআন এর আওয়ায আসা

----------
হযরত সালমান (রহঃ) বলেন-
হযরত হাম্মাদ (রহঃ) আমাকে বলেছেন উনি যখন জুম্মার দিন কবরস্থানে যেতেন তখন যেই কবরের পাশ।দিয়েই উনি গমন করতেন সেই কবর থেকেই কোরআন তিলাওয়াতের আওয়ায শুনতে পেতেন।

__________
সূত্রঃ তাবাকাত এ হানাবিলা - ১ম খণ্ড ৪৫১ পৃষ্ঠা [কথিত তাওহীদবাদী রাষ্ট্র সৌদি মুদ্রণ]
~ কাজি আবু ইয়া'লা রহ.
বড় সাইজ দেখতে পিকচারে ক্লিক করুন


[৪]

মৃতদের আপন কবরের উপর বসে পাখিদের কথা বোঝা

----------------
আবু তাইয়্যাহ বর্ণনা করেন -
মুতাররফ বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ) জংগলে থাকতেন। প্রতি জুমার রাতে তিনি কবরস্থান যেতেন। কখনো কখনো রাতে তার ঘোড়া জ্যোতিতে চমকাতে থাকতো।

মুতাররফ (রহঃ) বলেন একদিন তিনি (জুমার রাতে কবরস্থানে) ঘোড়া সহ উড়তে লাগলেন। তিনি বলেন, তিনি দেখলেন প্রত্যেক কবর ওয়ালা কবরের উপর বসে আছে। তারা যখন মুতাররফ (রহঃ) কে দেখলো, বলতে লাগলো- "উনি মুতাররফ!! যিনি প্রতি জুমার রাতে আসেন।"
আমি (মুতাররফ) তাদের জিজ্ঞেস করলাম -"তোমরা জুমার দিন কোনটা সেটাও বুঝতে পারো??"
তারা উত্তর দিলো- "হ্যা!! এমনকি এই দিন পাখিরা কি বলে তাও আমরা বুঝতে পারি।"
আমি জিজ্ঞেস করলাম- "পাখিরা এইদিন কি বলে??"
তারা বলল- "পাখিরা বলে- সালাম সালাম আজ পূন্যের দিন।"

এই ঘটনা উল্লেখের পর ইমাম শামসুদ্দিন যাহাবী (রহঃ) বলেনঃ এই ঘটনার সনদ সহিহ।
★ঘটনাটি আরো উল্লেখ করেছেন (১) ইমাম আবু নুয়াইম ইসবাহানী (রহঃ) তার হিলয়াতুল আউলিয়া কিতাবে (২) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) তার আয যুহুদ কিতাবে।
______________________
সূত্রঃ সিয়ারু আ'লামিন নুবালা- ৪র্থ খণ্ড ১৯৩ পৃষ্ঠা
লেখকঃ ইমাম শামসুদ্দিন আয যাহাবী (রহঃ)

বড় সাইজ দেখতে পিকচারে ক্লিক করুন
[৫]

নবীজীর কবর থেকে আওয়ায শুনে নামায পড়া

==================
أخبرنا مروان بن محمد ، عن سعيد بن عبد العزيز قال : لما كان أيام الحرة لم يؤذن في مسجد النبي صلى الله عليه وسلم ثلاثا، ولم يقم، ولم يبرح سعيد بن المسيب المسجد، وكان لا يعرف وقت الصلاة إلا بهمهمة يسمعها من قبر النبي صلى الله عليه وسلم. فذكر معناه
অর্থঃ
সাঈদ বিন আব্দুল আজীজ (রাহি.) বলেন, হাররার ফেতনার সময় তিন দিন মাসজিদে নববীতে আযান ও ইকামত হয়নি।।
তখন বিখ্যাত তাবেঈ সাইদ বিন মুসাইয়্যাব (রাহি.) মাসজিদ হতে বের হতে পারছিলেন না।। তখন রাসুলুল্লাহ (স) এর কবর থেকে ফিসফিস আওয়াজ আসতো তা দ্বারা তিনি নামাযের ওয়াক্ত বুঝতে পারতেন।।
সুনান দারেমী- হাদিস ৯৪।। (সনদ সহিহ)
__________________________
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন-
হাররা এর ফিতনার দিনগুলোতে (৩ দিন) বিখ্যাত তাবিঈ সাইদ বিন মুসাইয়্যাব (রাহি.) রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর কবর থেকে প্রতি নামাযের ওয়াক্তে আযান শুনতে পেতেন, আর সেই সময় মসজিদে নববিতে আর কেউ ছিল না।।
মাজমুয়া ফাতাওয়া - ১১ খণ্ড ২৮০-৮১ পৃষ্ঠা
___________________________
রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর কবর থেকে কিছু বের হলে যদি আক্বীদা ঠিক না থাকে, তাহলে হাত বা আযান ২টির ক্ষেত্রেই ফতোয়া এক-ই হওয়া উচিত।

------------------
সংকলনঃ মাকসুদুল হাকিম
সোর্সঃ  [১], [২], [৩], [৪], [৫]

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf