ইফতারের সময় নিয়ে শিয়াদের বিভ্রান্তির জবাব
আমরা প্রকৃত মুসলিমরা সূর্যাস্তের পরে দ্রুত ইফতার করে নেই। কিন্তু ইহুদি-নাসারা ও ইহুদিজাত সাবাঈ শিয়া ধর্মাবলম্বীরা রাত গভীর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
শিয়া-রাফেজীদের দাবি হল- লাইল/রাত না হওয়া পর্যন্ত রোযা পালন করতে বলা হয়েছে, আর সূর্য ডুবে গেলেও, অন্ধকারাচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত সেটা রাত(الليل) নয়।
কুরআনের আয়াত-
( وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ )
আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।[সূরা বাকারাহঃ ১৮৭]
আসুন, আগে দেখি আরবি ভাষাশাস্ত্রে লাইল/রাত(الليل) শব্দের সংজ্ঞা কি?
✔✔ লিসানুল আরব- দিনের ঠিক শেষেই লাইল আসে এবং সূর্য ডুবার সাথে সাথে তা শুরু হয়(৬০৭/১১)
✔✔ মুজামুল লুগাতুল আরাবিয়া- দিনের শেষে অন্ধকার হলে তা লাইল/রাত এবং তা সূর্য ডুবার থেকে শুরু হয়ে সূর্য উঠা পর্যন্ত থাকে(৪৬৭৬)
✔✔ কামুস আল মুহিত- আল লাইলঃ সূর্যাস্তের থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক বা সূর্যাস্ত পর্যন্ত(১৩৬৪)
☄ এবার বৈজ্ঞানিক বিবেচনায় আসি। সূর্য ডুবে গেলেও, তার আলোকরশ্মির কণা অবশিষ্ট রয়ে যায়। সেগুলা মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত রাত অন্ধকার হয় না। সূর্যের গোল চাকতি মিলিয়ে গেলেও আলোর কণার লাল আভা রয়ে যায়,সেগুলা আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়,তখন পুরাপুরি অন্ধকার হয়।দিন-রাতের পরিবর্তন ত বাসার লাইটের সুইচ পরিবর্তনের মত নয়, যে সুইচ টিপে দেয়া মাত্রে সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার!
۩ কুরআনে সূরা বাকারাঃ১৮৭ আয়াতে রাত পর্যন্ত সাওম পালন করতে বলা হয়েছে এভাবে যে,রাত আসা মাত্রই পূর্ণতা। গভীরতা বা ঘন অন্ধকার নয়। [إلى الليل](রাত পর্যন্ত)
এর ব্যাপারে ইবনে কাসির(র) বলেন যে- সূর্যাস্তের পরে ইফতার করাই শরীয়াতের হুকুম [৫১৭/১] । আল্লামা তাহির ইবন আশুর(র) বলেন- এখানে (إِلَى) দ্বারা বুঝানো হয়েছে রাত পর্যন্ত পৌঁছানো মূল লক্ষ্য; তাই সূর্যাস্তের পরেই দ্রুত ইফতার করার হুকুম। [আত তাহরীর ওয়াত তানউইর ১৮১/১]
ইসলামের মুফাসসির,হাদিস-বিশারদগণ ও ফকিহগণেরও একই মত, যে সূর্যাস্তের মাধ্যমে রাত শুরু হবার পরেই ইফতার করা উচিত।
۩ শিয়া ধর্মাবলম্বীরা রাত বাড়িয়ে ইফতারের দাবিতে কুরআনের কিছু আয়াত নিয়ে আসে, কিন্তু সেগুলা লাইল/রাত এর সংজ্ঞা নয় বরং বিভিন্ন অবস্থা। যেমন, সূরা ইনশিক্কাক ১৬-১৭ আয়াতে আল্লাহ্ শাফাক্ক(الشفق) এর কসম করেছেন,তারপরে লাইল/রাত্রির কথা বলেছেন।
কিন্তু তাই বলে শাফাক্ক বা সূর্যের লাল আভা বিদ্যমান থাকার অবস্থা যে রাত নয়, এমন বলা সম্ভব না। কারণ, শাফাক্ক স্থায়ী হয় ইশা’র ওয়াক্তের আগ পর্যন্ত। এখন শিয়া-কাফেরদের পক্ষে ত এটা দাবি করা সম্ভব না যে ইশার ওয়াক্ত পর্যন্ত ইফতার করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে!
সূরা লাইল এর প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে {وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى} শপথ রাত্রির, যখন সে আচ্ছন্ন করে; এখানে রাতের বিশেষ অবস্থার কথা বলা হয়েছে, যখন রাত আচ্ছাদিত করে। পরের আয়াতেই আল্লাহ্ বলেছেন { وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّىٰ } শপথ দিনের, যখন সে আলোকিত হয়।
দিন আসার জন্য সম্পূর্ণ আকাশ আলোকিত হবার শর্ত নয়, সূর্যোদয়ের সময় আলো ফুটলেই দিন হয়। এখানে আল্লাহ্ দিনের আলোকোজ্জ্বল অবস্থার শপথ করেছেন। একিভাবে রাতের আচ্ছন্ন অবস্থার; কিন্তু রাতের শুরু তার আগেই, সূর্যাস্তের সময়।
একিভাবে সূরা দুহা’র ২য় আয়াতে { وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى}শপথ রাতের যখন তা গভীর হয়- এখানে রাতের গভীর প্রহরের ব্যাপারে বলেছেন আল্লাহ্। কিন্তু রাত/লাইল হবার জন্য গভীর হয়ে যাওয়া শর্ত নয়।
কুরআনের আরো একাধিক স্থানে দিন-রাতের পরিবর্তনের কথা বলেছেন, রাতের পরিণতি হিসাবে অন্ধকারাচ্ছন হবার কথা বলেছেন। শর্ত নয়।
আর আল্লাহ্ তাআলাও কুরআনে বলেননি যে, অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রি পর্যন্ত সিয়াম পালন কর।
কুরআনে সূরা ইউনুসঃ ১০ আয়াতে, খারাপ আমলকারীর ব্যাপারে বলা হয়েছে { كَأَنَّمَا أُغْشِيَتْ وُجُوهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًا} তাদের মুখমন্ডল যেন ঢেকে দেয়া হয়েছে আধাঁর রাতের টুকরো/পরত দিয়ে-
এখানেও (قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ) দ্বারা রাতের আলাদা অংশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে যেটা আচ্ছাদিত করে।
সাবাঈ শিয়া-রাফেজীরা দাবি করে যে প্রকৃত মুসলিম তথা আহলুস সুন্নাহ ইফতার করি। সূরা ফুরকানঃআয়াত ৫ এ বুকরাতাও অ-আসীলা{সকাল ও সন্ধ্যায়} বলা হয়েছে। কিন্তু আসীল এর বহুবচন আসাল সূর্যাস্তের আগমূহুর্তকে বলে। আর লাইল সূর্যাস্তের পরের মূহুর্তকে বলে. এই দুইটা আলাদা জিনিস। আমরা লাইল শুরু হলেই ইফতার করি। আসীলে করি না।
❂ ইসলামের হাদিস কিতাবসমূহেও আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর আমল এবং নির্দেশ ছিল সূর্যাস্তের পরে রাতে পৌঁছতেই দ্রুত ইফতার করে নেয়া।
◕ আসিম ইবন উমর(র) তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী(ﷺ) বলেছেনঃ যখন এদিক(পূর্বদিকে) থেকে রাত আসে এবং এদিক(পশ্চিম দিক) থেকে দিন তিরোহিত হয় ও সূর্য ডুবে যায়, তখন সওম পালনকারীর ইফতারের সময়। [সহি বুখারী ১৮৩০; সহি মুসলিম ১১০০; তিরমীযি ৬৯৮]
অর্থাৎ সূর্য ডুবে রাত আসা শুরু হলেই ইফতারের সময় হয়ে যায়।
◕ আবদুল্লাহ ইবন আবু আওফা(রা) থেকে বর্ণিতঃ একদা আমরা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে সফরে গেলাম। তখন তিনি সাওম পালনরত ছিলেন। সূর্য ডুবে গেলে তিনি বললেন, হে বিলাল! সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু তৈরি করে আনো। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সন্ধ্যা হতে দিন। তিনি বলেনঃ সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু তৈরি করে আনো। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এখনও তো দিন বাকী আছে। তিনি আবারও বললেনঃ নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু বানাও। অতঃপর তিনি নেমে ছাতু তৈরি করলেন। রাসূলুল্লাহ(ﷺ) তা পান করে বললেনঃ যখন তোমরা এদিক (পূর্বদিক) থেকে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে দেখবে তখনই সাওম পালনকারী ইফতার করবে। তিনি তাঁর আঙ্গুল দিয়ে পূর্বদিক ইঙ্গিত করে দেখালেন। [বুখারী ১৮৩১; মুসলিম ১১০১; আবু দাঊদ ২৩৪৪]
◕ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস(রা) ও আবু হুরায়রা(রা) নামাজের আদায়কাল সংক্রান্ত এক রিওয়ায়াতে উল্লেখ করেছেন, রাসূল(ﷺ) মাগরিবের সালাত তখন আদায় করলেন যখন সূর্য ডুবে যায় ও সাওম পালনকারীর ইফতার করা অনুমোদিত হয়। [তিরমীযি ১৭৯; সুনানে নাসাঊ ৫০৩]
অর্থাৎ সূর্য ডোবার পর পরই ইফতার করার সময় সুন্নাহ সাব্যস্ত।
◕ সাহল বিন সাদ(রা) বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন, লোকেরা ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন শীঘ্র ইফতার করবে। [বুখারী ১৮৩৩; মুসলিম ১০৯৮; তিরমীযি ৬৯৯]
◕ আবু হুরায়রা(রা) হতে বর্ণিত- নবী(ﷺ) বলেন- দ্বীন ততদিন বিজয়ী থাকবে যতদিন লোকেরা জলদি ইফতার করবে। কেননা ইহুদী ও খ্রিস্টানরা দেরিতে ইফতার করে। [আবু দাঊদ ২৩৪৫; সুনানুল কুবরা-বায়হাকী ৭৯২৩; ইবন মাজাহ ১৬৯৮]
◕ আনাস(রা) থেকে বর্ণিত- আমি রাসূলুল্লাহ(ﷺ)কে কখনোই ইফতারের পূর্বে সালাত আদায় করতে দেখিনি, যদিও তা পানি পান করা দ্বারাও(ইফতার) হয়। [সুনানুল কুবরা বায়হাকী ৭৯৩৬; মুসতাদরাকে হাকিম ১৬১৮; সহি ইবনে খুযাইমা ২০৬৩]
◕ আনাস(রা) বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ(ﷺ) মাগরিবের নামায আদায়ের পূর্বে পাকা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি পাকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি তাও না হত,তখন তিনি কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।[আবু দাঊদ ২৩৪৮; সুনানে দারাকুতনী ২২৪৫/২৩; তিরমীযি ৬৯৬]
মাগরিবের পূর্বে ইফতারের সুন্নাহ মুসলমানদের হাদিস থেকে সাব্যস্ত হল। মুয়াত্তা মালিক কিতাবে একটি রিওয়ায়াত আছে, যা শিয়া কাফেররা বাধ্য হয়ে আনে, তাদের শত্রু উমর(রা) ও উসমান(রা)এর আমলের ব্যাপারে।
ঐ বর্ণনায় আছে, উমর(রা),উসমান(রা) অন্ধকার করে মাগরিবের সালাত আদায় করে,তারপর ইফতার করতেন। প্রথমত এটি হাদিস নয়, আছার।
আর মুয়াত্তা মালিক কিতাবের একক(আর কোথাও নেও) আছার দলিল হিসাবে গ্রহণ করা নিয়ে মুহাদ্দিসগণের আপত্তি রয়েছে।
এই রিওয়ায়াতের সনদে হুমায়দ বিন আব্দুর রহমান, তিনি বিশ্বস্ত রাবী। তবে তিনি সরাসরি উমর(রা)কে দেখেন নি, আর উসমান(রা)এর ভাগ্নে হওয়ায় তাঁর থেকে শ্রবণ করেছেন,কিন্তু নিয়মিত আমল প্রত্যক্ষ করা সম্ভব না তার পক্ষে। তাই এর তার থেকে উমর(রা) ও উসমান(রা)এর আমলের এই বর্ণনাকে শক্ত ভিত্তি নেয়া সম্ভব না।
ইবনে আব্দুল বার(র),মোল্লা আলী ক্কারী(র) সহ মুহাদ্দিসগণ যা বলেছেন তার সারকথা হল, ইফতার দেরি করে করাও জায়েয, মানুষ যাতে জলদি করাকে ওয়াযিব মনে না করে, এজন্য তারা কখনো কখনো দেরি করা আদায় করেছেন।আর মসজিদে ইফতার করলে খাবার পাওয়া মুশকিল হয়,ইতিকাফকারীদের থেকে নিতে হয়।
☠ শিয়ারা কাফের, ইহুদি ইবনে সাবা’র মতবাদে সৃষ্ট গোষ্ঠি। তবুও, শিয়া ধর্মগ্রন্থে থেকে দেখানো যাক,সূর্যাস্তে ইফতারের বিষয়ে কি পাওয়া যায়-
☫ শিয়া ধর্মের অন্যতম প্রধান পুস্তক নাহজুল বালাগাতে দেখা যায় আলী(রা) বলছেন- “মাগরিব তখন আদায় করা হবে যখন লোকেরা সাওম খোলে” [নাহজুল বালাগা, চিঠি ৫২] অর্থাৎ সূর্যাস্তে ইফতারের সময়ে মাগরিব।
☫ রাত ঘন হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের অপেক্ষাকারীদের ব্যাপারে, ‘আবু আবদুল্লাহ সাদিক(আ) বলেন-যারা কোন কারণ ছাড়াই রাতের তারাসমূহের সংঘর্ষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে, আমি তাদেরকে আল্লাহ্র থেকে মুক্ত ঘোষণা করছি’ [আমালি আস-সাদুক, পৃ ২৮৬, মজলিস ৬২]
☫ “ জাফর সাদিক(আ) বলেন- যখন সূর্য ডুবে যায় তখন ইফতার হালাল ও সালাত ওয়াযিব হয়।”[ওয়াসায়েল আশ-শিয়া, রি-১৩০১৮; কিতাবুস সালাত কাযিমী-পৃ ৫৭/১]
☫ শিয়া ধর্মগুরু শায়খ তুসি তার মাসআলার কিতাবে লিখে- ‘মাগরিবের প্রথম সময় হল যখন সূর্য ডুবে যায় এবং তার নিদর্শন হল সূর্যের চাকতি দেখা না যাওয়া’ [আল নিহায়া ফি মাজাররাদ আল-ফিকহ, পৃ ৫৯]
আল্লাহ্ আমাদের মুসলিমদের সকল সাওম কবুল করে নিন। এবং শিয়া-মিশনারীদের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করুন।
~ The Rafidologist
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন