বিশ রাকাআত তারাবীহ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত

প্রথম হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) রমজান মাসে বিশ রাকাআত তারাবীহ ও বিতির আদায় করতেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-৫/২২৫, সুনানে বায়হাকী-৪/৬০)

সনদ বিশ্লেষণ: হাদীসটি ছেকাহ রাবীদের অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ। আবার হাদীসটি শাজ ও মুআল্লালও নয়, ফলে হাদীসটি গ্রহণযোগ্য হওয়াতে কোন আপত্তির লেশমাত্র নেই। কারণ হাদীসটির সনদে (সাহাবী বাদে) ৪জন রাবী রয়েছে।
. ইয়াজিদ ইবনে হারুন। তিনি ছেকাহ। (তাকরীবুত তাহযীব ২/৩৩৩, তাহযীবুত তাহযীব ১১/৩৬৬)
. আবু শায়বা ইব্রাহীম ইবনে ওসমান। তিনি আদেল ও হাফিজুল হাদীস। (তাহযীবুত তাহযীব ১/১৪৫, তাজাল্লিয়াতে সফদর ৩/১৭৩, আর রফউ ওয়াত তাকমীল ৩০৬ ও ৩৮৩, মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালাহ ৮৬)
. হাকাম ইবনে উতায়বাহ।তিনি ছিকাহ। (তাহযীবুল কামাল ৩/৫০,তাকরীবুত তাহযীব ১/২৩২)
. মিকসাম রহঃ। তিনি বুখারী শরীফের রাবী,ছদুক এবং ছিকাহ। (তাহযীবুল কামাল ১০/৮৬, তাকরীবুত তাহযীব২/২১১, মীযানুল ই'তিদাল ৬/৫০৮)
.
দ্বিতীয় হাদীস: হযরত সাইব ইবনে ইয়াযীদ রাঃ বলেছেন, তাঁরা ওমর রাঃ এর যুগে রমজান মাসে ২০রাকাত পড়তেন। এবং নামাজে বড় বড় সূরাগুলি পড়তেন। আর ওসমান রাঃ এর যুগে দীর্ঘ নামাজের কারণে তাঁদের(কেউ কেউ)লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।
(সুনানে কুবরা ৪/৬১; বায়হাকী ২/৪৯৬)

সনদ বিশ্লেষণ: হাদীসটি সহীহ (ইলাউস সুনান ৭/৭৩; আছারুস সুনান ২৮৯)
. আবু আব্দুল্লাহ হুসাইন। তিনি ছিকা ও ছদুক (সিয়ারু আলামিন নুবালা১৩/২৪৫; তারীখুল ইসলাম২৮/২০৪; তুহফাতুল আহওয়াজী৩/৪৪৭)।
. আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ। তিনি হাফেজ ও ছিকা (সিয়াঃনুবালা ১২/৩৫৪)।
. আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ। তিনি ছিকা ও ছদুক (প্রাগুক্ত ১১/৪১৩)।
. আলী ইবনে জায়াদ। তিনি ছিকা ও ছদুক(তাহযীবুত তাহযীব ৭/২৯০,২৯১)।
. ইবনে আবি যিব। তিনি ছিকা,ফকীহ,বুজুর্গ (তাকরীবুত তাহযীব ২/১০৫)।
. ইয়াযীদ ইবনে খুছায়ফা।তিনি ছিকা (তাকরীবুত তাহযীব ২/৩২৭;তাহযীবুত তাহযীব ১১/৩৪০)।
. সাইব ইবনে ইয়াযীদ রাঃ।তিনি সাহাবী (মীযানুল ইতিদাল ৭/২৫০)।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণ হল ইমাম বায়হাকী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ এবং অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত।
.
৩য় হাদীসঃ ইয়াযীদ ইবনে রুমান রহঃ বলেন,ওমর রাঃ এর যুগে রমজান মাসে ২৩ রাকাত পড়তেন। 
(মুয়াত্তা মালেক ৪০;সুনানে কুবরা,বায়হাকী ২/৪৯৬)

সনদ বিশ্লেষণ: বর্ণিত হাদীসটি মুরছাল এবং হাদীসটি গ্রহণযোগ্য (মুকাদ্দামায়ে ইবনে ছলাহ ৪৯; উসূলে সারাখছী ১/৩৭০; মুকাদ্দামায়ে ফাতহুল মুলহিম ৭৯,৮০)।
১. ইমাম মালেক রহঃ। তিনি মুহাদ্দীস হিসেবে সর্ব মহলে স্বীকৃত।
২. ইয়াযীদ ইবনে রুমান রহঃ। তিনি ছিকা (তাহযীবুত তাহযীব১১/
৩২৫; তাকরীবুত তাহযীব২/
৩২৩; তাহযীবুল কামাল১১/২৬)।
.
৪র্থ হাদীস: আব্দুর রহমান ইবনে হরমুজ বলেন,আমি রমজান মাসে মুসল্লিদেরকে দেখতাম কাফিরদের উপর অভিশাপ দিতে। কারী সাহেব তারাবীর প্রথম ৮রাকাতে সূরা বাকারা পড়তেন। যখন ১২রাকাত পড়া হত তখন দেখতাম আস্তে আস্তে ছোট সূরা পড়ছেন।
(মুয়াত্তা মালেক ৪০)

সনদ বিশ্লেষণ:
১. ইমাম মালেক রহঃ।
২. দাউদ ইবনে হুসাইন। তিনি ছিকা (তাকরীবুত তাহযীব ১/২৭৮; তাহযীবুত তাহযীব ৩/১৮২)।
৩. আব্দুর রহমান ইবনে হরমুজ আল আ'রাজ। তিনি ছিকাহ এবং সিহাহ ছিত্তার রাবী (তাকরীবুত তাহযীব ১/৫৯৪; তাহযীবুত তাহযীব ৬/২৯০)।
.
৫ম হাদীস: আব্দুল আজিজ ইবনে রুফাই রহঃ বলেন,উবাই ইবনে কাআব রাঃ রমজান মাসে মদিনাতে লোকদের নিয়ে ২০রাকাত তারাবী এবং ৩রাকাত বিতর পড়তেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা২/২৮৫)

সনদ বিশ্লেষণ:
১. হুমাইদ ইবনে আব্দুর রহমান। তিনি ছিকা(তাকরীবুত তাহযীব ১/২৪৫)।
২. হাসান ইবনে সালিহ। তিনি ছিকা,ফকীহ ও আবিদ (তাহযীবুত তাহযীব  ২/২৮৫)।
৩. আব্দুল আজীজ ইবনে রুফাই। তিনি ছিকা(তাকরীবুত তাহযীব১/৬০৩; তাহযীবুত তাহযীব৬/৩৩৭; সিয়ারু আলামিন নুবালা ৬/৫৮;তারীখুল ইসলাম ৮/১০২)।
.
৬ষ্ঠ হাদীসঃ আমাশ রহঃ বলেন,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ ২০রাকাত তারাবী ও ৩রাকাত বিতর পড়তেন।
(তুহফাতুল আহওয়াজী ৩/৪৪৫)।
হাদীসটি মুরসাল তাই হুজ্জাত হবে।

৭ম হাদীস: সুতাইর ইবনে শাকাল বলেন, তিনি ২০রাকাত তারাবী ও বিতর পড়তেন। 
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৫/২২২)
.
সনদ বিশ্লেষণ:
১.ওয়াকি ইবনুল জাররাহ। তিনি ছিকা (তাহযীবুত তাহযীব ২/২৮৪)।
২.সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ। তিনি ছিকা, হাফিজ, ইমাম, হুজ্জাত (প্রাগুক্ত ১/৩৭১)।
৩.আবু ইসহাক আমর। তিনি ছিকা (প্রাগুক্ত১/৭৩৯)।
৪.আব্দুল্লাহ ইবনে কাইস। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের রাঃছাত্র (মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালাহ৯০)
.
৮ম হাদীস: ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-আনসারী বলেন, ওমর রাঃ এক ব্যক্তিকে ২০ রাকাত তারাবী পড়ানোর জন্য নিযুক্ত করলেন।
( মুসান্নাফে ইবনু আবী শায়বা ৫/২২৩)

সনদ বিশ্লেষণ: এই হাদীসের সকল রাবী ছিকাহ। আর হাদীসটি গ্রহণযোগ্য মুরসাল।

৯ম হাদীস: তাবেয়ী আবুল বাখতারী রমজান মাসে ৫ তারবিয়া অর্থাৎ ২০রাকাত তারাবী এবং ৩রাকাত বিতর পড়তেন।
(মুসান্নাফে ইবনু আবী শায়বা ৫/২২৪)।

সনদ বিশ্লেষণ: আবুল বাখতারী ছিকা ও ছবত (তাকরীবুত তাহযীব ১/৩৬২)।

১০ম হাদীস: সাইব ইবনে ইয়াযীদ রহঃ বলেন, আমরা ওমর রাঃএর যুগে তারাবীর নামাজ আদায় করে যখন ঘরে ফিরতাম তখন সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার উপক্রম হত। ওমর রাঃএর যুগে তারাবী(বিতরসহ) ২৩ রাকাত ছিল।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪/২৬১)।

সনদ বিশ্লেষণ: বর্ণিত হাদীসের তৃতীয় রাবী হারেস ইবনে আব্দুর রহমান। তাঁর হাদীস গ্রহণযোগ্য (কিতাবুল জরহে ওয়াত তা'দীল ৩/৮৯)।
.
উপসংহারঃ যারা ৮রাকাত তারাবীর দাবিদার এবং বলেন ২০রাকাত তারাবীর পক্ষে কোন সহীহ হাদীস নেই,তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্যই এখানে ১০টি সহীহ এবং গ্রহণযোগ্য হাদীস উল্লেখ করা হল। এছাড়াও অনেক সহীহ হাদীস আছে ২০রাকাতের পক্ষে।কিন্তু,সত্যাণ্বেষীদের জন্য এগুলিই যথেষ্ট।


মন্তব্যসমূহ

এই সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

ইসতিখারার সুন্নত তরিকা + pdf