নারীদের সালাতের পদ্ধতি পুরুষের মত নয়
নারীদের নামাযের পদ্ধতি পুরুষের নামাযের মত নয় |
নারী-পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন, সতর। পুরুষের সতর হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত, পক্ষান্তরে পরপুরুষের সামনে মহিলার প্রায় পুরো শরীরই ঢেকে রাখা ফরয। নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদতসমূহের অন্যতম হচ্ছে নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্যে হাত উঠানো, হাত বাধা, রুকু, সেজদা, ১ম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমান যেহেতু বেশী, তাই যেভাবে তাদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে এ ক্ষেত্রগুলোতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছিন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমেও।
প্রথমে আমরা এ সংক্রান্ত মারফূ’ হাদীস, এবং পরে পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করবো।
মারফু’ হাদীস
১. তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব র. বলেন,
.… ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻣﺮ ﻋﻠﻰ ﺍﻣﺮﺃﺗﻴﻦ ﺗﺼﻠﻴﺎﻥ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﺫﺍ ﺳﺠﺪﺗﻤﺎ ﻓﻀﻤﺎ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻠﺤﻢ ﺍﻟﻰ ﺍﻷﺭﺽ، ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻟﻴﺴﺖ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ . ( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤﺮﺍﺳﻴﻞ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ )
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে ) বললেন, যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়।” (কিতাবুল মারাসীল, ইমাম আবু দাউদ ৫৫, হাদীস ৮০)
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন, ‘উল্লিখিত হাদীসটি সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য।’
মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী ‘সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল মারাম’ গ্রন্থে (১/৩৫১,৩৫২) এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত,
ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - :্র ﺇِﺫَﺍ ﺟَﻠَﺴْﺖِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻓِﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻭَﺿَﻌَﺖْ ﻓَﺨِﺬَﻫَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻓَﺨِﺬِﻫَﺎ ﺍﻷُﺧْﺮَﻯ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺠَﺪْﺕْ ﺃَﻟْﺼَﻘَﺖْ ﺑَﻄْﻨَﻬَﺎ ﻓِﻰ ﻓَﺨِﺬَﻳْﻬَﺎ ﻛَﺄَﺳْﺘَﺮِ ﻣَﺎ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻟَﻬَﺎ ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻳَﻨْﻈُﺮُ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ : ﻳَﺎ ﻣَﻼَﺋِﻜَﺘِﻰ ﺃُﺷْﻬِﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻧِّﻰ ﻗَﺪْ ﻏَﻔَﺮْﺕُ ﻟَﻬَﺎ গ্ধ. ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ٢ / ٢٢٣ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ ( ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﻳﺴﺘﺤﺐ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﺘﺠﺎﻓﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ) ، ﻭﻓﻴﻪ ﺃﺑﻮ ﻣﻄﻴﻊ ﺍﻟﺒﻠﺨﻲ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﻘﻴﻠﻲ ﻓﻴﻪ : ﻛﺎﻥ ﻣﺮﺟﺌﺎ ﺻﺎﻟﺤﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিেেয় রাখে; যা তার সতরের জন্যে অধিক উপযোগী।
আল্লাহ তাআলা তাকে দেখে (ফেরেশতাদের সম্বোধন করে) বলেন, ওহে আমার ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/২২৩, অধ্যায়: সালাত, পরিচ্ছেদ: মহিলার জন্যে রুকু ও সেজদায় এক অঙ্গ অপর অঙ্গ থেকে পৃথক না রাখা মুস্তাহাব। এটি হাসান হাদীস।
৩. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন,
ﺟﺌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻓﺴﺎﻕ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ . ﻭﻓﻴﻪ : ﻳﺎ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻴﺖ ﻓﺎﺟﻌﻞ ﻳﺪﻳﻚ ﺣﺬﺍﺀ ﺃﺫﻧﻴﻚ ﻭﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺗﺠﻌﻞ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﺣﺬﺍﺀ ﺛﺪﻳﻴﻬﺎ . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﺟـ ٢٢ ﺻـ ١٩ - ٢٠ )
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন: হে ওয়াইল ইবনে হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আলমুজামুল কাবীর, তাবারানী ১৯-২০/২২, এই হাদীসটিও হাসান)
উল্লিখিত হাদীসগুলো থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায়, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। বিশেষত ২নং হাদীসটি দ্বারা একথাও বোঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা তার সতর ও পর্দার পক্ষে সর্বাাধিক উপযোগী।
উল্লেখ্য, এই সব হাদীসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদীস রয়েছে। পক্ষান্তরে এগুলোর সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যাবেনা যাতে বলা হয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই; বরং উভয়ের নামাযই এক ও অভিন্ন।
সাহাবায়ে কেরামের ফাতওয়া
১. হযরত আলী রা. বলেছেন,
ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻠﺘﺤﺘﻔﺰ ﻭﻟﺘﺼﻖ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﺑﺒﻄﻨﻬﺎ . ﺭﻭﺍﻩ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺼﻨﻒ ﻭﺍﻟﻠﻔﻆ ﻟﻪ، ﻭﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺼﻨﻒ ﺃﻳﻀﺎ ﻭﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺟﻴﺪ، ﻭﺍﻟﺼﻮﺍﺏ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺎﺭﺙ ﻫﻮ ﺍﻟﺘﻮﺛﻴﻖ .
” মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।”
(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৮, অনুচ্ছেদ: মহিলার তাকবীর, কিয়াম, রুকু ও সেজদা; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৮; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/২২২)
২. হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর ফতোয়া:
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺃﻧﻪ ﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ، ﻓﻘﺎﻝ : “ ﺗﺠﺘﻤﻊ ﻭﺗﺤﺘﻔﺰ ” ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ )
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মহিলা কীভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন, খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায় আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)
উপরে মহিলাদের নামায আদায় সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হল, আমাদের জানামতে কোনো হাদীসগ্রন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺃﻧﻪ ﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ، ﻓﻘﺎﻝ : “ ﺗﺠﺘﻤﻊ ﻭﺗﺤﺘﻔﺰ ” ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ )
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মহিলা কীভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন, খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায় আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)
উপরে মহিলাদের নামায আদায় সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হল, আমাদের জানামতে কোনো হাদীসগ্রন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাহাবায়ে কেরাম যে দীন শিখেছেন, তাঁদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীগণ। তাঁদের ফতোয়া থেকেও এ কথাই প্রতীয়মান হয়- মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন।
নিচে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফতোয়া উল্লেখ করা হলো:
১. হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ র. কে জিজ্ঞেস করা হল,
ﻛﻴﻒ ﺗﺮﻓﻊ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺎﻝ ﺣﺬﻭ ﺛﺪﻳﻴﻬﺎ .
নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে? তিনি বললেন, বুক বরাবর। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)
২. ইবনে জুরাইজ র. বলেন,
ﻗﻠﺖ ﻟﻌﻄﺎﺀ ﺗﺸﻴﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺑﻴﺪﻳﻬﺎ ﺑﺎﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﺑﺬﻟﻚ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ﻭﺃﺷﺎﺭ ﻓﺨﻔﺾ ﻳﺪﻳﻪ ﺟﺪﺍ ﻭﺟﻤﻌﻬﻤﺎ ﺇﻟﻴﻪ ﺟﺪﺍ ﻭﻗﺎﻝ ﺇﻥ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻫﻴﺌﺔ ﻟﻴﺴﺖ ﻟﻠﺮﺟﻞ ﻭﺇﻥ ﺗﺮﻛﺖ ﺫﻟﻚ ﻓﻼ ﺣﺮﺝ
আমি আতা ইবনে আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম, মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে? তিনি বললেন, মহিলা পুরুষের মত হাত উঠাবেনা। এরপর তিনি (মহিলাদের হাত তোলার ভঙ্গি দেখালেন এবং) তার উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)
৩. মুজাহিদ ইবনে জাবর র. থেকে বর্ণিত:
ﻋﻦ ﻣﺠﺎﻫﺪ ﺑﻦ ﺟﺒﺮ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻜﺮﻩ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺑﻄﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﻓﺨﺬﻳﻪ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪ ﻛﻤﺎ ﺗﻀﻊ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ .
তিনি পুরুষের জন্যে মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)
৪. ইমাম যুহরী র. বলেন,
ﺗﺮﻓﻊ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﺣﺬﻭ ﻣﻨﻜﺒﻴﻬﺎ .
মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)
৫. হাসান বসরী ও কাতাদা র. বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﺈﻧﻬﺎ ﺗﻨﻀﻢ ﻣﺎ ﺍﺳﺘﻄﺎﻋﺖ ﻭﻻ ﺗﺘﺠﺎﻓﻲ ﻟﻜﻲ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﻋﺠﻴﺰﺗﻬﺎ
মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা; যাতে কোমর উচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০৩, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৭)
৬. ইবরাহীম নাখায়ী র. বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻠﺘﻀﻢ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﻭﻟﺘﻀﻊ ﺑﻄﻨﻬﺎ ﻋﻠﻴﻬﻤﺎ
মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)
৭. ইবরাহীম নাখায়ী র. আরো বলেন,
ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺆﻣﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺃﻥ ﺗﻀﻊ ﺫﺭﺍﻋﻬﺎ ﻭﺑﻄﻨﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ، ﻭﻻ ﺗﺘﺠﺎﻓﻰ ﻛﻤﺎ ﻳﺘﺠﺎﻓﻰ ﺍﻟﺮﺟﻞ ، ﻟﻜﻲ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﻋﺠﻴﺰﺗﻬﺎ
মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে; যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৭)
৮. খালেদ ইবনে লাজলাজ র. বলেন,
ﻛﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻳﺆﻣﺮﻥ ﺃﻥ ﻳﺘﺮﺑﻌﻦ ﺇﺫﺍ ﺟﻠﺴﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﻻ ﻳﺠﻠﺴﻦ ﺟﻠﻮﺱ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻭﺭﺍﻛﻬﻦ ﻳﺘﻘﻲ ﺫﻟﻚ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻣﺨﺎﻓﺔ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻨﻬﺎ ﺍﻟﺸﺊ .
মহিলাদেরকে আদেশ করা হত তারা যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০৩)
উল্লিখিত বর্ণনাগুলো ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নেই।
চার ইমামের ফিকহের আলোকে:
ফিকহে ইসলামীর চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত- ফিকহে হানাফী, ফিকহে মালেকী, ফিকহে হাম্বলী ও ফিকহে শাফেয়ী। এবারে আমরা এই চার ফিকহের ইমামের মতামত উল্লেখ করছি।
১. ফিকহে হানাফী
ইমাম আবূ হানীফা র. এর অন্যতম প্রধান শিষ্য ইমাম মুহাম্মদ র. বলেন,
ﺃﺣﺐ ﺇﻟﻴﻨﺎ ﺃﻥ ﺗﺠﻤﻊ ﺭﺟﻠﻴﻬﺎ ﻓﻲ ﺟﺎﻧﺐ ﻭﻻ ﺗﻨﺘﺼﺐ ﺍﻧﺘﺼﺎﺏ ﺍﻟﺮﺟﻞ .
আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হলো- উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে, পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা।
- কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ, ১/৬০৯
২. ফিকহে মালেকী
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস আলকারাফী র. ইমাম মালেক র. এর মত উল্লেখ করেন,
ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺴﺎﻭﺍﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻓﻔﻲ ﺍﻟﻨﻮﺍﺩﺭ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺗﻀﻊ ﻓﺨﺬﻫﺎ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺗﻨﻀﻢ ﻗﺪﺭ ﻃﺎﻗﺘﻬﺎ ﻭﻻ ﺗﻔﺮﺝ ﻓﻲ ﺭﻛﻮﻉ ﻭﻻ ﺳﺠﻮﺩ ﻭﻻ ﺟﻠﻮﺱ ﺑﺨﻼﻑ ﺍﻟﺮﺟﻞ
নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা এ বিষয়ে ইমাম মালেক র. থেকে বর্ণিত, মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু, সেজদা ও বৈঠক কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা, পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি ভিন্ন। - আযযাখীরা , ইমাম কারাফী, ২/১৯৩।
৩. ফিকহে হাম্বলী
ইমাম আহমদ র. এর ফতোয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা র. কৃত ‘আলমুগনী’ তে:
ﻓﺄﻣﺎ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﺬﻛﺮ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻓﻴﻬﺎ ﺭﻭﺍﻳﺘﻴﻦ ﻋﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺇﺣﺪﺍﻫﻤﺎ ﺗﺮﻓﻊ ﻟﻤﺎ ﺭﻭﻯ ﺍﻟﺨﻼﻝ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩﻩ ﻋﻦ ﺃﻡ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﻭﺣﻔﺼﺔ ﺑﻨﺖ ﺳﻴﺮﻳﻦ ﺃﻧﻬﻤﺎ ﻛﺎﻧﺘﺎ ﺗﺮﻓﻌﺎﻥ ﺃﻳﺪﻳﻬﻤﺎ ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﻃﺎﻭﺱ ﻭﻷﻥ ﻣﻦ ﺷﺮﻉ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﺷﺮﻉ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺗﺮﻓﻊ ﻗﻠﻴﻼ ﻗﺎﻝ ﺃﺣﻤﺪ ﺭﻓﻊ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﻭﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻻ ﻳﺸﺮﻉ ﻷﻧﻪ ﻓﻲ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺘﺠﺎﻓﻲ ﻭﻻ ﻳﺸﺮﻉ ﺫﻟﻚ ﻟﻬﺎ ﺑﻞ ﺗﺠﻤﻊ ﻧﻔﺴﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻭﺳﺎﺋﺮ ﺻﻼﺗﻬﺎ
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না এ বিষয়ে কাজী (আবু ইয়ায) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল থেকে দুটি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত অনুযায়ী হাত তুলবে। কেননা, খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিনতে সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে এ হিসেবে মহিলা হাত উঠাবে, তবে সামান্য। আহমাদ র. বলেন, তুলনামূলক কম উঠাবে। দ্বিতীয় মত এই যে, মহিলাদের জন্যে হাত উঠানোরই হুকুম নেই। কেননা, হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয় অথচ মহিলাদের জন্যে এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্যে নিয়ম হল রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে।
- আলমুগনী, ইবনে কুদামা, ২/১৩৯।
৪. ফিকহে শাফেয়ী
ইমাম শাফেয়ী র. বলেন,
ﻭﻗﺪ ﺃﺩﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺑﺎﻻﺳﺘﺘﺎﺭ ﻭﺃﺩﺑﻬﻦ ﺑﺬﻟﻚ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﺣﺐ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﺃﻥ ﺗﻀﻢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺑﻌﺾ ﻭﺗﻠﺼﻖ ﺑﻄﻨﻬﺎ ﺑﻔﺨﺬﻳﻬﺎ ﻭﺗﺴﺠﺪ ﻛﺄﺳﺘﺮ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻬﺎ ﻭﻫﻜﺬﺍ ﺃﺣﺐ ﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺠﻠﻮﺱ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺃﻥ ﺗﻜﻮﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﻛﺄﺳﺘﺮ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻬﺎ .
আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হল, সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গকে মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়।
- কিতাবুল উম্ম, শাফেয়ী, ১/১৩৮
দেখা যাচ্ছে, হাদীসে রাসূল, সাহাবা ও তাবেয়ীনের ফতোয়া ও আছারের মতই চার মাযহাবের চার ইমামের প্রত্যেকেই পুরুষের সাথে মহিলাদের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন। মুসলিম উম্মাহর অনুসৃত উপরোক্ত কেউ-ই বলছেন না, মহিলাদের নামায পুরুষের নামাযের অনুরূপ। বরং সকলেই বলছেন, পুরুষের নামায থেকে মহিলার নামায কিছুটা ভিন্ন।
নারী-পুরুষের নামাযের এ পার্থক্য শুধু যে এ চার মাযহাবের উলামায়ে কেরাম ও অনুসারীগণ-ই স্বীকার করেন, বিষয়টি এমন নয়। বরং আমাদের যে আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবী ভাইয়েরা এ পার্থক্যকে অস্বীকার করেন, তাদেরও কোন কোন অনুসৃত আলেম এপার্থক্যকে স্বীকার করেছেন। যেমন-
১. মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবী রহ. এর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবী র. কে জিজ্ঞেস করা হল, মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত? জবাবে তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করে লেখেন, এর উপরই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যদের মাঝে আমল চলে আসছে।
এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লেখেন, মোট কথা, মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বীকারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতের সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ।
- ফাতওয়া গজনবিয়্যা, ২৭ ও ২৮; ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদীস, ৩/১৪৮-১৪৯; মাজমুআয়ে রাসায়েল, মাওলানা আমীন সফদর উকারবী, ১/৩১০-৩১১।
২. মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ ‘ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদীস ’ গ্রন্থে এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। মাজমুআয়ে রাসায়েল, ১/৩০৫।
মাওলানা আব্দুল হক হাশেমী মুহাজিরে মক্কী র. তো এই পার্থক্য সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তিকাই রচনা করেছেন। পুস্তিকাটির নাম
ﻧﺼﺐ ﺍﻟﻌﻤﻮﺩ ﻓﻲ ﺗﺤﻘﻴﻖ ﻣﺴﺄﻟﺔ ﺗﺠﺎﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻭﺍﻟﻘﻌﻮﺩ .
৩. মুহাদ্দিস আমীর ইয়ামানী র. ‘সুবুলুস সালাম’ গ্রন্থে এবং স্বসময়ের আহলে হাদীসদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান র. ‘আউনুল বারী’ তে নারী-পুরুষের নামাযের পার্থক্যের পক্ষেই তাদের মত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহীহভাবে বিষয়টি অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন। আমীন
নিচে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফতোয়া উল্লেখ করা হলো:
১. হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ র. কে জিজ্ঞেস করা হল,
ﻛﻴﻒ ﺗﺮﻓﻊ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺎﻝ ﺣﺬﻭ ﺛﺪﻳﻴﻬﺎ .
নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে? তিনি বললেন, বুক বরাবর। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)
২. ইবনে জুরাইজ র. বলেন,
ﻗﻠﺖ ﻟﻌﻄﺎﺀ ﺗﺸﻴﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺑﻴﺪﻳﻬﺎ ﺑﺎﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﺑﺬﻟﻚ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ﻭﺃﺷﺎﺭ ﻓﺨﻔﺾ ﻳﺪﻳﻪ ﺟﺪﺍ ﻭﺟﻤﻌﻬﻤﺎ ﺇﻟﻴﻪ ﺟﺪﺍ ﻭﻗﺎﻝ ﺇﻥ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻫﻴﺌﺔ ﻟﻴﺴﺖ ﻟﻠﺮﺟﻞ ﻭﺇﻥ ﺗﺮﻛﺖ ﺫﻟﻚ ﻓﻼ ﺣﺮﺝ
আমি আতা ইবনে আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম, মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে? তিনি বললেন, মহিলা পুরুষের মত হাত উঠাবেনা। এরপর তিনি (মহিলাদের হাত তোলার ভঙ্গি দেখালেন এবং) তার উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)
৩. মুজাহিদ ইবনে জাবর র. থেকে বর্ণিত:
ﻋﻦ ﻣﺠﺎﻫﺪ ﺑﻦ ﺟﺒﺮ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻜﺮﻩ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺑﻄﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﻓﺨﺬﻳﻪ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪ ﻛﻤﺎ ﺗﻀﻊ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ .
তিনি পুরুষের জন্যে মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)
৪. ইমাম যুহরী র. বলেন,
ﺗﺮﻓﻊ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﺣﺬﻭ ﻣﻨﻜﺒﻴﻬﺎ .
মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)
৫. হাসান বসরী ও কাতাদা র. বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﺈﻧﻬﺎ ﺗﻨﻀﻢ ﻣﺎ ﺍﺳﺘﻄﺎﻋﺖ ﻭﻻ ﺗﺘﺠﺎﻓﻲ ﻟﻜﻲ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﻋﺠﻴﺰﺗﻬﺎ
মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা; যাতে কোমর উচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০৩, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৭)
৬. ইবরাহীম নাখায়ী র. বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻠﺘﻀﻢ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﻭﻟﺘﻀﻊ ﺑﻄﻨﻬﺎ ﻋﻠﻴﻬﻤﺎ
মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)
৭. ইবরাহীম নাখায়ী র. আরো বলেন,
ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺆﻣﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺃﻥ ﺗﻀﻊ ﺫﺭﺍﻋﻬﺎ ﻭﺑﻄﻨﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ، ﻭﻻ ﺗﺘﺠﺎﻓﻰ ﻛﻤﺎ ﻳﺘﺠﺎﻓﻰ ﺍﻟﺮﺟﻞ ، ﻟﻜﻲ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﻋﺠﻴﺰﺗﻬﺎ
মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে; যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৭)
৮. খালেদ ইবনে লাজলাজ র. বলেন,
ﻛﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻳﺆﻣﺮﻥ ﺃﻥ ﻳﺘﺮﺑﻌﻦ ﺇﺫﺍ ﺟﻠﺴﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﻻ ﻳﺠﻠﺴﻦ ﺟﻠﻮﺱ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻭﺭﺍﻛﻬﻦ ﻳﺘﻘﻲ ﺫﻟﻚ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻣﺨﺎﻓﺔ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻨﻬﺎ ﺍﻟﺸﺊ .
মহিলাদেরকে আদেশ করা হত তারা যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০৩)
উল্লিখিত বর্ণনাগুলো ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নেই।
চার ইমামের ফিকহের আলোকে:
ফিকহে ইসলামীর চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত- ফিকহে হানাফী, ফিকহে মালেকী, ফিকহে হাম্বলী ও ফিকহে শাফেয়ী। এবারে আমরা এই চার ফিকহের ইমামের মতামত উল্লেখ করছি।
১. ফিকহে হানাফী
ইমাম আবূ হানীফা র. এর অন্যতম প্রধান শিষ্য ইমাম মুহাম্মদ র. বলেন,
ﺃﺣﺐ ﺇﻟﻴﻨﺎ ﺃﻥ ﺗﺠﻤﻊ ﺭﺟﻠﻴﻬﺎ ﻓﻲ ﺟﺎﻧﺐ ﻭﻻ ﺗﻨﺘﺼﺐ ﺍﻧﺘﺼﺎﺏ ﺍﻟﺮﺟﻞ .
আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হলো- উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে, পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা।
- কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ, ১/৬০৯
২. ফিকহে মালেকী
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস আলকারাফী র. ইমাম মালেক র. এর মত উল্লেখ করেন,
ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺴﺎﻭﺍﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻓﻔﻲ ﺍﻟﻨﻮﺍﺩﺭ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺗﻀﻊ ﻓﺨﺬﻫﺎ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺗﻨﻀﻢ ﻗﺪﺭ ﻃﺎﻗﺘﻬﺎ ﻭﻻ ﺗﻔﺮﺝ ﻓﻲ ﺭﻛﻮﻉ ﻭﻻ ﺳﺠﻮﺩ ﻭﻻ ﺟﻠﻮﺱ ﺑﺨﻼﻑ ﺍﻟﺮﺟﻞ
নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা এ বিষয়ে ইমাম মালেক র. থেকে বর্ণিত, মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু, সেজদা ও বৈঠক কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা, পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি ভিন্ন। - আযযাখীরা , ইমাম কারাফী, ২/১৯৩।
৩. ফিকহে হাম্বলী
ইমাম আহমদ র. এর ফতোয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা র. কৃত ‘আলমুগনী’ তে:
ﻓﺄﻣﺎ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﺬﻛﺮ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻓﻴﻬﺎ ﺭﻭﺍﻳﺘﻴﻦ ﻋﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺇﺣﺪﺍﻫﻤﺎ ﺗﺮﻓﻊ ﻟﻤﺎ ﺭﻭﻯ ﺍﻟﺨﻼﻝ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩﻩ ﻋﻦ ﺃﻡ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﻭﺣﻔﺼﺔ ﺑﻨﺖ ﺳﻴﺮﻳﻦ ﺃﻧﻬﻤﺎ ﻛﺎﻧﺘﺎ ﺗﺮﻓﻌﺎﻥ ﺃﻳﺪﻳﻬﻤﺎ ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﻃﺎﻭﺱ ﻭﻷﻥ ﻣﻦ ﺷﺮﻉ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﺷﺮﻉ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺗﺮﻓﻊ ﻗﻠﻴﻼ ﻗﺎﻝ ﺃﺣﻤﺪ ﺭﻓﻊ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﻭﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻻ ﻳﺸﺮﻉ ﻷﻧﻪ ﻓﻲ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺘﺠﺎﻓﻲ ﻭﻻ ﻳﺸﺮﻉ ﺫﻟﻚ ﻟﻬﺎ ﺑﻞ ﺗﺠﻤﻊ ﻧﻔﺴﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻭﺳﺎﺋﺮ ﺻﻼﺗﻬﺎ
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না এ বিষয়ে কাজী (আবু ইয়ায) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল থেকে দুটি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত অনুযায়ী হাত তুলবে। কেননা, খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিনতে সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে এ হিসেবে মহিলা হাত উঠাবে, তবে সামান্য। আহমাদ র. বলেন, তুলনামূলক কম উঠাবে। দ্বিতীয় মত এই যে, মহিলাদের জন্যে হাত উঠানোরই হুকুম নেই। কেননা, হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয় অথচ মহিলাদের জন্যে এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্যে নিয়ম হল রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে।
- আলমুগনী, ইবনে কুদামা, ২/১৩৯।
৪. ফিকহে শাফেয়ী
ইমাম শাফেয়ী র. বলেন,
ﻭﻗﺪ ﺃﺩﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺑﺎﻻﺳﺘﺘﺎﺭ ﻭﺃﺩﺑﻬﻦ ﺑﺬﻟﻚ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﺣﺐ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﺃﻥ ﺗﻀﻢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺑﻌﺾ ﻭﺗﻠﺼﻖ ﺑﻄﻨﻬﺎ ﺑﻔﺨﺬﻳﻬﺎ ﻭﺗﺴﺠﺪ ﻛﺄﺳﺘﺮ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻬﺎ ﻭﻫﻜﺬﺍ ﺃﺣﺐ ﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺠﻠﻮﺱ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺃﻥ ﺗﻜﻮﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﻛﺄﺳﺘﺮ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻬﺎ .
আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হল, সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গকে মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়।
- কিতাবুল উম্ম, শাফেয়ী, ১/১৩৮
দেখা যাচ্ছে, হাদীসে রাসূল, সাহাবা ও তাবেয়ীনের ফতোয়া ও আছারের মতই চার মাযহাবের চার ইমামের প্রত্যেকেই পুরুষের সাথে মহিলাদের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন। মুসলিম উম্মাহর অনুসৃত উপরোক্ত কেউ-ই বলছেন না, মহিলাদের নামায পুরুষের নামাযের অনুরূপ। বরং সকলেই বলছেন, পুরুষের নামায থেকে মহিলার নামায কিছুটা ভিন্ন।
নারী-পুরুষের নামাযের এ পার্থক্য শুধু যে এ চার মাযহাবের উলামায়ে কেরাম ও অনুসারীগণ-ই স্বীকার করেন, বিষয়টি এমন নয়। বরং আমাদের যে আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবী ভাইয়েরা এ পার্থক্যকে অস্বীকার করেন, তাদেরও কোন কোন অনুসৃত আলেম এপার্থক্যকে স্বীকার করেছেন। যেমন-
১. মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবী রহ. এর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবী র. কে জিজ্ঞেস করা হল, মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত? জবাবে তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করে লেখেন, এর উপরই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যদের মাঝে আমল চলে আসছে।
এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লেখেন, মোট কথা, মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বীকারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতের সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ।
- ফাতওয়া গজনবিয়্যা, ২৭ ও ২৮; ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদীস, ৩/১৪৮-১৪৯; মাজমুআয়ে রাসায়েল, মাওলানা আমীন সফদর উকারবী, ১/৩১০-৩১১।
২. মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ ‘ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদীস ’ গ্রন্থে এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। মাজমুআয়ে রাসায়েল, ১/৩০৫।
মাওলানা আব্দুল হক হাশেমী মুহাজিরে মক্কী র. তো এই পার্থক্য সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তিকাই রচনা করেছেন। পুস্তিকাটির নাম
ﻧﺼﺐ ﺍﻟﻌﻤﻮﺩ ﻓﻲ ﺗﺤﻘﻴﻖ ﻣﺴﺄﻟﺔ ﺗﺠﺎﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻭﺍﻟﻘﻌﻮﺩ .
৩. মুহাদ্দিস আমীর ইয়ামানী র. ‘সুবুলুস সালাম’ গ্রন্থে এবং স্বসময়ের আহলে হাদীসদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান র. ‘আউনুল বারী’ তে নারী-পুরুষের নামাযের পার্থক্যের পক্ষেই তাদের মত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহীহভাবে বিষয়টি অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন। আমীন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন