কেন ইমরান নজর হোসেনের লেকচার শোনা উচিত নয়?
প্রশ্নঃ
আমি চাই মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হোসেন সম্পর্কে askimam আরো গবেষণা করুক। আমি উনার কিছু লেকচার শুনেছি এবং বুঝতে পেরেছি যে, উনি দাজ্জাল সম্পর্কে যেভাবে কথা বলেন, অন্যকেউ বলে না। দাজ্জাল সম্পর্কে তার চিন্তা-ভাবনাই বৈপ্লবিক। তিনি বলে থাকেন দাজ্জালের যুগ মূলত একটি প্রক্রিয়া হিসেবে ৯০০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছে এবং প্রায় একহাজার বছর (১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া বলবৎ ছিল। যাকে দাজ্জালের একদিন সমান একবছরের হিসাবে তিনি এনেছেন। দাজ্জালের দ্বিতীয় দিন শুরু হয় ১৯১৭ সাল থেকে যখন যুক্তরাস্ট্র সুপার পাওয়ারে পরিনত হয়। পরবর্তী ৮৩ বছর অর্থাৎ ২০০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই দ্বিতীয় দিন স্থায়ী হয়।
দাজ্জালের ৩য় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান। উনার হিসেব অনুযায়ী ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়; যখন ইসরাঈল হবে দুনিয়াতে সবচেয়ে শক্তিশালী রাস্ট্র। মাওলানা সাহেবের হিসেব আনুমানিক হলেও একথা সত্য যে, উনি দাজ্জালের বিষয়ে সম্পূর্ণ নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং অন্য কোন আলেম বা মুফতি সাহেব এধরনের ব্যাখ্যা দেন নি। ইসরাঈলের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হল পাকিস্তান। মাওলানা আসেম ওমরের দাজ্জালকে নিয়ে লেখা একটি বই আমি পড়েছি। সেখানে মাওলানা আসেম ওমর লিখেছেন, দাজ্জাল একটি সিস্টেম বা প্রক্রিয়া হওয়া অসম্ভব কিছু নয় যা শয়তানের দ্বারা কিংবা শয়তানের সহযোগীতায় পরিচালিত হচ্ছে। মাওলানা (ইমরান নজর) সাহেব তার বয়ানে আরো বলেন, এই হিসেব করতে দু’টো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
১. গ্যালিলির সাগরের গভীরতা এবং
২. আমার ঠিক মনে পড়ছে না, তবে আমার মনেহয় এর সাথে যে, একসময় ব্রিটিশরা সারাবিশ্বের অধিপতি ছিল। ব্রিটিশ পাউন্ড ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা। এখন যুক্তরাস্ট্র বিশ্বের ক্ষমতাধর এবং ডলার শক্তিশালী। ভবিষ্যতে ইসরাঈল হবে সবচেয়ে শক্তিশালী। তখন আর কাগুজে মুদ্রা শক্তিশালী থাকবে না। বরং ইলেক্ট্রনিক মানি হবে সবচেয়ে দামী, যার নিয়ন্ত্রনে থাকবে ইহুদিবাদী ব্যাংকগুলো।
কাজেই আমি আবেদন রাখছি, মাওলানা ইমরান হোসেন সাহেবের সাথে যদিও কিছু বিষয়ে সামান্য মতপার্থক্য রয়েছে, আমাদের উচিত মাওলানা সাহেবে এই হিসেবগুলোকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে যাচাই করে দেখা। উনার কয়েকটি বয়ান শুনে আমার মনে হয়েছে উনি খুব ভাল জ্ঞান রাখেন। তবে উনার বিষয়ে আপনাদের ফতোয়া জানার পর আমি অবশ্য বয়ান শোনা বন্ধ করে দিয়েছি।
আমার জোর অনুরোধ থাকবে আপনার উনার বইগুলো পড়ে দেখবেন, ইউটিউবের লেকচারগুলো শুনবেন। চেষ্টা করবেন উনার সাথে সহযোগীতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য। কেননা ঐকবদ্ধ হবার জন্য বর্তমান সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব মুসলমান ভাইকে অনুরোধ করব উনার বয়ানগুলো আপনারা শোনেন। মাসয়ালার জন্য নয় বরং দাজ্জালের সত্যিকারের পরিচয় পেতে। আমি আশাকরি আপনারা আমাদের উনার বয়ান শোনার ইজাযত দেবেন। আপনাদের মত আলেমগন আমাদের জন্য দিকদিশারী এবং আমরা এমন কিছু করতে চাই না যা আপনারা আমাদের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন।
উত্তর:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
প্রিয় মুসলিম ভাই আমার,
ক) ইমরান হোসেনের ব্যাপারে Askimam এর দেয়া বিগত ফতওয়া সম্পর্কে আপনি অবগত আছেন। যাই হোক, আপনি আমাদেরকে এখনো অনুরোধ করছেন "যেনো আমরা শাইখ ইমরান হোসেনের ব্যাপারে কিছু অনুসন্ধান করি" এরপর আপনাকে যেনো তার বক্তব্য শোনার অনুমতি প্রদান করি।
প্রথমত, এটা আপনাকে জানানো প্রয়োজন যে, Askimam এ যতোগুলো ফতওয়া প্রদান করা হয় সেগুলো ব্যাপক গবেষণা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করার পরেই প্রদান করা হয়। অতএব, আমাদের বিগত ফতওয়াটি(*১), যা সম্পর্কে আপনি অবগত আছেন, সেটিও ইমরান হোসেনের উপর, তার কিতাবাদি ও বক্তব্যের উপর পরিপূর্ণ অনুসন্ধান এর পরেই দেয়া হয়েছিলো।
.
আর আমরা
এখনো তার ব্যাপারে একই দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাক্ত করছি যে, 'কোনো অবস্থাতেই তার
বক্তব্য শোনা উপযুক্ত ও যথাযথ নয়।' এই সমস্যাটা এতোটা ছোটোখাটো বিষয় নয়
যেমনটা আপনি ভাবছেন, যেমন আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন, "সামান্য কিছু মতের
পার্থক্য"।
খ) এখানে ইমরান হোসেনের দৃষ্টিভঙ্গির কিছু ভুলের সারাংশ তুলে দেয়া
হলো যা অধিকাংশ আলেমের মতের বিপরীত-
- তিনি মনে করেন যে সহীহ আল বুখারীর কিছু হাদীস জাল, যেখানে বুখারীতে বর্নিত প্রত্যেকটি হাদীসই সহীহ্। উদাহরনস্বরুপ, আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লহু 'আনহা) এর বিয়ের ব্যাপারে বুখারীতে উল্লেখিত হাদীসটিকে তিনি জাল বলেন। (*২)
- তিনি দাবি করেন যে সকল শিয়াই মুসলিম, প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ শিয়াই ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের পরিপন্থী ধারনা পোষন করে। (*৩)
- তিনি বিশ্বাস করেন যে ইয়া'জুজ এবং মা'জুজদেরকে ইতিমধ্যে পৃথিবীতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, কিন্তু হাদীসে পরিষ্কার এবং স্পষ্টভাবে বলা আছে যে ঈসা ('আলাইহিস সালাম) এর পৃথিবীতে অবতরন এর পর ইয়া'জুজ ও মা'জুজদেরকে ছাড়া হবে।
- তিনি বিশ্বাস করেন যে দাজ্জালকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং সে তার উদ্দেশ্য পূরনের ৩য় ধাপে আছে।
- এছাড়াও তিনি আরো বিশ্বাস করেন যে, দুখান (ধোঁয়া, ক্বিয়ামতের পূর্ববর্তী নিদর্শন) দ্বারা বর্তমান দূষনকে বোঝানো হয়েছে এবং "দাব্বাতুল আরদ্ব" (একটি জন্ত যা ক্বিয়ামতের পূর্বে বের হবে) দ্বারা বর্তমান ঈসরাইল রাষ্ট্রকে বোঝানো হয়েছে।(*৪)
গ) যেইরুপ পূর্ববর্তী ফতওয়াতেও বর্নিত হয়েছে, শাইখ ইমরান হোসেন পবিত্র ক্বুরআন ও সুন্নাহকে বাদ দিয়ে তার নিজস্ব যুক্তি ও ব্যাখ্যার দ্বারা এই সমস্ত বর্ণনাগুলো করেছেন।
সবচেয়ে বড় সত্য হলো, তিনি এই সমস্ত ব্যাখ্যা ও মতামত নিছক তার বুদ্ধিমত্তার উপর ভিত্তি করে দিয়েছেন, যা পূর্ববর্তী কোনো মুহাদ্দিসিন বা মুফাসসিরিনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
যা পূর্বে ব্যাক্ত করেছি, মুসলিম হিসেবে আমরা কখনোই নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তি দিয়ে হাদীস ব্যাখ্যা করার অবস্থান রাখি না। আমরা হাদীসকে ঐরুপেই গ্রহন করি যেইরুপে আল্লহর রাসূল (ছাল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা করেছেন এবং ও সাহাবায়ে কিরাম (রাদ্বিয়াল্লহু আনহুম) প্রচার করেছেন। তাঁর বক্তব্যে আমরা কোনোরুপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করতে পারি না।
ঘ) পরিশেষে, সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মুসলিম হিসেবে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত ইসলামের শত্রুদের ব্যাপারে, তাদের চক্রান্ত ও পরিকল্পনার ব্যাপারে। আরো মনে রাখা উচিত যে, সারা বিশ্বে মুসলিমরা যতো কষ্ট পাচ্ছে ও অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তার বেশিরভাগ ফিতনাই ক্বিয়ামতের নিদর্শন এর অন্তর্ভুক্ত এবং এগুলো অবশ্যই ঘটবে। যেইরুপ আল্লহ তা'আলা বলেন-
"মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? - আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। [আল আনকাবুত, আয়াত ২-৩]
এইরুপ সন্দেহের সময় কারো জন্য এটা শোভনীয় নয় যে, চারিদিকে অহেতুক উদ্বেগ ছড়াবে এবং ভবিষ্যৎ বিষয় সম্পর্কে ক্বুরআন ও হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা করে এমন সব মতবাদ ছড়াবে যা ব্যাক্তিগত মতামত, অহেতুক মনগড়া ও অনুমান ভিত্তিক।
এই পরীক্ষা ও দূর্দশার সময়ে, যখন উম্মাহ কষ্টের সম্মুখীন এবং আমাদের ঈমান বিপদের মুখে, আমরা আল্লহর দিকে ফিরে, সালাতে এবং দুয়াতে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি এবং এইভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের চূড়ান্ত শিক্ষার অনুসরন করি। আল্লহ তা'আলা পবিত্র ক্বুরআনে বলেনঃ
"আর যখন তাদের কছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মত। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত!" [সূরাহ নিসা, আয়াত, ৮৩]
এক বেদুইন রাসূল সা.-কে ক্বিয়ামতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলো। তিনি উত্তরে বললেন- হায়! এটা অবশ্যই ঘটবে, কিন্তু তুমি এর জন্য কি প্রস্তুত করেছো? (বুখারী, ৫৮১৫)
এর অর্থ,তোমার উচিত ক্বিয়ামতের আগেই নিজের ভালো আমলের দ্বারা নিজেকে প্রস্তুত রাখা।
আল্লহ সবচাইতে ভালো জানেন
উত্তর লিখনেঃ আরশাদ আলী
ছাত্র, দারূল ইফতা, ত্রিনিদাদ
নিরীক্ষন ও অনুমোদন: মুফতি ইব্রাহীম দেশাই
রেফারেন্সঃ-
(১) পূর্বের ফাতওয়া
http://askimam.org/public/question_detail/28659
http://askimam.org/public/question_detail/27634
(২) এটা পরিষ্কারভাবে সহীহ্ বুখারীতে বর্নিত আছে, ৫:৫৮:২৩৬, যে নবী (ছাল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লহু 'আনহা) এর বিয়ে কখন - কিভাবে সম্পন্ন হয়েছিলো, ইমরান হোসেন এসব অস্বীকার করে। তার অনুসারীরাও এব্যাপারে তার বিভ্রান্তিকর লেখা অনুবাদ করে প্রচার করেছে। (সামনে এর জবাব আসবে ইনশাআল্লাহ)
http://www.imranhosein.org/faq/58-women-in-islam/291-what-was-the-age-of-aisha-when-she-was-married-please-comment-on-her-age.html
cache: https://archive.is/wUXHb
(৩) শিয়া বিষয়ে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য
http://www.imranhosein.org/faq/56-world-events/201-i-heard-the-arrivals-are-based-on-shia-beliefs.html
cache: https://archive.is/Qo2mU
(৪) (এব্যাপারেও বিস্তারিত জবাব আসবে ইনশাআল্লাহ) Hosein, Imran. "Ten Major Signs of the Last Day- Has One Just Occured", Imran Hosein, http://www.imranhosein.org/articles/signs-of-the-last-day/76-ten-major-signs-of-the-last-day-has-one-just-occured.html
cache: https://archive.is/IV91k
* লিংকগুলো ২৬ নভেম্বর ২০১৩তে দেখা হয়েছে।
(ext)
আরও অনেক বিভ্রান্তিকর বিষয় তিনি প্রচার করেছেন, যেমন: রাশিয়া মুসলিমদের বন্ধু, অর্থডক্স খ্রিষ্টানরা জান্নাতে যাবে, রজমের বিধান সঠিক নয়, সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ কন্সট্যান্টিনোপল বিজয়ের সময় নিহত খ্রিষ্টানরা শহিদ! সিরিয়ায় জি-হাদ বোগাস, কসাই আসাদের ক্ষমতায় থাকা উচিত... ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়া তিনি স্বপ্ন এবং বিভিন্নরকম গল্প শুনিয়ে একাধিকবার কিয়ামতের দিন-তারিখ ঘোষণা দিয়েছেন, কদিন পর আরেকটা বলেছেন, ইতোমধ্যে এমন বেশ কিছু তারিখ পার হয়ে গেছে। তিনি জাতিসংঘের মসজিদে ১০বছর জুমা পড়িয়েছেন!!
[৫]
فتح الباري لابن رجب (1/ 216)
وهذا كما سأله الأعرابي: متى الساعة؟ فقال: ” ما أعددت لها؟ ” فأعرض عن الجواب عن الساعة إلى ذكر الاستعداد لها؛ لأنه هو المأمور به وهو الذي يعني السائل وغيره وينبغي الاهتمام به
عمدة القاري شرح صحيح البخاري (22/ 196)
قَوْله: (وَيلك} مَا أَعدَدْت لَهَا؟) قَالَ شيخ شَيْخي الطَّيِّبِيّ: سلك مَعَ السَّائِل طَرِيق الأسلوب الْحَكِيم لِأَنَّهُ سَأَلَ عَن وَقت السَّاعَة. وَأجَاب بقوله: مَا أَعدَدْت لَهَا؟ يَعْنِي: إِنَّمَا يهمك أَن تهتم بأهبتها وتعتني بِمَا ينفعك عِنْد قِيَامهَا من الْأَعْمَال الصَّالِحَة، فَقَالَ هُوَ: مَا أَعدَدْت لَهَا؟
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন