শিয়া ধর্মাবলম্বীদের জাতির পিতার পরিচয়
{শিয়াদের ধর্মগ্রন্থ ও মুসলিমদের কিতাবের রেফেরেন্সের ভিত্তিতে}
শিয়া ধর্মের মৌলিক ভিত্তিসমূহ কুরআনবিরোধী ও জঘন্য শিরক-কুফরে সমৃদ্ধ।এর জন্য দায়ী ছিল এক ইয়েমেনী ইহুদি আবদুল্লাহ ইবনে সাবা- যে উসমান(রা) এর সময়ে এসে ইসলাম গ্রহণ এর ভান করে,খিলাফত এর বিভিন্ন অংশে সফর করে ফেতনা সৃষ্টী করে বিদ্রোহী দল তৈরি করে ও সর্বশেষে সেই দল কর্তৃক উসমান(রা) শহীদ হন।এরপরে নিজেকে আলী(রা) এর মহাভক্ত দাবি করে তাঁর সাথে অবস্থান করে ধীরে ধীরে সাবাঈ আকিদার প্রসার ঘটায়। আলী(রা) এর ইমামত ফরয,রাসূল(সা) এর পরে ওসি,সাহাবাদের তাকফির করা ইত্যাদি আকিদার জন্ম দেয়- যা থেকে পরে শিয়া ধর্মের আকিদা(আহলে বাইতের নামে মিথ্যাচার,রজাআত,তাহরিফে কুরআন,কবর-পূজা ইত্যাদি) ডালপালা মেলে।এছাড়া আলী(রা)কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে জঘন্য শিরক করা,যা এখনো ইমামদের ব্যাপারে আকিদাস্বরূপে শিয়াদের মৌলিক কিতাবসমূহে বিস্তার করে আছে- ইমামরা সকল কিছুর মালিক,আমল দেখতে পায়,জন্ম-মৃত্যুর নিয়ন্ত্রন রাখে,গায়েবের সকল জ্ঞানের মালিক,জান্নাত-জাহান্নামের বন্টনকারী ইত্যাদি। নাঊযুবিল্লাহ
শিয়াদের মধ্যে প্রবণতা রয়েছে যে, কেউ এক্কেবারে অস্বীকার করে ও “ইবনে সাবা কাল্পনিক চরিত্র, নাসিবি/সুন্নি কর্তৃক রচিত” এসব বলে আমাদের মুসলমানদের দোষারোপ করে।আবার কেউ কেউ তাকে স্বীকার করলেও বলে-তার সাথে শিয়া মতবাদের সম্পর্ক নাই! অস্তিত্ব আছে নাকি “সুন্নি-নাসিবীদের বানানো” এ নিয়ে খোদ শিয়াদের মধ্যেই পাল্টাপাল্টি বই লেখা হয়েছে।
◊●◊ এখন এ সম্ভব নয় যে সব বই/অপবাদের জবাব একবারে দেয়া হবে। আপাতত শিয়া-ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ কিতাব থেকে আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর অস্তিত্ব+শিয়া আকিদায় অবদান প্রমাণ করব ও পরে মুসলমানদের কিতাবের উপরে আরোপিত অভিযোগ রদ করব ইনশা-আল্লাহ! ◊●◊
»বেশ কিছু সংখ্যক আহলে ইলম উল্লেখ করেছেন যে, “আব্দুল্লাহ ইব্ন সাবা ইহুদি থেকে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আলী আলাইহিস সালামের পক্ষ নেন। তিনি ইহুদি থাকাবস্থায় বলতেন ইউশা ইব্ন নুন হচ্ছে মূসার ওসি, এটা ছিল তার বাড়াবাড়ি। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আলীর ব্যাপারে অনুরূপ আকিদা প্রচার করেন। তিনি সর্বপ্রথম বলেন আলীর ইমামত ফরয। তিনি আলীর দুশমনদের সাথে বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন, তার বিরোধীদের তিনি অপছন্দ করেন ও তাদেরকে কাফের বলেন। এখান থেকেই যারা শী‘আ নয়, তারা বলেন শী‘আ ও রাফেযীর মূল হচ্ছে ইহুদি”। [রিজাল আল কাশী,রিওয়ায়াত ১৭৫,পৃষ্ঠা ১০৩]
» “আলী(আ)এর প্রতি গুলু(বাড়াবাড়ি) করে সর্বপ্রথম যে দল/ফেরকা দাবি করে সর্বপ্রথম সাবাঈ দল-যারা ছিল আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর সাথী। তারা আবু বকর,উমর ও উসমান সহ আরো সাহাবাদের কুৎসা করে ও আলী(আ) কে সর্বাগ্রে স্থান দেয়।এই মতবাদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে সাবা কে আলী(আ) হত্যার নির্দেশ দিলে লোকেরা বলল-আপনি এমন ব্যক্তিকে হত্যা করবেন,যে আপনার ও আহলে বাইতের ভালবাসার দাবি রাখে ও আপনার বিরোধীদের বারাআত করে? এরপরে তাকে মাদায়েনে নির্বাসিত করা হল।
আলী(আ)এর সঙ্গী আহলে ইলম এর মতে আবদুল্লাহ ইবনে সাবা একজন ইহুদি ছিল যে ইসলাম গ্রহণ করে ও আলী(আ)এর ওয়ালি হবার দাবি করে- ইহুদি শরীয়তে যেমন মুসা(আ) এর পরে ইউশা ইবনে নূন,তেমনি রাসূল(সা) এর ওফাতের পরেও আলী(রা) এর স্থানও সেরূপ।সে’ই সর্বপ্রথম দাবি করে যে আলী(আ)এর ইমামত ফরয এবং সে’ই আলী(আ) এর বিরোধিতাকারীদের থেকে দায়মুক্ত ঘোষণা করে ও তাকফির করে।” [ফিরাকুশ শিয়া,পৃষ্ঠা ১৯-২০]। বিহারুল আনোয়ার ২৮৭পৃ/২৫ এও অনুরূপ বিবরণ আছে।
এছাড়া মাকালাতুল ফিরাক এর ২০পৃষ্ঠাতে সাইদ বিন আশারী আল কুম্মির অনুরূপ বিবরণ উল্লিখিত আছে।[আল ওয়াকফিয়াত দিরাসাত তাহলিলিয়াত,পৃষ্টা ৪১]
» নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়েরী এর আনওয়ার আন-নুমানিয়া(১৬২/২)তেও অনুরূপ উল্লেখ আছে যে, আবদুল্লাহ ইবনে সাবা আলী(আ)কে হক্ক এর সত্ত্বা(মালিক) বলেছিল, আলী(আ)তাকে মাদায়েনে নির্বাসিত করেন, সে ইহুদি থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং ইউশা ইবনে নূন এর মত আলী(আ) এর ব্যাপারে ওসিয়্যাত এর দাবি করেছিল।
» ইবনে আবিল হাদিদঃ “সর্বপ্রথম গুলু(বাড়াবাড়ি) প্রকাশ করেছিল আবদুল্লাহ ইবনে সাবা।সে একদিন খুতবা(আলীর) সামনে বলে উঠল- আপনি আপনি,বারবার বলতে থাকল।(আলী)তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,ধবংস হও! কে আমি? ইবনে সাবা বলল- আপনি আল্লাহ্!এরপরে তাকে আর তার মত লোকদের আটকের নির্দেশ দেয়া হল।” [শরহে নাহজুল বালাগা, ৫/৫]
» আবু জাফর বাবুইয়্যা কুম্মী- হা.৯৫৫: “ আমিরুল মু’মিনীনা(আ) বললেন, তোমাদের কেউ সালাত শেষ করে যেন দু’হাত আকাশের দিকে তুলে দুয়া করে।তখন আবদুল্লাহ ইবনে সাবা জিজ্ঞাসা করল-আল্লাহ্ কি সব জায়গায় নেই? তিনি বললেন,নিশ্চয়ই।সে(ইবনে সাবা) বলল,তাহলে আকাশে কেন?তিনি বললেন, কুরআনে ‘আসমানে তোমাদের রিযিক ও যা ওয়াদা করা হয়েছে’ বলা আছে,তাই রিযিক যেখানে আছে সেখানেই চাওয়া” [মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকীহ,২২৯পৃ/১ম খণ্ড] এছাড়া অনুরূপ ‘শায়খ তুসি’ এনেছে ১৩১৫ নং বর্ণনাতে[তাহযিবুল আহকাম, ২৮২পৃ/২য় খণ্ড]
» রিজাল আল-তুসি কিতাবে #৭১৮ বর্ণনাকারী হিসেবে(৭৫পৃষ্ঠা) আবদুল্লাহ ইবনে সাবার ব্যাপারে বলে হয়েছে সে কুফর এর দিকে প্রত্যাবর্তন করেছিল,সেই প্রথম গুলু(বাড়াবাড়ি) প্রকাশ করেছিল।
» সাবাঈ দল তথা ইবনে সাবা এর মতাদর্শী সম্পর্কে- “সাবাঈ দল,যারা আলীর ইলাহিয়্যাত এর ব্যাপারে আলোচিত,তারা আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর অনুসারী”{রাসায়েল ফি ক্কাওয়েদুল আকায়েদ,পৃষ্ঠা ৮৫}
এছারা আরো বহু কিতাবে সাবাঈ দলের উৎপত্তিকারক আবদুল্লাহ ইবনে সাবা ও তার সর্বপ্রথম আলী(রা) এর ইমামত,ওয়াসিয়্যাত ফরয দাবি করা,আহলে বাইতকে বাড়াবাড়ি করা,শিরক করা ইত্যাদি সম্পর্কে “সহি” সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যেমন;- আল গুলু ওয়াল ফিরাক পৃ ২৫৪,২৫৫; আল মুখতার মিন কালিমাতাল ইমাম মাহদী ২৬/৩; আসরার আল-ইমামিয়্যাত পৃ ৫০৩ ইত্যাদি। এছাড়া সাবাঈদের রাজাআত(মৃতের প্রত্যাবর্তন)আকিদার কথাও বহু কিতাবে উল্লিখিত আছে। সর্বোপরি, ইহুদি আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর অস্তিত্ব,শিয়া মতবাদের মৌলিক সূচনায় তার অবদান-ইত্যাদি বিষয় শিয়া-ধর্মগ্রন্থের উপরোক্ত রেফারেন্স দ্বারা পরিষ্কার প্রমাণিত।
“সুন্নি”দের পর্যাপ্ত ঐতিহাসিক বর্ণনা নেই ইবনে সাবার ব্যাপারে,যা আছে তা সাইফ ইবনে উমর আল-তামিমী এর মাধ্যমে, যে দুর্বল বর্ণনাকারী।আসলে “জঈফ” প্রসঙ্গ ধরলে আমাদের মুসলিমের কিতাব নিয়ে শিয়া-মালুদের কিছু বলার থাকেনা,কারণ তারা আমাদের কিতাবের যে কিছু হাদিস নিয়ে ফেতনা প্যাচানোড় সুযোগ পায় সেগুলা জঈফ;কিন্তু এখানে তারা বেঁকে বসে।সাইফ বিন উমর এর বর্ণনা জয়ীফ হলেও আকিদা,হুকুম-আহকাম ব্যতীত অন্য বিষয়ে, বিশেষত ইতিহাসের ক্ষেত্রে ও সমর্থিত বর্ণনা থাকলে তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে জারহ-তাদীলের শীর্ষ আলেমগণের রায়-
* ইবনে হাজার আসকালানী(র) বলেন- (عمدة في التاريخ)অর্থাৎ ইতিহাসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য।{তাকরিবুত তাহযিব ৩৪৪/১}
* ইমাম যাহাবী(র) – (كان أخباريا عارفا) সে জ্ঞানসম্পন্ন ঐতিহাসিক ছিল।{মিযানুল ই’তিদাল ২৫৫/২}
এছাড়া ইবনে আবি হাতিম তার হাদিসকে ছেড়ে দিতে বললেও, শর্তসাপেক্ষে ঐতিহাসিক বর্ণনা নেয়া যেতে পারে বলেছেন।
আলোচিত রাবী সাইফ বিন উমর থেকে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,তারিখে তাবারীতে ছাড়া আরোও অন্যান্য রাবীদের বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে সাবার পরিচয় উঠে এসেছে, যে ইহুদি আবদুল্লাহ ইবনে সাবা, কালো ব্যক্তি, যার মার নাম সাওদা ছিল।সে সাহাবাদের কটুক্তি ও আলী(রা)কে নিয়ে জঘন্য শিরক করত। যেমন-
» যায়দ বিন ওয়াহাব বর্ণিত, সুওয়ায়েদ বিন গাফলাহ আলী(রা) এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,আমি একদল লোকের থেকে শুনলাম আপনি নাকি আবু বকর ও উমর এর ব্যাপারে খারাপ বলছিল এবং বলল আপনিও এরূপ ধারণা রাখেন।আলী(রা) বললেন, “এই কালো শয়তান(الخبيث الأسود){ইবনে সাবা} আমার কাছে কি চায়?আমি তাঁদের ব্যাপারে ভাল ব্যতীত খারাপ ধারণা রাখার ব্যাপারে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করি।আমার কাছে যদি পৌঁছে যে কেউ আমাকে তাঁদের উপরে মর্যাদা দিচ্ছে,তাহলে আমি মিথ্যাবাদিতার দায়ে তাকে চাবুক মারব”।এরপরে তিনি নির্দেশ দেন ইবনে সাবাকে যেন মাদায়েনে নির্বাসন দেয়া হয় এবং বলেন “সে ও আমি একই ভূমিতে থাকতে পারব না”[লিসানুল মিযান,২৯০/৩]
» আব্বাস আল হামাদানী হতে সালামা,হুযাইয়্যা আল কিন্দী থেকে বর্ণিত- আলী(রা) কে মিম্বরের উপরে উঠে বলতে শুনেছি,“কে আমাকে এই আল্লাহ্র উপরে মিথ্যাচারকারী কালো বস্তুর(الحميت الأسود) থেকে নিস্তার দিবে?”। এ বলে তিনি ইবনুস সাওদা(আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর কুনিয়া)কে নির্দেশ করলেন। [তারিখে কাবির,১৭৭/৩]
» সাহল বিন কুহায়ল,যায়দ থেকে বর্ণিত,আলী(রা) মিম্বরে উঠে বলেন, “এই কালো পাত্র আমার থেকে কি চায়?” অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনে সাবা,যে আবু বকর(রা) ও উমর(রা) এর ব্যাপারে খারাপ বলত।আবদুল্লাহ ইবনে সাবা সর্বপ্রথম মিথ্যাচার করেছিল।[তারিখে দামেশকী ৭/২৯]
» আবুল জালাসি বর্ণিত, আলী(রা)কে আবদুল্লাহ ইবনে সাবার উদ্দেশ্যে বলতে শুনেছি-“তুমি নিপাত যাও।রাসূল(সা) আমার কাছে এমন কিছু বলে যাননি যা অন্যদের কাছে গোপন।কিয়ামত পর্যন্ত ৩০ জন মিথ্যাবাদী আসবে, এবং তুমি তাদের একজন” [তারিখে দামেশকী ৩৪/৬] আল-সাম্মাক এর সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
» আবু তুফায়েল হতে বর্ণিত,আলী(রা) মিম্বরে উঠে ইবনুসা সাওদা, অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনে সাবার ব্যাপারে বলেন- “সে আল্লাহ্ ও তার রাসূল(সা) এর ব্যাপারে মিথ্যারোপ করে”।সে আবু বকর(রা) ও উমর(রা) সম্পর্কে খারাপ বলত।
জাবির বর্ণিত,আলী(রা) যখন সকলের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন বাইয়্যাত এর পরে, আবদুল্লাহ ইবনে সাবা বলল-আপনি সকলের শ্রেষ্ঠ মানব।আলী(রা) বললেন,আল্লাহকে ভয় কর।ইবনে সাবা বলল,আপনিই মালিক। আলী(রা) বললেন,আল্লাহকে ভয় কর।ইবনে সাবা বলল,আপনি সকল সৃষ্টীর সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা।এরপরে আলী(রা) তাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন।কিন্তু রাফেযীরা এগিয়ে এসে বলল,আপনি তাকে ছেড়ে দিলেই ভাল হবে, নতুবা তার সমর্থকরা বিদ্রোহ করবে।এরপরে আলী(রা) তাকে মাদায়েনে নির্বাসন দেন। [মুখতাসার তারিখে দামিশক- ইবনে মুনযুর, ২০৪/৪]
শিয়া ধর্মের কিছু বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে সাবাকে আগুনে পোড়ানোর কথা থাকলেও,বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহে ও মুসলমানদের কিতাবের বর্ণনায় চূড়ান্তভাবে বুঝা যায় যে, তাকে নির্বাসন দেয়া হলেও তার অনুসারী বেশ বড় সংখ্যায় ছিল,যাদের মধ্যে সাবাঈ শিরকি-কুফরি আকিদা বিরাজ করত।এবং তাদেরি একটা দলকে আলী(রা) পুড়িয়ে মেরেছিলেন।যদিও ইবনে সাবার যেসব আকিদার ব্যাপারে জানা যায়,সেগুলা আস্তে আস্তে ঠিকই বিস্তার লাভ করে পরিপূর্ণ শিয়া-রাফেযী ধর্মের জন্ম দেয়।তারিখে দামেশকীর বর্ণনায় ইবনে হাজার আসকালানী(র) এর মতও এসেছে যে আলী(রা) আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর অনুসারীদের এক অংশকে আগুনে পুড়িয়েছিলেন।বুখারীর ৬৪৫৪ নাম্বার হাদিসে যে মুরতাদদের জ্বালানর ঘটনা আছে,তার ব্যাপারেও আলেমদের অনেকের মত যে,তারাই সেই সাবাঈ দল,যাদেরকে জঘন্য শিরক এর কারণে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন আলী(রা)।
* বিখ্যাত তাবেয়ী আল-আ’মাশ(র) বলেনঃ সাবাইয়্যাহদের থেকে সাবধান।আমি এক সময়ে দেখেছি তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হত।{আল কামিল ২৭৫/৭}
* আল-শা’বী(র): আমি সাবাঈদের চেয়ে নির্বুদ্ধি দল আর দেখিনি।{আল কামিল ২১২৮/৬}
* কাতাদা(র): সূরা আ’লে ইমরান এর ৭ম আয়াতে, অন্তরে কুটিলতার কারণে কুরআন পড়ে অপব্যাখ্যাকারী,ফিতনাকারীদের সম্পর্কে বলেন- উল্লিখিত ব্যক্তিরা যদি সাবাঈ,হুরুরিয়ারা না হয়,তবে আমি জানিনা এরা কারা।এরপরে তিনি বলেন, আল্লাহ্র শপথ!সাবাঈরা বিদাতী,তারা আল্লাহ্র কিতাব ও নবীর সূন্নাহ এর বাইরে উদ্ভাবন করে।{আল ইবানাহ ২৬৯/১}
* ইবনে আওন হতে, ইবরাহীম আন-নাখয়ী(র)কে ২ সাবাঈ ব্যক্তি- মুগিরা ইবনে সাঈদ ও আবু আব্দুর রহীমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “তাদের থেকে সাবধান থাকো,তারা মিথ্যাবাদী”
* সাবাঈদের উল্লেখ করে ইমাম যুহরী(র) বলেনঃ আমি খ্রিস্টানদের সাথে সামঞ্জস্যে সাবাঈদের চেয়ে বেশি কাউকে দেখিনি{আল-শারিয়াহ ২৭৩}। আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ এর ব্যাপারে তিনি বলেন, “সে সাবাঈদের থেকে হাদিস সংগ্রহ করত” {আল মারিফা অয়াল-তারিখ ৭০/৩}
* মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ আল-কালবী নামের এক ব্যক্তি নিজেকে সাবাঈ বলত।আহলে বাইতের থুতুতে নিজের স্মৃতি ফেরার কিচ্ছা বলত।সে আরো বলত, “জিবরাঈল(আ) অহী নিয়ে এসে রাসূল(সা)কে না পেলে আলী(আ)কে দিয়ে লিখাতেন”। ইবনে হিব্বান(র) তাকে সাবাঈ হিসেবে উল্লেখ করেন।{আল মাজহুরিন ২৬৩/২;তাহযিব আত তাহযিব ৫৬৯/৩}
* ইমাম আবুল হাসান আল-আশআরী বলেন, ১৪ ধরণের গা’লিদের মধ্যে সাবাঈরা অন্যতম, যারা আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর দল এবং দাবি করে আলী(রা) কিয়ামতের পূর্বে আবার আসবেন।{আল মাকালাত আল ইসলামিয়া ৮৬}
* ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জুযানি বলেন, সাবাঈরা কুফর করত এবং আলী(রা)কে আল্লাহ্ দাবি করে অতিভক্তি দেখাত, আলী(রা) তাদের একটা দলকে আগুনে পুড়িয়ে মারেন।{আল-আহওয়াল আল রিজাল,পৃ৩৭}
আল্লাহ্ আমাদেরকে আবদুল্লাহ ইবনে সাবার তত্বে সৃষ্ট শিয়া-কাফের ও তাদের প্রতীক্ষিত দাজ্জাল এর ফিতনা থেকে হিফাজত করুন
---------
উৎসঃ The Rafidologist: এসো শিয়া চিনি
শিয়া ধর্মের মৌলিক ভিত্তিসমূহ কুরআনবিরোধী ও জঘন্য শিরক-কুফরে সমৃদ্ধ।এর জন্য দায়ী ছিল এক ইয়েমেনী ইহুদি আবদুল্লাহ ইবনে সাবা- যে উসমান(রা) এর সময়ে এসে ইসলাম গ্রহণ এর ভান করে,খিলাফত এর বিভিন্ন অংশে সফর করে ফেতনা সৃষ্টী করে বিদ্রোহী দল তৈরি করে ও সর্বশেষে সেই দল কর্তৃক উসমান(রা) শহীদ হন।এরপরে নিজেকে আলী(রা) এর মহাভক্ত দাবি করে তাঁর সাথে অবস্থান করে ধীরে ধীরে সাবাঈ আকিদার প্রসার ঘটায়। আলী(রা) এর ইমামত ফরয,রাসূল(সা) এর পরে ওসি,সাহাবাদের তাকফির করা ইত্যাদি আকিদার জন্ম দেয়- যা থেকে পরে শিয়া ধর্মের আকিদা(আহলে বাইতের নামে মিথ্যাচার,রজাআত,তাহরিফে কুরআন,কবর-পূজা ইত্যাদি) ডালপালা মেলে।এছাড়া আলী(রা)কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে জঘন্য শিরক করা,যা এখনো ইমামদের ব্যাপারে আকিদাস্বরূপে শিয়াদের মৌলিক কিতাবসমূহে বিস্তার করে আছে- ইমামরা সকল কিছুর মালিক,আমল দেখতে পায়,জন্ম-মৃত্যুর নিয়ন্ত্রন রাখে,গায়েবের সকল জ্ঞানের মালিক,জান্নাত-জাহান্নামের বন্টনকারী ইত্যাদি। নাঊযুবিল্লাহ
শিয়াদের মধ্যে প্রবণতা রয়েছে যে, কেউ এক্কেবারে অস্বীকার করে ও “ইবনে সাবা কাল্পনিক চরিত্র, নাসিবি/সুন্নি কর্তৃক রচিত” এসব বলে আমাদের মুসলমানদের দোষারোপ করে।আবার কেউ কেউ তাকে স্বীকার করলেও বলে-তার সাথে শিয়া মতবাদের সম্পর্ক নাই! অস্তিত্ব আছে নাকি “সুন্নি-নাসিবীদের বানানো” এ নিয়ে খোদ শিয়াদের মধ্যেই পাল্টাপাল্টি বই লেখা হয়েছে।
◊●◊ এখন এ সম্ভব নয় যে সব বই/অপবাদের জবাব একবারে দেয়া হবে। আপাতত শিয়া-ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ কিতাব থেকে আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর অস্তিত্ব+শিয়া আকিদায় অবদান প্রমাণ করব ও পরে মুসলমানদের কিতাবের উপরে আরোপিত অভিযোগ রদ করব ইনশা-আল্লাহ! ◊●◊
শিয়া ধর্মগ্রন্থে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা
»বেশ কিছু সংখ্যক আহলে ইলম উল্লেখ করেছেন যে, “আব্দুল্লাহ ইব্ন সাবা ইহুদি থেকে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আলী আলাইহিস সালামের পক্ষ নেন। তিনি ইহুদি থাকাবস্থায় বলতেন ইউশা ইব্ন নুন হচ্ছে মূসার ওসি, এটা ছিল তার বাড়াবাড়ি। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আলীর ব্যাপারে অনুরূপ আকিদা প্রচার করেন। তিনি সর্বপ্রথম বলেন আলীর ইমামত ফরয। তিনি আলীর দুশমনদের সাথে বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন, তার বিরোধীদের তিনি অপছন্দ করেন ও তাদেরকে কাফের বলেন। এখান থেকেই যারা শী‘আ নয়, তারা বলেন শী‘আ ও রাফেযীর মূল হচ্ছে ইহুদি”। [রিজাল আল কাশী,রিওয়ায়াত ১৭৫,পৃষ্ঠা ১০৩]
» “আলী(আ)এর প্রতি গুলু(বাড়াবাড়ি) করে সর্বপ্রথম যে দল/ফেরকা দাবি করে সর্বপ্রথম সাবাঈ দল-যারা ছিল আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর সাথী। তারা আবু বকর,উমর ও উসমান সহ আরো সাহাবাদের কুৎসা করে ও আলী(আ) কে সর্বাগ্রে স্থান দেয়।এই মতবাদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে সাবা কে আলী(আ) হত্যার নির্দেশ দিলে লোকেরা বলল-আপনি এমন ব্যক্তিকে হত্যা করবেন,যে আপনার ও আহলে বাইতের ভালবাসার দাবি রাখে ও আপনার বিরোধীদের বারাআত করে? এরপরে তাকে মাদায়েনে নির্বাসিত করা হল।
আলী(আ)এর সঙ্গী আহলে ইলম এর মতে আবদুল্লাহ ইবনে সাবা একজন ইহুদি ছিল যে ইসলাম গ্রহণ করে ও আলী(আ)এর ওয়ালি হবার দাবি করে- ইহুদি শরীয়তে যেমন মুসা(আ) এর পরে ইউশা ইবনে নূন,তেমনি রাসূল(সা) এর ওফাতের পরেও আলী(রা) এর স্থানও সেরূপ।সে’ই সর্বপ্রথম দাবি করে যে আলী(আ)এর ইমামত ফরয এবং সে’ই আলী(আ) এর বিরোধিতাকারীদের থেকে দায়মুক্ত ঘোষণা করে ও তাকফির করে।” [ফিরাকুশ শিয়া,পৃষ্ঠা ১৯-২০]। বিহারুল আনোয়ার ২৮৭পৃ/২৫ এও অনুরূপ বিবরণ আছে।
এছাড়া মাকালাতুল ফিরাক এর ২০পৃষ্ঠাতে সাইদ বিন আশারী আল কুম্মির অনুরূপ বিবরণ উল্লিখিত আছে।[আল ওয়াকফিয়াত দিরাসাত তাহলিলিয়াত,পৃষ্টা ৪১]
» নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়েরী এর আনওয়ার আন-নুমানিয়া(১৬২/২)তেও অনুরূপ উল্লেখ আছে যে, আবদুল্লাহ ইবনে সাবা আলী(আ)কে হক্ক এর সত্ত্বা(মালিক) বলেছিল, আলী(আ)তাকে মাদায়েনে নির্বাসিত করেন, সে ইহুদি থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং ইউশা ইবনে নূন এর মত আলী(আ) এর ব্যাপারে ওসিয়্যাত এর দাবি করেছিল।
» ইবনে আবিল হাদিদঃ “সর্বপ্রথম গুলু(বাড়াবাড়ি) প্রকাশ করেছিল আবদুল্লাহ ইবনে সাবা।সে একদিন খুতবা(আলীর) সামনে বলে উঠল- আপনি আপনি,বারবার বলতে থাকল।(আলী)তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,ধবংস হও! কে আমি? ইবনে সাবা বলল- আপনি আল্লাহ্!এরপরে তাকে আর তার মত লোকদের আটকের নির্দেশ দেয়া হল।” [শরহে নাহজুল বালাগা, ৫/৫]
» আবু জাফর বাবুইয়্যা কুম্মী- হা.৯৫৫: “ আমিরুল মু’মিনীনা(আ) বললেন, তোমাদের কেউ সালাত শেষ করে যেন দু’হাত আকাশের দিকে তুলে দুয়া করে।তখন আবদুল্লাহ ইবনে সাবা জিজ্ঞাসা করল-আল্লাহ্ কি সব জায়গায় নেই? তিনি বললেন,নিশ্চয়ই।সে(ইবনে সাবা) বলল,তাহলে আকাশে কেন?তিনি বললেন, কুরআনে ‘আসমানে তোমাদের রিযিক ও যা ওয়াদা করা হয়েছে’ বলা আছে,তাই রিযিক যেখানে আছে সেখানেই চাওয়া” [মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকীহ,২২৯পৃ/১ম খণ্ড] এছাড়া অনুরূপ ‘শায়খ তুসি’ এনেছে ১৩১৫ নং বর্ণনাতে[তাহযিবুল আহকাম, ২৮২পৃ/২য় খণ্ড]
» রিজাল আল-তুসি কিতাবে #৭১৮ বর্ণনাকারী হিসেবে(৭৫পৃষ্ঠা) আবদুল্লাহ ইবনে সাবার ব্যাপারে বলে হয়েছে সে কুফর এর দিকে প্রত্যাবর্তন করেছিল,সেই প্রথম গুলু(বাড়াবাড়ি) প্রকাশ করেছিল।
» সাবাঈ দল তথা ইবনে সাবা এর মতাদর্শী সম্পর্কে- “সাবাঈ দল,যারা আলীর ইলাহিয়্যাত এর ব্যাপারে আলোচিত,তারা আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর অনুসারী”{রাসায়েল ফি ক্কাওয়েদুল আকায়েদ,পৃষ্ঠা ৮৫}
এছারা আরো বহু কিতাবে সাবাঈ দলের উৎপত্তিকারক আবদুল্লাহ ইবনে সাবা ও তার সর্বপ্রথম আলী(রা) এর ইমামত,ওয়াসিয়্যাত ফরয দাবি করা,আহলে বাইতকে বাড়াবাড়ি করা,শিরক করা ইত্যাদি সম্পর্কে “সহি” সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যেমন;- আল গুলু ওয়াল ফিরাক পৃ ২৫৪,২৫৫; আল মুখতার মিন কালিমাতাল ইমাম মাহদী ২৬/৩; আসরার আল-ইমামিয়্যাত পৃ ৫০৩ ইত্যাদি। এছাড়া সাবাঈদের রাজাআত(মৃতের প্রত্যাবর্তন)আকিদার কথাও বহু কিতাবে উল্লিখিত আছে। সর্বোপরি, ইহুদি আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর অস্তিত্ব,শিয়া মতবাদের মৌলিক সূচনায় তার অবদান-ইত্যাদি বিষয় শিয়া-ধর্মগ্রন্থের উপরোক্ত রেফারেন্স দ্বারা পরিষ্কার প্রমাণিত।
◊●◊ আমাদের মুসলিমদের কিতাবের ব্যাপারে শিয়াদের অভিযোগ হল-
“সুন্নি”দের পর্যাপ্ত ঐতিহাসিক বর্ণনা নেই ইবনে সাবার ব্যাপারে,যা আছে তা সাইফ ইবনে উমর আল-তামিমী এর মাধ্যমে, যে দুর্বল বর্ণনাকারী।আসলে “জঈফ” প্রসঙ্গ ধরলে আমাদের মুসলিমের কিতাব নিয়ে শিয়া-মালুদের কিছু বলার থাকেনা,কারণ তারা আমাদের কিতাবের যে কিছু হাদিস নিয়ে ফেতনা প্যাচানোড় সুযোগ পায় সেগুলা জঈফ;কিন্তু এখানে তারা বেঁকে বসে।সাইফ বিন উমর এর বর্ণনা জয়ীফ হলেও আকিদা,হুকুম-আহকাম ব্যতীত অন্য বিষয়ে, বিশেষত ইতিহাসের ক্ষেত্রে ও সমর্থিত বর্ণনা থাকলে তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে জারহ-তাদীলের শীর্ষ আলেমগণের রায়-
* ইবনে হাজার আসকালানী(র) বলেন- (عمدة في التاريخ)অর্থাৎ ইতিহাসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য।{তাকরিবুত তাহযিব ৩৪৪/১}
* ইমাম যাহাবী(র) – (كان أخباريا عارفا) সে জ্ঞানসম্পন্ন ঐতিহাসিক ছিল।{মিযানুল ই’তিদাল ২৫৫/২}
এছাড়া ইবনে আবি হাতিম তার হাদিসকে ছেড়ে দিতে বললেও, শর্তসাপেক্ষে ঐতিহাসিক বর্ণনা নেয়া যেতে পারে বলেছেন।
আলোচিত রাবী সাইফ বিন উমর থেকে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,তারিখে তাবারীতে ছাড়া আরোও অন্যান্য রাবীদের বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে সাবার পরিচয় উঠে এসেছে, যে ইহুদি আবদুল্লাহ ইবনে সাবা, কালো ব্যক্তি, যার মার নাম সাওদা ছিল।সে সাহাবাদের কটুক্তি ও আলী(রা)কে নিয়ে জঘন্য শিরক করত। যেমন-
» যায়দ বিন ওয়াহাব বর্ণিত, সুওয়ায়েদ বিন গাফলাহ আলী(রা) এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,আমি একদল লোকের থেকে শুনলাম আপনি নাকি আবু বকর ও উমর এর ব্যাপারে খারাপ বলছিল এবং বলল আপনিও এরূপ ধারণা রাখেন।আলী(রা) বললেন, “এই কালো শয়তান(الخبيث الأسود){ইবনে সাবা} আমার কাছে কি চায়?আমি তাঁদের ব্যাপারে ভাল ব্যতীত খারাপ ধারণা রাখার ব্যাপারে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করি।আমার কাছে যদি পৌঁছে যে কেউ আমাকে তাঁদের উপরে মর্যাদা দিচ্ছে,তাহলে আমি মিথ্যাবাদিতার দায়ে তাকে চাবুক মারব”।এরপরে তিনি নির্দেশ দেন ইবনে সাবাকে যেন মাদায়েনে নির্বাসন দেয়া হয় এবং বলেন “সে ও আমি একই ভূমিতে থাকতে পারব না”[লিসানুল মিযান,২৯০/৩]
» আব্বাস আল হামাদানী হতে সালামা,হুযাইয়্যা আল কিন্দী থেকে বর্ণিত- আলী(রা) কে মিম্বরের উপরে উঠে বলতে শুনেছি,“কে আমাকে এই আল্লাহ্র উপরে মিথ্যাচারকারী কালো বস্তুর(الحميت الأسود) থেকে নিস্তার দিবে?”। এ বলে তিনি ইবনুস সাওদা(আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর কুনিয়া)কে নির্দেশ করলেন। [তারিখে কাবির,১৭৭/৩]
» সাহল বিন কুহায়ল,যায়দ থেকে বর্ণিত,আলী(রা) মিম্বরে উঠে বলেন, “এই কালো পাত্র আমার থেকে কি চায়?” অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনে সাবা,যে আবু বকর(রা) ও উমর(রা) এর ব্যাপারে খারাপ বলত।আবদুল্লাহ ইবনে সাবা সর্বপ্রথম মিথ্যাচার করেছিল।[তারিখে দামেশকী ৭/২৯]
» আবুল জালাসি বর্ণিত, আলী(রা)কে আবদুল্লাহ ইবনে সাবার উদ্দেশ্যে বলতে শুনেছি-“তুমি নিপাত যাও।রাসূল(সা) আমার কাছে এমন কিছু বলে যাননি যা অন্যদের কাছে গোপন।কিয়ামত পর্যন্ত ৩০ জন মিথ্যাবাদী আসবে, এবং তুমি তাদের একজন” [তারিখে দামেশকী ৩৪/৬] আল-সাম্মাক এর সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
» আবু তুফায়েল হতে বর্ণিত,আলী(রা) মিম্বরে উঠে ইবনুসা সাওদা, অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনে সাবার ব্যাপারে বলেন- “সে আল্লাহ্ ও তার রাসূল(সা) এর ব্যাপারে মিথ্যারোপ করে”।সে আবু বকর(রা) ও উমর(রা) সম্পর্কে খারাপ বলত।
জাবির বর্ণিত,আলী(রা) যখন সকলের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন বাইয়্যাত এর পরে, আবদুল্লাহ ইবনে সাবা বলল-আপনি সকলের শ্রেষ্ঠ মানব।আলী(রা) বললেন,আল্লাহকে ভয় কর।ইবনে সাবা বলল,আপনিই মালিক। আলী(রা) বললেন,আল্লাহকে ভয় কর।ইবনে সাবা বলল,আপনি সকল সৃষ্টীর সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা।এরপরে আলী(রা) তাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন।কিন্তু রাফেযীরা এগিয়ে এসে বলল,আপনি তাকে ছেড়ে দিলেই ভাল হবে, নতুবা তার সমর্থকরা বিদ্রোহ করবে।এরপরে আলী(রা) তাকে মাদায়েনে নির্বাসন দেন। [মুখতাসার তারিখে দামিশক- ইবনে মুনযুর, ২০৪/৪]
শিয়া ধর্মের কিছু বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে সাবাকে আগুনে পোড়ানোর কথা থাকলেও,বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহে ও মুসলমানদের কিতাবের বর্ণনায় চূড়ান্তভাবে বুঝা যায় যে, তাকে নির্বাসন দেয়া হলেও তার অনুসারী বেশ বড় সংখ্যায় ছিল,যাদের মধ্যে সাবাঈ শিরকি-কুফরি আকিদা বিরাজ করত।এবং তাদেরি একটা দলকে আলী(রা) পুড়িয়ে মেরেছিলেন।যদিও ইবনে সাবার যেসব আকিদার ব্যাপারে জানা যায়,সেগুলা আস্তে আস্তে ঠিকই বিস্তার লাভ করে পরিপূর্ণ শিয়া-রাফেযী ধর্মের জন্ম দেয়।তারিখে দামেশকীর বর্ণনায় ইবনে হাজার আসকালানী(র) এর মতও এসেছে যে আলী(রা) আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর অনুসারীদের এক অংশকে আগুনে পুড়িয়েছিলেন।বুখারীর ৬৪৫৪ নাম্বার হাদিসে যে মুরতাদদের জ্বালানর ঘটনা আছে,তার ব্যাপারেও আলেমদের অনেকের মত যে,তারাই সেই সাবাঈ দল,যাদেরকে জঘন্য শিরক এর কারণে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন আলী(রা)।
সাবাঈ দলের অস্তিত্ব ও তাঁদের সম্পর্কে হাদিস ও জারহ-তাদিলের ইমামদের মন্তব্য-
* বিখ্যাত তাবেয়ী আল-আ’মাশ(র) বলেনঃ সাবাইয়্যাহদের থেকে সাবধান।আমি এক সময়ে দেখেছি তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হত।{আল কামিল ২৭৫/৭}
* আল-শা’বী(র): আমি সাবাঈদের চেয়ে নির্বুদ্ধি দল আর দেখিনি।{আল কামিল ২১২৮/৬}
* কাতাদা(র): সূরা আ’লে ইমরান এর ৭ম আয়াতে, অন্তরে কুটিলতার কারণে কুরআন পড়ে অপব্যাখ্যাকারী,ফিতনাকারীদের সম্পর্কে বলেন- উল্লিখিত ব্যক্তিরা যদি সাবাঈ,হুরুরিয়ারা না হয়,তবে আমি জানিনা এরা কারা।এরপরে তিনি বলেন, আল্লাহ্র শপথ!সাবাঈরা বিদাতী,তারা আল্লাহ্র কিতাব ও নবীর সূন্নাহ এর বাইরে উদ্ভাবন করে।{আল ইবানাহ ২৬৯/১}
* ইবনে আওন হতে, ইবরাহীম আন-নাখয়ী(র)কে ২ সাবাঈ ব্যক্তি- মুগিরা ইবনে সাঈদ ও আবু আব্দুর রহীমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “তাদের থেকে সাবধান থাকো,তারা মিথ্যাবাদী”
* সাবাঈদের উল্লেখ করে ইমাম যুহরী(র) বলেনঃ আমি খ্রিস্টানদের সাথে সামঞ্জস্যে সাবাঈদের চেয়ে বেশি কাউকে দেখিনি{আল-শারিয়াহ ২৭৩}। আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ এর ব্যাপারে তিনি বলেন, “সে সাবাঈদের থেকে হাদিস সংগ্রহ করত” {আল মারিফা অয়াল-তারিখ ৭০/৩}
* মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ আল-কালবী নামের এক ব্যক্তি নিজেকে সাবাঈ বলত।আহলে বাইতের থুতুতে নিজের স্মৃতি ফেরার কিচ্ছা বলত।সে আরো বলত, “জিবরাঈল(আ) অহী নিয়ে এসে রাসূল(সা)কে না পেলে আলী(আ)কে দিয়ে লিখাতেন”। ইবনে হিব্বান(র) তাকে সাবাঈ হিসেবে উল্লেখ করেন।{আল মাজহুরিন ২৬৩/২;তাহযিব আত তাহযিব ৫৬৯/৩}
* ইমাম আবুল হাসান আল-আশআরী বলেন, ১৪ ধরণের গা’লিদের মধ্যে সাবাঈরা অন্যতম, যারা আবদুল্লাহ ইবনে সাবা এর দল এবং দাবি করে আলী(রা) কিয়ামতের পূর্বে আবার আসবেন।{আল মাকালাত আল ইসলামিয়া ৮৬}
* ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জুযানি বলেন, সাবাঈরা কুফর করত এবং আলী(রা)কে আল্লাহ্ দাবি করে অতিভক্তি দেখাত, আলী(রা) তাদের একটা দলকে আগুনে পুড়িয়ে মারেন।{আল-আহওয়াল আল রিজাল,পৃ৩৭}
আল্লাহ্ আমাদেরকে আবদুল্লাহ ইবনে সাবার তত্বে সৃষ্ট শিয়া-কাফের ও তাদের প্রতীক্ষিত দাজ্জাল এর ফিতনা থেকে হিফাজত করুন
---------
উৎসঃ The Rafidologist: এসো শিয়া চিনি