এটা কি দরূদ পাঠের সঠিক পদ্ধতি?
নবীজীর শানে কিভাবে দরূদ পড়তে হবে? দরূদ পাঠের আদব কি হবে? এটা কমবেশি সবারই জানা থাকার কথা। কিন্তু আফসোসের কথা হল, আমরা এ সকল আদবের প্রতি কোন খেয়াল তো করিই না উপরন্তু নিজেদের পক্ষ থেকে দরূদ পাঠের এমন সব পদ্ধতি নির্ণয় করে নিয়েছি, যেগুলো না সাহাবাদের যুগে ছিল আর না তাবেয়ী-তবে তাবেয়ীদের যুগে ছিল আর না পরবর্তী আলেমদের পদ্ধতি ছিল। এতে আমরা দরূদ পাঠের মতো অতি সওয়াবের কাজকেও বিদআতে রূপান্তরিত করে ফেলছি; অথচ আমাদের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। আমাদের অবস্থা তাদের মতো হয়ে যাচ্ছে যাদের ব্যাপারে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
‘তারা সেই সব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সমস্ত দৌড়-ঝাপ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, অথচ তারা মনে করে তারা খুবই ভাল কাজ করছে।’ -কাহফ : ১০৪
এমনই একটি ভুল পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লামা হাসকাফী রহ. (১০২৫-১০৮৮ হি:) তাঁর ‘আদ-দুররুল মুখতার’ গ্রন্থে (২/২৩২) আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন-
إزعاج الاعضاء برفع الصوت جهل، وإنما هى دعاء له ، والدعاء يكون بين الجهر والمخافته .
‘অঙ্গ-প্রতঙ্গ নাড়িয়ে উঁচু আওয়াজে দরূদ পড়া মুর্খতা। কেননা এটা তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য দু‘আ। আর দু‘আ উঁচু আওয়াজ ও নিচু আওয়াজের মাঝামাঝি হয়ে থাকে।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা. দরূদ শরীফ সংক্রান্ত এক আলোচনায় (ইসলাহী খুতবাত: ৬/১০৭-১১২) বলেন, দরূদ শরীফ বেশি বেশি পড়া অনেক উত্তম কাজ। কিন্তু প্রতিটি কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট এতক্ষণ পর্যন্ত পছন্দনীয় থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত এটা তাদের নির্দেশিত পদ্ধতিতে হয়। কোন কাজের ক্ষেত্রে যদি নিজের পক্ষ থেকে কোন পদ্ধতি তৈরী করে সে অনুযায়ী কাজ করা হয়, তাহলে এতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না।
দরূদ পাঠের ক্ষেত্রেও আজকাল এমন অনেক পদ্ধতি চালু হয়েছে যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতি নয় বরং আমাদের নিজেদের তৈরী। এমতাবস্থায় মানুষ মনে করবে, আমি তো ভাল কাজ করছি এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে মহব্বতের প্রকাশ করছি। অথচ আমার দরূদ পড়ার পদ্ধতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পন্থায় না হওয়ার কারণে আমার কোন ফায়দা হবে না।
তিনি বলেন, আজ কাল দরূদ-সালাম প্রেরণের উদ্দেশ্য হল, দরূদ-সালামের প্রদর্শনী করা। যেমন অনেক মানুষ একত্রিত হয়ে দাড়িয়ে লাউড স্পিকার দিয়ে সুন্দর সুরে উঁচু আওয়াজে বলে-
الصلاة والسلام عليك يا رسول الله!
তারা মনে করে দরূদ-সালাম প্রেরণের পদ্ধতি এটাই, তাই কেউ যদি নির্জনে বসে দরূদ ও সালাম পাঠ করে এটাকে সঠিক মনে করা হয় না, এর মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোথাও এই প্রচলিত পদ্ধতির উল্লেখ পাওয়া যায় না; অথচ তাঁরা প্রত্যেকেই ‘মুজাসসাম দরূদ’ (দরূদ শরীফের দেহদারী) ছিলেন। তাঁরা সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করতেন।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরূদ পাঠের যে পদ্ধতি বলে গেছেন এরচে’ ভাল কোন পদ্ধতি হতে পারে না। সেই পদ্ধতি হলো, এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি দরূদ পাঠানোর পদ্ধতি কি? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘দরূদে ইবরাহীমী’ উল্লেখ করে বললেন, এই পদ্ধতিতে দরূদ পাঠ কর।
অপরদিকে লক্ষ করুন, আল্লাহ পাক দরূদ শরীফকে নামাযের একটি অংশ বানিয়েছেন। কিন্তু নামাযে সূরায়ে ফাতেহা দাঁড়িয়ে পড়া হয়, সূরাও দাঁড়িয়ে পড়া হয়, যখন দরূদ পাঠের সময় আসল বলা হল, তাশাহুদের পরে আদবের সাথে বসে প্রশান্তচিত্তে হুজুরের প্রতি দরূদ পড়।
যাই হোক, এমনিতে দরূদ শরীফ দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে সর্বাবস্থায় পড়া জায়েজ, তবে এগুলো থেকে কোন একটি পদ্ধতিকে নির্ধারণ করে ফেলা আর এ সম্পর্কে এই দাবী করা যে, এটা অন্যান্য পদ্ধতিরচে’ বেশি উত্তম। এর কোন ভিত্তি নেই, এটা নি:সন্দেহে ভুল।
আর এই পদ্ধতি এখন তো আরো খারাপ হয়ে গেল যখন এর সাথে এই খারাপ আক্বীদাও লেগে গেল যে, আমরা যখন দরূদ পাঠ করি তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মজলিসে তাশরীফ আনেন। আর বলাবাহুল্য, এমতাবস্থায় তার সম্মানার্থে আমাদের দাঁড়ানো উচিৎ, তাই আমরা দাড়িয়ে যাই।
বলুন তো, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ আনেন এ কথা কোন্ দলীল দ্বারা প্রমাণিত? কুরআনের কোনো আয়াতে আছে? না হাদীসে আছে? না কোন সাহাবীর বক্তব্য দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত? কোথাও এর কোন প্রমাণ নেই। যে হাদীস আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যদি হাদীসটি চিন্তা করে পড়েন তাহলে বিষয়টি বুঝে আসবে। হাদীসটি হচ্ছে―
إن لله تعالى ملائكة سياحين فى الارض يبلغون من أمتى السلام .
আল্লাহ তা‘আলার এমন কিছু ফিরিশতা আছেন যারা সমস্ত পৃথিবী ভ্রমন করেন। তাদের কাজ হল, আমার উম্মতের মধ্যে যেই আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পড়বে তা আমার কাছে পৌঁছানো।
লক্ষ করুন, এই হাদীসে একথা তো বলেছেন, ফেরেশতাগণ আমার কাছে দরূদ ও সালাম পৌঁছান কিন্তু কোন হাদীসেই একথা বর্ণিত হয়নি, যেখানেই দরূদ পড়া হয় আমি সেখানে পৌঁছে যাই।
সুতরাং এই ধারণা করা যে, আমরা যখন এখানে বসে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে দরূদ পাঠ করবো তা গ্রহণ করার জন্য তিনি নিজেই এখানে আসবেন। আর তিনি যেহেতু আমাদের মাহফিলে উপস্থিত হন তাই তাঁর সম্মানে আমরা দাড়িয়ে যাই। এমন ধারণা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানের বিলকুল মুয়াফিক নয়।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে এই পদ্ধতির উপর আমল করার তৌফিক দান করুন এবং দরূদ শরীফকে সকল আদব সহ আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
------------------
লিখেছেনঃ Mahbubul Hasan Arife
الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
‘তারা সেই সব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সমস্ত দৌড়-ঝাপ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, অথচ তারা মনে করে তারা খুবই ভাল কাজ করছে।’ -কাহফ : ১০৪
এমনই একটি ভুল পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লামা হাসকাফী রহ. (১০২৫-১০৮৮ হি:) তাঁর ‘আদ-দুররুল মুখতার’ গ্রন্থে (২/২৩২) আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন-
إزعاج الاعضاء برفع الصوت جهل، وإنما هى دعاء له ، والدعاء يكون بين الجهر والمخافته .
‘অঙ্গ-প্রতঙ্গ নাড়িয়ে উঁচু আওয়াজে দরূদ পড়া মুর্খতা। কেননা এটা তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য দু‘আ। আর দু‘আ উঁচু আওয়াজ ও নিচু আওয়াজের মাঝামাঝি হয়ে থাকে।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা. দরূদ শরীফ সংক্রান্ত এক আলোচনায় (ইসলাহী খুতবাত: ৬/১০৭-১১২) বলেন, দরূদ শরীফ বেশি বেশি পড়া অনেক উত্তম কাজ। কিন্তু প্রতিটি কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট এতক্ষণ পর্যন্ত পছন্দনীয় থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত এটা তাদের নির্দেশিত পদ্ধতিতে হয়। কোন কাজের ক্ষেত্রে যদি নিজের পক্ষ থেকে কোন পদ্ধতি তৈরী করে সে অনুযায়ী কাজ করা হয়, তাহলে এতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না।
দরূদ পাঠের ক্ষেত্রেও আজকাল এমন অনেক পদ্ধতি চালু হয়েছে যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতি নয় বরং আমাদের নিজেদের তৈরী। এমতাবস্থায় মানুষ মনে করবে, আমি তো ভাল কাজ করছি এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে মহব্বতের প্রকাশ করছি। অথচ আমার দরূদ পড়ার পদ্ধতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পন্থায় না হওয়ার কারণে আমার কোন ফায়দা হবে না।
তিনি বলেন, আজ কাল দরূদ-সালাম প্রেরণের উদ্দেশ্য হল, দরূদ-সালামের প্রদর্শনী করা। যেমন অনেক মানুষ একত্রিত হয়ে দাড়িয়ে লাউড স্পিকার দিয়ে সুন্দর সুরে উঁচু আওয়াজে বলে-
الصلاة والسلام عليك يا رسول الله!
তারা মনে করে দরূদ-সালাম প্রেরণের পদ্ধতি এটাই, তাই কেউ যদি নির্জনে বসে দরূদ ও সালাম পাঠ করে এটাকে সঠিক মনে করা হয় না, এর মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোথাও এই প্রচলিত পদ্ধতির উল্লেখ পাওয়া যায় না; অথচ তাঁরা প্রত্যেকেই ‘মুজাসসাম দরূদ’ (দরূদ শরীফের দেহদারী) ছিলেন। তাঁরা সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করতেন।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরূদ পাঠের যে পদ্ধতি বলে গেছেন এরচে’ ভাল কোন পদ্ধতি হতে পারে না। সেই পদ্ধতি হলো, এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি দরূদ পাঠানোর পদ্ধতি কি? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘দরূদে ইবরাহীমী’ উল্লেখ করে বললেন, এই পদ্ধতিতে দরূদ পাঠ কর।
অপরদিকে লক্ষ করুন, আল্লাহ পাক দরূদ শরীফকে নামাযের একটি অংশ বানিয়েছেন। কিন্তু নামাযে সূরায়ে ফাতেহা দাঁড়িয়ে পড়া হয়, সূরাও দাঁড়িয়ে পড়া হয়, যখন দরূদ পাঠের সময় আসল বলা হল, তাশাহুদের পরে আদবের সাথে বসে প্রশান্তচিত্তে হুজুরের প্রতি দরূদ পড়।
যাই হোক, এমনিতে দরূদ শরীফ দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে সর্বাবস্থায় পড়া জায়েজ, তবে এগুলো থেকে কোন একটি পদ্ধতিকে নির্ধারণ করে ফেলা আর এ সম্পর্কে এই দাবী করা যে, এটা অন্যান্য পদ্ধতিরচে’ বেশি উত্তম। এর কোন ভিত্তি নেই, এটা নি:সন্দেহে ভুল।
আর এই পদ্ধতি এখন তো আরো খারাপ হয়ে গেল যখন এর সাথে এই খারাপ আক্বীদাও লেগে গেল যে, আমরা যখন দরূদ পাঠ করি তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মজলিসে তাশরীফ আনেন। আর বলাবাহুল্য, এমতাবস্থায় তার সম্মানার্থে আমাদের দাঁড়ানো উচিৎ, তাই আমরা দাড়িয়ে যাই।
বলুন তো, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ আনেন এ কথা কোন্ দলীল দ্বারা প্রমাণিত? কুরআনের কোনো আয়াতে আছে? না হাদীসে আছে? না কোন সাহাবীর বক্তব্য দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত? কোথাও এর কোন প্রমাণ নেই। যে হাদীস আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যদি হাদীসটি চিন্তা করে পড়েন তাহলে বিষয়টি বুঝে আসবে। হাদীসটি হচ্ছে―
إن لله تعالى ملائكة سياحين فى الارض يبلغون من أمتى السلام .
আল্লাহ তা‘আলার এমন কিছু ফিরিশতা আছেন যারা সমস্ত পৃথিবী ভ্রমন করেন। তাদের কাজ হল, আমার উম্মতের মধ্যে যেই আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পড়বে তা আমার কাছে পৌঁছানো।
লক্ষ করুন, এই হাদীসে একথা তো বলেছেন, ফেরেশতাগণ আমার কাছে দরূদ ও সালাম পৌঁছান কিন্তু কোন হাদীসেই একথা বর্ণিত হয়নি, যেখানেই দরূদ পড়া হয় আমি সেখানে পৌঁছে যাই।
সুতরাং এই ধারণা করা যে, আমরা যখন এখানে বসে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে দরূদ পাঠ করবো তা গ্রহণ করার জন্য তিনি নিজেই এখানে আসবেন। আর তিনি যেহেতু আমাদের মাহফিলে উপস্থিত হন তাই তাঁর সম্মানে আমরা দাড়িয়ে যাই। এমন ধারণা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানের বিলকুল মুয়াফিক নয়।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে এই পদ্ধতির উপর আমল করার তৌফিক দান করুন এবং দরূদ শরীফকে সকল আদব সহ আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
------------------
লিখেছেনঃ Mahbubul Hasan Arife
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন