বাচ্চাদেরকে পুতুল কিনে দেয়া কি জায়েজ?
প্রশ্নঃ
বাচ্চাদের এই ধরনের কাপড়ের তৈরি খেলনা(পুতুল) কি দেওয়া জায়েজ?
[ছবিটি ছিল একটি কাপড়ের তৈরি টেডি বেয়ারের পুতুল। উত্তর অনেক লম্বা হওয়ায় পোস্ট আকারে দেওয়া হল]
উত্তরঃ
প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য তৈরি বা অংকন করা এবং তা ঘরে রাখা বিলকুল হারাম ও নাজায়েয।এমনকি এসব ক্রয়-বিক্রয় করাও হারাম।
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেন-
(সহীহ বুখারীঃ৫৬১৫;সহীহ মুসলিমঃ২১০৪)
কোন প্রানীর প্রতিকৃতির ব্যাপারে ইসলামী বিধান হচ্ছে-
(সহীহ বুখারীঃ৫৬১০;সহীহ মুসলিমঃ২১০৭)
হযরত ইমাম মুহম্মদ বিন মুহম্মদ বিন ইউসুফ আস সিনূসী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন-
(মুকাম্মাল ইকমালিল ইকমাল আলাল মুসলিম অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজ-সজ্জা পরিচ্ছেদ: প্রাণবিশিষ্ট প্রাণীর ছবি মূর্তি-ভাস্কর্য ইত্যাদির চর্চা করা হারাম ৭/২৫২,২৫৩,২৫৬ প্রকাশনা: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ বৈরূত লেবানন)
শায়খ ডক্টর মূসা শাহীন লাশীন বলেন-
(ফতহুল মুনয়িম শরহে ছহীহ মুসলিম ৮/ ৩৮৬)
এ বিষয়ে উলামা ও আয়িম্মাদের থেকে ৩ টি মত পাওয়া যায়-
ক)হারাম।
খ) মাকরুহ।
গ)জায়েয।
(তবে এটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক দের ক্ষেত্রে সকলেই হারামের ব্যাপারে একমত)
বাচ্চাদের পুতুল বিষয়ে শায়খ মূসা শাহীন বলেন-
(ফতহুল মুনয়িম শরহে ছহীহ মুসলিম ৮/৩৮৭)
ইমাম মালিক (র) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এ ধরনের পুতুল ইত্যাদি খেলনা বাচ্চাদের জন্যে ক্রয় করে আনাকে মাকরূহ মনে করতেন।
وحكى عن ابن أبي زيد عن مالك أنه كره أن يشتري الرجل لابنته الصور
(শরহুন নববী আল মুসলিম হাঃ২৪৪০;ফতহূল বারি শারহে সহীহ আল বুখারী ১/৫৫৪ হাঃ ৫৭৭৯)
ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন-
قال القاضي : فيه جواز اللعب بهن
কাযী ইয়ায(রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ছোট ছোট মেয়েদের পুতুল দ্বারা খেলা করা জায়েয।
(শরহুন নববী আল মুসলিম হাঃ২৪৪০)
এটিকে যারা কেবল বাচ্চাদের জন্যে জায়েয বলছেন তাদের দলিল হচ্ছে-
আম্মাজী আয়েশা(রাদ্বিঃ) বলেন-
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬১৩০ ; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৪৪০ )
আম্মাজী(রদ্বিঃ) আরো বলেন-
(সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং-২২৮১৩)
এই ২টি হাদিস ভিত্তি করে কেবল বাচ্চাদের জন্যে এসব পুতুল খেলাকে একদল উলামায়েকেরাম জায়েয বলেছেন। তবে অন্যান্য উলামায়েকেরাম এর খন্ডন করে বলেছেন যে, আম্মাজী আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তার শৈশবে যেসব পুতুল নিয়ে খেলতেন সেগুলার প্রানীর আকৃতি বুঝা যায়না। সেগুলা নিছক কিছু কাপড় দিয়ে তৈরি মাত্র। যার হাত মুখ বা প্রাণী আকৃতি বুঝা যায়না।
শায়খ আব্দুল মুহছিন আল আব্বাদ বলেন-
ইমাম নববীও কিছু উলামাদের উক্তি নকল করে বলেছেন-
ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ ও একদল উলামাদের থেকে একই কথা নক্বল করেছেন(অর্থাৎ পুতুল দিয়ে খেলার বিধান মানসূখ তথা রহিত হওয়ার বিষয়)এবং ইমাম ইবনু বাত্ব-ল রহিমাহুল্লাহ, ইমাম ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ, ইমাম মুনযিরী রহিমাহুল্লাহ ও ইমাম হুমাইলী রহিমাহুল্লাহ ও এই দিকেই মায়েল হয়েছেন।-
যাইহোক, এত আলোচনার পর যদি ধরেও নিই বাচ্চাদের প্রাণী দেহী পুতুল নিয়ে খেলা করতে দেওয়া কিংবা সেসকল গ্রয় করে দেওয়া জায়েয তবুও এ কাজকে কেউ উৎসাহ প্রদান করেননি।আর যেহেতু এটি জায়েয নাজায়েয হওয়ার বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে সে ক্ষেত্রে সন্দেহজনক বিষয় গুলো ছেড়ে বাচ্চাদের কে এসব পুতুল নিয়ে খেলা করতে দেওয়া মোটেও ঠিক হবেনা। কেননা সন্দেহ জনক বিষয়াদি ছেড়ে দেওয়াই হাদিসের নির্দেশ।
রাছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেন-
(সুনানে তিরমিযী হাঃ ২৪৪২;মুসনাদে আহমাদ হাঃ১৬৩০; সহীহ ইবনু হিব্বান হাঃ৭২২;ফয়যুল কদ্বীর,মুনাভী ৩/ ৫২৯;জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম,ইবনু রাজাব আল হাম্বালী ১/২৮০;শরহুল আরবাঈন আন নাবাবিয়্যাহ পৃঃ১৫৫;আল মুজতাবা,নাসায়ী হাঃ৫৭১১; আল কুবরা,নাসায়ী হাঃ৫২২০;সহীহ ইবনু খুজাইমাহ হাঃ২৩৪৮;সুনানে দারেমী হাঃ২৫৩২;মুসনাদে বাযযার হাঃ১১৯৪;মুসনাদে ত্বয়ালিসী হাঃ১১৭৮;মুসান্নাফে ইবনু আব্দুর রাযযাক হাঃ৪৯৮৪; মুসনাদে আবু ইয়ালা হাঃ৬৭৬২; মুজামুল কাবীর,ত্ববার-নী হাঃ২৭০৮,২৭১১;আল আ-হাদ ওয়াল মাছানী, ইবনু আবী আছেম হাঃ৪১৬-হাদিসটির মান সহীহ)
রাছূলুল্লাহ আলাহিছ ছলাতু ওয়াছ ছালাম আরো বলেন-
(সহীহ বুখারী ১/১১৭ হাঃ৫২,কিতাবুল ঈমান,বাবু-ফাদ্বলু মানিছ তাবরআ লি দ্বীনিহি; সহীহ মুসলিম হাঃ১৫৯৯,বাবু-আখজিল হালাল ওয়া তারকিশ শুবুহা-ত)
‘প্রত্যেক শিশু (ইসলামের) ফিতরতের উপর জন্মলাভ করে। কিন্তু পিতা-মাতা তাকে ইহুদী বানায়, খৃষ্টান বানায়, অগ্নিপূজক বানায়।
(সহীহ বুখারী ১/১৮৫, হাদীসঃ ১৩৮৫; সহীহ মুসলিম ২/৩৩৬, হাদীসঃ ২৬৫৮)
সন্তানকে শৈশবেই দ্বীন শিখাতে হবে নতুবা বাবা-মাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার মুখোমুখী হতে হব।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সতর্কবাণী :
‘পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’
(সহীহ বুখারী ১/২২২, হাদীসঃ ৮৯৩)
শৈশবে সন্তানকে আল্লাহর যিকির আযকার শিখাতে হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বি, থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘সন্তানকে প্রথম কথা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শেখাও এবং মৃত্যুর সময় তাদেরকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর তালকীন কর।’
(শুআবুল ঈমান ৬/৩৯৭-৩৯৮, হাদীসঃ ৮৬৪৯)
সন্তানদের আমরা ছোটবেলা থেকেই সালতের শিক্ষা দিব।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
"সন্তানের বয়স সাত বছর হলে তাদের নামাযের আদেশ দাও, দশ বছর বয়সে নামাযের জন্য শাসন কর এবং এ বয়সে তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।"
(মুসনাদে আহমদ ২/২১৮, হাদীস ঃ৬৭৫৬; সুনানে আবু দাউদ ১/৭১, হাদীসঃ ৪৯৪)
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আমদের সবাইকে বুঝার এবং দ্বীনের বুঝ মুতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুক।(আমীন)
--------
উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন
বাচ্চাদের এই ধরনের কাপড়ের তৈরি খেলনা(পুতুল) কি দেওয়া জায়েজ?
[ছবিটি ছিল একটি কাপড়ের তৈরি টেডি বেয়ারের পুতুল। উত্তর অনেক লম্বা হওয়ায় পোস্ট আকারে দেওয়া হল]
উত্তরঃ
প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য তৈরি বা অংকন করা এবং তা ঘরে রাখা বিলকুল হারাম ও নাজায়েয।এমনকি এসব ক্রয়-বিক্রয় করাও হারাম।
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেন-
لا تدخل الملائكة بيتاً فيه كلب أو صورة
অর্থ-"যে ঘরে কোন কুকুর কিংবা ছুরাত (অন্য রেওয়ায়াতে তাছাউয়ীর শব্দ আছে
যার অর্থ- কোন প্রাণীর প্রতিকৃতি,ছবি,অংকিত প্রানীর আকৃতি ইত্যাদি) থাকবে
সে ঘরে ফেরেশতাগন প্রবেনশ করেন না।"(সহীহ বুখারীঃ৫৬১৫;সহীহ মুসলিমঃ২১০৪)
কোন প্রানীর প্রতিকৃতির ব্যাপারে ইসলামী বিধান হচ্ছে-
ان من اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يشبهون بخلق الله
অর্থঃ"কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী শাস্তি পাবে যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য
কোন কিছু তৈরি করত(অর্থাৎ কোন প্রাণীর সাদৃশ্য তৈরি করত)।"(সহীহ বুখারীঃ৫৬১০;সহীহ মুসলিমঃ২১০৭)
হযরত ইমাম মুহম্মদ বিন মুহম্মদ বিন ইউসুফ আস সিনূসী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন-
واجمعوا على منع تصوير ماله ظل وعلى منع دخول ماهو فيه وعلى وجوب تغيره
وكسره......واختلف فى تصوير ما ليس له ظل، فكرهه ابن شهاب
مطلقا.........وكره مالك والشافعى وابو حنيفة والاكثر ماصور فى غير ثوب
اوفى ثوب لا يمتهن وهو اصح الاقاويل والجامع بين الاحاديث ......وسواء صنعه
فى ثوب اوبساط او درهم او دينار او غير ذلك. اما تصوير صورة الشجرة وغير
ذلك فليس بحرام. ......يحتج به من يجيز الرقم مطلقا، وجوابنا وجواب الجمهور
انه محمول على رقم مالا روح فيه
অর্থ: "দেহ বিশিষ্ট
মূর্তি-ভাস্কর্য (ও প্রাণীর ছবি) তৈরি করা হারাম এবং এমন ঘরে প্রবেশ করাও
হারাম। এগুলো ধ্বংস করা ও অপসারণ করা ফরযে আইন। এর উপর ইজমা প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে। ......দেহহীন প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। তবে
হযরত আল্লামা ইবনে শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি সাধারণত প্রাণীর ছবিকে
মাকরূহ তাহরীমী বলেছেন।......হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি ও অধিকাংশ ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে, কাপড়
ব্যতীত অন্য কিছুতে এবং কাপড়ে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা মাকরূহ তাহরীমী। তা
সম্মানের জন্য হোক (অথবা অপমানের জন্য হোক)। সমস্ত হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে
এটাই অধিক বিশুদ্ধ মত।...... কাপড়ে বিছানায়, রৌপ্য মুদ্রায় ইত্যাদি যে
কোনো বস্তুতেই হোক না কেন, সবখানেই প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। কিন্তু
গাছ-পালা জড়বস্তু ইত্যাদিতে অঙ্কন করা হারাম নয়।......এখান থেকে দলীল
নেয়া হয় যে, রক্বম সাধারণত জায়িয। আমাদের ও অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফায়সালা হলো- রক্বম অর্থ হলো- ‘প্রাণহীন
বস্তুর ছবি’। অর্থাৎ প্রাণহীন বস্তুর ছবি তোলা আঁকা দেখা জায়িয। "(মুকাম্মাল ইকমালিল ইকমাল আলাল মুসলিম অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজ-সজ্জা পরিচ্ছেদ: প্রাণবিশিষ্ট প্রাণীর ছবি মূর্তি-ভাস্কর্য ইত্যাদির চর্চা করা হারাম ৭/২৫২,২৫৩,২৫৬ প্রকাশনা: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ বৈরূত লেবানন)
শায়খ ডক্টর মূসা শাহীন লাশীন বলেন-
ولا فرق فى هذا كله بين ما له ظل وما لا ظل له، هذا تلخيص مذهبنا فى
المسألة، وبمعناه قال جماهير العلماء من الصحابة والتابعين ومن بعدهم، وهو
مذهب الثورى ومالك وابى حنيفة وغيرهم.
অর্থ:" আমাদের মাযহাবের
ফায়সালা অনুযায়ী দেহধারী মূর্তি-ভাস্কর্য এবং দেহহীন প্রাণীর ছবি উভয়টির
চর্চা করা হারাম, এতে কোনো প্রকার পার্থক্য নেই। অধিকাংশ হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিম এবং উনাদের পরবর্তী হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মালিক
রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণের মতামত এমনটিই।" (ফতহুল মুনয়িম শরহে ছহীহ মুসলিম ৮/ ৩৮৬)
***বাচ্চাদের পুতুল খরিদ করে দেওয়া কিংবা খেলার সুযোগ করে দেওয়ার শরয়ী বিধানঃ
এ বিষয়ে উলামা ও আয়িম্মাদের থেকে ৩ টি মত পাওয়া যায়-
ক)হারাম।
খ) মাকরুহ।
গ)জায়েয।
(তবে এটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক দের ক্ষেত্রে সকলেই হারামের ব্যাপারে একমত)
বাচ্চাদের পুতুল বিষয়ে শায়খ মূসা শাহীন বলেন-
ان النهى فى الصورة على العموم، واستعمال ما فيه صورة أيا كان ممنوع، سواء
كانت رقما فى ثوب اوغير رقم، وسواء كانت فى ثوب او بساط ممتهن او غير
ممتهن، حتى تماثيل لعب البنات حرام، ودخول البيت الذى فيه الصورة بجميع
انواعها حرام، حالة واحدة مستثناة هى اذا فرقت الصورة، فلم تكن على هيئة
يصح بها الحياة، كأن قطعت رأسها او فرقت اجزاؤها، وهذا مذهب منقول عن
الزهرى، وصححه ابن العربى، وقواه النووى
অর্থ:" প্রাণীর
ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যের চর্চা আমভাবে নিষেধ তথা হারাম। এগুলো ব্যবহার করা,
এর ব্যবসা করা হারাম। এগুলো কাপড়ে তৈরি করা হোক অথবা কাপড় ছাড়া অন্য
কিছুতে হোক একই হুকুম, অনুরূপ কাপড়ে, বিছানায় লাঞ্ছনার জন্য হোক অথবা
লাঞ্ছনার জন্য তৈরি করা হোক একই হুকুম। এমনকি শিশুদের খেলার জন্য তৈরিকৃত
প্রাণীর ছবি, মূর্তি, পুতুল ইত্যাদি হারাম। সর্বপ্রকার প্রাণীর ছবি,
মূর্তি, ভাস্কর্য বিশিষ্ট ঘরে প্রবেশ করাও হারাম। কিন্তু যদি প্রাণীর ছবি
বা মূর্তি-ভাস্কর্যের মাথা কাটার কারণে প্রাণীর বা মূর্তি-ভাস্কর্যের মতো
দেখা না যায়, তাহলে তা হারাম নয়। ইহা তাবিয়ী হযরত ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত গ্রহণযোগ্য মত। হযরত ইমাম ইবনুল আরাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ মতকে ছহীহ বলেছেন। হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি এ মতকে শক্তিশালী বলেছেন।" (ফতহুল মুনয়িম শরহে ছহীহ মুসলিম ৮/৩৮৭)
ইমাম মালিক (র) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এ ধরনের পুতুল ইত্যাদি খেলনা বাচ্চাদের জন্যে ক্রয় করে আনাকে মাকরূহ মনে করতেন।
وحكى عن ابن أبي زيد عن مالك أنه كره أن يشتري الرجل لابنته الصور
(শরহুন নববী আল মুসলিম হাঃ২৪৪০;ফতহূল বারি শারহে সহীহ আল বুখারী ১/৫৫৪ হাঃ ৫৭৭৯)
ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন-
قال القاضي : فيه جواز اللعب بهن
কাযী ইয়ায(রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ছোট ছোট মেয়েদের পুতুল দ্বারা খেলা করা জায়েয।
(শরহুন নববী আল মুসলিম হাঃ২৪৪০)
এটিকে যারা কেবল বাচ্চাদের জন্যে জায়েয বলছেন তাদের দলিল হচ্ছে-
আম্মাজী আয়েশা(রাদ্বিঃ) বলেন-
كنت ألعب بالبنات عند النبي صلى الله عليه وسلم وكان لي صواحب يلعبن معي،
فكان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل يَتَقَمَّعْن منه (أي: يتغيبن
عنه)؛ فيسربهن إليّ (أي: يرسلهن إليّ) فيلعبن معي
আমি আল্লাহর রাসুলের
উপস্থিতিতে পুতুল নিয়ে খেলা করতাম আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলত। যখন
আল্লাহর রাসুল (আলাইহিছ ছালাম) বাড়ীতে প্রবেশ করতেন, তখন ওরা পুতুলগুলো
লুকিয়ে নিত। কিন্তু তিনি (সঃ) তাদেরকে আমার সাথে একত্রে খেলতে বলতেন।(সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬১৩০ ; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৪৪০ )
আম্মাজী(রদ্বিঃ) আরো বলেন-
قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم من غزوة تبوك أو خيبر، وفي سهوتها ستر؛
فهبت ريح، فكشفت ناحية الستر عن بناتي، ورأى بينهن فرساً له جناحان من
رقاع؛ فقال: ما هذا الذي أرى وسطهن؟ قالت: فرس، قال: ما هذا الذي عليه؟
قالت: جناحان. قال: فرس له جناحان؟ قالت: أما سمعت أن لسليمان خيلاً لها
أجنحة؟ قالت: فضحك حتى رأيت نواجذه
একবার রাছূলুল্লাহ আলাইহিছ
ছালাম আম্মাজী আয়েশার ঘরের পর্দা উন্মোচন করে খেলনা দেখে বললেন, এগুলো কী?
তিনি বললেন, এগুলো আমার পুতুল। এগুলোর মধ্যে একটি পাখাওয়ালা ঘোড়া
ছিল।সেটি দেখে তাকে তিনি(আলাইহিস সালাম) বললেন-" এই খেলনাগুলোর মাঝে এটি
কি?" তিনি বললাম,"ঘোড়া", রাছূলুল্লাহ আলাইহিছ ছালাম বললেন-"ঘোড়ার উপর কি?"
আমি বললাম-"২ টি ডানা",অতঃপর তিনি বললেন- "আপনি শুনেননি যে, সুলাইমান
আলাইহিস সালামের একটি ঘোড়া ছিল যার ২ টি ডানা ছিল?এরপর রাছূলে আকরাম
আলাইহিছ ছালাম হাসলেন এমনকি তার চোয়াল দাঁত মুবারক ও দেখা যাচ্ছিল।" (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং-২২৮১৩)
এই ২টি হাদিস ভিত্তি করে কেবল বাচ্চাদের জন্যে এসব পুতুল খেলাকে একদল উলামায়েকেরাম জায়েয বলেছেন। তবে অন্যান্য উলামায়েকেরাম এর খন্ডন করে বলেছেন যে, আম্মাজী আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তার শৈশবে যেসব পুতুল নিয়ে খেলতেন সেগুলার প্রানীর আকৃতি বুঝা যায়না। সেগুলা নিছক কিছু কাপড় দিয়ে তৈরি মাত্র। যার হাত মুখ বা প্রাণী আকৃতি বুঝা যায়না।
শায়খ আব্দুল মুহছিন আল আব্বাদ বলেন-
وقالوا إن البنات اللاتي عند عائشة ليست مجسمة وإنما هي على عادة العرب في
إيجاد لعب من عرام أو أعواد وتلبس ملابس، كأنها صورة وليست مصورة،
***আরেকদল উলামাগন বলেছেন এ হাদীস সমূহ ছবি, মূর্তি , ভাস্কর্য ইত্যাদি হারাম হওয়ার পূর্বের ঘটনা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৬/৩৭৪ কিতাবুন নিকাহ) ইমাম নববীও কিছু উলামাদের উক্তি নকল করে বলেছেন-
وقالت طائفة : هو منسوخ بالنهي عن الصور هذا كلام القاضي .
এটি ছুরাত(ছবি, মূর্তি , ভাস্কর্য ইত্যাদি ) নিষেধ হওয়ার পর মানসূখ(রহিত) হয়ে গেছে। (শরহুন নববী আল মুসলিম হাঃ২৪৪০) ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ ও একদল উলামাদের থেকে একই কথা নক্বল করেছেন(অর্থাৎ পুতুল দিয়ে খেলার বিধান মানসূখ তথা রহিত হওয়ার বিষয়)এবং ইমাম ইবনু বাত্ব-ল রহিমাহুল্লাহ, ইমাম ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ, ইমাম মুনযিরী রহিমাহুল্লাহ ও ইমাম হুমাইলী রহিমাহুল্লাহ ও এই দিকেই মায়েল হয়েছেন।-
وذهب بعضهم إلى أنه منسوخ وإليه مال ابن بطال......ذلك كان
قبل التحريم وبه جزم ابن الجوزي ، وقال المنذري إن كانت اللعب كالصورة فهو
قبل التحريم وإلا فقد يسمى ما ليس بصورة لعبة ، وبهذا جزم الحليمي فقال :
إن كانت صورة كالوثن لم يجز وإلا جاز
(ফতহূল বারি শারহে সহীহ আল বুখারী ১/৫৫৪ হাঃ ৫৭৭৯)যাইহোক, এত আলোচনার পর যদি ধরেও নিই বাচ্চাদের প্রাণী দেহী পুতুল নিয়ে খেলা করতে দেওয়া কিংবা সেসকল গ্রয় করে দেওয়া জায়েয তবুও এ কাজকে কেউ উৎসাহ প্রদান করেননি।আর যেহেতু এটি জায়েয নাজায়েয হওয়ার বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে সে ক্ষেত্রে সন্দেহজনক বিষয় গুলো ছেড়ে বাচ্চাদের কে এসব পুতুল নিয়ে খেলা করতে দেওয়া মোটেও ঠিক হবেনা। কেননা সন্দেহ জনক বিষয়াদি ছেড়ে দেওয়াই হাদিসের নির্দেশ।
রাছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেন-
دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ ، فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ ، وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ
হালাল হারাম, উচিত ও অনুচিতের বিষয়ে তোমার সন্দেহ হলে তা পরিত্যাগ করে সে
দিকে যাও যা তোমাকে হালাল হারাম বা উচিত অনুচিতের সন্দেহে ফেলবেনা। কেননা
সত্য তোমার হৃদয়কে প্রশান্ত ও স্থীর করবে আর মিথ্যা তোমার হৃদয়কে
সন্দেহে,জটিলতায় ফেলবে।(ইমাম মুনাভী রহিমাহুল্লাহ তার কিতাবে এ হাদিসের
আরবীতে যে ব্যাখ্যা করেছেন তা বাংলায় হাদিসের অনুবাদ হিসেবেই লিখলাম)" (সুনানে তিরমিযী হাঃ ২৪৪২;মুসনাদে আহমাদ হাঃ১৬৩০; সহীহ ইবনু হিব্বান হাঃ৭২২;ফয়যুল কদ্বীর,মুনাভী ৩/ ৫২৯;জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম,ইবনু রাজাব আল হাম্বালী ১/২৮০;শরহুল আরবাঈন আন নাবাবিয়্যাহ পৃঃ১৫৫;আল মুজতাবা,নাসায়ী হাঃ৫৭১১; আল কুবরা,নাসায়ী হাঃ৫২২০;সহীহ ইবনু খুজাইমাহ হাঃ২৩৪৮;সুনানে দারেমী হাঃ২৫৩২;মুসনাদে বাযযার হাঃ১১৯৪;মুসনাদে ত্বয়ালিসী হাঃ১১৭৮;মুসান্নাফে ইবনু আব্দুর রাযযাক হাঃ৪৯৮৪; মুসনাদে আবু ইয়ালা হাঃ৬৭৬২; মুজামুল কাবীর,ত্ববার-নী হাঃ২৭০৮,২৭১১;আল আ-হাদ ওয়াল মাছানী, ইবনু আবী আছেম হাঃ৪১৬-হাদিসটির মান সহীহ)
রাছূলুল্লাহ আলাহিছ ছলাতু ওয়াছ ছালাম আরো বলেন-
إنَّ الحلال بيِّن، وإنَّ الحرام بيِّن، وبينهما أمور مشتبهات لا يعلمهن
كثيرٌ مِنَ الناس، فمَنِ اتقى الشبهات استبرأ لدينه وعرضه، ومَنْ وقَع في
الشبهات وقع في الحرام،
অর্থ-"নিশ্চয়ই হালাল সুস্পষ্ট হারাম ও
সুস্পষ্ট আর এ দু'য়ের মঝে রয়েছে কিছু সন্দেহ জনক বিষয়াদি যা অনেক
মানুষেরাই জানেনা। সুতরাং যে শুবুহাত(সন্দেহাতীত বিষয়াদি) গুলো পরিত্যাগ
করবে সে তার সে তার দ্বীন ও দুনিয়ার গুনাহ থেকে মুক্ত হতে চাইল। আর যে
ব্যাক্তি সন্দেহাতীত বিষয়ে লিপ্ত হল সে হারাম কাজে পতিত হল।''(সহীহ বুখারী ১/১১৭ হাঃ৫২,কিতাবুল ঈমান,বাবু-ফাদ্বলু মানিছ তাবরআ লি দ্বীনিহি; সহীহ মুসলিম হাঃ১৫৯৯,বাবু-আখজিল হালাল ওয়া তারকিশ শুবুহা-ত)
***খেলনার বিপরীতে বাচ্চাদের কুরআন হাদিস ও যিকির আযকার শিখাবঃ
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘প্রত্যেক শিশু (ইসলামের) ফিতরতের উপর জন্মলাভ করে। কিন্তু পিতা-মাতা তাকে ইহুদী বানায়, খৃষ্টান বানায়, অগ্নিপূজক বানায়।
(সহীহ বুখারী ১/১৮৫, হাদীসঃ ১৩৮৫; সহীহ মুসলিম ২/৩৩৬, হাদীসঃ ২৬৫৮)
সন্তানকে শৈশবেই দ্বীন শিখাতে হবে নতুবা বাবা-মাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার মুখোমুখী হতে হব।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সতর্কবাণী :
‘পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’
(সহীহ বুখারী ১/২২২, হাদীসঃ ৮৯৩)
শৈশবে সন্তানকে আল্লাহর যিকির আযকার শিখাতে হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বি, থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘সন্তানকে প্রথম কথা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শেখাও এবং মৃত্যুর সময় তাদেরকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর তালকীন কর।’
(শুআবুল ঈমান ৬/৩৯৭-৩৯৮, হাদীসঃ ৮৬৪৯)
সন্তানদের আমরা ছোটবেলা থেকেই সালতের শিক্ষা দিব।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
"সন্তানের বয়স সাত বছর হলে তাদের নামাযের আদেশ দাও, দশ বছর বয়সে নামাযের জন্য শাসন কর এবং এ বয়সে তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।"
(মুসনাদে আহমদ ২/২১৮, হাদীস ঃ৬৭৫৬; সুনানে আবু দাউদ ১/৭১, হাদীসঃ ৪৯৪)
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আমদের সবাইকে বুঝার এবং দ্বীনের বুঝ মুতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুক।(আমীন)
--------
উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন