মান্নত: একটি ভ্রান্তি...
যে-কোনো বিপদে-আপদে আমাদের সমাজে মান্নতের প্রচলন আছে। বিপদ-আপদে পড়লে কিংবা অসুস্থ হলে সাধারণত এভাবেই মান্নত করা হয়-
যদি আল্লাহ আমাকে আমাকে সুস্থ করেন অথবা এই বিপদ থেকে মুক্তি দেন তাহলে
দু’রাকাত নামায পড়ব কিংবা দু’টি রোযা রাখাব অথবা একটি গরু বণ্টন করে দিব।
অর্থাৎ মান্নতকে রোগ কিংবা অন্য বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির সাথে শর্ত করা হয়ে
থাকে।
মান্নতের এই পদ্ধতি সঠিক নয়। হাদিস শরিফে এধরণের মান্নতের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে।
সহিহ বুখারি (৬৬০৮) ও মুসলিমে (১৬৪০) হযরত ইবনে উমর রা. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে মান্নত থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটি কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এটি তো কৃপণের কাছ থেকে মাল বের করার একটি পথ।
আল্লাহর রাহে মান্নত করা তো ইবাদত। এটা তো ভালো কাজ। তাহলে এই নিষেধাজ্ঞার অর্থটা কি?
ঐ যে মান্নতকে শর্তের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলা হয়েছে! শর্তযুক্ত মান্নত থেকে নিষেধাজ্ঞার অনেক কারণ রয়েছে। একটি তো হল, আকিদাগত সমস্যা। লোকে মনে করবে মান্নতের দ্বারা তাকদির পরিবর্তন হয়; মনে করবে অমুকের তাকদিরে একভাবে লেখা ছিল কিন্তু মান্নতের কারণে তার তাকদির পরিবর্তন হয়ে গেছে।
অথচ বাস্তবতা হল, মান্নতের দ্বারা ‘তাকদিরে মুবরাম’ তথা অপরিবর্তনশীল তাকদির পরিবর্তন হওয়া তো দূরের কথা ‘তাকদিরে মুআল্লাক’ তথা দুআর মাধ্যমে যে তাকদির পরিবর্তন হয় সেটিও পরিবর্তন হয় না।
অবশ্য কখনো কোনো বিষয়ে মান্নত করা হয় যা তাকদিরের মুওয়াফিক হয়ে যায়। আর এতেই মানুষ মনে করে মান্নতের কারণে তার তাকদির পরিবর্তন হয়েছে। অথচ সে এই বিপদ-আপদ, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা তার তাকদিরেই লেখা ছিল।
এ-কথাটিই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে (৬৬৯৪)উদ্ধৃত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, মান্নত মানুষকে এমন কিছু এনে দিতে পারে না যা তার তাকদিরে লেখা হয় নি। তবে কখানো মানুষ কোনো বিষয়ে মান্নত করে যা তার তাকদিরেই লেখা আছে...অতঃপর তাকে তা মান্নতের পর দেওয়া হয় যা মান্নতের আগে দেওয়া হয় নি।
সুতরাং তাকদির পরিবর্তন হওয়ার এ’তেকাদ নিয়ে যদি এধরণের মান্নত করে তাহলে তা সম্পূর্ণ না-জায়েয।
অবশ্য মান্নত যদি উপর্যোক্ত বাতিল এ’তেকাদের সাথে না হয়, তাহলে এমন মান্নত হারাম হবে না ঠিক, তবে ‘কারাহাত’ থেকে মুক্ত হবে না। অর্থাৎ মাকরুহ হবে। কারণ:
এক.
ইবাদত করতে হয় স্বতস্ফূর্তভাবে, খালিস নিয়তে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যে। কিন্তু শর্তযুক্ত মান্নতের মধ্যে তা পাওয়া যায় না। এ-কারণেই হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘এটি তো কৃপণের কাছ থেকে মাল বের করার একটি পথ।’’
দুই.
শর্তযুক্ত মান্নতের মধ্যে বান্দার নিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। মান্নতকারী যেন আল্লাহকে লোভ দেখাচ্ছে যে, এটি দিলে এই ইবাদত করব বা এই সদকা করব। অথচ আল্লাহ তাআলা কারো ইবাদতের মুখাপেক্ষি নন। এ-জন্যই হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘এধরণের মান্নত কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না।’’
তবে এর অর্থ এই নয় যে এধরণের মান্নত করলে তা আদায় করা লাগবে না। বরং সর্বাবস্থায় মান্নত আদায় করতে হবে।
সুতরাং কেউ বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত, রোগ-ব্যাধি ইত্যাদির সম্মুখিন হলে তার উচিৎ কয়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দুআ করা, সাধ্যানুযায়ী দান-খয়রাত করা।
আর নগদ দান খয়রাত না করতে পারলে এভাবে মান্নত করতে পারে, আমি দু’রাকাত নামায পড়ার মান্নত করলাম কিংবা ঐ বস্তুটি সদকার মান্নত করলাম। উদ্দেশ্য অর্জন হলে এই কাজ করব, এই ইবাদত করব, এভাবে মান্নত করা ঠিক নয়।
আশাকরি উপর্যোক্ত আলোচনা থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিষয়টি বুঝার এবং মানার তওফিক দান করুন, আমিন।
--------
লিখেছেনঃ শাইখ Mahbubul Hasan Arife
মান্নতের এই পদ্ধতি সঠিক নয়। হাদিস শরিফে এধরণের মান্নতের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে।
সহিহ বুখারি (৬৬০৮) ও মুসলিমে (১৬৪০) হযরত ইবনে উমর রা. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে মান্নত থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটি কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এটি তো কৃপণের কাছ থেকে মাল বের করার একটি পথ।
আল্লাহর রাহে মান্নত করা তো ইবাদত। এটা তো ভালো কাজ। তাহলে এই নিষেধাজ্ঞার অর্থটা কি?
ঐ যে মান্নতকে শর্তের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলা হয়েছে! শর্তযুক্ত মান্নত থেকে নিষেধাজ্ঞার অনেক কারণ রয়েছে। একটি তো হল, আকিদাগত সমস্যা। লোকে মনে করবে মান্নতের দ্বারা তাকদির পরিবর্তন হয়; মনে করবে অমুকের তাকদিরে একভাবে লেখা ছিল কিন্তু মান্নতের কারণে তার তাকদির পরিবর্তন হয়ে গেছে।
অথচ বাস্তবতা হল, মান্নতের দ্বারা ‘তাকদিরে মুবরাম’ তথা অপরিবর্তনশীল তাকদির পরিবর্তন হওয়া তো দূরের কথা ‘তাকদিরে মুআল্লাক’ তথা দুআর মাধ্যমে যে তাকদির পরিবর্তন হয় সেটিও পরিবর্তন হয় না।
অবশ্য কখনো কোনো বিষয়ে মান্নত করা হয় যা তাকদিরের মুওয়াফিক হয়ে যায়। আর এতেই মানুষ মনে করে মান্নতের কারণে তার তাকদির পরিবর্তন হয়েছে। অথচ সে এই বিপদ-আপদ, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা তার তাকদিরেই লেখা ছিল।
এ-কথাটিই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে (৬৬৯৪)উদ্ধৃত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, মান্নত মানুষকে এমন কিছু এনে দিতে পারে না যা তার তাকদিরে লেখা হয় নি। তবে কখানো মানুষ কোনো বিষয়ে মান্নত করে যা তার তাকদিরেই লেখা আছে...অতঃপর তাকে তা মান্নতের পর দেওয়া হয় যা মান্নতের আগে দেওয়া হয় নি।
সুতরাং তাকদির পরিবর্তন হওয়ার এ’তেকাদ নিয়ে যদি এধরণের মান্নত করে তাহলে তা সম্পূর্ণ না-জায়েয।
অবশ্য মান্নত যদি উপর্যোক্ত বাতিল এ’তেকাদের সাথে না হয়, তাহলে এমন মান্নত হারাম হবে না ঠিক, তবে ‘কারাহাত’ থেকে মুক্ত হবে না। অর্থাৎ মাকরুহ হবে। কারণ:
এক.
ইবাদত করতে হয় স্বতস্ফূর্তভাবে, খালিস নিয়তে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যে। কিন্তু শর্তযুক্ত মান্নতের মধ্যে তা পাওয়া যায় না। এ-কারণেই হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘এটি তো কৃপণের কাছ থেকে মাল বের করার একটি পথ।’’
দুই.
শর্তযুক্ত মান্নতের মধ্যে বান্দার নিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। মান্নতকারী যেন আল্লাহকে লোভ দেখাচ্ছে যে, এটি দিলে এই ইবাদত করব বা এই সদকা করব। অথচ আল্লাহ তাআলা কারো ইবাদতের মুখাপেক্ষি নন। এ-জন্যই হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘এধরণের মান্নত কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না।’’
তবে এর অর্থ এই নয় যে এধরণের মান্নত করলে তা আদায় করা লাগবে না। বরং সর্বাবস্থায় মান্নত আদায় করতে হবে।
সুতরাং কেউ বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত, রোগ-ব্যাধি ইত্যাদির সম্মুখিন হলে তার উচিৎ কয়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দুআ করা, সাধ্যানুযায়ী দান-খয়রাত করা।
আর নগদ দান খয়রাত না করতে পারলে এভাবে মান্নত করতে পারে, আমি দু’রাকাত নামায পড়ার মান্নত করলাম কিংবা ঐ বস্তুটি সদকার মান্নত করলাম। উদ্দেশ্য অর্জন হলে এই কাজ করব, এই ইবাদত করব, এভাবে মান্নত করা ঠিক নয়।
আশাকরি উপর্যোক্ত আলোচনা থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিষয়টি বুঝার এবং মানার তওফিক দান করুন, আমিন।
--------
লিখেছেনঃ শাইখ Mahbubul Hasan Arife