সাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইতের সম্পর্ক (বিবাহ সম্পর্ক প্রসঙ্গ)

ইহুদিজাত শিয়া-কাফেরদের অন্যতম প্রধান কাজ হল রাসূল(সা) এর পরিবার তথা আহলে বাইত এর উপরে অন্যান্য সাহাবাদের যুলুম-বিদ্বেষ এর কিচ্ছা বাজিয়ে বেড়ানো। তাদের এসব বানোয়াট তত্ত্বে উত্তেজিত হবার আগে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন হে মুহতারাম মুসলিম ভাই বোনেরা:



~~ আপনার কলিজার টুকরা, হৃদয়ের স্পন্দন কন্যাটিকে কার হাতে তুলে দেবেন? তাকে কোন লম্পট অপরাধীর অথবা ইসলাম এর ধ্বংসকারী,যালিম এর হাতে তুলে দিতে রাজি হবেন কি? صهري বা نسيبي (আমার আত্মীয়) বলতে আপনি কি বুঝেন?
** مصاهرة শব্দের আভিধানিক অর্থ:
مصاهرة শব্দটি صاهرশব্দের ক্রিয়মূল, বলা হয়: صاهرت القوم إذا تزوجت منهم; আযহারী বলেন: الصهر শব্দটি নারীপক্ষের নিকটাত্মীয় মুহার্রাম নারী-পুরুষকে অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন: পিতা-মাতা, ভাই-বোন ইত্যাদি। বিয়ের পূর্বের নিকটাত্মীয় মুহার্রামগণও নারীর আত্মীয় বলে গণ্য হবে।

সুতরাং কোন ব্যক্তির আত্মীয় মানে তার স্ত্রীরও আত্মীয়, কোন স্ত্রীর আত্মীয় মানে তার স্বামীরও আত্মীয়। এক কথায় مصاهرة শব্দের আভিধানিক অর্থ: নারীর নিকটাত্মীয়, কখনও কখনও পুরুষের আত্মীয় অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এ সম্পর্কটি সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا.
‘‘এবং তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে; অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।’’ -(আল-কুরআন, ২৫:৫৪)

এ আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন, কিভাবে আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির একজনকে অন্যজনের সাথে বংশগত ও বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করেন। সুতরাং বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তা একটি শর‘য়ী বন্ধন, যাকে আল্লাহ বংশের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। আর বংশ হল পিতার নিকটাত্মীয়। কোন কোন আলেমের মতে, বংশ বলতে সকল নিকটাত্মীয়কে বুঝায়। স্মরণ রাখবেন, আল্লাহ النسب(বংশ) এবং الصهر (বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তা) একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। এটি একটি বড় তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়; সুতরাং এ বিষয়টিকে উপেক্ষা করবেন না।

⌂⌂ ইসলামে বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তা:
ইসলাম এসে উন্নত কাজ-কর্ম ও প্রশংসনীয় গুণাবলীর স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অপকর্ম নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বর্ণনা করেছেন যে, তাকওয়া বা খোদাভীতিই বিবেচ্য বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
‘‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।’’ -(আল-কুরআন, ৪৯:১৩)
বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তার উপর অনেকগুলো বিধান বিন্নস্ত। বিয়ে সম্পাদনের বিধানটি নিয়ে চিন্তা করুন যে, কোন পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব পেশ করলে তার জন্য কতগুলো নিয়ম-কানুন থাকে। অতএব তার প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান উভয় হতে পারে; প্রস্তাবিত বিষয়টি কার্যকর করার জন্য প্রস্তাবক তার পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীদের সহযোগিতা কামনা করবে; মেয়ের অভিভাবকবৃন্দ ও পরিবার-পরিজন প্রস্তাবক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এবং তাদের জন্য সেই প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার থাকবে। এমন কি যদি প্রস্তাবক কোন উপহার সামগ্রী অথবা অগ্রীম মোহর বা অনুরূপ কিছু পরিশোধ করে, বিবাহ চুক্তি সম্পন্ন না হলে তবুও তারা প্রস্তাবককে প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।
তাছাড়া বিয়ের মধ্যে সাক্ষী রাখা জরুরী; আর বিয়ের সংবাদ প্রচার করা শরী‘য়তের দাবি। যখন বিয়ের বিধানসমূহ কার্যকর হয়, তখন তা দূরবর্তীদেরকে নিকটবর্তী করে দেয় এবং তাদের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি করে। বিয়ের কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে সম্মান করে স্থায়ীভাবে অথবা যতক্ষণ স্ত্রী তার জিম্মাদারীতে থাকে। এই পুস্তিকার কারিকুলামে আলোচনা দীর্ঘায়িত করার সুযোগ নেই। আসল উদ্দেশ্য হল পরবর্তী আলোচনার সুবিধার্থে বিষয়বস্ত্তর গুরুত্ব তুলে ধরা।

❖❖ সুতরাং নিম্নোক্ত বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন:
হাসান ও হোসাইনের বোনকে তার পিতা আলী (আ.) ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর নিকট বিয়ে দেন। সুতরাং আমরা কি বলব যে, আলী (রা.) তাঁর কন্যাকে ওমরের ভয়ে তাঁর নিকট বিয়ে দেন? তাহলে তাঁর বীরত্ব কোথায়? মেয়ের প্রতি তাঁর ভালবাসা কোথায়? তিনি কি তাঁর কন্যাকে জালিমের হাতে তুলে দিলেন? আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ কোথায়? এভাবে অনেক প্রশ্ন, যার শেষ নেই। না কি আপনি বলবেন, আলী (রা.) তাঁর কন্যাকে ওমরের সাথে আগ্রহসহকারে সন্তুষ্ট চিত্তে বিয়ে দেন। হ্যাঁ, ওমর (রা.) এক কন্যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শরী‘য়ত সম্মত বিশুদ্ধ পন্থায় বিবাহ দেন, যাতে কোন সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই । আর এ বিয়েটি প্রমাণ করে উভয় পরিবারের মধ্যে কেমন ভালবাসার সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। অপর দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ওমর (রা.)-র কন্যা হাফসা (রা)-র স্বামী। সুতরাং ওমর (রা.)-এর সাথে আলী (রা.)-র কন্যা উম্মে কুলসুমের বিয়ের পূর্বেই উভয় পরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিদ্যমান।

↔ দ্বিতীয়ত: উদাহরণ হিসেবে ইমাম জাফর সাদিকের কথা পেশ করা যায়, তিনি বলেন: ‘‘আবু বকর আমাকে দুইবার জন্ম দিয়েছেন।’’ জাফরের মা কে আপনি জানেন কি? তিনি হলেন ফারওয়া বিন্ত কাসেম ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন আবি বকর।
হে বুদ্ধিমান! কেন জাফর (র.) মুহাম্মদ ইব্‌ন আবি বকর না বলে শুধু আবু বকর বললেন??? হ্যাঁ, তিনি আবু বকর নামটি স্পষ্ট করে এ জন্যই বলেছেন যে, শিয়াদের কেউ কেউ তাঁর মর্যাদাকে অস্বীকার করে। অথচ তাঁর ছেলে মুহাম্মদের মর্যাদার ব্যাপারে শিয়া সম্প্রদায় একমত। অতএব, আল্লাহর কসম! আপনি ভেবে দেখুন, মানুষ কাকে নিয়ে গর্ব-অহংকার করে?

❖❖ আনসার ও মুহাজির সাহাবীদের মধ্যে পরস্পর বংশগত আদান-প্রদান তথা বিয়ে-সাদীর বিষয়টি এমন প্রত্যেকেই জানে, তাদের বংশবিদ্যায় যার জানা-শুনা আছে; এমন কি তাদের গোলামরাও তা জানে। হ্যাঁ, গোলামরা পর্যন্ত কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় ও শরীফ বংশে বিয়ে করেছেন। উদাহরণস্বরূপ যায়েদ বিন হারেছা (রা.), তিনিই একমাত্র সাহাবী যাঁর নাম আল-কুরআনের সূরা আল-আহযাবে আলোচনা হয়েছে। কে তাঁর স্ত্রী? তিনি হলেন উম্মুল মু’মিনীন যয়নব বিন্ত জাহাস (রা.)।
❖❖ আরও একজন হলেন উসামা বিন যায়েদ, তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশ বংশের ফাতেমা বিন্ত কায়েসের সাথে বিয়ে দেন।
আবু হুযায়ফা (রা.) অপর এক গোলাম সালেমকে তাঁর ভাতিজি হিন্দা বিন্ত ওয়ালিদ ইব্‌ন উতবা ইব্‌ন রবি‘আর সাথে বিয়ে দেন। তাঁর পিতা ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম নেতা।
সাহাবীদের মধ্যে বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তার আলোচনা অনেক দীর্ঘ। খোলাফায়ে রাশেদীন ও আহলে বাইতের মধ্যে সংঘটিত বিয়ে-সাদী নিয়ে ছোট-খাট কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করাকে যথেষ্ট মনে করছি।

❖❖ আপনি জানেন যে, সাইয়্যেদেনা ওমর (রা.) ফাতেমা বিন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যাকে বিয়ে করেছেন।
জাফর সাদিক (র.)-এর মা, যাঁর আলোচনা পূর্বে হয়েছে, তাঁর বড় দাদী কে? তাঁরা উভয় হলেন আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর নাতনী!!!!

❖❖ আমরা দেখতে পাই সাহাবায়ে কিরাম(রা) ও আহলে বাইত(রা) এর মধ্যে বিবাহ শাদির পবিত্র সম্পর্কের মাধ্যমে হৃদ্যতা স্থাপিত। তাহলে কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মুসলিম কেন ইহুদিজাত শিয়া-মালুদের বানানো "আহলে বাইতের উপরে সাহাবীর যুলুম" এর কিচ্ছায় বিশ্বাস করে সাহাবীদের উপরে বিদ্বেষ রেখে নিজের ঈমানের ক্ষতি করবে???!

----------
__ মূলঃ শায়খ উসমান আল খামিস, শায়খ সালেহ বিন আব্দুল্লাহ-দারভিশ { সংকলিত ও সম্পাদিত }
~ The Rafidologist

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডাউনলোড করুন মাকতাবায়ে শামেলা লেটেস্ট ভার্শন (মোবাইল এবং পিসির জন্য)

রুকইয়াহ আশ-শারইয়্যাহ (ডাউনলোড)

হাদিসে কিরতাস বা কাগজের ঘটনা প্রসঙ্গে শিয়া কাফেরদের অপবাদের জবাব